একজন অভিজ্ঞ পর্দানশীন মায়ের পরামর্শ : পর্দে মে রাহনে দো!

একজন অভিজ্ঞ পর্দানশীন আরব মায়ের পরামর্শ সন্তানকে খাস পর্দায় অভ্যস্ত করতে!

পর্দে মে রাহনে দো!


চট করে দ্বীন পালন শুরু করা বেশ কঠিন। ছোটবেলা থেকে দ্বীনদারি-চর্চায় অভ্যস্ত করে তুলতে না পারলে, বড় হলে রাগারাগি করে সন্তানকে দ্বীনদার বানানো প্রায় অসম্ভব কাজ! 
হাঁ সন্তান নিজ থেকে আগ্রহী হলে, ভিন্ন কথা! 
কন্যাকে পর্দায় অভ্যস্ত করে তুলতে হলেও সেই ছোট বেলা থেকেই মেহনত শুরু করা আবশ্যক। 
তিন থেকে পাঁচ বছর বয়েস থেকে শুরু হওয়াই যুক্তিযুক্ত! 
কারণ এই বয়েসেই সন্তান মা-বাবা ও আশেপাশের অনুকরণ করতে শুরু করে। আমরা একজন অভিজ্ঞ পর্দানশীন আরব মায়ের পরামর্শগুলো খতিয়ে দেখতে পারি। তিনি তার চারকন্যাকে যেভাবে গড়ে তুলেছেন, তার আলোকে কিছু পরামর্শ দিয়েছেনঃ

(এক) বাইরে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার সময়, মেয়েকে দেখিয়ে দেখিয়ে বোরকা পরাঃ 
মেয়ের জন্যে বোরকাধর্মী পোশাক বানানো।  
যতটা সম্ভব ছোট্ট মামণিকেই নিজের বিশেষ পোষাক পরতে দেয়া। 
না পারলে আম্মু বা বড় আপু হাত লাগাবে! 
-
(দুই) মেয়েকে দায়িত্ব দেয়াঃ
-আম্মু! আমি বোরকা পরার পর, আমার চুল বাইরে থেকে দেখা যায় কি না, একটু ভাল করে দেখো তো! 
চারপাশ চক্কর দাও! 
আমি যখনই বোরকা পরবো, তুমি দেখবে, কোনও অংশ বোরকার বাইরে থেকে গেলো কি না! 
-
(তিন) মেয়েকে বলে দেয়াঃ 
ঘরে গাইরে মাহরাম কেউ এলে, যাদের সাথে বিয়ে বৈধ! 
ছোট্ট বয়েসে এতটা বুঝবে না, নাম ধরে বলে দেয়া অমুক এলে, তুমি আমাকে আগেই বলে দিবে, কে এসেছে! 
তাহলে আমি সতর্ক হতে পারবো! 
-
(চার) যখন থেকে মেয়ে নিজে নিজে পোষক পড়তে অভ্যস্ত হবে, তখনই বলে দেয়াঃ
-তুমি যখন পোষাক পরবে, তার আগে রূমের দরজা বন্ধ করে দিবে! 
খোলা স্থানে কখনোই পোষাক পরিবর্তন করবে না। 
-
(পাঁচ) ছেলে বা মেয়ে কাউকে যদি এভাবে তোমার সামনে পোষাক বদলাতে দেখো, তুমি সেখানে থেকে উঠে চলে আসবে। সবাই লাজুক নয়, শালীন নয়। 
সে লজ্জা না পেলেও তুমি অবশ্যই লজ্জাবোধ করবে! শুধু নিজের শরীর দেখানো নয়, অন্যের শরীর দেখাও হারাম!
-
(ছয়) মায়ের দায়িত্ব হলো, মেয়েকে বলে দেয়া: আশেপাশের ছেলেদের সাথে প্রয়োজনের বেশি কথা না বলা। 
যা বলার আব্বু-আম্মু বা ভাইয়াকে বলা। 
পাশের বাসা বা প্রতিবেশির ছেলে ছোট হলেও মেয়েদের সাথে থাকতে অভ্যস্ত করে তোলা! 
-
(সাত) মেয়েকে ছোটবেলা থেকেই কুরআন কারীমের কিছু কিছু অংশ মুখস্থ করিয়ে দেয়া। 
বিশেষ করে পর্দার আয়াতগুলো পড়ে শোনানো। 
না বুঝলেও কুরআনের শব্দেরও অনিবর্চনীয় একটা শক্তি আছে। 
ক্রমে ক্রমে আয়াতগুলোর অর্থ বুঝিয়ে দেয়া। 
আল্লাহ তা‘আলা তার জন্যেই এই আয়াতগুলো নাযিল করেছেন! 
তিনি তার এই ছ্ট্টো বান্দীটির কাছে কী চাচ্ছেন! 
কুরআন কারীমের বরকতেই তার মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে! 
পর্দা করা যে সরাসরি আল্লাহরই ইচ্ছা, সেটা বুঝতে শিখতে শুরু করবে!
-
(আট) সবচেয়ে ভাল হয়, মেয়েকে নিয়মিত কুরআন হিফয করতে অভ্যস্ত করে তোলা। এবং তাকে এর গুরুত্ব বোঝাতে শুরু করা। গল্পের মতো করে! 
তার বয়েসের উপযোগী ঢঙে। বারবার বলা: যার মধ্যে কুরআন কারীম আছে, তাকে পর্দা করে চলতে হয়। 
না হলে কুরআনের অপমান হয়। 
আল্লাহ ও তার রাসূল নারাজ হন! 
-
(নয়) সময় করে করে, দ্বীনী পরিবারগুলোতে মেয়েকে নিয়ে যাওয়া। যারা দ্বীনকে তাকওয়ার মানদন্ডে মেনে চলার চেষ্টা করেন। 
এই দ্বীনদার পরিবারগুলোতে কিছু মুরুব্বী থাকেন। 
যারা দ্বীনকে মানতে মানতে স্বভাবে পরিণত করেছেন, তাদের সাথে নিজের কন্যাকে কিছু সময় কাটাতে দেয়া। 
তাদের সাথে গল্প করতে দেয়া। 
তাদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে দেয়া। 
-
(দশ) তবে খেয়াল রাখা, এসব করতে গিয়ে, মা বা বাবা যেন কখনোই কঠোরতার আশ্রয় না নেন। 
তাহলে নিজের ভুলের কারণে মেয়েটা দ্বীন সম্পর্কে ভুল ধারনা নিয়ে বড় হতে পারে। 
-
(এগার) সেই ছোট্টবেলা থেকেই ,মেয়ের জন্যে আলাদা একটা কুরআন কারীমের ব্যবস্থা করা। 
কুরআন কারীমের আদব শিক্ষা দেয়া।  
পর্দার আয়াতগুলো চিহ্নিত করে দেয়া।  
মাঝেমধ্যে যেন নিজে নিজেই আয়াতগুলো পড়ে। 
অর্থ আর তাফসীরও কিনে দেয়া। এতে কুরআনের সাথে একটা সম্পর্ক গড়ে উঠবে। 
পাশাপাশি দ্বীনের বিধান সরাসরি কুরআন থেকে গ্রহণ করার একটা মানসিকতা গড়ে উঠবে। 
-
(বারো) মেয়ে যদি পুতুলখেলায় অভ্যস্ত হয়, সেই পুতুলকেও বোরকা পরিয়ে রাখা। কারণ বাজারে যেসব পুতুল পাওয়া যায়, প্রায় সবগুলোই পাশ্চাত্যের ঢঙে সংক্ষিপ্ত পোষাক পরানো থাকে। 
এগুলো দেখে দেখে মেয়ের মনে, পোষাক নিয়ে ছাড়াছাড়ির মনোভাব তৈরী হতে পারে। 
তাই তাকে বলে দেয়া: তোমার পুতুল বন্ধুকেও বোরকা পরিয়ে রাখো। 
প্রথম প্রথম মা-ই পুতুলকে শালীন পোষাক পরাবে! 
পরে মেয়েকে দায়িত্ব দিবে। 
তাহলে সে বুঝতে শিখবে, পুতুলের পোষাক বা চুলটা এভাবে রাখা ঠিক নয়। 
এমন পোষাক ও বেশভূষাকে অজান্তেই অপছন্দ করতে শিখবে!
-
(তেরো) কুরআন কারীমের পাশাপাশি হাদীস শরীফও পড়তে শেখানো। 
অর্থ বুঝিয়ে দেয়া। 
পর্দাবিষয়ক হাদীসগুলো। 
সামান্য ব্যখ্যাও সম্ভব হলে বলে দেয়া। 
তার বুঝের স্তরের দিকে লক্ষ্য রেখে! 
কারণ মায়ের কথার চেয়ে, নবীজি (সাঃ) এর কথার প্রভাব অনেক অনেক বেশি!
-
(চৌদ্দ) বুযুর্গ মহিলাদের জীবনী তার সামনে তুলে ধরা। 
উম্মাহাতুল মুমিনীন, নবীজির স্ত্রীগনের জীবনী তাকে গল্পচ্ছলে শুনিয়ে দেয়া। 
তার কাছ থেকেই গল্প শোনার বায়না ধরাঃ
-আম্মু! আমি তো সবসময়ই বলি, আজ তুমি একটা গল্প শোনাও! ঐ যে আয়েশা রা.-এর গল্প বলেছিলাম, সেটাই আমাদেরকে আজ শোনাও!
-
এভাবে মেহনত করলে, ইনশা আল্লাহ, মামণিরা খাসপর্দায় অভ্যস্ত হয়ে উঠবে! পরিবারে তাকওয়া-পরহেযগারির পরিবেশ গড়ে উঠবে!  

লিখেছেনঃ- শায়খ আতিক উল্লাহ (রাহিঃ)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ