এই বছর ‘‘চিরকুট’’ থেকে জুলাই মাসে রিলিজ হওয়া হারলান কোবেনের "রান অ্যাওয়ে" উপন্যাসটি অবশেষে সমাপ্তি দিতে পারলাম। একরাশ মুগ্ধতা উপচে পরছে সমাপ্তির শেষ কেন্দ্রবিন্দুতে যখন পৌঁছে গিয়েছিলাম। কিছু লেখক গল্পটা শেষ করার পরেও ধোঁয়াশাতে রাখতে চাই পাঠকদের কিন্তু এই দিক থেকে কোবেন সাহেব একেবারে পরিপূর্ণ সমাপ্তি দিয়ে তৃপ্ত করে দিয়েছেন। গল্পের পরেও তিনি নিঁখুত ভাবে প্রত্যকটা অমীমাংসিত আলোচনা বিবেচনা করে গিয়েছেন। উনার প্রথম উপন্যাস পড়ে বেশ অভিভূত হয়েছি। কারণ যেমন ছিলো চরিত্রের ছড়াছড়ি তেমন ছিলো সাজানো গোছানো প্রত্যকটা চরিত্রের মোটিভ। তবে কিছু চরিত্রের ব্যাকগ্রাউন্ড তেমন আহামরি ভাবে খোলসা করা হয়নি বলে মনে হয়েছে।
- বইঃ রান অ্যাওয়ে বাংলা অনুবাদ বই পিডিএফ
- লেখকঃ হারলান কোবেন
- জনরাঃ মিস্ট্রি, ক্রাইম থ্রিলার, ফিকশন, সাসপেন্স pdf
- প্রথম প্রকাশঃ জুলাই ২০২০
- অনুবাদঃ মারুফ হোসেন
- প্রচ্ছদঃ সজল চৌধুরী
- প্রকাশনীঃ চিরকুট | মূল্যঃ ৪০০ টাকা মাত্র
- Review Credit 💕 Peal Roy Partha
"গুডরিডস" প্ল্যাটফর্মে ২০১৯ সালে রহস্য ও থ্রিলার ক্যাটাগরিতে নমিনেশন পেয়েছিলো উপন্যাসটি। প্রায় ৪৩ হাজারের বেশি সংখ্যক পাঠকের রেটিং মিলিয়ে ‘চার তারা’’ অর্জন করে বেশ শক্তপোক্ত অবস্থানে রয়েছে। খুঁটিনাটি যাবতীয় বিষয়বস্তু মিলিয়ে দারুন উত্তেজনাপূর্ণ ছিলো পুরো কাহিনী, পাঠকের বর্তমান পরিস্থিতির বেশ লুকায়িত তথ্য ও অন্ধ বিশ্বাসে নিমজ্জিত পৃথিবীর এক দারুন "সত্য" সম্পর্কে বেশ ভালো ভাবে পরিচিত করিয়েছেন। অবাক কখন হয়ে থাকি জানেন, যখন পৃথিবীতে কিছু ঘটনা কাল্পনিক বলে মনে হলেও সেটার কিন্তু বাস্তবিক একটা রুপ বিরাজমান। বিজ্ঞানীরা যেমন সমুদ্রের রহস্য সম্পূর্ণ জানতে পারেনি ঠিক একইভাবে আমরা সাধারণ মানুষ এই রহস্য ঘেরা পৃথিবীর কতটুকু সত্য জানতে পেরেছি বলে মনে?
নিজেকে কখনো জিজ্ঞেস করেছেন? এই পৃথিবীতে কি কি গোপনীয় কাজ লোকচক্ষুর আড়ালে হারহামেশা ঘটে চলেছে, সেটার উপর সত্যর প্রলেপ দেওয়া বলে আমরা না পারছি দেখতে না জানতে। সামান্য এক অপরাধের অন্ধকার জগতে ঢেকে থাকলেও সেটার উপরে এর চাইতে বিশাল রহস্য ঘেরা চাদর যে নেই সেটা কিভাবে জানেন? কিছু সংখ্যক লেখক বা বিচক্ষণ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষরা ঠিকই এই অন্ধকার জগতের খবরাখবর রেখে থাকে, সেটার কিছু অংশ ব্যবহার করে আমাদের আকৃষ্ট করে বাকিটা ম্যানহোলের ঢাকনার তলায় লুকিয়ে রাখে!
➲ ফ্ল্যাপ থেকে
ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে সুখের সংসার, তিন সন্তান, নিউ ইয়র্কে বিলসাবহুল অ্যাপার্টমেন্ট, পেশায় সুখ্যাতি...নিখুঁত ছিল সাইমন গ্রিনের জীবন।
কিন্তু তারপরই এক ঝটকায় এলোমেলো হয়ে গেল তার জগৎসংসার। প্রেমিকের খপ্পরে পড়ে নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ল তার কলেজপড়ুয়া মেয়ে পেইজ। বার বার চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারেনি মেয়ের আসক্তি। অবশেষে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে গেল পেইজ।
মেয়ের খোঁজে দিশেহারা সাইমন। ছয় মাস অবিশ্রান্ত খোঁজাখুঁজির পর অবশেষে সেন্ট্রাল পার্কে পেইজকে পেল সে—নেশায় ঢুলু-ঢুলু, গান গেয়ে ভিক্ষা করছে। কিন্তু বাবা তাকে বাড়ি ফিরিয়ে নেওয়ার জন্যে এগোতেই পালাল সে।
কিন্তু সাইমন নাছোড়বান্দা—মেয়েকে সে ফেরাবেই এই পঙ্কিল জগত থেকে। শুরু হলো এক অন্ধকার সুড়ঙ্গে, ড্রাগের বিপজ্জনক দুনিয়ায় তার বিরামহীন ছুটাছুটি। পরিবারের জীবন বিপন্ন করেও অজানা-অচেনা এ জগতে ঢুঁড়ে বেড়াতে লাগল সে। এ জগত শাসন করে গুন্ডারা, এখানে ড্রাগই টাকা, এবং খুনখারাবি এখানকার নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা।
এরপরই সাইমনের দেখা হলো প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর ইলেনা রেমিরেজের সাথে। এক যুবকের নিখোঁজ-রহস্যের তদন্ত করছে ইলেনা। দুজনে মিলে এক কাল্ট আবিষ্কার করল তারা—ট্রুথ হেইভেন। একের পর এক বেরিয়ে আসতে লাগল অনেকগুলো অপ্রিয় সত্য।
সাইমন কি আর কখনো তার মেয়েকে জীবিত দেখতে পাবে? মুখোশ খুলে দিতে পারবে ভণ্ড কাল্ট-নেতার? খুঁজে বের করতে পারবে তার মেয়ে কেন নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ল, সে রহস্য?
● পাঠ প্রতিক্রিয়া ও পর্যালোচনা
উপন্যাসটি কেমন লেগেছে? এককথায় বলতে - মিশ্র অনুভূতি ঘিরে ধরেছে সেইরকম লেগেছে। কিছু রহস্য থাকে যেটা উন্মোচনে উপভোগ করা যায় কিন্তু কিছু রহস্য এমন থাকে যেটা জানার পরেও দ্বিধাবোধ কাজ করে আপন সত্ত্বার সাথে। আমি কাহিনী পড়ি বা দেখি শুধুমাত্র উপভোগ করবো বলে না, আমি এইসব পরিস্থিতি অনুধাবন করার চেষ্টা করি কারণ বাস্তবতা এইখানে। হয়তো বলতে পারেন, এইটা সামান্য এক উপন্যাস তা নিয়ে এতো সিরিয়াস হওয়ার কি আছে? আমি বলি, আছে! এই উপন্যাসের পিছনে একজন লেখক যখন তার অর্জিত সবটুকু জ্ঞান ও দক্ষতার প্রয়োগ করে তখন সেখানে খানিকটা হলেও ‘সত্য’ মিশ্রিত থাকে।
একটা সময় ছিলো আগডুম বাগডুম ভেবে গল্প লিখা হতো, কাল্পনিক গুলো কাল্পনিক ভাবে জমা থাকতো কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি বা প্রেক্ষাপটে নিদারুণ পালটে গিয়েছে। চারিদিকে এতো এতো অপরাধ ত্রাস সৃষ্টি করেছে যে চাইলে কোন লেখক যেকোন একটা ইস্যু নিয়ে বিশালাকার গল্প লিখত বসে যেতে পারেন। এইখান থেকে মিশ্রিত হয় বাস্তব ও সত্যর! আপনি ফ্যান্টাসি, অ্যাডভেঞ্জার এই জনরা গুলো আনন্দের সহিত উপভোগ করতে পারলেও ট্রাজেডি মাখানো গল্প বা ক্রাইম থ্রিলার এইগুলো কিন্তু সেইভাবে পারবেন না। এইখানে কিন্ত চলে আসবে!
লেখক উক্ত উপন্যাসে টেনেছেন বিস্তর প্রেক্ষাপট! যেটা আমি আলোচনাতে নিয়ে আসলে "স্পয়লার" হয়ে যাবে। মাদকাসক্ত থেকে গুপ্ত সংঘ ইত্যাদি মিলিয়ে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির নানারকম বর্ণনাতে চল্লিশ অধ্যায়ের উপন্যাস ভর্তি ছিলো। একটা পরিবারের লড়াই সেই সাথে গোপন অনেক কালো সত্য মিলিয়ে উপন্যাসে আপনি অদ্ভুদ ভালো লাগা অনুভব করবেন। বলেছিলাম, কিছু চরিত্রের ব্যাকগ্রাউন্ড বা ফ্ল্যাশব্যাক আরো শক্তপোক্ত করে দেখানোর দরকার ছিলো। লেখক ফোকাস রেখেছিলেন ঠিক কিন্তু আরেকটু বিস্তারিত দরকার ছিলো বলে মনে হয়।
সদ্য বের হওয়া অনুবাদ তাই আর বেশি কিছু নিয়ে আলোচনা করলাম না। গল্পের প্রেক্ষিতে যদি একান্ত কেউ আলোচনা করতে চান তাহলে কমেনেটে "স্পয়লার" দিয়ে এরপরে করতে পারেন।
উপন্যাসটি যারা এখনো সংগ্রহ করেছেন অথচ পড়েননি বা ক্রয় করেননি তাহলে বলবো দ্রুত কিনে পড়ে ফেলুন। দারুন উত্তেজনায় ঠাঁসা উপন্যাসটি আপনার অপেক্ষায় রয়েছে।
সবশেষে একটা কথা বলবো উপন্যাসের প্রেক্ষিতে, ডালপালা সীমাহীন ভাবে ছড়িয়ে গেলেও গাছ কিন্তু একটাই! আর এই গাছ আসলে কতটুকু সত্য বহন করে? যদিও গাছের ফলে গুরুত্ব অনেক কিন্তু সেগুলো কেটে ফেলতে এক পৈশাচিক আনন্দ ভর করে কিছু মানুষের মধ্যে!
● অনুবাদ, প্রচ্ছদ, মলাট ও বাইন্ডিং
উপন্যাসটি অনুবাদ করেছেন ‘মারুফ হোসেন’ ভাই! শুধু বলবো ৩২০ পৃষ্ঠার ইংরেজী উপন্যাসকে কোন উপায়ে অনুবাদ মনে হয়নি। এতোটা দক্ষ হাতে তিনি প্রত্যকটা শব্দ থেকে শুরু করে বাক্যগঠনে অসাধারণ কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। গল্প পড়ার সময় কোন প্রকার বাঁধা বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়নি। শুধুমাত্র একটা জায়গায় ভুল পেয়েছিলাম তাও সেটা নগন্য। তিনি ‘‘রহস্যপত্রিকা'র’’ মাধ্যমে অনুবাদের হাতেখড়ি দিয়েছিলেন। একাধারে এরিক মারিয়া রেমার্ক, আগাথা ক্রিস্টি, ফিলিপ মেডোয, স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের মতো বাঘা বাঘা সব লেখকের বই অনুবাদ করে রীতিমতো সাড়া ফেলে দেন অনুনাদ মহলে। উনার আসন্ন যেকোন অনুবাদ গ্রন্থ পাঠকরা স্বাচ্ছন্দ্য গ্রহণ ও পড়ার জন্য একপ্রকার উদগ্রীব হয়ে রয়েছে।
প্রচ্ছদের দেখে কার কাজ সেটা নতুন করে বলার দরকার নেই। 'সজল চৌধুরী' সবসময় উপন্যাসের আনুষঙ্গিক ও উপজীব্য বিষয়গুলো নিয়ে দারুন লেটারিং করে পার্ফেক্ট প্রচ্ছদ বিল্ডাপ করতে কার্পণ্য করেননি। উনার এই প্রচ্ছদের কারণে বই সংগ্রহ করার একটা আগ্রহ বারবার খুঁজে পাই। চালিয়ে যেতে থাকুন ভাই।
নান্দনিক প্রডাকশন ‘‘চিরকুট’’ প্রকাশনীর নান্দনিক কাজ দেখে রীতিমতো পুলকিত। শক্তপোক্ত বাইন্ডিং থেকে শুরু করে মলাট একেবারে হৃষ্টপুষ্ঠ। বইয়ের সাইজ অনুযায়ী হাতে নিয়ে পড়তে তেমন অসুবিধা হয়নি, তবে পৃষ্ঠার কিছু জায়গায় লিখাগুলোতে "কালি" হালকা হয়ে এসেছে তবে অতিরিক্ত না। নতুন প্রকাশনী হিসেবে বেশ ভালো কাজ উপহার দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ চিরকুট-কে।
● হারলান কোবেন
রহস্য উপন্যাস ও থ্রিলার সাহিত্যে হারলান কোবেন একজন কিংবদন্তী। জন্ম জানুয়ারি ৪, ১৯৬২ সালে আমেরিকার নিউ জার্সিতে।
তার লিখা বই সারা বিশ্ব বিক্রি হয়ে ৭০ মিলিয়ন কপিরও অধিক। পৃথিবীর ৪৩ ভাষায় অনূদিত হয়েছে একই সাথে এক ডজনেরও বেশি দেশে বই গুলো বেস্ট সেলারের খ্যতি লাভ করেছে। পুরষ্কার তুলে নিয়েছেন স্বয়ং প্যারিসের মেয়রের হাত থেকে। তাঁর উপন্যাস নির্ভর করে নির্মিত হয়েছে বেশ ক'টি চলচ্চিত্র ও ক্রাইম ড্রামা।
একাধারে 'এডগার অ্যাওয়ার্ড' থেকে শুরু করে শামুস ও অ্যান্থনি অ্যাওয়ার্ড নিজের ঝুলিতে রাখা প্রথম লেখক তিনি। রহস্য সাহিত্য ও থ্রিলারের অসামান্য অবদানের জন্য, ক্রাইম-ফিকশনের সবচেয়ে লোভনীয় পুরষ্কার ‘দ্য আরবিএ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ফর ক্রাইম রাইটিং’ জিতে নেন কোবেন।
হারলান কোবেন বর্তমানে রহস্য সাহিত্যে সর্বাধিক পঠিত লেখকের একজন। কাহিনির মোচড়ে পাঠককে বোকা বানাতে সদা প্রস্তুত তাঁর গল্পগুলো।
কোবানের উল্লেখযোগ্য বইয়ের নাম : টেন নো ওয়ান, গন ফর গুড, নো সেকেন্ড চান্স, জাস্ট ওয়ান লুক, ফুল মি ওয়ান্স ও রান অ্যাওয়ে অন্যতম।
➠ বইঃ রান অ্যাওয়ে pdf download free | হারলান কোবেন
➠ জনরাঃ মিস্ট্রি, ক্রাইম থ্রিলার, ফিকশন, সাসপেন্স
➠ প্রথম প্রকাশঃ জুলাই ২০২০
➠ অনুবাদঃ মারুফ হোসেন
➠ প্রচ্ছদঃ সজল চৌধুরী
➠ প্রকাশনীঃ চিরকুট | মূল্যঃ ৪০০ টাকা মাত্র
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....