প্রদীপ্ত যৌবন অতৃপ্ত মন : চৌধুরী শামসুল আরেফীন | Prodipto Jowbon Otripto Mon

বই : প্রদীপ্ত যৌবন অতৃপ্ত মন
লেখক : চৌধুরী শামসুল আরেফীন
প্রকাশনী : কাব্যগ্রন্থ প্রকাশন
পৃষ্ঠা : ৬৪
মুদ্রিত মূল্য: ২০০ টাকা
প্রকাশকাল: ২০২১ বইমেলা
ব্যাক্তিগত রেটিং: ৭.৫/১০

সতর্কীকরণঃ অনেকগুলো কবিতা শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়ষ্কদের জন্য লেখা হয়েছে, তাই অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য আমি এই কাব্যগ্রন্থটি রেফার করবো না।



'প্রদীপ্ত যৌবন অতৃপ্ত মন' কাব্যগ্রন্থটি চৌধুরী শামসুল আরেফীন সাহবের লেখা দ্বিতীয় বই। ৪৯টি কবিতা দিয়ে সাজানো হয়েছে। কবিতাগুলো সহজ ভাষায় লেখা কিন্তু মূলভাব কিছুটা দুর্বোধ্য। সাহিত্যের অন্যান্য শাখার মধ্যে কবিতাই সবচেয়ে প্রিয় এবং প্রথম পছন্দের। তাই প্রদীপ্ত যৌবন অতৃপ্ত মন বইয়ের কবিতাগুলোর মূলভাব বুঝতে আমার ততটা কষ্ট হয়নি কারণ আমি নিয়মিত কবিতা পড়ি এবং লেখার চেষ্টা করিও, জানি না সেগুলো কতটুকু কবিতা হয়। 

'প্রদীপ্ত যৌবন, অতৃপ্ত মন' নামটাকে ভাঙচুর করে বিশ্লেষণ এবং নাম কবিতাদুটো পড়ার পর অনেককিছুই বেরিয়ে আসলো যে কেন কাব্যগ্রন্থটির নাম 'প্রদীপ্ত যৌবন অতৃপ্ত মন' রাখা হয়েছে। বইয়ের কবিতাগুলো পড়বেন আর ভাববেন নামটা কি স্বার্থক হয়েছে? আমার বিশ্লেষণানুযায়ী 'প্রদীপ্ত যৌবন অতৃপ্ত মন' নামটা আসলেই স্বার্থক। যৌবনের বিপরীতে আকাংক্ষা আর উদ্দমতাই এরূপের আসল সত্য। প্রচ্ছদে যার কিছুটা প্রতিফলিত হয়েছে। যার কারণে প্রচ্ছদটাও আকর্ষণীয় হয়েছে।

কাব্যগ্রন্থ পড়ার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে প্রতিটি কবিতা নিয়ে আলাদা করে ভাবতে পারবেন আর খুঁজে পাবেন নতুন গল্প। কবিতা যেন এক একটি গল্প বলে যায়, আবার কোনো কবিতায় পাবেন দীর্ঘ উপন্যাসের ভাব। সেজন্য আমি সবাইকে কবিতা পড়তে উৎসাহ প্রদান করি, 'কবিতা পড়ুন, আলাদা জগৎ তৈরী করুন'। 

'প্রদীপ্ত যৌবন অতৃপ্ত মন' কাব্যগ্রন্থটি পড়েও মনে হয়েছে যেন প্রতিটি কবিতায় আলাদা আলাদা গল্পের মিলনমেলা।বর্তমানের শুরু থেকে অতীত পর্যন্ত মানুষের জীবন, আনন্দ, দুঃখ-বেদনার গল্পগুলো কবিতার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন। কবি তাঁর কবিতার মাধ্যমে কথা বলেছেন প্রকৃতির সাথে। তুলে ধরেছেন রক্ত গোলাপ বা প্রজাপ্রতির কথা। পাশাপাশি নারীর সৌন্দর্য বা নারীর যোগ্যতাকে কবি মনে প্রাণে সম্মান জানিয়ে কবিতার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন—

নিবিষ্ট স্বপ্নীল কাব্যৎসবে জড়াই-
কবিমনিকে দেবী করে তুলি-
নারীত্বের যোগ্যতায় লক্ষী প্রতিমায় প্রয়োজন অঞ্জলি।

"প্রদীপ্ত যৌবন অতৃপ্ত মন" কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতাটা খুবই চিত্তাকর্ষক লেগেছে আমার কাছে। এক লাইনের একটি ছোট কবিতা ছিল, যেটা পড়লে বারবার ভাব পরিবর্তন করবে। তবে আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে সূচিপত্রের ২৪ নম্বরে থাকা 'ঘোষণাপত্র' কবিতাটি। পড়ার সময় মনে হচ্ছিল নিজেকেই পড়তেছি, কথক বিপ্লবী যেন আমি নিজেই। কয়েকটা লাইন উদ্ধৃত করলাম—

রাষ্ট্রযন্ত্রের যেকোন সমস্যাই আমাকে পীড়িত করে-
পীড়াদায়ক যন্ত্রণা সইতে না পেরেই আমি বিপ্লবী-
তুমি স্বৈরাচারী। 

অন্যান্য যে কবিতাগুলো আমার ভালো লেগেছে সেগুলো হচ্ছে— 'কিশোরী', 'ক্ষুধা', 'প্রথা', 'সঞ্চারী', 'দেউলিয়া সখ্যতা' ও 'রক্তগোলাপ'। 'প্রতীতি', 'প্রজাপতি ভাবনা', 'ছোঁয়া', 'বান্ধবীর মধ্যমা', 'সুখপাখি' ও 'উৎসব' কবিতাগুলো মোটামুটি ভালো কবিতা ছিল— অর্থাৎ আমার কাছে মোটামুটি ভালো লেগেছে।

কবিতাগুলো বর্তমানে বহুল প্রচলিত গদ্যছন্দ ধারায় অমিল প্রবহমান যতিস্বাধীন অক্ষরবৃত্ত ছন্দে রচিত। মাত্রাবৃত্ত ও স্বরবৃত্ত ছন্দের কবিতা এই কাব্যগ্রন্থে তো নেই কিম্তু অক্ষরবৃত্ত পয়ার ধারা কিছুটা থাকলেও কোনো কবিতায়ই তা সম্পূর্ণভাবে অব্যাহত থাকেনি। যতিপাত বা বিরামচিহ্নের স্বাধীন ব্যবহার পরিলক্ষিত করা যায় কবিতাগুলোতে। তবে একই ছাঁচে লেখা থাকায় খানিকটা বিরক্তিও এসেছে যে কেন অন্যান্য ছন্দ পরিহার করা হয়েছে? 

বইয়ের কাগজ, ছাপানো কালি এবং বাঁধাই করণ এর মান যথেষ্ট ভালো। তবে অনেকগুলো কবিতার মধ্যে কমন কিছু শব্দের বানান ভুল ছিল। বানান ভুল মানে পুরো কবিতার সৌন্দর্য নষ্ট। যদিও টাইপ মিসটেকের কারণে এমনটা হতে পারে তবে একটি শব্দই কবিতার মূলভাব পাল্টে দিতে পারে। তাই উচিত ছিল যথাযথ যত্মসহকারে বানানের ভুল গুলো খুঁজে বের করা যদিও মানুষ মাত্রই ভুল হতেই পারে।

'প্রদীপ্ত যৌবন অতৃপ্ত মন' কাব্যগ্রন্থ থেকে প্রিয় কিছু লাইন—

'প্রেয়সীর পূর্ণিমার উত্তাল যৌবনে জেগেছে জোছনারাশির ঢেউ
মায়াবী নিশির নিরবতায় ভালোবাসা রটিয়েছে কেউ।'

'আড়াই ইঞ্চি জমির মূল্য পৃথিবীসম!'

'জাতির ক্রান্তিতে বিভীষিকাময় এ-লগনে
তোমাকেই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।'

'সভ্যতার টুঁটি চেপে ধরে তার বিবস্ত্রা শরীরে'

'বিপ্লবীরা কোনদিন মরে না-
যুগ যুগান্তর বেঁচে থাকে মানবতার ছায়াসঙ্গী।
একবার ভাবো হে স্বৈরাচারী-
অস্তিত্ব সংকট তৈরী হতে আর কত দেরী?'

'সবকিছু বোবা- অন্ধ- হাত- পা বাঁধা লাশের মতো।'

'পরিত্রাণের নীরব স্বপ্ন বুননে চোখই পড়বে-
কারো কি সাধ্য আছে- সমাপ্তির বিরাম চিহ্ন টানবে?'

'বুকভরা ক্ষত নিয়ে রক্তাক্ত জন্মভূমি আমার দিকে চেয়ে রয়-
শুকনো রুটি আর ভাতের ফ্যান যেন এক মহাবিস্ময়।'

বই আলোচক: ইব্রাহীম নিরব
সমাপ্ত—

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ