সেকালের ছবিওয়ালা : তারেক আজিজ | Sekaler Sobiwala By Tareq Aziz



Title সেকালের ছবিওয়ালা
Author তারেক আজিজ
Publisher কবি প্রকাশনী
Quality হার্ডকভার
ISBN 9789849648666
Edition 1st Edition
Number of Pages 168
Country বাংলাদেশ
Language বাংলা

ছয় বছর আগের কথা। পূর্বপুরুষের কিছু বিবর্ণ হলদে হয়ে যাওয়া ছবি। মেরামতের প্রয়ােজনে যখন অভিজ্ঞজনদের পরামর্শ চাইছি তখন সন্ধান পেলাম এক ফেসবুক গ্রুপের। বিলাতের কজন ব্যক্তি মিলে এই গ্রুপে ফটো রেস্টোরেশনের কাজ করেন। কোনাে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে না, তারা কাজটি করেন নিতান্ত শখের বশে। সংগ্রহে থাকা নষ্ট, মলিন বেশ কিছু পারিবারিক ছবি তাদের সহযােগিতায় নতুন রূপ পেল। গ্রুপের কর্মীদের পারদর্শিতায় আমি মুগ্ধ। নিয়মিত নিউজফিডে তখন গ্রুপের অন্যান্য পােস্টও আসতে লাগল। এর মাঝে একদিন জেনেট কনওয়ে নামে এক ভদ্রমহিলার পােস্ট দেখে চমকে উঠলাম। 

তার পূর্বপুরুষের একটি যুগল ছবি তিনি দিয়েছেন মেরামতের জন্য। ছবিটি ১৯০১ সালে ঢাকার এক স্টুডিওতে তােলা, ফটোগ্রাফার ফ্রিজ ক্যাপ । ফ্রিজ ক্যাপ ছিলেন জার্মান নাগরিক। বিশ শতকের গােড়ায় নওয়াড়ির আমন্ত্রণে। কলকাতার ব্যবসা ছেড়ে তিনি ঢাকা এসেছিলেন। তাঁর তােলা ঢাকা নগরের নানা স্থাপনা এবং আহসান মঞ্জিলের আলােকচিত্র বিভিন্ন প্রকাশনায় বহুল ব্যবহৃত হয়েছে। ঢাকায় তিনি একটি স্টুডিও চালু করেছিলেন। এর বাইরে ব্যক্তি ক্যাপ সম্বন্ধে তেমন কোনাে তথ্য কোথাও। পাওয়া যায়নি। জেনেটের এই মলিন ছবিটা ক্যাপ বিষয়ে আমার পুরাতন কৌতূহলকে নতুন করে উসকে দিল; নেমে পড়লাম “ফ্রিজ ক্যাপের খোঁজে'। 

এ বিষয়ে যােগাযােগ করলাম ব্রিটিশ লাইব্রেরির এশিয়া , প্যাসিফিক অ্যান্ড আফ্রিকা কালেকশন বিভাগে। এই বিভাগের টিম লিডার জনাব হেডলি সুটন এগিয়ে এলেন তাঁর সংগ্রহে থাকা তথ্য নিয়ে। বিচ্ছিন্ন নানা সূত্র থেকে তথ্য দিয়ে যারা সহযােগিতা করলেন তাঁদের মাঝে আছেন ডি মন্টফোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের পানিকস পানায়ি, ব্রিটিশ লাইব্রেরির সাবেক কর্মকর্তা গ্রাহাম শ’ প্রমুখ। তাঁদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।

মজার বিষয় হলাে এই কৌতূহল শুধু ক্যাপের মাঝে সীমাবদ্ধ রইল ক্যাপের আগে এবং পরে ঢাকা এবং পূর্ববঙ্গ নিয়ে আরও যারা কাজ করেছেন তাদের নামগুলােও একে একে উঠে আসতে থাকল। এই তালিকায় যেমন আছেন ভিনদেশি পেশাদার ফটোগ্রাফার হফম্যান ঠিক তেমনি আছেন শৌখিন ফটোগ্রাফার ঢাকা কলেজের গণিতের অধ্যাপক ব্রেনান্ড। আর শুধু ভিনদেশি কেন? এ তালিকায় আছেন আমাদের ঢাকার নওয়াব পরিবার, মানিকগঞ্জের হীরালাল সেন, ঢাকার আনন্দকিশাের, চারুচন্দ্র গুহ, খুলনার শশিভূষণ এমন আরও কত কত নাম। রােমাঞ্চকর সে উপলব্ধি। একের পর এক তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলােকে সংযুক্ত করার চেষ্টা করলাম। এই প্রচেষ্টার ফলশ্রুতি—“সেকালের ছবিওয়ালা'।

বস্তুনিষ্ঠতার খাতিরে ভবিষ্যতের গবেষকদের জন্য নির্ভরযােগ্য তথ্যসূত্রগুলাে লেখার শেষে যােগ করেছি। তথ্যের পাশাপাশি ফটোগ্রাফ জোগাড় করা ছিল অত্যন্ত কঠিন বিষয়। গবেষণায় ব্যবহার হবে জেনে অনেকে এগিয়ে এসেছেন, ব্যক্তিগত অ্যালবাম থেকে ছবি দিয়ে পূর্ণ সহযােগিতা করেছেন। জন্সটন এন্ড হফম্যান বিষয়ে বেশ কিছু দুর্লভ ছবি। ও তথ্য দিয়ে আমাকে ঋণী করেছেন ছবির ইতিহাসবিদ হিউজ এশলে রাইনার। ছবি তােলার কাল নিয়ে কোনাে বিভ্রান্তি থাকলে তা দূর করতে সাহায্য করেছেন লুমিনাস লিন্টের এলান গ্রিফিথস। পরম শ্রদ্ধেয়। ফটোগ্রাফার মুক্তিযােদ্ধা জনাব শফিকুল ইসলাম স্বপন দীর্ঘ ফোনালাপে আমার বহু কারিগরি জিজ্ঞাসার উত্তর জানিয়ে আমায় সমৃদ্ধ করেছেন। তার কাছে কীভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করব জানি না। বইটি লেখার কাজ করােনাকালীন সময়ে খানিকটা থমকে গিয়েছিল। প্রিয় লেখক জয়দীপ। দের তাড়া অনুঘটক হিসেবে কাজ করল। শেষতক লিখে শেষ করলাম। শ’খানেকের বেশি দুর্লভ ছবিসমেত পাণ্ডুলিপিটি প্রকাশের উদ্যোগ নেয়ায় প্রকাশক সজল আহমেদকে আন্তরিক ধন্যবাদ।

পরিশেষে, পূর্ববঙ্গের ফটোগ্রাফির এই বিস্মৃত অথচ সমৃদ্ধ। ইতিহাসের গলিপথে হেঁটে যে রােমাঞ্চ অনুভব করেছি তার কিছুটা যদি পাঠকের কাছে পৌছাতে পারি তবেই আমার শ্রম সার্থক মনে করব। স্মৃতির কারিগর সকল ছবিওয়ালার প্রতি অতল শ্রদ্ধা।
অধ্যাপক তারেক আজিজ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ঢাকা

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ