বই নৃসংশয় : তানিয়া সুলতানা | Nrisongsoy By Tania Sultana

  • বইঃ নৃসংশয় 
  • লেখিকাঃ তানিয়া সুলতানা 
  • প্রকাশকঃ বাতিঘর প্রকাশনী 
  • প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯
  • ঘরানাঃ সুপারন্যাচারাল নভেল
  • প্রচ্ছদঃ তানিয়া সুলতানা 
  • পৃষ্ঠাঃ ১৬০
  • মুদ্রিত মূল্যঃ ১৮০ টাকা 
  • ধরণঃ হার্ডকাভার 


কাহিনি সংক্ষেপঃ ছবির মতো সুন্দর একটা গ্রাম ধুন্দুলনাড়া। গ্রামের একপাশে বিশাল ডগলা বন, অন্যপাশে শান্ত সরলা নদী। এই গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই পেশায় কাঠুরে। এমনই এক কাঠুরের নাম ফরিদুর। ফরিদুর লোকটা একটু খিটখিটে মেজাজের। দুটো কন্যা সন্তান শরীফা ও বুলিকে জন্ম দিয়ে স্ত্রী নানান রোগে শয্যাগতা হয়েছে অনেকদিন হলো। এই কারণেই বোধহয় কাঠুরে ফরিদুরের তাবৎ নারী জাতির ওপর দারুন এক বিরাগ। সেই বিরাগ নিয়ে আর ডগলার বনে কাঠ কেটে বাজারে বিক্রি করে দিনকাল চলেও যাচ্ছিলো তার। কিন্তু হঠাৎ করেই ভয়াবহ এক পাপ করে ফেললো সে।

এক সন্ধ্যার প্রাক্কালে ডগলা বনের নির্জন এক স্থানে লাইলী নামের এক ষোড়শী কিশোরীকে একলা পেয়ে নিজের ভেতরের পাশবিক সত্তা জেগে উঠলো ফরিদুরের। অসহায় মেয়েটাকে ধর্ষণ করে খুন করলো লোকটা। এরপর গুম করে ফেললো লাশ। তার করা ভয়াবহ এই অপরাধই যে ফরিদুর সহ পুরো ধুন্দুলনাড়ার ভাগ্যাকাশ অশুভ কালো মেঘে ছেয়ে ফেলবে, তা কি সে ঘুণাক্ষরেও আন্দাজ কর‍তে পেরেছিলো!

কোন এক অদ্ভুত অলৌকিক শক্তির বলে ডগলা বনের আয়তন বাড়তে লাগলো। ছোট-বড় নানা জাতের গাছ, লতা আর কাঁটাঝোপ যেন রাতারাতি গজিয়ে উঠতে লাগলো বনের সীমানা ছাড়িয়ে। এমনকি ধুন্দুলনাড়া গ্রামের অধিবাসীদের বসতবাড়ির ভেতরেও অকস্মাৎ মাটি ফুঁড়ে মাথা তুলতে লাগলো বিশাল সব মহীরুহ। প্রকৃতির এই অলৌকিক ও অদ্ভুত খেয়াল শুধু এখানেই থেমে রইলোনা। অস্বাভাবিকভাবে মৃত্যু হতে লাগলো গ্রামের একের পর এক নারীর। এমন একটা অবস্থা হলো যে পুরো গ্রামটাই এক সময় নারীশূন্য হওয়ার উপক্রম হলো।

ক্ষণিকের পৈশাচিক রিপুর তাড়নায় করা ভয়াবহ এক পাপ যেন পুরো ধুন্দুলনাড়াকেই থমকে দিলো। বাইরের জগৎ বলেও যেন গ্রামবাসীর কাছে কিছু রইলোনা। গোপন এক অপরাধবোধ ভেতরে ভেতরে কুড়েকুড়ে খেতে লাগলো ফরিদুরকে। নারীর পাপ থেকে যদি এই পৃথিবীর যাত্রা শুরু হয়, তবে কি সেই প্রাচীন যাত্রার সমাপ্তি ঘটবে কোন পুরুষেরই পাপে? এমন প্রশ্ন বারবার খোঁচাতে লাগলো ফরিদুরকে।

সবাইকেই নিজ নিজ পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে হয় কোন না কোন সময়; এই পৃথিবীর বুকেই। কিন্তু পুরো একটা জনপদকে? হ্যাঁ, এখানে সেই গল্পটাই অমোঘ কোন নিয়তির মতোই ব্যক্ত করা হয়েছে।

পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ তানিয়া সুলতানার লেখনীতে কাব্যিক একটা আবহ লক্ষ্য করি সবসময়। 'নৃসংশয়'-ও এর ব্যতিক্রম না। ধর্ষণের মতো অমার্জনীয় ও ভয়ঙ্কর একটা অপরাধ করার পর সেটা চাপা দিলেই যে সবকিছু আগের মতো হয়ে যায়না, 'নৃসংশয়' যেন সেটারই সুলিখিত দলিল। একজন মানুষের কৃতকর্মের কারণে কিভাবে পুরো একটা গ্রামকে মাশুল দিতে হয় তার ভয়ঙ্কর কিছু বর্ণনা দিয়েছেন এখানে লেখিকা। পুরো ব্যাপারটাতেই ছিলো অতিপ্রাকৃতের ভয়াল ও বুক দুরুদুরু করা একটা ছোঁয়া। তানিয়া সুলতানা 'নৃসংশয়'-এ এমন এক জগৎ সৃষ্টি করেছেন, যা পাঠককে বারবার থমকে দেবে। প্রকৃতির প্রতিশোধ ও মানবমনের অন্ধকার দিকগুলো কতোটা আতঙ্ক জাগানিয়া হতে পারে, তা এই বইটা পড়ে আরো একবার বুঝলাম।

'নৃসংশয়'-এর প্রত্যেকটা চরিত্র একেবারে আলাদা ধরণের৷ বিশেষ করে কাঠুরে ফরিদুর, তার বন্ধু জাফর, সমকামী মদন, ফরিদুরের অসুস্থ স্ত্রী সামসুন্নাহার, মেয়ে শরীফা, দুশ্চরিত্র কাদের আলী, মসজিদের ইমাম সাহেব, চেয়ারম্যান খলিমুল্লাহ, বৃদ্ধ কৃষক মজিদ মিয়া সহ প্রত্যেকের ভূমিকাই ধীরে ধীরে অতিপ্রাকৃত এই কাহিনিটাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। দুনিয়ায় করা পাপের শাস্তি যে মানুষকে এই দুনিয়ার বুকেই পেতে হয়, কথাটা আসলেও সত্যি। 

তানিয়া সুলতানার কাব্যিক লেখনী কিছু কিছু স্থানে বেশ হৃদয়গ্রাহী মনে হলেও বেশ কিছু স্থানে বাহুল্য বলে মনে হয়েছে। প্রথমবার পড়ার পর কিছু বাক্য দুর্বোধ্য ঠেকার কারণে দ্বিতীয়বার পড়তে বাধ্য হয়েছি। এমনিতে লেখিকার গল্প বলার ধরণ বেশ সুন্দর ও সাবলীল। ছোট ছোট অধ্যায়ে লেখিকা বেশ ধীর-স্থিরতা নিয়েই গল্প বলে গেছেন। তবে উপন্যাসের একেবারে শেষটা একদমই 'শেষ হইয়াও হইলোনা শেষ' টাইপ মনে হয়েছে। ঠিক পরিস্কার হয়নি আমার কাছে শেষটা। কাব্যিকতার রহস্যে মুড়েই যেন হুট করে সব শেষ করে দিয়েছেন লেখিকা। ব্যাপারটা ভালো লাগেনি আমার কাছে। ছোটখাটো কিছু টাইপিং মিসটেকের দেখা পেয়েছি, যেগুলো ধর্তব্যের মধ্যে নিইনি। বইটা ২০১৯ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হলেও প্রকাশকালের জায়গায় লেখা হয়েছে ২০১৮। তানিয়া সুলতানার পরবর্তী প্রজেক্টগুলোর জন্য শুভকামনা থাকবে।

'নৃসংশয়'-এর প্রচ্ছদ করেছেন তানিয়া সুলতানা নিজেই। উনার আঁকার হাত যে লেখনীর মতোই অসাধারণ, সেটা বোধহয় না বললেও চলবে। তারপরও বলেই ফেললাম। 

ব্যক্তিগত রেটিংঃ ৩.৫০/৫
গুডরিডস রেটিংঃ ৪/৫

~ শুভাগত দীপ ~ 

(১২ মে, ২০১৯, দিবাগত রাত ১২ টা ১৯ মিনিট; নাটোর)

নৃসংশয় বইটি ক্রয় করুন :- Rokomari | Bookpointbd 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ