বইয়ের নাম : যখন ছোট ছিলাম pdf download free
লেখকের নাম : সত্যজিৎ রায় বই পিডিএফ
বইয়ের ধরণ : আত্মজীবনী মুলক বই pdf
প্রকাশন : আনন্দ পাবলিশার্স বই pdf
প্রথম প্রকাশ : ১ বৈশাখ, ১৩৮৯ বঙ্গাব্দ
প্রচ্ছদ : সত্যজিৎ রায়
মুদ্রিত মূল্য : ১০০৳
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৭৫
Review Credit 💕 Mursalin Manon
"Jokhon Soto Chilam By Satyajit Ray Books PDF Are You Read This Book Before? Jokhon Soto Chilam Most Popular Novel & It's Writing By Satyajit Ray. We Added This Book 'Jokhon Soto Chilam' PDF Download Free Link Below. Also Read This Jokhon Soto Chilam By Satyajit Ray Review. Ray is the creator of two of the most popular characters in Bengali literature. One is the native detective Feluda, the other is the scientist Professor Shanku"
চলচ্চিত্র নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার, চিত্রশিল্পী, শিল্প নির্দেশক, সংগীত পরিচালক এবং লেখক - এই পরিচয়গুলো সবগুলোই তাঁর। এ ক্ষেত্রগুলোর কোনোটিতেই তাঁর পরিচিতির কোনো কমতি নেই। সবখানেই তিনি সমুজ্জ্বল। আলাদা করো তাঁর নাম বলার আছে বলে মনে হয় না। তাঁর খ্যাতিই তাঁর নাম। হ্যাঁ, আমি উপমহাদেশের অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের কথাই বলছি। কলকাতার ১০০ নং গড়পার রোডের বিখ্যাত সেই রায় বাড়িতে ক্ষণজন্মা এই মানুষটির জন্ম ১৯২১ সালের ২রা মে। কলকাতায় জন্ম হলেও তাঁর পূর্বপুরুষের ভিটা ছিল তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের কিশোরগঞ্জে (বর্তমানে বাংলাদেশ) কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া গ্রামে। সংস্কৃতির ক্ষেত্রে একমাত্র ঠাকুর পরিবারের সঙ্গেই এই পরিবারের তুলনা চলে। পিতামহ উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী ছিলেন বাংলা শিশু সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব। আর বাবা সুকুমার রায় বাংলা সাহিত্যের ননসেন্স ও শিশু সাহিত্যের সেরা লেখকদের একজন। দক্ষ চিত্রকর ও সমালোচক হিসেবেও সুকুমারের খ্যাতি ছিল। জন্মের সাড়ে পাঁচ বছর আগে ঠাকুরদা আর আড়াই বছর বয়সে পিতাকে হারালেও রায় পরিবারের সাংস্কৃতিক আবহকে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন সত্যজিৎ।
ঠাকুরদার আমল থেকেই পৈতৃক ছাপাখানার ব্যবসা ছিলো তাঁদের। পিতার মৃত্যুর পর ছাপাখানার এই ব্যবসার অবনতি হতে থাকলে একসময় গড়পারের ঐ বাড়িটা তাঁদের ছেড়ে চলে আসতে হয়। ভবানীপুরে সত্যজিতের মামার বাড়িই হয় তাঁদের নতুন ঠিকানা। তবে গড়পারের সেই বাড়িতেই মনে পড়ে থাকে শিশু সত্যজিতের। মনে পড়ে বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র গবেষণাগারের কথা। গড়পারের তাঁর বিকেলগুলো কাটতো বিজ্ঞানীদের বাসায়। ওপর বাংলার নামকরা এই বিজ্ঞানী তখন ভাড়া থাকতেন আপার সার্কুলার রোডের একটা বাড়িতে।
Agatha Christie
আরো মনে পড়ে ধনদাদুর কথা। ছবি এনলার্জ করাটা ছিলো ধনদাদুর আসল কাজ। প্রথমত ছবি সম্পর্কে ধনদাদুর কাছ থেকেই জানতে পারে সে। আরও কতশত! যে গল্প হতো ধনদাদুর সাথে। ভবানীপুরে আসার পথে ধনদাদুকে বড্ড বেশি মিস করে সত্যজিৎ।
গড়পার ছেড়ে ভবানীপুরে চলে আসার পরে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক পরিবেশে পড়ে যায় ছ'বছরের শিশু সত্যজিৎ। ভবনীপুরে সোনামামার বাড়িতে ওঠে ওরা। এ বাড়িতে বেশিরভাগ একা একা কাটে সত্যজিৎ। সঙ্গী বলতে কেউই নেই এখানে। ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে বই পড়ার অভ্যাস। অনেক ভারী ভারী বইও যে এ সময়ে পড়ে ফেলে সে। এছাড়া বইয়ের পাশাপাশি সময় কাটানোর জন্য তাঁর সঙ্গী ছিলো একটি বিশেষ যন্ত্র, যার নাম "স্টিরিওস্কোপ"। ভিক্টোরিও যুগের এ আবিস্কারকে দেখে সত্যিই হতবাক সে।
সোনামামার বদৌলতে সার্কাস, ম্যাজিক, বায়োস্কোপ এসব দেখার সুযোগ হতো তাঁর। পরবর্তীতে মাঝে-মধ্যে ছবি-টবিও দেখা হতো। মামা ও মাসিরা বেশ দূরে দূরে থাকতেন বলে বেশ ঘোরঘুরিও হয়েছে এসময়। পাটনা থেকে লকনৌ আরও কত সুন্দর সুন্দর স্থান। কাঞ্চনজঙ্ঘার অপার সৌন্দর্য শিশু সত্যকে মুগ্ধ করেছে বারবার। ভবানীপুরে থাকাকালীন সময়ে পিতৃপক্ষের কারও সাথে যোগাযোগ বলতে তা ঐ ছোট কাকার সাথেই ছিলো। ছোট কাকার নিয়মিত যোগাযোগ ছিলো এ বাড়িতে। তাই হয়তো গড়পারের নিজ বাড়িটার কথা কিছুটা হলেও কম মনে পড়ত।
সাড়ে আট বছর বয়সে বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট হাই স্কুল থেকে তাঁর স্কুল জীবনের শুরু। স্কুল জীবনের চেয়ে মজাদার স্মৃতি আর কোনো সময়ে হয় বলে মনে হয় না। স্কুল জীবনের শুরুতে হেড মাস্টার হিসেবে পেয়েছিলেন নগেন মজুমদারকে। বেশ কড়া ধরনের মানুষ ছিলেন। ক্লাসের পিছনে তাঁরা তাকে 'নগা' বলেই ডাকত। এ স্কুল পড়াকালীন সময়ে তিনি বাংলার শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন অপাড় বাংলার বিশিষ্ট কবি গোলাম মোস্তফাকে। খুবই কোমল স্বভাবের মানুষ ছিলেন তিনি। এক থেকে নয় পর্যন্ত ব্ল্যাকবোর্ডে লিখে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন অংকের শিক্ষক যোগেশবাবু।
Ahmed Sofa
মায়ের সাথ একবার গিয়েছিলেন শান্তিনিকেতনের পৌষমেলায়। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছ থেকে অটোগ্রাফ পেয়েছিলেন সেদিন। সেবারই তিনি জুুদোর নমুনা দেখেছিলেন। জাপানী এই কালচারের প্রতি বেশ আগ্রহ ছিলো তাঁর বরাবরই। অবশ্য এ ব্যাপারে তাঁর ছোটকাকাই তাঁকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলো।
ছোটবেলার এমন অনেক অনেক স্মৃতি তিনি বর্ণনা করে গেছেন "যখন ছোট ছিলাম"-নামক আত্মজীবনীমূলক বইটিতে। 'সন্দেশ' পত্রিকায় সত্যজিৎ রায়ের এ স্মৃতিগুলো ধারাবাহিকভাবে দুই পর্বে প্রকাশিত হয়েছিলো। 'সন্দেশ' পত্রিকার সাথে তাঁর অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। এ পত্রিকায় তাঁর বাবার সময়ে নিয়মিত তাঁদের বাড়ির ছাপাখানা থেকেই বের হতো। বাবার মৃত্যুর পরে দীর্ঘদিন আর এ পত্রিকা বের হয়নি। পরবর্তীতে তিনি আবার এ পত্রিকা বের করেছিলেন বলে জানা যায়।
আমাদের সাধারণ মানুষের জীবনে নানা চড়াই-উতরাই আসে। দেখা যায় কখনো কখনো আমরা প্রচন্ড ভেঙে পড়ি। তবে জীবনের বাঁকে বাঁকে উত্থান-পতন এসেছে বহু মনীষীদের জীবনেও। তাঁদের জীবনী আমরা যখন পড়ি তখন এ গল্পগুলো জানতে পারি। শিক্ষা নিতে পারি তাঁদের জীবন থেকে। হতাশ জীবন থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করি। গল্প-উপন্যাসের পাশাপাশি আত্মজীবনীমূলক বইও আমাদের পড়া উচিৎ বলে আমি মনে করি। সত্যজিৎ রায়ের "যখন ছোট ছিলাম" তেমনই একটি বই। অস্কারজয়ী এ নির্মাতার জীবনের চলার পথও সবসময় মসৃণ ছিলো না। দেখেছি কিশোর সত্যকে। জানার চেষ্টা করেছি সত্যজিতের ভিতরে লুকিয়ে থাকা অন্য এক সত্যজিতকে।
ছবি আঁকায় সত্যজিৎ -- ' যখন ছোট ছিলাম ' বইতে সত্যজিৎ রায় জানিয়েছিলেন, ' যে জিনিসটা ছেলেবয়স থেকে বেশ ভালোই পারতাম সেটা হল ছবি আঁকা।' আসলে যে সমস্ত ক্ষেত্রে সত্যজিতের প্রতিভার চূড়ান্ত বিকাশ দেখা দিয়েছে, তার মধ্যে একমাত্র ছবি আঁকাটাই তিনি শিখেছিলেন প্রথাগত তালিমের মধ্যে দিয়ে। ফাইন আর্টের পরিবর্তে কমার্শিয়াল আর্টেই বেশি আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও ভর্তি হলেন কলাভবনে। নন্দলাল বসু কিংবা বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় ছিলেন তাঁর সেই অনাবিষ্কৃত ' ঐশ্বর্যময় জগতের দরজাটা ' খুলে দেওয়ার প্রধান দায়িত্বে। চার বছরের পরিবর্তে আড়াই বছরেই সেখান থেকে ফিরে এলেন কলকাতায়। এবং পেশাদারী জগতে কাজের শুরু। বাকিটা ইতিহাস।
Anish Das Apu
প্রথমে ডি. জে. কিমারে জুনিয়র আর্টিস্ট হিসেবে যোগদান। এরপর সিগনেট প্রেস। আম আঁটির ভেপুতে অলঙ্করণ। তারপর সুকুমার রায়ের পাগলা দাশু, কামাক্ষীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের ছাতুবাবুর ছাতা, অবন ঠাকুরের ক্ষীরের পুতুল, উপেন্দ্রকিশোরের ছোট্ট রামায়ণ, সুকুমার রায়ের ঝালাপালা, নরেশ গুহর দুরন্ত দুপুর, বা জীবনানন্দের রূপসী বাংলা, বনলতা সেন অথবা প্রফেসর শঙ্কু এবং ফেলুদা-- সবকটি কাজেই সিদ্ধিলাভ। বাংলা বইয়ের প্রচ্ছদের জগতে নতুন পথের সূচনা বলা যায়। একই সঙ্গে আবোল তাবোল বা হ য ব র ল বইয়ের ছবির কাজ আবারও নতুন করে শুরু করা। আসলে যে মানুষটিকে ঘিরে আমাদের ছেলেবেলা থেকে শৈশব থেকে পরিণতি -- সবটা জুড়ে থাকে, থাকে একরাশ আবেগ, সেখানে শব্দের প্রকাশ যেন কম পড়ে যায় মনের মধ্যে জমে থাকা এতখানি আবেগকে মেলে ধরতে।
মা সুপ্রভা দেবীর সাথে সত্যজিৎ রায়। তখন এখনকার মতো সেলফি তোলার প্রযুক্তি করায়ত্ত হয়নি। তাই ১৯৩৬ সালে বেলতলা রোডের বাড়িতে বক্স ক্যামেরার শাটারে সুতো বেঁধে এবং চেয়ারে বসে সেই সুতোয় টান দিয়ে নিজেই নিজের এবং মায়ের ছবি তুলেছিলেন মণি-মাণিক্যে ভরা তরুণ সত্যজিৎ ...
ঋণ : রায়, সত্যজিৎ (১৯৮২)। "যখন ছোট ছিলাম"-- আনন্দ পাবলিশার্স লিমিটেড।
সত্যজিৎ বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটি চরিত্রের স্রষ্টা। একটি হল প্রাতিজনিক গোয়েন্দা ফেলুদা, অন্যটি বিজ্ঞানী প্রফেসর শঙ্কু। এছাড়া তিনি প্রচুর ছোটগল্প লিখেছেন যেগুলো বারটির সংকলনে প্রকাশ পেত এবং সংকলনগুলোর শিরোনামে “বার” শব্দটি বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হত (যেমন ‘‘একের পিঠে দুই”, “এক ডজন গপ্পো”, ইত্যাদি)। ধাঁধা ও শব্দ-কৌতুক (pun)-এর প্রতি তার আগ্রহ এ গল্পগুলোতে প্রকাশ পায়। অনেক সময় ফেলুদাকে ধাঁধাঁর সমাধান বের করে কোন কেসের রহস্য উন্মোচন করতে হত। ফেলুদার বিভিন্ন গল্পে তার সঙ্গী উপন্যাস-লেখক জটায়ু (লালমোহন গাঙ্গুলি), আর তার খুড়তুতো ভাই তপেশরঞ্জন মিত্র ওরফে তোপসে হচ্ছে গল্পের বর্ণনাকারী, যার ভূমিকা অনেকটা শার্লক হোমসের পার্শ্বচরিত্র ডক্টর ওয়াটসনের মত। প্রফেসর শঙ্কুর বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীগুলো ডায়েরী আকারে লেখা, যে ডায়েরী বিজ্ঞানীটির রহস্যময় অন্তর্ধানের পর খুঁজে পাওয়া যায়। সত্যজিতের ছোটগল্পগুলোতে অনিশ্চিত উৎকণ্ঠা, ভয় ও অন্যান্য বিষয়ে সত্যজিতের আগ্রহের ছাপ পড়ে, যে ব্যাপারগুলো তিনি চলচ্চিত্রে এড়িয়ে চলতেন। [৫২] সত্যজিতের অধিকাংশ রচনাই ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে এবং বর্তমানে তার বইগুলোর দ্বিতীয় প্রজন্মের পাঠকসমাজ গড়ে উঠেছে।
তার লেখা অধিকাংশ চিত্রনাট্যও “একশান” সাহিত্যপত্রে বাংলায় প্রকাশিত হয়েছে। সত্যজিৎ তার ছেলেবেলার কাহিনী নিয়ে লেখেন যখন ছোট ছিলাম (১৯৮২)। চলচ্চিত্রের ওপর লেখা তার প্রবন্ধের সংকলনগুলো হল: আওয়ার ফিল্মস, দেয়ার ফিল্মস (১৯৭৬), বিষয় চলচ্চিত্র (১৯৮২), এবং একেই বলে শুটিং (১৯৭৯)। ৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সত্যজিতের চলচ্চিত্র বিষয়ক নিবন্ধের একটি সঙ্কলন পশ্চিমে প্রকাশ পায়। এই বইটির নামও Our Films, Their Films। বইটির প্রথম অংশে সত্যজিৎ ভারতীয় চলচ্চিত্র নিয়ে আলোচনা করেন, এবং দ্বিতীয় অংশে হলিউড, কিছু পছন্দের চিত্রনির্মাতা (চার্লি চ্যাপলিন, আকিরা কুরোসাওয়া) ও ইতালীয় নব্যবাস্তবতাবাদের ওপর আলোচনা করেন। বিষয় চলচ্চিত্র বইটিতে চলচ্চিত্রের নানা বিষয়ে সত্যজিতের ব্যক্তিগত দর্শন আলোচিত হয়েছে। সম্প্রতি বইটির একটি ইংরেজি অনুবাদ Speaking of Films নামে প্রকাশ পেয়েছে। এছাড়াও সত্যজিৎ ‘‘তোড়ায় বাঁধা ঘোড়ার ডিম’’ নামে একটি ননসেন্স ছড়ার বই লেখেন, যেখানে লুইস ক্যারলের ‘‘জ্যাবারওয়কি’’-র একটি অনুবাদ রয়েছে।
সত্যজিৎ “রে রোমান” (Ray Roman) ও “রে বিজার” (Ray Bizarre) নামের দুইটি টাইপফেস নকশা করেন। এর মধ্যে রায় রোমান ১৯৭০ সালে একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার জেতে। চলচ্চিত্র জগতে পদার্পণের অনেক পরেও কলকাতার কিছু মহলে তিনি একজন প্রভাবশালী গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সত্যজিত তার নিজের লেখা সমস্ত বইয়ের প্রচ্ছদ ও ভেতরের ছবি আঁকতেন। এছাড়া তার চলচ্চিত্রের সব বিজ্ঞাপনগুলোও তিনিই তৈরি করতেন।
Dr. Rageb Sarjani
ববিতার জন্য ঈদের আয়োজন করেছিলেন অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ১৯৭৩ সালে সত্যজিৎ রায়ের অশনি সংকেত ছবিতে অনঙ্গ বউ চরিত্রে অভিনয় করেছেন ববিতা। অশনি সংকেত ছবিতে অভিনয় করতে তারা বীরভূমের শান্তি নিকেতনে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, তখন তো আমি খুব ছোট ছিলাম। আমার বয়স ছিল ১৫/১৬ বছর। সৌমিত্রদা সম্পর্কে আমি খুব একটা জানতাম না। অপুর সংসার ছবিটি দেখে গেছি। তার আগে আমি একটি মাত্র ছবি করেছি ঢাকায়। তখনও পর্যন্ত চলচ্চিত্রে আমার অভিজ্ঞতা ছিল খুব কম।
সেটাই ছিল ববিতার প্রথম বিদেশে যাওয়া। এবং ভারতে শুটিং করতে যাবেন বলেই তার পাসপোর্ট তৈরি করা হয়েছিল। তার ভাষায়, এই প্রথম আমি বিদেশ কোথাও যাচ্ছি। সেসময় খুব ভয় পেয়েছিলাম। এক তো হল মানিকদার (সত্যজিৎ রায়) ছবিতে অভিনয় করছি। তার পর এতো বড় একজন অভিনেতা সৌমিত্রদার সঙ্গে কাজ করছি। আমি পারবো কি পারব না! ওনাকে দেখলাম গঙ্গাচরণ চরিত্রের পোশাক পরা- ধুতি পরা। গোল গোল চশমা। আমি দাঁড়িয়ে আছি। ওনার সঙ্গে আমি শট দিলাম। তার পর উনি বললেন, বাহ তুমি তো খুব সুন্দর শট দিয়েছ! খুব সুন্দর!
ববিতা বলেন, সৌমিত্রর সেই প্রশংসা তাকে তখন সাহস যুগিয়েছিল। এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যে তিনি তাকে আপন করে নিয়েছিলেন, ওনাকে দেখেছি শুটিং এর অবসরে, যখন সবকিছুর আয়োজন করা হচ্ছে, উনি হয়তো বসে বসে কবিতা আবৃত্তি করছেন। আবার দেখতাম তিনি শরীর চর্চা করছেন। এটা দেখে আমার খুব মজা লেগেছে।
অশনি সংকেত ছবির একটি দৃশ্যের প্রসঙ্গ তুলে ববিতা বলেন, একটি দৃশ্য না বললেই নয়। আমি স্নান করে এসে দাঁড়িয়ে আছি। আর সৌমিত্রদা পা ধুচ্ছেন। একটি ট্রলি শট হবে। শটটি এরকম- আমি হেঁটে হেঁটে আসবো। এসে সৌমিত্রদার দিকে তাকিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে আমি ওনার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়বো। এবং চোখের জল টসটস করে পড়বে।
সেসময় সত্যজিৎ রায় ববিতাকে বললেন, গ্লিসারিন ব্যবহার না করে তাকে সত্যি সত্যি কেঁদে দেখাতে হবে। কিংবদন্তি পরিচালক তাকে বলেন, দেখবো তুমি কেমন শট দিতে পারো। কেমন অভিনেত্রী তুমি দেখবো! তার পর আমি হেঁটে হেঁটে সৌমিত্রদার বুকের ওপর এসে পড়লাম এবং ঠিক জায়গা মতো চোখের অশ্রুটাও পড়লো। তখন সৌমিত্রদা, মানিকদাসহ সবাই হাততালি দিয়ে উঠলেন। বললেন, বাহ খুব অপূর্ব শট হয়েছে, অপূর্ব শট হয়েছে।
ববিতা জানালেন, শুটিং এর কোন একদিন তিনি কাঁদছিলেন। কারণ সেদিন ছিল ঈদ। আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করার আনন্দের কথা মনে করে তার চোখ ছলছল করছিল। তারপরের ঘটনা নিয়ে তিনি বলেন, সৌমিত্রদা সেটা খেয়াল করেছেন- কী ববিতা, তোমার চোখ ছল ছল করছে কেন, কী হয়েছে তোমার? আমি বললাম সৌমিত্রদা আজকে তো আমাদের ঈদ, আমি আজকে শুটিং করছি, তাই একটু মনটা খারাপ লাগছে। তখন উনি বললেন যে মোটেও ভেবো না, দেখ আমরা কী করি।
সেদিন সন্ধ্যার সময় ববিতা দেখলেন তার জন্য ঈদের আয়োজন করা হয়েছে, আমরা গেস্ট হাউজের যে রুমে ছিলাম সেখানে দেখি সন্ধ্যার সময় বাজি পটকা ফাটানো হচ্ছে, তারাবাতি জ্বালানো হয়েছে। বাবুর্চিকে বলা হয়েছে সেমাই পাকাতে। তিনি বললেন এই দেখ আমরা ঈদ করছি।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....