- এরদোগান : ইসলাম নাকি সেকুলারিজম?
- শাইখ ড. তারিক আব্দুল হালিম
- অনুবাদ : মুফতি আনাস আব্দুল্লাহ
- ক্যাটাগরি : পিডিএফ আকারে ডাউনলোড
- ফাইল সাইজ : ১.৪ এমবি মাত্র
সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য। দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর এবং তার পরিবারবর্গ, সাহাবা ও যারা তার সাথে বন্ধুত্ব রাখে, তাদের উপর। অত:পর:
আমি জানি, আমার এই গবেষণাটি এমন সময় সামনে এসেছে, যখন মানুষের মাঝে বিচিত্র ধ্যান-ধারণা ছড়িয়ে আছে। কেউ ঈমান-কুফরের সাথে সম্পর্কিত ফিকহের বিধি-বিধানের গণ্ডিতে আবদ্ধ থাকে। আর কেউ শরীয়তের লাগাম থেকে মুক্ত হয়ে নিজ প্রয়োজন ও প্রবৃত্তি অনুসারে বিচার করে। আর কাউকে পরাজিত মানষিকতা ও হীনমন্যতা সুনির্দিষ্ট বিশেষ কোন মতামত গ্রহণ করতে বাধ্য ও প্ররোচিত করে। যেমন ডুবন্ত মানুষ ভেসে যাওয়া খড়কুটো আকড়ে ধরে।
.
আমি এটাও জানি যে, অনেকের উপরই এ প্রবন্ধটি প্রভাব ফেলবে। কেউ আদবের সাথে জবাব দেবে আর কেউ গালিগালাজ ও বিদ্রুপ করবে। এটা প্রত্যেকের মৌলিক প্রকৃতি, বেড়ে উঠা, ইলম ও কোন জামাআতের সাথে তার সম্পৃক্ততার ওপর নির্ভর করে। কিন্তু এতদসত্ত্বেও আমি এর এমন ইলমী জবাব ও খণ্ডন দেখার আশা করি, যা পয়েন্ট টু পয়েন্ট দলিলের ভিত্তিতে হবে। যেমনটা আমি কোন কোন গবেষকের লেখাতে শরীয়ত বিরোধী কিছু দেখতে পেলে তার জবাব লেখার ক্ষেত্রে করে থাকি।
.
যে সকল বিষয়গুলো ব্যাপকভাবে সকল মানুষকে এবং বিশেষভাবে মুজাহিদগণকে ভাবিয়ে তুলেছে, তার মধ্যে অন্যতম হল রজব তাইয়েব এরদোগান। কেউ তার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে তাকে যুগের বাদশা ও যামানার খলিফা বানিয়ে ফেলেছে। তার মাঝে দেখতে পেয়েছে মুসলমানদের শক্তি ও সম্মান। কেউ মাঝামাঝি আছে, তারা বলে: সে মুসলিম, তাই তার সাহায্য-সহযোগীতা করা যায়। অপরদিকে কেউ বলে: সে কাফের, মুসলিম নয়। কাট্টা ধর্মনিরপেক্ষ। এরদোগান ধর্মনিরপেক্ষতার আলোকে শাসনকার্য পরিচালনা করে এবং ধর্মনিরপেক্ষতাকে সম্মান করে। তাই তার সাথে মুসলমানদের অনুরূপ মুআমালা করা জায়েজ নেই।
.
আসলে, অমুক-তমুকের কুফরীর ব্যাপারে কথা বলা আমার নিজের নিকটও একটি অপছন্দনীয় বিষয়। কিন্তু যখন এমন কোন বাস্তব কারণ পাওয়া যায়, যা এই সিদ্ধান্ত অনুসন্ধান ও প্রকাশ করা আবশ্যক করে তুলে, তখন উপায় থাকে না। কারণ তাকফির কোন শখের বিষয় নয়, যা দ্বারা কেউ তৃপ্তি মিটাবে। বরং এটা হল কেউ আল্লাহর রহমত থেকে বের হয়ে যাওয়া এবং তার স্থায়ী আযাবে নিপতিত হওয়ার ব্যাপারে ফায়সালা। যে এর হাকিকত বুঝে, তার নিকট এটা সবচেয়ে ভয়ংকর ও কঠিন বিষয়।
.
রজব তাইয়্যেপ এরদোগান একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। যিনি তুরস্ক ও সমগ্র অঞ্চলের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে আছেন। তার নিজ দেশের ইতিহাসে তিনি মর্যাদার উচ্চস্তরে পৌঁছেছেন। কারণ বিগত কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত তার রাজধানী ছিল খেলাফতের রাজধানী। উনিশ শতক পর্যন্ত তার দেশ পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী ও দীর্ঘস্থায়ী সাম্রাজ্যের কেন্দ্র ছিল। এছাড়া তার দেশের ভৌগলিক অবস্থান ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কারণে আঞ্চলিক ভূমিকাও তাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সক্রিয় ভূমিকা দান করেছে।
.
যে বিষয়টি নিয়ে আমরা কথা বলছি, তা অত্যন্ত জটিল বিষয়। কেউ এ বিষয়ে ফাতওয়া দিতে চাইলে তার উপর অবশ্য কর্তব্য হল, এর শাখাগত মাসআলাগুলো অনুসন্ধান করা, তার সূত্র ও দলিলগুলো যাচাই করা এবং তার ভিত্তিতে সঠিক হুকুম প্রয়োগ করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা-সামর্থ্য ব্যায় করা। শুধু সাধারণভাবে বর্ণিত হুকুমগুলো আরোপ করে দেওয়াই যথেষ্ট নয়। চাই তাকফীরের বিষয়ে হোক অথবা অন্য কোন বিষয়ে হোক।
.
এখানে ফায়সালার মূল পয়েন্ট হল:
.
ইসলাম ধর্মে কি এমনটা আদৌ জায়েয আছে যে, আল্লাহ ও তার রাসূলের ব্যাপারে সাক্ষ্য দেয় এবং ইসলামের কিছু কিছু নিদর্শন ও বিধি-বিধানও বাস্তবায়ন করে, এমন ব্যক্তিকে তাকে কাফের আখ্যায়িত করা হবে?
.
যদি জায়েয হয়, তাহলে প্রশ্ন হল:
.
যে সকল শাসক বা বিচারক মুখে ইসলামের কথা বলে এবং ইসলামের কিছু নিদর্শন ও বিধান বাস্তবায়ন করে, তারা কাফের হবে কিসের ভিত্তিতে?
.
এটাই হল মূল পয়েন্ট। আপনারা বুঝতেই পারছেন যে, বিষয়টি অত্যন্ত জটিল। যেহেতু এর শাখা-প্রশাখাগুলো ইলমে তাওহিদ ও আকায়েদের অংশ। আবার ‘দার’ এর বিধি-বিধান ও রিদ্দার মাসায়েলের বিবেচনায় ইলমে ফিকহেরও অংশ।
.
যাতে এ মাসআলার গ্রন্থিগুলো পার্টে পার্টে খুলতে পারি এবং তার যথার্থ বিশ্লেষণ করতে পারি, তার জন্য আমরা এ মাসআলায় শুধু ইলম ও ইনসাফের ভিত্তিতে আগাবো। নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর আলোকে আমরা আলোচনা করবো:
.
১. ইসলাম ধর্মে কি এটা আদৌ জায়েয আছে যে, একজন ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ব্যাপারে সাক্ষ্য দেয় এবং ইসলামের কিছু কিছু প্রতীক ও বিধান পালন করে, এমতাবস্থায় তাকে কাফের আখ্যায়িত করা হবে?
.
২. সর্বসম্মত ও দ্ব্যর্থহীন কুফরী কাজে লিপ্ত হওয়া অবস্থায়ও কি কারো প্রকৃত ইসলাম বাকি থাকতে পারে?
.
৩. ইসলাম ও কুফরের বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে একজন সাধারণ মানুষ আর শাসক বা বিচারক শ্রেণীর মাঝে পার্থক্য এবং ফাসেক শাসক ও কাফের শাসকের মাঝে পার্থক্য।
.
৪. ইসলাম ও কুফরের সাথে সংশ্লিষ্ট শরীয়তের বিধানাবলীতে কোন একজন ব্যক্তির উপর বিধান আরোপ করা, আর একটি জামাতের উপর বিধান আরোপ করার মাঝে পার্থক্য।
.
৫. ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের (Secularist) দ্বারা শাসিত দেশের হুকুম।
.
৬. ‘ইকরাহ’ বা বলপ্রয়োগ কখন সাব্যস্ত হবে? ব্যক্তির ক্ষেত্রে এর বিধান কী এবং জামাতের ক্ষেত্রে তার বিধান কী?
.
৭. এরদোগান সম্পর্কে মতামত কি?
.
উপরোক্ত বিষয়গুলো প্রসঙ্গে আল্লাহর উপর ভরসা করে আমরা বলবো:
.
১. ইসলাম ধর্মে কি এটা আদৌ জায়েয আছে যে, একজন ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূলের ব্যাপারে সাক্ষ্য দেয় এবং ইসলামের কিছু কিছু প্রতীক ও বিধান পালন করে, এমতাবস্থায় তাকে কাফের আখ্যায়িত করা হবে?
.
উত্তর স্পষ্ট। হ্যা, জায়েয আছে। এমন ব্যক্তিকে কাফির আখ্যায়িত করা যেতে পারে। বরং এটা দ্বীনের অতি সাধারণ জ্ঞাতব্য একটি বিষয়। কারণ আল্লাহ তা’আলা জন্মগত কুফরী আর রিদ্দা বা ধর্মত্যাগের কুফরীর মাঝে পার্থক্য করেছেন। জন্মগত কাফির হল, যে অমুসলিম পিাতামাতার ঘরে জন্মগ্রহণ করেছে। চাই আহলে কিতাব হোক বা অন্য ধর্মাবলম্বী হোক। আর মুরতাদ হল যে, মুসলিম হিসাবে জন্মগ্রহণ করেছে অথবা জন্মের পর সেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করেছে, তারপর ইসলাম থেকে বের হয়ে গেছে। আল্লাহ তা’আলা বলেন:
.
وَمَنْ يَرْتَدِدْ مِنْكُمْ عَنْ دِينِهِ
.
“তোমাদের মধ্যে যে স্বীয় দ্বীন থেকে ফিরে যায়”।
.
তাহলে আল্লাহ তা’আলা এমন একশ্রেণীর মানুষ থাকার কথা জানালেন (যারা মুসলিম হবার পর কাফিরে পরিণত হয়)। এটা স্পষ্ট। কোন সংশয় নেই। কিন্তু আমাদের আলোচনা হল এমন এক ব্যক্তির ক্ষেত্রে, যার বাহ্যিক অবস্থা ইসলাম ও কুফরের মাঝে সংমিশ্রিত হয়ে গেছে। সুতরাং আমাদের আলোচনা করতে হবে, নির্দিষ্ট ব্যক্তি, দল বা গ্রুপের উপর কুফরের হুকুম আরোপ করার মাসআলা নিয়ে। প্রথমে আমরা ব্যক্তির বিষয়টি দেখবো, কেননা এটাই হল মৌলিক একক, যার উপর অন্য সব বিষয় ভিত্তি করে।
.
আমরা জানি যে, তাওহিদ হল:
.
১. আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলাকে জানা, তার জন্য উপযুক্ত সিফাতগুলো সাব্যস্ত করা এবং তার থেকে অনুপযুক্ত বিষয়গুলো নাকচ করা। যেমন শরীক বা উপমা সাব্যস্ত করা। সন্তান বা পিতা সাব্যস্ত করা কিংবা জিন বা ফেরেশতাদের সাথে বংশীয় সম্বন্ধ করা।
.
২. যা জানলাম, তা তাসদীক করা, অর্থাৎ সত্য বলে বিশ্বাস করা।
.
তাসদীক এর ক্ষেত্রে তিন ধরণের মতামত রয়েছে:
.
(ক) তাওহিদ বাস্তবায়িত হওয়ার জন্য তাসদীক আবশ্যক নয়। যেমনটা কাররামিয়া সম্প্রদায় বলে থাকে। এই শ্রেণীটি ধর্ম থেকে বের হয়ে গেছে।
.
(খ)কেউ তাসদীক বলতে বোঝায় শুধু সংবাদ বা সংবাদদাতাকে সত্যবাদী বলা। অর্থাৎ আমরা যা জানলাম, তা সত্য, সঠিক ও নিশ্চিত। কিন্তু এতটুকুর পরে এটা আর কিছু আবশ্যক করে না। এরা হল সীমালঙ্ঘনকারী মুরজিআ (গ্বুলাত আল-মুরজিআ) শ্রেণী। এ মতের কারণে তারা মুসলিমদের অন্তর্ভূক্ত নয়। কারণ অনেক খৃষ্টান ধর্মীয় গুরুও তাসদীক করেছে, কিন্তু তা তাদেরকে কুফর থেকে মুক্তি দেয়নি। যেমন উবাইয়ের ঘটনা।
.
(গ) কেউ বলে, এই তাসদীক দ্বারা তাওহিদ সহিহ হওয়ার জন্য শর্ত হল: এটা সামগ্রীকভাবে আমলকেও আবশ্যক করতে হবে। এরা হল সাধারণভাবে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ।
.
অত:পর আহলুস সুন্নাহ আবার দুই দলে বিভক্ত। প্রথম দলটি হানাফিদের। তারা বলে এ তাসদীকটিই বিশেষ এক ধরণের তাসদীক। মুরজিআরা যেমনটা বলে, তেমন নয়। সুতরাং এ তাসদিকের ভেতরেই, আবশ্যকীয় শর্তরূপে আমল ঈমানের পূর্বশর্ত হওয়ার স্বীকারোক্তিও আছে।
.
দ্বিতীয় দল হল: সাধারণ আহলুস সুন্নাহর। তাদের মত হল মারিফা (তথা শুধু জানা) ও তাসদীকের পরও ঈমানের তৃতীয় আরেকটি অংশ রয়েছে। তা হল নিজের ওপর আমল ও অনুশাসনগুলো আবশ্যক করে নেয়া। অর্থাৎ স্বীকারোক্তি দেয়া, আনুগত্য করা ও আত্মসমর্পণ করা। তাই এটা তাওহিদ ও ঈমানের ভেতরগত একটি অংশও। শুধু পূর্বশর্ত নয়।
.
সুতরাং বুঝ আমাদেরকে এই সিদ্ধান্তের দিকে পৌঁছায় যে, প্রকৃতপক্ষে তাওহিদ শুধু শাহাদাহ উচ্চারণ করা নয়। বরং তা হল তার শব্দগুলো জানা, অর্থগুলো বিশ্বাস করা, স্বীকারোক্তি দেওয়া ও সে অনুযায়ী আমল করা। যেমনটা ইবনুল কায়্যিম রহ. উল্লেখ করেছেন।
.
এ থেকে এ মাসআলা বের হয়ে আসে যে, যে অসম্পূর্ণ কথার কোন অর্থ নেই, তার কারণে আল্লাহ সাওয়াব দিবেন না। এর উদাহারণ হল: সুফীরা যে একক শব্দ ‘আল্লাহ, আল্লাহ’ বলে তাসবীহ জপে। এটা বিদআত। যেহেতু এটা কোন অর্থবোধক বাক্য নয়। একারণেই আপনারা দেখেন যে, সুন্নাহ দ্বারা বর্ণিত তাসবীহগুলো পূর্ণ বাক্য হয়। যেমন سبحان الله , (সুবহানাল্লাহ) الحمد لله,(আলহামদু লিল্লাহ) الله أكبر (আল্লাহু আকবার) এবং এ জাতীয় আরো বাক্যগুলো। কারণ কোন শব্দকে এমনি এমনি গঠন করা হয়নি। বরং নির্দিষ্ট কতিপয় অর্থ বোঝানোর জন্যই গঠন করা হয়েছে।
.
আমাদেরকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ কালিমাটাও এভাবেই বুঝতে হবে। এভাবেই আরবগণ বুঝেছেন, যারা উক্ত ভাষার লোক। একারণেই আমরা দেখি, শাফাআতের হাদিসে যা এসেছে- “যে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে, সেই জান্নাতে প্রবেশ করবে”- এর বিপরীতে স্বয়ং বুখারী মুসলিমের মত সহীহ হাদিসের কিতাবগুলোতেই ভিন্ন শব্দেও হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে। যেমন কোথাও এসেছে: من قال ‘যে বলবে’, কোথাও এসেছে:من عبد الله وكفر بما دونه ‘যে আল্লাহর ইবাদত করে এবং অন্য সব কিছুকে প্রত্যাখ্যান করে’, কোথাও এসেছে: من وحد الله وكفر بما دونه ‘যে আল্লাহকে এক মানে এবং অন্য সবকিছুকে প্রত্যাখ্যান করে’। এ সবগুলোই সহীহাইনের সুপ্রমাণিত হাদিস।
.
তাই শাহাদাতাইন হল তাওহিদের শিরোনাম। এটাই পরিপূর্ণ তাওহিদ নয়। বরং স্বয়ং কুরআনেই সূরা আলে ইমরানের ৬৪ নং আয়াতে এ বিষয়টিকে পরিস্কার করা হয়েছে। সেখানে ‘কালিমা’র ব্যাখ্যা এসেছে এভাবে: আল্লাহ বলেছেন -
.
قُلْ يَاأَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْا إِلَى كَلِمَةٍ سَوَاءٍ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَلَّا نَعْبُدَ إِلَّا اللَّهَ وَلَا نُشْرِكَ بِهِ شَيْئًا وَلَا يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَقُولُوا اشْهَدُوا بِأَنَّا مُسْلِمُونَ
.
“তুমি বলে দাও, হে কিতাবী সম্প্রদায়! তোমরা এমন কালিমার দিকে আসো, যেটা আমাদের মাঝে এবং তোমাদের মাঝে একই রকম। তা হল ‘আমরা আল্লাহ ব্যতিত কারো ইবাদত করবো না, তার সাথে কাউকে শরীক করবো না এবং আমাদের একদল আরেকদলকে রব রূপে গ্রহণ করবে না।’ অত:পর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে বলে দাও, তোমরা সাক্ষী থাক: আমরা মুসলিমদের অন্তর্ভূক্ত।”
.
তাই ইবরাহীম আলাইহিস সালাম পরবর্তী প্রজন্মের জন্য যে কালিমা রেখে গেছেন, তা হল তাওহিদের কালিমা বা কালিমাতুস সাওয়া বা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর সাক্ষ্য দেওয়া। আর তা হল: আল্লাহ তাআলার ইবাদত করা এবং তার সাথে কাউকে শরীক না করা। শুধু মুখে উচ্চারণ করা নয়। সুতরাং যে এ থেকে কম করবে, তার তাওহিদ বাস্তবায়িত হবে না।
.
কিন্তু কেউ বলতে পারে, এটা তো প্রকৃত ইসলামের হুকুম আরোপের ক্ষেত্রে, কিন্তু দুনিয়ার প্রকাশ্য অবস্থার ক্ষেত্রে কি হবে? আমরা কিভাবে, আনুগত্য ও আত্মসমর্পণের বিষয়গুলো বুঝবো? অর্থাৎ লোকটি যে দ্বীনের অনুশাসনকে মেনে নিয়েছে, সেটা কিভাবে বুঝবো?
.
আমরা বলবো: ঠিক আছে, প্রকৃত ইসলাম আর বাহ্যিক ইসলামের মাঝে পার্থক্য আছে। আমরা দুনিয়াতে যত বিধি-বিধান প্রয়োগ করি, সেটা ব্যক্তির প্রকাশ্য কথা ও কাজের ভিত্তিতে। তার অভ্যন্তর বা নিয়তের ভিত্তিতে নয়। কারণ সবচেয়ে বড় সূত্র এবং শরীয়তের নীতি হচ্ছে “প্রকাশ্য কাজ”। তারপর অন্তরের বিষয়ের দায়িত্ব আল্লাহর হাতে। সুতরাং যার থেকে ইসলাম প্রকাশ পাবে, তাকে কলুষিতকারী কোন কিছু না পাওয়া যাবে, সে মুসলিম। আর যার থেকে ইসলাম প্রকাশিত হবে, কিন্তু নিশ্চিত কুফরও প্রকাশিত হবে, সে আমাদের নিকট মুসলিম নয়। এরপর তার দায়িত্ব আল্লাহর হাতে। এটা আকিদা, ফিকহ ও উসূলে ফিকহের একটি স্বীকৃত ও সুসাব্যস্ত বিষয়।
.
এখন কেউ যদি বলে - তাহলে যে আমাদের সামনে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ও মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ এর সাক্ষ্য দেয়, শুধু তাই নয়; ইসলামের কিছু প্রতীকও ধারণ করে, এবং নিজের ইসলামের ব্যাপারে ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিদের সাক্ষ্য পেশ করে, তাকে তো স্বয়ং এই সূত্রের ভিত্তিতেই মুসলিম বলে গণ্য করা আবশ্যক হয়ে পড়ে।
.
তার উত্তরে আমরা অকাট্যভাবে বলবো: শরীয়ত এমনটাই বলে। এর বিপরীত বলে কেবল খারিজীরা। কিন্তু জটিলতা সৃষ্টি হবে সে সময়, যখন স্বয়ং এ ব্যক্তিই এমন বিষয়ের সাথে যুক্ত হবে, যা তার স্বীকারোক্তি ও আনুগত্য না থাকাকে প্রকাশ করবে - অর্থাৎ তার তাওহিদকে কলুষিত করে। এমতাবস্থায় কোন বাহ্যিক অবস্থাকে আমরা কার্যকর ধরবো?
.
সমস্ত উলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত যে, ব্যক্তি কোন নিশ্চিত শিরকের সাথে জড়িত হওয়ার দ্বারা ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। এমনকি কেউ যদি ইসলামের সমস্ত বিধি-বিধানগুলোও পালন করে, তথাপিও। যেমন ধরুন একজন পর্দার বিধানকে অস্বীকার করে, অথচ সে নামায পড়ে, রোজা রাখে এবং প্রতি বছর বাইতুল্লায় হজ্জ করে, তাহলে সে কাফির। আল্লাহকে অস্বীকারকারী। সে তার স্বীকারোক্তিকে যথাযথভাবে পূর্ণ করেনি।
.
এ হিসাবেই উলামায়ে কেরাম ইসলাম ভঙ্গকারী বিষয়গুলোকে স্পষ্ট করেছেন। কেউ কেউ সবগুলোকে সংক্ষেপে দশটি বিষয়ের মধ্যে নিয়ে এসেছেন। যদিও বিশ্লেষণ ও সংক্ষেপণের ক্ষেত্রে সংখ্যা পরিবর্তন হয়ে যায়। পাঠকদের জন্য সে সকল ইসলাম ভঙ্গকারী বিষয় ও তার সীমাগুলো জানা অত্যন্ত জরুরী। আমি স্বতন্ত্র একটি প্রবন্ধের মধ্যে তার ব্যাখ্যা করেছি।
.
যেহেতু ইমান ভঙ্গকারী বিষয়ে লিপ্ত হওয়ার কাজটি প্রকাশ্য, তাই দুনিয়াতে কারো উপর হুকুম আরোপ করার ক্ষেত্রে তা বিবেচনা করা আবশ্যক। কোন মুফতি বা কাজীর পক্ষে এগুলো এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব না। যেমন কেউ আল্লাহ ও তার রাসূলের (সাল্লাআল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ব্যাপারে সাক্ষ্য দিল, কিন্তু তারপর সে কুরআন শরীফ পুড়িয়ে দিল বা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গালি দিল।
.
এখানে যে ব্যাপারটাতে আমরা মুরজিয়াদের থেকে আলাদা হয়ে যাব, বিশেষ করে এ যুগের মুরজিয়াদের সাথে যে বিষয়টি আমাদের পৃথক করে দেবে,
তা হলো আল্লাহর শারীয়াহ অনুযায়ী বিচার ও শাসন ছেড়ে দেয়া - এটা ঈমান ভঙ্গকারী বিষয় না?
Read More Online Or Download এরদোগান : ইসলাম নাকি সেকুলারিজম? PDF - Erdogan : Islam Naki Secularism?
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....