বই মায়ের চিঠি : লেখক পরিতোষ বাড়ৈ | Mayer Chithi : Author Poritosh Bare

  • বই: মায়ের চিঠি
  • লেখক: পরিতোষ বাড়ৈ
  • প্রচ্ছদ: মশিউর রহমান
  • প্রকাশনী: অনন্যা
  • প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০১১
  • পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৯১
  • মুদ্রিত মূল্য: ১৫০ টাকা
  • রিভিউ লিখেছেন 💕 হালিমা সাদিয়া




শুরুর কথা:
***********
একজন মায়ের অশ্রুমিশ্রিত লেখা "মায়ের চিঠি।" এক সন্তান তার মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসে। সেই মা বৃদ্ধাশ্রমকে সন্তান প্রদত্ত জেল হিসেবে বরণ করে নেয়। একদিন মায়ের মনে হল, তার সন্তানকে বড় করতে অনেক যুদ্ধ করতে হয়েছে। সবকিছু সন্তান জানে না। কোনোদিন বলাও হয়নি। এখন তা তাকে জানানো প্রয়োজন। তাই তিনি কাগজ কলম নিয়ে তার সন্তানকে চিঠি লিখতে বসলেন।

লেখক পরিচিতি:
****************
লেখার মাধ্যমে আলোকিত সমাজ গড়তে চাওয়া লেখক পরিতোষ বাড়ৈ মাদারীপুরে ১ জুন, ১৯৭৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। মানুষকে নির্মল আনন্দ দেওয়াই তাঁর লেখার উদ্দেশ্য। সমাজ সংস্কার, লেখার অঙ্গিকার। সাহিত্যের প্রায় সকল শাখাতেই তাঁর বিচরণ। লেখালেখির জন্য পেয়েছেন অনেক পুরস্কার।

পাঠ সংক্ষেপ:
*************
মায়ের বয়স যখন একুশ (২১) বছর এবং সন্তানের বয়স একচল্লিশ (৪১) দিন তখন তিনি স্বামীকে হারান। স্বামীর মৃত্যুর পর তার জীবনে ভয়াবহ অন্ধকার নেমে আসে। মা-বাবা, স্বামী হারা এক নারী যার নিশ্চিন্তে চোখ বুঝে থাকার মত আর কোন জায়গা-ই রইল না। সমাজের অসভ্য শকুনের দল চারপাশে ওত পেতে থাকে। শুরু হয় এক কঠিন লড়াই, সন্তানকে নিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই। এই লড়াইয়ে সন্তানকে বুকে নিয়ে প্রতিটি মুহূর্তে তিনি মহান আল্লাহকে স্মরণ করেছেন।
শুরুতে আশ্রয়ের জন্য নিরুপায় হয়ে এক চাচাতো ভাইয়ের বাড়িতে উঠলেন। এই চাচাতো ভাই ছাড়া তার আপন আর কেউ ছিল না। কিন্তু কিছুদিন পর চাচাতো ভাইয়ের ভেতরের পশুত্বটাও প্রকাশ হতে থাকে। তিনি বুঝতে পেরে সম্মান রক্ষার্থে ছেলেকে মাথায় নিয়ে সাগর সমান বিল হেঁটে পাড়ি দেন। এরপরই শুরু হয় তার জীবনের নতুন আরেক যুদ্ধ। ছেলেকে মানুষ করতে এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ছুটেছেন, দিনের পর দিন রাতের পর রাত নিজে না খেয়ে ছেলেকে খাইয়েছেন। চাকরি করে (NGO-তে), মানুষের বাসায় কাজ করে ছেলের পড়ার খরচ জোগিয়েছেন। কিন্তু কোনো আশ্রয়ই তার কপালে বেশিদিন সয়নি। ছেলে পড়ালেখা শেষ করে বড় চাকরি পেল, বাড়ি হল, গাড়ি হল; কিন্তু সেই বাড়িতে মায়ের জায়গা হল না। বউয়ের মন রক্ষার জন্য তার জীবন রক্ষাকারী সেই যুদ্ধজয়ী মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসল ছেলে।
বৃদ্ধাশ্রমে একদিন মায়ের মনে হলো- তার সন্তানকে বড় করতে অনেক যুদ্ধ করতে হয়েছে। সবকিছু সন্তান জানে না। কোনোদিন বলাও হয়নি। তাই মা কাগজ কলম নিয়ে সন্তানকে চিঠি লিখতে বসলেন।

পাঠ প্রতিক্রিয়া:
**************
বইটি পড়ার সময় বারবার লেখকের নাম লক্ষ্য করছিলাম। একজন অমুসলিম লেখক হয়েও ইসলাম ধর্মকে কত সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, সত্যি ভীষণ মুগ্ধ হয়েছি। অশ্রুসিক্ত মায়ের চিঠি পড়ে নিজেও অশ্রুসিক্ত হয়ে গিয়েছি। যদি বাধ্য করা যেত তাহলে সবাইকে আমি "মায়ের চিঠি" পড়তে বাধ্য করতাম।

নামকরণের স্বার্থকতা:
********************
বইটির প্রায় ৯৫ শতাংশ গল্প আবর্তিত হয়েছে "মায়ের চিঠি" কে নিয়ে। একজন মা তার সন্তানকে বড় করতে যত যুদ্ধ করতে হয়েছে, সবকিছু চিঠির মধ্যে তিনি লিখেছেন। তাই মনে করি বইটির নাম "মায়ের চিঠি" হওয়া স্বার্থক।

প্রিয় উক্তি/লাইন:
****************
১. "মা"
   সন্তানের জন্য পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম ঠিকানা। 
বৃদ্ধাশ্রমে যেন কোনো মায়ের ঠিকানা না হয়।
২. মায়ের একটি কষ্টের নিঃশ্বাস, সাতটি দোযখের চেয়েও ভয়ংকর। আর একটি সুখের হাসি, আটটি বেহেস্তের সমান। --- হযরত মোহাম্মদ (সা.)।
৩. আল্লাহ যা করতে পারে তা-কি মানুষের সাধ্যে কুলায়। আল্লাহ বিশ্ব সংসারের মালিক। মানুষ নিজের সংসারে মালিকের বেশে অভিনেতা মাত্র।
৪. একজন মানুষ ৪৫ ইউনিট ব্যথা একবারে সহ্য করতে পারে। একজন মা সন্তান প্রসবের সময় ৫৭ ইউনিটের বেশি ব্যথা সহ্য করেন। তুমি কি ব্যথার মাত্রা বুঝতে পারছ? তোমাকে সামান্য উদাহরণ দেই। এই ব্যথা ২০টি হাড্ডি একসাথে ভেঙে যাওয়ার চেয়ে বেশি। তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ, তোমাকে জন্ম দিতে তোমার মায়ের কী পরিমাণ ব্যথা সহ্য করতে হয়েছে?

বইয়ের ভালো দিক:
******************
বইয়ের সবচেয়ে ভালো দিক হলো- একজন মা সন্তানকে বড় করতে সন্তানের সুখের জন্য নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে হাজারটা ঝড় মোকাবেলা করেন, তা কখনোই সন্তানরা অনুভব করতে পারে না। কিন্তু এই বইটি পড়ে যেকোন সন্তান কিছুটা হলেও মায়ের কষ্ট অনুভব করতে পারবে।
তাই বলবো এই বইটি থেকে প্রতিটি সন্তানের অনেক কিছু শেখার আছে।

বইয়ের খারাপ দিক:
******************
সম্পূর্ণ বইটি পড়ে আমি কোনো খারাপ দিক খুঁজে পাইনি। বরং বইটি পড়ে আমি অনেক কিছু জানতে পেরেছি এবং শিখতে পেরেছি।

সার্বিক মূল্যায়ন:
***************
লেখক পরিতোষ বাড়ৈ অসম্ভব সুন্দরভাবে "মায়ের চিঠি" বইটি পাঠকদের মাঝে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। প্রতিটি সন্তানের উচিত "মায়ের চিঠি" বইটি পড়া। তাহলে হয়তো কোনো সন্তান মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসার আগে তার হৃদয়টা একবার হলেও কেঁপে উঠবে।

ব্যক্তিগত রেটিং:
***************
১০/১০

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ