নীলুফার বইটি কেন পড়বেন? লেখক: সাইফুল ইসলাম | Nilufar By Saiful Islam Books

বইয়ের নাম: নীলুফার
লেখক: সাইফুল ইসলাম
মলাট মূল্য: ২৭০
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১৩৯
ধরণ: সামাজিক
প্রকাশনি: বিসর্গ
প্রকাশক: মুনসুর বিল্লাল
প্রচ্ছদ: পরাগ ওয়াহিদ

পাঠ প্রতিক্রিয়া
আজ পাঠ প্রতিক্রিয়া জানাবো সমকালীন সময়ের তরুণ লেখক সাইফুল ইসলামের প্রথম উপন্যাস নীলুফার বইটির। 




ফ্ল্যাপঃ 
মানুষ মূলত যা পারে তা হলো চেষ্টা। সাইফুল ইসলাম গল্প লেখার ক্ষেত্রে এই চেষ্টাটা করে গেছেন বরাবর। তার ফলাফল নিলুফার। তাঁর গল্পে অনেক গুলো চরিত্র পাওয়া যায় অনেকগুলো জীবন, মানুষের দোয়েলের। আমাদের চিরচেনা সেই গল্পগুলো সাইফুল ইসলাম বলে গেছেন অনর্গল। হতে পারে কোন এক চরিত্রে নিজেকে খুঁজে পাবেন আপনি। স্বপ্নপূরণের সংগ্রাম করা কোন এক মেয়ের মাঝে কিংবা টিউশনি করা কোন ছেলের ভেতর অথবা ছোটখাটো চাকরি করা এক ছেলের মাঝে। নিলুফার উপন্যাসে আপনাকে স্বাগতম।

ঘটনামূলঃ 
নীলুফার গল্পটি পুরোটাই নীলুফার চরিত্রকে কেন্দ্র করে। দুই বোন এক ভাই এর ভেতরে ভাই সবচেয়ে ছোটো। বাবা মারা গেছেন অনেক আগে। অভাবে সংসার, মায়ের অনেক ধার দেনা। তাই সংসারকে সহযোগীতা ও ধার শোধ করার জন্য নীলুফার ঢাকা আসে একটা চাকরির আশায়। গ্রামের মেয়ে ঢাকায় এসেই প্রথম দিনেই জীবনের বাস্তবতার মুখোমুখি হয়। 
ঢাকায় এসেই সে জীবনের বাস্তবতার মুখোমুখি হয়। একটা চাকরি পাওয়া কতটা কঠিন, চাকরি দেয়ার নামে যে প্রহসন চলে সেটা সে এসেই বুঝে যায়। সেই সাথে চারিদিকে চোর বাটপার শ্রেণীর মানুষগুলোও তার চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠে। ঘটনার কিছু বিষয় তুলে ধরতে গেলে এমন, 
১) চোর, ছিনতাইকারীদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়া, 
২) বাজে লোকের পাল্লায় পড়ে প্রায় সম্ভ্রম হারাতে বসা, 
৩) অর্থলোভী আপন চাচা, 
৪) বিয়ের নামে মেয়েকে বিক্রি করে দেয়া, 
৫) আপন মানুষগুলো পর হয়ে জীবনটাকে আরো জটিল করে দেয়া। 

এই বিষয়গুলোই নীলুফার গল্পে, নীলুফার মোকাবেলা করে। তবে সমাজে কেবল খারাপ লোকই নয়, অনেক ভালো মানুষও আছে। মাহির, শিমুল, সুমনা, আসলাম চৌধুরীর মত মানুষদের সহযোগিতায় সমস্যাগুলোকে পার করে যায়। 

পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ 
নীলুফার, একটি চমৎকার রোমান্টিক উপন্যাস। সাফুল ইসলামের প্রথম বই। প্রথম বইতে আমাদের অনেক ভুল ত্রুটি থাকে। ভুল্গুলো নতুন লেখক হিসেবে গ্রহণযোগ্য। এগুলোকে আড়াল করতে পারলে উপন্যাসটি সত্যি চমৎকার। 
উপন্যাসে সুন্দর একটি লাভ ট্রায়াংগেল দেখানো হয়েছে, যেটা গল্পের শুরু থেকে শুরু হয়ে শেষ পর্যন্ত টিকে ছিল। একদম শেষে এসে একটা সমাধান এসেছে। এর ভেতরে আবার এই ট্রায়াংগেল নিয়েও কয়েকবার জটিলতা তৈরি হয়েছে। এই ট্রায়াংগেলের দুষ্টু মিষ্টি প্রেমের গল্প, মজা, সমস্যা আপনাকে কখনো চিন্তিত করবে কখনো আনন্দ দিবে। 

ঘটনা মূলে উল্লেখ করেছি নীলুফারের সংগ্রামের কথা। এই সংগ্রাম লেখক সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। 
গল্পে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন, সেটা হচ্ছে, পজিটিভ মেসেজ, বা স্প্রেড পজিটিভিটি। 

সমাজে আমাদের চারিদিকে অনেক খারাপ চরিত্র আমরা দেখে থাকি। এগুলো দেখতে দেখতে আমাদের ভেতরেও খারাপ স্বত্বা শক্তিশালী হতে থাকে। লেখক তার বইতে খারাপ চরিত্রগুলো তুলে ধরেছেন মাত্র, কিন্তু সেগুলোর অতিরিক্ত আলোচনা করেননি। এর থেকে তিনি সমাজে মানুষের ভালো রূপগুলো তুলে ধরেছেন। হঠাৎ আপনার মনে হতে পারে এগুলো অতিমানবীয় চরিত্র, কিন্ত এগুলোই প্রকৃত মানবীয় চরিত্র। লেখক আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছেন আমরা আমাদের মূল চরিত্রকে ছেড়ে দিন দিন কোন পশুত্বকে বেছে নিচ্ছে। 
নীলুফার হচ্ছে আমাদের প্রতিচ্ছবি; মাহির, শিমুল, আসলাম সাহেব হচ্ছেন আমাদের সেই মানবীয় গুণ যা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। যার ফলে গল্পের বাকি প্লটের মত আমরা আমাদের জীবনকে প্রতিনিয়ত জটিল করে তুলছি। 

লেখক উৎসর্গ অংশে একটা কথা বলেছেন, মাহিরেরা অবশ্যই আসবে এই ঘুণে ধরা সমাজের মানুষের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে। মাহির আবার আসবে।

বই কোয়ালিটিঃ 
বই এর কোয়ালিটি, বাধাই, পেজ অসাধারণ। তবে জেকেট সেট দেয়া ছিল সেটায় আঠা লাগানো ছিল না ফলে বার বার খুলে আসছে। 
ভেতরে কিছু বানান ভুল আছে। 
কিছু যায়গায় আলাদা পর্বের স্পেসিং হয়নি। সেগুলো এক হইয়ে গেছে। ফলে একটু সমস্যা হয়েছে। 

পোস্ট মর্টেমঃ 
(এই অংশটুকু ভেতরের কিছু সমালোচনা। একান্ত আমার নিজস্ব মতামত। পাঠকভেদে মতামত ভিন্ন হতে পারে।) 
একটু এলোমেলো হতে পারে এই অংশ। তবে চেষ্টা করবো যতটা পারা যায় গুছিয়ে দেয়ার। শুরু থেকেই শুরু করছি। 
১) ফ্ল্যাপ; এখানে গল্পের একটা মূল ভাব উল্লেখ করা থাকে। অথবা ভেতরে কোথাও বিষয়টা উল্লেখ করা থাকে। কিন্তু এই বইতে এমন কিছু আমি পাইনি অথবা এক্সযা পেয়েছি তা বই সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা দিতে অক্ষম বলে মনে হয়েছে। অর্থাৎ বই না পড়া পর্যন্ত বই কেমন হতে পারে সে সম্পর্কে ধারণা করার উপায় নেই, লেখক বা প্রকাশকের কথা ছাড়া। 
২) ভূমিকা; এখানে ভূমিকা অংশে যেটা আলোচনা হয়েছে সেটা লেখকের কথা নাম দিলে ভালো হতো। 
৩) চরিত্র বা প্লট চিত্রায়নের সময় আমি একটা কথা বলি, 
আমি যেখানে বা যে পরিস্থিতিতে বা যার সাথে বসে কথা বলছি সেটা ইতোমধ্যে আমার মাথায় কাজ করছে, তাই সেটার বর্ণনা আম্র জন্য দরকার নেই কিন্তু পাঠকের জন্য দরকার। এটা না হলে পাঠকের গল্পে ঢুকতে পরিশ্রম করতে হয়। এই বইতে এই বিষয়টা খুব পিড়া দিয়েছে আমাকে। হুট করে চরিত্র আসছে, হুট করে ঘটনা শুরু হয়ে যাচ্ছে। 
৪) উপন্যাসটি আরো বিস্তৃত হওয়া দরকার ছিল, আরো অনেক আলচনা যুক্ত করা দরকার ছিল। প্রচুর চরিত্র, ও কথোপকথন আসছে আর যাচ্ছে, কোনটা কার কথা বা ঘটনা কি ঘটছে বুঝার আগেই মনে হচ্ছে নতুন ঘটনায় চলে যাচ্ছি। 
৫) অধ্যায়ের ভাগগুলো কীভাবে করা হয়েছে আমি বুঝিনি। একটা অধ্যায়ে প্রচুর ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। আলাদা আলাদা ঘটনার জন্য একটা গ্যাপ রাখা হয়েছে (এগুলোকে আলাদা অধ্যায় করা দরকার ছিল)। সম্পাদনাজনিত সমস্যার কারণে অনেক স্থানেই এই গ্যাপ নেই। ফলে পড়তে সমস্যা হয়েছে। 
৬) কথোপকথন; হুট করে কে কথা বলছে সেটা বুঝার উপায় নেই। অনেক সময় নতুন চরিত্র কথা বলা শুরু করেছে যার উপস্থিতি সেখানে ছিলোই না। (পেজ, ৭৭ ১২২, ১৩০)
৭) কিছু স্থানে অসামঞ্জস্য মনে হয়েছে, হয়তো প্লট তৈরির স্বার্থে, 
যেমন, নীলুফার বিপদে পড়েছে, সে একটা দোকানে বসেছিল। সেখানে কোনো সহযোগিতা চেয়েছে কি না আমরা জানি না। রাতে মাহিরের কাছ থেকে সহযোগিতা পেল। 
প্রথমে নিজে মাহিরের কাছে সহযোগিতা চাইলো এরপরে সে নিজেই মাহিরকে সন্দেহ করতে লাগলো। 
নীলুফার সারারাত বাড়ি ফিরেনি অথচ মাঝি শিমুলের সাথে ঠাট্টা করেছে? 
মোবাইলের যুগ, নীলুফার একটা ফোন করতে পারলো না? 

৮) নীলুদের টানাটানির সংসার, নিজেদের চলে না তার পরেও লজিং মাস্টার রাখা? যেখানে নীলু নিজেই অনার্স পাস সেখানে সেই তার বোনকে পড়াতে পারতো। পারিবারিক অবস্থার দরিদ্রতার সাথে লজিং মাস্টার আমার কাছে অসংগতি লেগেছে। 
৯) আমার কাছে নীলুকে কিঞ্চিৎ সিডাক্টিভ মনে হয়েছে। জানি না লেখক এই ধরণের চরিত্রেই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন কিনা। কেননা মাহির ও শিমুল দুই জনের সাথেই অপ্রস্তুত মুহুর্ত নিয়ে মজা কিছু ক্ষেত্রে ফ্লার্ট করতে দেখা গেছে। 
১০) অনেক চমৎকার লোকেশনের কথা বলা আছে কিন্তু সেগুলোর বর্ণনা নেই। (পেজ ৪৪) 
১১) কে কোথায় থাকে, কোথায় অফিস করে, কোনদিক দিয়ে যায় এগুলো অনেক ক্ষেত্রেই স্পষ্ট করা হয়নি। বা অনেক পরে করা হয়েছে। যেমন ৮৮ পেজে প্রথম জানতে পারি ১ম পেজে তাদের যে সাক্ষাতের কথা বলা হয়েছিল সেটা কোথায় ছিল।
১২) লেখক অনেকগুলো ভালো কথা বলার চেষ্টা করেছেন কিন্ত আমার মনে হয়েছে কম কথায় বিষয়টা শেষ করতে চেয়েছেন। ফলে অনেক প্রশ্নের এক লাইনের উত্তরের সাথে দুই চার লাইন নীতি কথা যোগ হয়ে গেছে। 
১৩) অনেক ক্ষেত্রে যার যেটা জানার কথা না তাকে সেই উপদেশ দিতে দেখা গেছে। যেমন নীলু নতুন ঢাকা এসেছে, রিক্সায় চলাচল করে। তার বাসের নীতি জানার কথা না। কিন্তু সে বাসে চলাচলের নিওম নিয়ে কথা বলেছে ৮৬ পেজে। 
১৪) অনেক স্থানে তথ্যগত একটু খটকা লেগেছে, 
বাড্ডা এলাকায় বস্তির কথা বলা হয়েছে অথবা গুলশানে রিক্সায় চলাচলের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া একটা নজরুল গীতি আছে, যেটা মাঝি গাচ্ছিল। হয় মাঝি ভুল গেয়েছে নতুবা দুইটা শব্দে ভুল করেছন লেখক। 
১৫) অনেক চরিত্রকে অপ্রয়জনে আনা হয়েছে। তাদের ঘটনাও দরকার ছিল না। কিন্তু গল্পে খারাপ লাগেনি। কিন্তু এতে করে বিশাল একটা উপন্যাসকে ঠেসে কয়েক পেজের ভেতর বন্দি করার মত মনে হয়েছে। যদি সম্ভব হয় লেখকের কাছে অনুরোধ থাকবে এটাকে আরো বিস্তৃত করা। ১৫০ পেজকে ৩০০ পেজে নিয়ে যাওয়ার জন্য। 

শেষ কথাঃ 
এখানে একটা গল্প আছে, পরামর্শ আছে, দিক নির্দেশনা আছে, সমাজের জন্য ভালো কিছু করার সংকল্প আছে। সমালোচনা করতে গেলে প্রতি পেজে সমালোচনা করার মত উপাদানও আছে। আর নতুন লেখক তাই সীমাবদ্ধতাও আছে। আপনারা অবশ্যই পড়বেন, যেন লেখক সাহস পায় এ ধরণের আরো উপন্যাস উপহার দেয়ার যেখানে তিনি সীমাবদ্ধতাকে ডিঙ্গিয়ে মহামূল্য সাহিত্য উপহার দিতে পারবেন। লেখকের প্রতি শুভ কামনা।


বইয়ের সংক্ষিপ্তসারঃ নীলুফার মূলতঃ আমাদের চারপাশের মানুষের জীবনের গল্প।যেই গল্পটি গ্রামের অতি সাধারণ এক মেয়ে নীলুফার কে কেন্দ্র করে এগিয়ে গেছে।নীলুফার এ আছে একটি মেয়ের স্বপ্ন পূরণ করার সংগ্রামের গল্প,আছে নির্মল প্রেমের গল্প।নীলুফার এ আছে একজন পুরুষ মানুষের দায়িত্ববোধের গল্প।




বইয়ের চরিত্র গুলোঃ

নীলুফারঃ বইটার নাম অনুসারে বইয়ের মূল চরিত্র।যাকে কেন্দ্র করে পুরো উপন্যাস টি লিখা হয়েছে।পরিবারের দ্বায়িত্ব নেয়া বাড়ির বড় মেয়ে,ছোট বোনের খেলার সাথী।কারো মনের স্বপ্ন সাজানো প্রেমিকা।




শিমুলঃ নীলুফাদের বাড়িতে থাকা লজিং মাস্টার।যে নীলুফারদের বাড়িতে থেকে তার ছোট ভাই বোন কে পড়ার বদলে তাদের বাড়িতে থাকে।




মাহিরঃ ঢাকা শহরে থাকা একটা ছেলে,যার সাথে কাকতালীয় ভাবে দেখা হয়ে যায় নীলুফার।কিছু দ্বায়িত্ব তখন এসে পড়ে তার ঘাড়ে।




পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ

প্রথমত বইটা আমার মোটামুটি ভালো লাগছে।প্রথম দিকে কিছু বিষয় তেমন যৌক্তিক মনে হয়নি,(যেমন ঢাকা শহরে দুটা ছেলে মেয়ে অনেক রাতে রাস্তায় রাস্তায় হাটবে এটা জানার পর ও যে পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যেতে পারে,মেয়ে টা না জানলেও ছেলেটা তো জানার কথা।)

বাকি পুরো উপন্যাস ভালো ছিল,লেখক খুব ভালো ভাবেই উপন্যাস টা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে,পড়তে গিয়ে বিরক্ত কাজ করেনি।শেষের দিকে আমি নিজেই দু'টানায় পড়ে গিয়েছিল মিল টা কার সাথে হতে পারে।ঠিক ভাবে ধরতে পারিনি শেষ টা কোন যায়গায় গিয়ে হতে পারে।সব মিলিয়ে কিছু ভালো সময় কেটেছে বইটার সাথে।


পছন্দের লাইনঃ

★মানুষ বেশিদিন মনের ভিতর কষ্ট পুষে রাখতে পারে না কিংবা কষ্ট পুষে রাখতে চায় না।কারণ কষ্ট আগলে ধরে বসে থাকলে মানুষ তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারে না।

ব্যাক্তি রেটিংঃ ৮/১০

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ