বই : যদ্যপি আমার গুরু
লেখক: আহমদ ছফা
ধরন : স্মৃতিকথামূলক
প্রচ্ছদ: কাইয়ুম চৌধুরী
পৃষ্ঠা: ১১০
গায়ের মূল্য :১৭৫টাকা
রেটিং: ৫/৫
রিভিউ দাতা প্রিয় দর্শীনি
১৯৭০সালের কথা বাংলা একাডেমি ৩বছরের ফেলোশিপ প্রোগ্রামে প্রার্থীদের কাছ থেকে আবেদনপত্র আহ্বান করে সংবাদপত্রে একটা বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে। বন্ধুবান্ধব সকলে আবেদনটা করতে বলে। যদি বৃত্তিটা পাই গবেষণা হয়তো হবে না হলেও ক্ষতি নেই। কিন্তু তখনও আমার এমএ পরীক্ষা শেষ হয়নি। পরীক্ষার ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করলে দরখাস্ত করার সময় পেরিয়ে যাবে। তাই দেরি না করে দরখাস্তটা করেই ফেললাম। কিন্তু ইন্টারভিউবোর্ডের সামনে যখন হাজির হলাম তখন এমএ শেষ না হওয়ায় নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। অবশেষে প্রচলিত নিয়ম ভেঙ্গে আমাকে পিএইচডি করার সুযোগ দেয়া হয়। আর আমার পিএইচডি থিসিসের পরামর্শক হিসেবে একজন জ্ঞানী শিক্ষক খুঁজতে শুরু করি। সকলে একজনের কথা বলে।তিনি হলেন প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক।
যিনি বাঙ্গালি মুসলমান সমাজের ঐত্যিহাসিক অহংবোধের প্রতীক। যার মুখে ঢাকার আঞ্চলিক বুলি লেগেই থাকে। যার জীবন পাকিস্তান আন্দোলন,ভাষা আন্দোলন, মুক্তিসংগ্রামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই জ্ঞান গরিমা সম্পন্ন মানুষটি সম্পর্কে জানতে বইটি পড়তে হবে।
আচ্ছা এমন মহান ব্যক্তির সান্নিধ্য পেয়ে কি আহমদ ছফা তার পিএইচডি শেষ করতে পেরেছিলেন?
এই প্রশ্নের উত্তর জানতে বইটি পড়তে হবে।
লেখক এবং বই সম্পর্কে আমার মতামত: রেটিং এ আমি ৫/৫ দিয়েছি। কারন এই বইটি তে কীভাবে একজন শিষ্য তার গুরুর সান্নিধ্য লাভ করতে পারে তারই প্রতিচ্ছবি। একজন শিক্ষক তার ছাত্রের কাছে কেমন হতে পারে তা এই রচনাটিতে বিদ্যমান। লেখকের ব্যক্তিগত প্রকাশ এবং স্যার আব্দুর রাজ্জাকের আঞ্চলিক বাচনভঙ্গি আমার অসম্ভব ভালো লেগেছে।
বইটিতে দুজন মানুষের আলাপচারিতার মাধ্যমে উঠে এসেছে নানান তথ্য। এপার বাংলা ওপার বাংলার নান ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন বই। সর্বোপরি আমি মনে করি সকলের বইটা পড়া উচিত।
সমালোচনা : যেহেতু রেটিং এ আমি ৫/৫ দিয়েছি সেহেতু বই এবং লেখক সম্পর্কে আমার কোনো সমালোচনা নেই।
প্রিয় কিছু লাইন:
১। মাতৃস্তন্যে শিশুর যেমন অধিকার,শিক্ষকদের স্নেহের উপরও ছাত্রেরও তেমন অধিকার থাকা উচিত।
২। লেখক যখন আ.রাজ্জাককে তার থিসিসের বিষয়টি বলেন তখন আ.রাজ্জাক বলেন ;এক্কেরে তো সাগর সেঁচার কাম।
৩। যখন কোনো নতুন জায়গায় যাইবেন দুইটা বিষয় পয়লা জানবেন। ঐ জায়গার মানুষ কি খায়, আর কি পড়ালেখা করে।
৪। ক্ষেত চাষবার সময় জমির আইল বাইন্ধ্যা রাখতে অয়।
৫। অনেক সময় উৎকৃষ্ট বীজও পাথরে পড়ে নষ্ট হয়।
৬। পুষ্টিকর খাবারের দুষ্প্রাপ্যতাই স্বাস্থ্যহানির কারন।
৭। বাংলা ভাষাটা বাচাইয়া রাখছে চাষাভুষা,মুটেমজুর -এরা কথা কয় দেইখ্যাই ত কবি কবিতা লেখে।
৮। দেশ মানে ত দেশের মানুষ, মানুষই অইল গিয়া দেশের শক্তি।
৯। যে জাতি যত বেশি সিভিলাইজড তার রান্নাবান্নাও তত বেশি সফিস্টিকেটেড।
১০। যদি আর কিন্তু দিয়ে ইতিহাস হয়না, যা ঘটে গেছে তাই ইতিহাস।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....