মেঘে ঢাকা জোছনা : লেখক: মোশতাক আহমেদ | Meghe Dhaka Joshna By Mostaq Ahmed

ব‌ইয়ের নাম: মেঘে ঢাকা জোছনা
লেখক: মোশতাক আহমেদ
ব‌ইয়ের ধরণ: প্যারাসাইকোলজি থ্রিলার
প্রকাশনী: অনিন্দ্য প্রকাশ
প্রচ্ছদ: জয় কর্মকার
মুদ্রিত মূল্য: ৩০০টাকা
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১৬০ পৃষ্ঠা

'মেঘে ঢাকা জোছনা' বই মূলত একটি প্যারাসাইকোলজি থ্রিলার উপন্যাস, মেঘে ঢাকা জোছনা বইটি রচনা করেছেন জনপ্রিয় লেখক: মোশতাক আহমেদ এবং বইটি প্রকাশ করেছে অনিন্দ্য প্রকাশনী। মেঘে ঢাকা জোছনা pdf by মোশতাক আহমেদ বইটিতে মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৬০ এবং মুদ্রিত মূল্য: ৩০০টাকা।



কাহিনী সংক্ষেপ
রাহাত ও রিতিশা দুজন দুজনকে ভালোবাসে। একদিন খুব সকালে ফোন পেয়ে রাহাতের বাড়িতে ছুটে এল রিতিশা। রাহাতদের বাড়িতে কাজ করা লাবণি নামের মেয়েকে রাহাতদের রান্নাঘরে খুন হওয়া অবস্থায় পাওয়া গেছে। লাবণির খুন খুব নৃশংসভাবে হয়েছে। চাপাতি দিয়ে কেটে ফেলা হয়েছে লাবণির বাম পায়ের একাংশ, শরীরে রয়েছে আরও ছোট-বড়ো। বাড়িতে রাহাত আর তার মা সাদিয়া বেগম ছাড়া আর কেউ ছিল না। অন্যকারোরও প্রবেশের কোন পথ খোলা ছিল না। কারণ বাড়ির মূল দরজা, গেট বন্ধ ছিল। এমনকি বাড়ির জানালাগুলোও বন্ধ ছিল। ফলে পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যায় রাহাতকে এবং তার মা অসুস্থ হওয়ার কারণে তাকে কড়া নজরদারিতে রেখে যায়। ছেলের শোক সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেন সাদিয়া বেগম। আপন বলতে রিতিশা ছাড়া আর কেউ রইল না রাহাতের। রিতিশা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যে রাহাত এরকম হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে না। তাহলে কে লাবণির প্রকৃত খুনি? রিতিশা রাহাতকে জেল থেকে মুক্ত করতে চেষ্টা করে। কিন্তু বাস্তবতা যে বড়ই কঠিন। কেউ নেই তার সাথে। এক পর্যায়ে সে যখন, বিষাদগ্রস্ত তখনই ঘটনাক্রমে আশার আলো হয়ে আসেন ডাক্তার তরফদার। একটা একটা করে রহস্যের জট খুলতে থাকেন। মানসিক চিকিৎসার পাশাপাশি হত্যাকারীকে খুজতে গিয়ে এবার তিনি হয়ে উঠেন যথারীতি গোয়েন্দা। শেষ পর্যন্ত কি ডাক্তার তরফদার লাবণির প্রকৃত খুনিকে শনাক্ত করতে? আর কি ঘটেছিল রাহাত আর রিতিশার জীবনে? তাদের জীবন কি মেঘে ঢাকা জোছনার মতো ম্লান হয়ে গিয়েছিল নাকি তাদের জীবন আবার জোছনার বৃষ্টিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল?

চরিত্র কথনঃ

মেঘে ঢাকা জোছনা উপন্যাসটি রাহাত ও রিতিশাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠলেও এতে আরো অনেক ইতিবাচকও নেতিবাচক চরিত্র রয়েছে। যেমনঃ ডাক্তার তরফদার, গাছমানব মোবাশ্বের, লাবণি,দুলু মিয়া,লোকমান চৌধুরী, সাদিয়া বেগম,হোটেল মালিক,ওসি আইনুল হাকিম প্রমুখ। গাছমানব মোবাশ্বেরর হত্যা বা তদন্তের সঙ্গে কোন যোগসাজশ নেই এটি একেবারেই আলাদা একটি চরিত্র।গাছমানব মোবাশ্বেরর চরিত্রটা লেখক যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তা একেবারেই অনিন্দ্য সুন্দর। রিতিশা চরিত্রের আত্নবিশ্বাসী মনোভাব আমার নজর কেড়েছে।আর ডাক্তার তরফদার নিয়ে কি বলব এই চরিত্র তো আমার মনে গেঁথে গেছে। ডাক্তার তরফদার প্যারাসাইকোলজি সিরিজের সবগুলো বইই গোগ্রাসে গিলছি।

পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ

ভিন্ন ঘরানার বই লিখেন বলে মোশতাক আহমেদ আমার প্রিয় লেখকেদের মধ্যে একজন। এই বইটি একটি প্যারাসাইকোলজি থ্রিলার। এমনিতেই প্যারাসাইকোলজি বইগুলো আমার মনে এক অন্যরকম অনুভূতির সৃষ্টি করে তার মধ্যে আবার রয়েছে থ্রিলারের রহস্যোর জটলা। বইয়ের শেষটা আমাকে একদম অবাক করে দিয়েছে কি ভাবলাম আর শেষে কি বের হল। তাই শেষ পর্যন্ত কি হল জানতে হলে আপনাকে পড়তে হবে এই বইটি। 

পছন্দের কিছু লাইনঃ

★ মানুষ ইচ্ছা করলে সবকিছু করতে পারে না।পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী মানুষকে মহান সৃষ্টিকর্তা সবকিছু করার নিরঙ্কুশ ক্ষমতা প্রদান করেননি,প্রত্যেক মানুষের ক্ষমতা কোনো না কোনভাবে নিয়ন্ত্রিত।
★ মায়ের জন্য কান্না মানুষের অকৃত্রিম কান্না। এই কান্না মায়ের প্রতি সন্তানের যেমন ভালোবাসার প্রকাশ ঘটায় তেমনি শরীর ও মনকে হালকা করে।
★ প্রয়োজনে তুমি প্রিয়জন,প্রয়োজন ফুরালে দুর্জন।
‌★ আমি তোমার জন্য ফুল এনেছিলাম।কিন্তু জেলখানা কতৃপক্ষ আনতে দেয়নি।পূর্বানুমতি ছাড়া জেলখানায় প্রিয় মানুষের জন্য ফুল আনা নিষেধ।তবে কী জানো, মন আনা নিষেধ না।আমি ফুল আনতে পারিনি ঠিকই, কিন্তু ভালোবাসায় ভরা মনটা নিয়ে এসেছি,শুধুই তোমার জন্য।

সমালোচনাঃ

আমি লেখকের লেখনশৈলী নিয়ে কোন সমালোচনা করছি না।ওনার লেখনশেলী বরাবরের মতোই বেশ সাবলীল ও ঝরঝরে ছিল। তবুও বলতে চাই মাঝে কিছু জায়গায় গল্পটা একটু ঝুলে গিয়েছিল তবে তা চরিত্র গঠনের প্রয়োজনেই। তাই পড়তে তেমন একটা অসুবিধা হওয়ার কথা না। বইয়ে কিছু মুদ্রণজনিত ভুল ছিল।আশা রাখছি পরবর্তী মুদ্রণে তা সংশোধন করা হবে।
সাদিয়া (রিতিশা) দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,ঠিক আছে আমি আমার বাবার সাথে কথা বলব।পৃষ্ঠাঃ- ৫৬

এখন আমি নিতিশার (রিতিশার) রুমে যাব।পৃষ্ঠাঃ- ৮০
আরও বেশ কিছু ছোটখাটো ভুল ছিল।

প্রোডাকশনঃ

বইটি প্রকাশ করেছে অনিন্দ্য প্রকাশ। বইয়ের বাঁধাই, পৃষ্ঠার মান অসম্ভব ভালো ছিল। আর প্রচ্ছদটা তো একদমই মনকাড়া। বইয়ে ছাপার কালিও যথেষ্ট ভালো ছিল তবে কিছু কিছু জায়গায় একটু হালকা হয়ে গিয়েছে। আশা করি পরবর্তী মুদ্রণে তা সংশোধন করা হবে৷ 

বইয়ের নামকরণের 
স্বার্থকতাঃ

ব্যাতিক্রম ধরনের নামই একটি পাঠককে বইটি পড়তে প্রলোভিত করে তোলে। প্রকৃতির সাধারণ নিয়মে যে ঘটনাগুলো ঘটার কথা নয় অথচ ঘটে, সেগুলোই প্যারাসাইকোলজি। তাই একটি প্যারাসাইকোলজি বইয়ের নাম কিছুটা উদ্ভট টাইপের হয়ে থাকে। মেঘে ঢাকা জোছনা নামকরণের ক্ষেত্রেও সেটাই ঘটেছে। এক্ষেত্রে লেখক তার মুন্সীয়ানা দেখিয়েছেন। কারণ জোছনা কখনোই মেঘে ঢাকা হওয়ার কথা নয়। এই নামকরণের মাধ্যমে লেখক রাহাত ও রিতিশার জীবনের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। বইয়ের মায়াময় নামটি দেখে যেকোন পাঠকই বইটি সম্পর্কে আগ্রহ দেখাতে বাধ্য। আর একবার বইটি পড়া শুরু করলে না পড়ে উঠতে পারবে না।

শিক্ষণীয় বার্তাঃ

প্রত্যেক লেখকই বইয়ে গল্পের আদলে কিছু শিক্ষণীয় বার্তা দিতে চেষ্টা করেন। তেমনি এই বইয়েও তার ব্যাতিক্রম ঘটেনি। এই বইয়ে যেসব শিক্ষণীয় বার্তা রয়েছে --
১. গাছের উপকারিতা সম্পর্কে বইয়ে বিশদভাবে বর্ণনা দেওয়া আছে। গাছ আমাদের কত উপকার করে কিন্তু আমরা নির্বিচারে গাছ কেটে যাচ্ছি। মেঘে ঢাকা জোছনা বইটি পড়লে নিসন্দেহে পাঠকের মনে গাছের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ পাবে। তাঁরাও গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে উৎসাহিত হবে।
২. পরিবেশে পলিথিন, প্লাস্টিকের নেতিবাচক প্রভাব সম্বন্ধে সম্পর্কে সচেতনতার বার্তা প্রেরণ করা হয়েছে বইটির মাধ্যমে। 
৩. টাকাই যে জীবনের একমাত্র সুখের কারণ নয় একথাও বইটির মাধ্যমে বুঝা যায়। একটি উক্তির মাধ্যমেই সেটি বোঝা যায়-
"জীবনের জন্য অর্থের প্রয়োজন আছে ঠিকই,তবে জীবনের সুখশান্তিকে বিসর্জন দিয়ে অর্থ আয়ের কোন মানে হয় না। "

যা কিছু সত্যিঃ

বইয়ে বেশ কিছু সত্য বস্তু বা ঘটনাবলী পাওয়া যায় সেগুলো হলো:-
১. উপন্যাসে ঠাকুরগাঁও জেলার হরিণমারি গ্রামের একটি সূর্যপূরী আমগাছের বর্ণনা দেওয়া আছে। যার সত্যিকারে অস্তিত্ব রয়েছে। তিন বিঘা জমির উপর আমগাছটা দাঁড়িয়ে আছে। বয়স ২০০ বছরেরও অধিক। একদিন সত্যিই গাছটা দেখতে চলে যাব!
২. ওয়াহিদ সর্দার নামক বৃক্ষপ্রেমীর বর্ণনাগুলো সত্যি। তার বাড়ি যশোরে। তিনি সাইকেল করে ঘুরে বেড়ান এবং গাছ থেকে পেরেক আর জিনারি সরিয়ে ফেলেন। 
৩. জেনারেল শেরম্যান, গাছটির অস্তিত্ব সত্যি রয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার সেকুয়া ন্যাশনাল পার্কে আছে গাছটা। এই গাছের বয়স ২৭০০ বছর। 
৪. এপোটেমনোফিলিয়া নামক একটি রোগের বর্ণনা দেওয়া আছে।

নিজস্ব রেটিংস:৯/১০

Meghe Dhaka Joshna 
Buy Hardcover From Rokomari

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ