শেষ অধ্যায় নেই রিভিউ : সাদাত হোসাইন | Sesh Oddhoy Nei By Sadat Hossain



শেষ অধ্যায় নেই 
সাদাত হোসাইন
রিভিউ লিখেছেন Shobuj Ahammed Murshalin
রেটিং দিলে—
ছদ্মবেশ = ৯.৫/১০
শেষ অধ্যায় নেই = ৮.৫/১০

কোন যন্ত্রণাটা সবচেয়ে বেশি তীব্র, বিষ না বিষাদের?

প্রিয় লেখকের, প্রিয় সিরিজ রেজা। শেষ অধ্যায় নেই পড়ে নিজের অনুভূতিটুকু শেয়ার করছি। এবং সেই সাথে সামান্য রিভিউ। 

শেষ অধ্যায় নেই, একটি থ্রিলার উপন্যাস। রেজা সিরিজের দ্বিতীয় বই এটা। প্রথম বই ছদ্মবেশ। 

প্লট— (  স্পয়লার ফ্রি  ) 
বিখ্যাত লেখক শফিক শাহরিয়ার। বর্তমানে সে নানান সমস্যায় জর্জরিত। তৃণা নামের এক উঠতি মডেলের সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে, নিজের স্ত্রী তার একমাত্র মেয়েকে নিয়ে তাকে ছেড়ে চলে যায়। এই ঘটনায় সে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। এদিকে মডেল তৃণা তাকে ব্ল্যাকমেইল করছে— তার কাছে শফিক শাহরিয়ার সেক্সটেপ আছে, এই বলে। তৃণা চাচ্ছে শাহরিয়ার তাকে বিয়ে করুক অথবা তাকে ক্যারিয়ার, টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়ি দিয়ে সেটেল্ড করে দিক। অন্য দিকে শফিক শাহরিয়ারের স্ত্রীও এক সময় অভিনেত্রী ছিলেন। বিয়ে হবার পর অভিনয় ছেড়ে দেন। সে শফিক শাহরিয়ারকে ছেড়ে চলে গিয়ে আবার তার পুরনো জীবনে ফেরত যেতে চাচ্ছে। এবং সিনেমা জগতে আবার পা দিতে চাচ্ছেন। এদিকে সেও শফিক শাহরিয়ারলকে ব্ল্যাকমেইল করছে তার ছবিতে টাকা লগ্নি করার জন্য। 

এভাবেই বর্তমানে শফিকের জীবনে চলছে এক ভয়াবহ অবস্থা। সে নতুন কোনো লেখা লিখতে পারছে না। তাই সব কিছু ছেড়ে, নির্জন চা বাগানে চলে আসার সিন্ধান্ত নেয় সে। এখানেই কিছুদিন একা একা থেকেই তার নতুন থ্রিলার বইটা লিখে শেষ করবে। 

জনসন টি এস্টেট৷ এটি মূলত তার এক বন্ধুর বহু পুরনো চা বাগান। এখানে এসেই সে নানা রকম অযৌক্তিক, রহস্য, ভয়ানক ঘটনার সম্মুখীন হতে থাকে। মাঝরাতে চা বাগানে পাহারের ঢাল ঘেঁষে জেগে উঠে ছায়ামূর্তি। সেই সময় চারদিকে ঘন কালো অন্ধকারে ছেয়ে যায়। বিদ্যুৎ থাকেনা। এবং দূরে পাহাড়ের গির্জা থেকে ঢং ঢং ঢং করে ঘন্টা বেজে ওঠে। সে এই রহস্যের সমাধান বের করতে গিয়ে জানতে পারে ভয়াবহ এক ঘটনা!

এভাবে নানা রহস্যময় ঘটনার মধ্য দিয়ে তার লেখা চলতে থাকে। বেশ কিছুদিন সবকিছু স্বাভাবিক থাকায় লেখার কাজ দ্রুতই এগিয়ে যায়। একটা মাত্র অধ্যায় বাকি। শেষ অধ্যায়। সেটা লেখার আগে তার পরিচিত বন্ধু, প্রকাশক, স্ত্রী-সন্তান দের আমন্ত্রণ জানায় জনসন টি এস্টেটে। এক বড় পার্টির ব্যবস্থা করে। আমন্ত্রিত নই এমন দু'জন হঠাৎ উপস্থিত হয় সেখানে। এবং হঠাৎই সেখানে এক তুমূল ঝগড়ার সৃষ্টি হয়।  

পরদিন ভোরে চা বাগের এক কর্মকর্তা শফিক শাহরিয়ারকে পাহারের খাড়া ঢালের নিচে মৃত অবস্থা পরে থাকতে দেখে। 

শফিক শাহরিয়ার কি আত্মহত্যা করেছে?
নাকি তাকে কেউ খুন করেছে?
খুন করলে কে করেছে? 
এই সব প্রশ্নের উত্তর জানতে এবং নানা গোপন রহস্য জানতে পড়ে ফেলুন রেজা সিরিজের দ্বিতীয় বই শেষ অধ্যায় নেই। 

অসাধারণ একটা থ্রিলার বই। পড়তে শুরু করলে বইয়ের পাতায় হারিয়ে যাবেন। কল্পনার চলে যাবেন জনসন টি এস্টেটে। পাহার, চা বাগান, রহস্য, এডভেঞ্চার- এসব আপনাকে ঘিরে ধরবে৷ নিজের অজান্তেই ডুবে যাবেন বইতে। 

শেষ অধ্যায় নেই নিঃসন্দেহে অসাধারণ একটা বই। তবে রেজা সিরিজের প্রথম উপন্যাস ছদ্মবেশের তুলনায় শেষ অধ্যায় নেই- এটার থ্রিলার একটু কম মনে হয়েছে আমার। ছদ্মবেশ সাদাত ভাইয়ের বেস্ট একটা থ্রিলার বই। ছদ্মবেশের কাহিনি যেমন অসাধারণ সেই সাথে বইটাতে থ্রিলারে ভরপুর। একের পর এক থ্রিলার সামনে আসতে থাকে। এবং চিন্তার জগতে সবকিছু এলোমেলো করে দেয়। ছদ্মবেশ বইয়ের সবচে' গুরুত্বপূর্ণ এবং শক্তিশালী দিক হলো— কয়েক পেজ পড়লেই আপনি এক গোলোক ধাঁধাঁয় আটকে যাবেন। খুব দ্রুতই গল্পের ঢুকে যাবেন। এবং সেখান থেকে বের হওয়া সম্ভব নয়। শেষ অধ্যায় নেই এখানে একটু সময় নিয়েছে। 

শেষ অধ্যায় নেই নিঃসন্দেহে অসাধারণ একটা বই। আবার বললাম, কারণ আসলেই বইটা অসাধারণ। মাস্ট রিডিং একটা বই। আমি খুব এঞ্জয় করেছি থ্রিলারটা। তবে ছদ্মবেশ পড়ে প্রত্যাশা ছিলো এর থেকে অনেক বেশি। এটা আমার ব্যক্তিগত মন্তব্য। প্রিয় একজন লেখক, সেই থাকে প্রিয় সিরিজ— রেজা! তাই প্রত্যাশা একটু বেশিই। রেজা সিরিজের তৃতীয় বইয়ের অপেক্ষায় রইলাম। 

 ২৫% ছাড়ে অর্ডার করতে ইনবক্স করুন আজই। 


বই                 : শেষ অধ্যায় নেই
লেখক           : সাদাত হোসাইন
প্রকাশনী        : অন্যধারা
মুদ্রিত মূল্য     : ৪০০ ৳
জনরা            : থ্রিলার
মোট পৃষ্ঠা       : ২১৬
প্রথম প্রকাশ   : অক্টোবর ২০২০
রিভিউদাতা    : সাইক

উপন্যাস সম্পর্কিত প্রারম্ভিক কিছু কথা :
অন্যান্য উপন্যাসের তুলনায় থ্রিলার উপন্যাসের প্লট ও গঠনপ্রণালী সচরাচর ভিন্নধর্মী হয়ে থাকে। এ ধরণের উপন্যাসে দেখা যায় মানবিক ত্রুটি, খুন ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে উঠে আসে মানবজীবনের এক অন্ধকারাচ্ছন্ন গল্পের রহস্য। এগুলোই হয়ে থাকে থ্রিলার উপন্যাসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। এ ধরণের উপন্যাসের সেইসব টানটান উত্তেজনাকর রহস্য জানার আকর্ষণে পাঠক উপন্যাসের শেষ পর্যন্ত পৌঁছতে প্রলুব্ধ হন। সেইসব রহস্য উদঘাটনের সাথে সাথে পাঠক এক রোমাঞ্চকর অনুভূতির স্বাদ পান, যা অন্য ধারার উপন্যাসে সাধারণত পাওয়া যায় না। এজন্য, আধুনিক যুগে বাংলা সাহিত্য তথা বিশ্বসাহিত্যে থ্রিলার ধারার গল্প বা উপন্যাস প্রবল পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। বর্তমানে পাঠকদের একটি বিরাট অংশ এ ধরণের উপন্যাস পড়ছেন এবং সময়ের সাথে সাথে থ্রিলার উপন্যাসের পাঠক নাটকীয় হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই, বাংলা ভাষাভাষী থ্রিলার পাঠকদের চাহিদা পূরণ করার জন্য পৃথিবী বিখ্যাত বিদেশী থ্রিলার বইগুলো বাংলা ভাষায় অনুবাদ করা হয়ে থাকে। কিন্তু আশার কথা এই যে, বর্তমানে আমাদের দেশের সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাংলা ভাষাতেও মৌলিক থ্রিলার লেখা হচ্ছে এবং সেগুলো পাঠক মহলে বেশ সমাদৃত হচ্ছে। বর্তমানে পাঠকপ্রিয় লেখক সাদাত হোসাইনও মৌলিক থ্রিলার উপন্যাস রচনা করা শুরু করেছেন। "ছদ্মবেশ" ছিল তাঁর লেখা প্রথম থ্রিলার উপন্যাস, যেটা তিনি পরীক্ষামূলক হিসেবে রচনা করেছিলেন। এই উপন্যাসটি পাঠকসমাজে আলোচিত হলে তাঁর এই ধারার দ্বিতীয় উপন্যাস রচনার দাবি উচ্চকিত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় গতবছর অর্থাৎ ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে অন্যধারা থেকে প্রকাশিত হয় লেখকের এই দ্বিতীয় থ্রিলার উপন্যাস "শেষ অধ্যায় নেই" বইটি।
লেখক সাদাত হোসাইন এর আগে সমকালীন উপন্যাস লিখে তুমুল পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছেন। এ ধরণের বেশ কিছু সমকালীন উপন্যাস রচনা করার কারণে বলা যায় এ ধরণের উপন্যাসই ছিল তাঁর অভ্যস্ত পরিসর। কিন্তু কম্ফোর্ট জোন বা অভ্যস্ত পরিসর থেকে বেরিয়ে এসে থ্রিলার উপন্যাস রচনা করা নিঃসন্দেহে একটি দুঃসাহসিক চেষ্টা। কিন্তু তাঁর এই "শেষ অধ্যায় নেই" উপন্যাসটি পড়ার পর আমার মনে হয়েছে, তিনি তাঁর চেষ্টায় সফল হয়েছেন। কেননা, থ্রিলার উপন্যাসের নিয়ম অনুসারে "শেষ অধ্যায় নেই" বইয়ের প্রথমে কোনো একটি রহস্য তৈরি হয়েছে এবং তারপর পুরো বই জুড়ে সেই রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। মাঝখানে অবশ্য অনেকের দিকে নিক্ষেপ হয়েছে সন্দেহের তির। কিন্তু আসল অপরাধীর খোঁজ পাওয়া যায় উপন্যাসের শেষে। রহস্যের পাশাপাশি অন্যসব গল্পের মতো এই উপন্যাসেও রয়েছে প্রেম-ভালোবাসা ও মানবিক সম্পর্কের টানাপোড়েন। ঠিক এরকম, লেখকের দ্বিতীয় থ্রিলার উপন্যাস বিবেচনায় বইটির রহস্যপূর্ণ কাহিনি, গঠনপ্রণালী, ভাষার প্রাঞ্জলতা, সিলেটের চা বাগানের প্রাকৃতিক পরিবেশের বর্ণনা ইত্যাদিতে লেখক কৃতিত্বপূর্ণ স্বাক্ষর রেখেছেন বলে আমার মনে হয়েছে।

চা বাগানের বর্ণনা :
"শেষ অধ্যায় নেই" রহস্যোপন্যাসের কাহিনির চিত্রপটে উঠে এসেছে একটি চা বাগান। বিস্তৃত খোলা সবুজ প্রান্তর জুড়ে অবস্থিত সেই চা বাগানটি। সবুজ বৃক্ষ আর ঘন ঝোপঝাড়ে ঢেকে আছে উঁচু-নিচু পাহাড়ি এলাকা। এর উত্তর দিকের রাস্তাটি ধীরে ধীরে সমতল হয়ে উপরের দিকে উঠে গেছে। এই রাস্তার একটি স্থানে রয়েছে দেয়াল দিয়ে ঘেরা একটি ছোট্ট সমাধিক্ষেত্র। বহু পুরতন এই সমাধিক্ষেত্রটি অযত্ন-অবহেলায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে আছে। সমাধিফলক গুলোও ঝোপঝাড়ে ঢেকে আছে। এরপর রাস্তাটি হালকা খাড়া হয়ে উঁচু পাহাড়ের সমতল স্থানে এসে মেশে। এখানে রয়েছে একটি ছোট্ট গির্জা। এই গির্জা থেকেই অন্ধকার রাতে ঢংঢং আওয়াজ শুনতে পান শফিক শাহরিয়ার। তিনি থাকেন চা বাগানের একদম শেষ প্রান্তে অবস্থিত একটি কাঠের বাংলোতে। এই বাংলোর পর খাড়া পাহাড়ি ঢাল নেমে গেছে নিচে। বাগানের শেষ প্রান্তের খানিকটা জায়গা জুড়ে সীমানাপ্রাচীর নেই। এজন্য এই জায়গটুকু দূর থেকে দেখলে খোলামেলা ও অরক্ষিত মনে হয়। তাছাড়া, বাগানটি সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় এখানে অপরাধ প্রবণতাও অপ্রতুল নয়।
দিনের বেলাতে এই চা বাগানের সৌন্দর্য একরকম। কিন্তু রাতের আঁধারে এটি যেন অন্যরকম রূপ ধারণ করে। রাতের বেলার সেই দৃশ্য পাঠক ভালোভাবে প্রত্যক্ষ করতে পারবেন যখন এই উপন্যাসে এসআই রেজা রাতের আঁধারে পরিদর্শন করতে আসবেন চা বাগানটি।
এই চা বাগানটি ১৮৯০ সালের দিকে নির্মাণ করেছিলেন হেনরি জনসন নামের একজন ব্রিটিশ ভদ্রলোক। তার নামানুসারেই এর নাম হয় "জনসন টি এস্টেট"। এখানে অবস্থিত গির্জাটি তিনিই প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। আর এখানে অযত্ন-অবহেলায় যে সমাধিক্ষেত্রটি পড়ে আছে, সেটাও তার। পরবর্তীতে শফিক শাহরিয়ারের বন্ধু জাফরের পূর্বপুরুষ চা বাগানটি কিনে নেন। কিন্তু তারপর বাগানটির আর নাম পরিবর্তন করা হয়নি। তাই, এখনো এই নামেই চা বাগানটি পরিচিত।

উপন্যাসের রহস্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা :
"শেষ অধ্যায় নেই" বইয়ের কেন্দ্রীয় চরিত্রে রয়েছেন শফিক শাহরিয়ার নামের একজন স্বনামধন্য লেখক। একের পর এক বই লিখে তিনি পাঠক সমাজের বিদগ্ধ মহলে সাড়া ফেলে দিয়েছেন। এবার তিনি এমন একটি বই লিখতে চলেছেন, যেটা হবে তার লেখা অন্য সব বই থেকে আলাদা ও চমকপ্রদ। এটা সাধারণ কোনো বই নয়, এটা হবে একটি জটিল রহস্যোপন্যাস। পত্রপত্রিকায় ইতোমধ্যেই এই বইটির পরিকল্পনা নিয়ে বেশ কিছু লেখালেখিও হয়েছে। এজন্য এই বইটি নিয়ে পাঠক ও প্রকাশকদের মধ্যে প্রচুর আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
কিন্তু শফিক শাহরিয়ার এমন সময় তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অস্থির হয়ে পড়েন। তার কথিত প্রেমিকা তৃণাকে নিয়ে তিনি বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়ে যান। কারণ, এই কথিত প্রেমিকা তৃণার কথা পৌঁছে যায় শফিক শাহরিয়ারের স্ত্রী নাজনীনের নিকট পর্যন্ত। এই কারণে শফিক শাহরিয়ারের সাথে তার স্ত্রীর তৈরি হয় দাম্পত্য টানাপড়েন। তার স্ত্রী নাজনীন তাদের মেয়ে ঊষাকে নিয়ে একা থাকতে শুরু করেন। সবকিছু মিলে একটা দিশেহারা অবস্থা তৈরি হয় শফিক শাহরিয়ারের।
অন্যদিকে শফিক শাহরিয়ারের কাঁধে রয়েছে তার লেখা রহস্যোপন্যাস নিয়ে পাঠকের আশা পূরণ করার দায়িত্ব। কিন্তু এমন দিশেহারা অবস্থার মধ্যে এরকম একটি জটিল রহস্যোপন্যাস রচনা করা কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছিল না তার পক্ষে। তার প্রয়োজন ছিল সকল প্রকার দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকার ব্যবস্থা এবং সেই সাথে নিরিবিলি পরিবেশ। সবকিছু বিবেচনা করে তিনি সিদ্ধান্ত নেন, "জনসন টি এস্টেট" নামে সিলেটে অবস্থিত তার বন্ধু জাফরের পারিবারিক চা বাগানের নিরিবিলি পরিবেশে এসে নিবিষ্ট মনে উপন্যাস রচনা করবেন। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। তিনি তার বন্ধু জাফরকে সবকিছু ইমেইলের মাধ্যমে জানিয়ে চলে আসেন সেই চা বাগানে।
কিন্তু এই চা বাগানে আসার পর লেখক শফিক শাহরিয়ার একের পর এক নেতিবাচক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে থাকেন। তিনি এয়ারপোর্ট থেকে নেমে দেখেন তার জন্য গাড়ি পাঠানো হয়নি। আবার চা বাগানের ম্যানেজার আব্দুল বাতেনের মোবাইল ফোনও বন্ধ। এরপর অনেক কষ্টে চা বাগানে পৌঁছানোর পর আরও সব অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে থাকে। মাঝেমাঝে ইলেক্ট্রিসিটি চলে যায়। আবার সেই সময় জেনারেটরও চালু হয় না। ঠিক এমন সময় গির্জা থেকে বেজে ওঠে ঢংঢং আওয়াজ। যদিও এই চা বাগানে এমন সব ঘটনা ঘটার কথা নয়। তবুও এসব ঘটনার কিছু অজুহাত দাঁড় করান ম্যানেজার আব্দুল বাতেন। কিন্তু তার দেখানো অজুহাতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি শফিক শাহরিয়ার।
শফিক শাহরিয়ার কখনো নির্বিঘ্নে চা বাগান ঘুরে দেখতে পারতেন না। ঘুরে দেখতে গেলেই ম্যানেজার আব্দুল বাতেন নতুবা কেউ না কেউ এসে এটা-ওটা বুঝিয়ে তাকে বাংলোতে চলে যেতে বলতো। তাদের এসব ক্রিয়াকলাপ দেখে শফিক শাহরিয়ার ভালোভাবেই বুঝতে পারেন যে, তিনি এখানে আছেন এটা কেউ চাইছে না। এতসব প্রতিকূলতার মধ্যেও তিনি তার সেই রহস্যোপন্যাস লিখে যেতে থাকেন। ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেলে অন্ধকারে মোমবাতির আলোতে লেখা চালিয়ে নিয়ে যেতেন।
এরই মধ্যে এক অন্ধকার রাত্রে শফিক শাহরিয়ার বাংলো থেকে বাইরে বেরিয়ে এসে চা বাগানে স্বচক্ষে উল্টোপাল্টা কিছু প্রত্যক্ষ করেন। এই ঘটনায় তিনি ভয়ও পান। বিষয়টি তিনি কাউকে না কাউকে জানিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।
দেখতে দেখতে শফিক শাহরিয়ারের লেখা উপন্যাসটি শেষ পর্যায়ে পৌঁছে যায়। শুধু শেষ অধ্যায়টা তখন ছিল বাকি। এদিকে দীর্ঘদিন তার জীবনে কোনো আনন্দ ছিল না। তাই, তিনি চেয়েছিলেন এ সময় কিছু অতিথিকে বাংলোতে আমন্ত্রণ করে দিনটা সবাইকে নিয়ে উপভোগ করবেন এবং তারপর ফুরফুরে মেজাজে উপন্যাসটি সমাপ্ত করবেন। এজন্য তিনি তার কিছু প্রিয়জনকে আমন্ত্রণ জানান। আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে এমন কেউ কেউ ছিলেন যারা অপ্রিয় কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। আবার কেউ কেউ বিনা আমন্ত্রণে এসে উপস্থিত হয়েছিলেন।
যাইহোক, শফিক শাহরিয়ার এদের সবার জন্য একটি দিন বরাদ্দ করে রেখেছিলেন। অর্থাৎ, তিনি চেয়েছিলেন ঐ দিনটি শুধু এদেরকেই সময় দেবেন। অন্যদিকে, তার স্পেশাল মানুষের জন্য অন্য একটি দিন বরাদ্দ করে রাখেন। তিনি চেয়েছিলেন, স্পেশাল মানুষের সাথে স্পেশালভাবে কাটাবেন দিনটি।
কিন্তু এমন একটি উৎসবমুখর সময়ে এমন এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যায়, যা সবাইকে হতবাক করে দেয়। অবাক করে দেয় শফিক শাহরিয়ারের একজন ভক্ত ও পাঠক এসআই রেজাকেও। এখান থেকেই ঘনীভূত হতে শুরু করে "শেষ অধ্যায় নেই" উপন্যাসের সকল রহস্য।
শফিক শাহরিয়ারের লেখা রহস্যোপন্যাসের শেষ অধ্যায় নেই। কিন্তু "শেষ অধ্যায় নেই" উপন্যাসে শেষ অধ্যায় আছে এবং এই উপন্যাসের সব রহস্যের যুক্তিযুক্ত সমাধান মিলবে এই শেষ অধ্যায়ে।

উপন্যাসের উল্লেখযোগ্য কিছু চরিত্র বিশ্লেষণ :
"শেষ অধ্যায় নেই" উপন্যাসের মূল কেন্দ্রীয় চরিত্রে আছেন শফিক শাহরিয়ার। তার স্ত্রী নাজনীন এবং তার প্রেমিকা তৃণাও এই উপন্যাসের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। এদের পাশাপাশি আরো আছেন প্রকাশক, চলচ্চিত্র প্রযোজক, সাংবাদিক, পুলিশ, সিলেটের চা বাগানের একাধিক কর্মচারীসহ আরো অনেকে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বদের চরিত্র বিশ্লেষণ করা হলো।
→ শফিক শাহরিয়ার : এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় ও মুখ্য চরিত্রে আছেন তিনি। লেখালেখি জগতে তিনি আকাশছোঁয়া খ্যাতি কুড়িয়েছেন। তার লেখা বই প্রকাশের জন্য প্রকাশকদের তার নিকটে ধন্না দিয়ে থাকতেও দেখা যায়। লেখক হিসেবে তিনি সফল হলেও তার ব্যক্তিগত জীবন অগোছালো। স্ত্রী এবং একটি শিশুকন্যা থাকা সত্ত্বেও কথিত আছে তিনি অন্য কারো সম্পর্কে জড়ান। ফলে তার দাম্পত্যজীবনে নেমে আসে ঘোর ঘনঘটা। কখনো তিনি এসব বিষয় নিয়ে বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এরকম মুহূর্তে কিংবা বিশেষ কোনো উপলক্ষে তিনি মদ পান করে নিজেকে ভাসিয়ে দেন ভাবালুতার রাজ্যে।
→ নাজনীন : ইনি হলেন শফিক শাহরিয়ারের স্ত্রী। একসময় মিডিয়ায় কাজ করতেন। অভিনয় জগতে অল্প সময়ের মধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। বিয়ের আগে শফিক শাহরিয়ারের লেখা গল্প অবলম্বনে নির্মিত সিনেমাতেও অভিনয় করেন তিনি। সেই সিনেমার মাধ্যমেই লেখক শফিক শাহরিয়ারের কাছে আসার সুযোগ পান তিনি। এখান থেকেই শুরু হয় হৃদয় দেওয়া-নেওয়া। তারপর বিয়ে। কিন্তু অনিবার্য কারণে তিনি অভিনয় ছেড়ে দেন। বিয়ের পর তাদের ঊষা নামের একটি মেয়েও হয় কিন্তু তাদের সে দাম্পত্যজীবন সুখের হয়নি।
→ ঊষা : লেখক শফিক শাহরিয়ার ও নাজনীনের একমাত্র কন্যা ঊষা। সে তার বাবাকে ছেড়ে মায়ের সাথে আলাদা থাকতে শুরু করে। কিন্তু তবুও সে বাবার জন্য সবসময় ব্যাকুল হয়ে থাকে। ভীষণ ভালোবাসে বাবাকে। মেয়েরা কতটা পিতৃভক্ত হতে পারে, সেটার একটা ছোট্ট দৃষ্টান্ত আমরা পেতে পারি শফিক শাহরিয়ার ও তার মেয়ের মধ্যে।
→ তৃণা : উগ্র ও উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করেন তিনি। ধূমপান করার স্বভাবও আছে তার। পেশায় একজন উঠতি জনপ্রিয় মডেল-অভিনেত্রী। দেখতেও সুন্দরী। কথিত আছে যে, লেখক শফিক শাহরিয়ারের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছেন তিনি। এমনকি শফিক শাহরিয়ারকে ব্ল্যাকমেইল করার অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে।
→ সাংবাদিক ঋভু রায় : পেশায় একজন সাংবাদিক। কুকুরের মত প্রবল ঘ্রাণশক্তি তার। কখন কোথায় কী সংবাদ অপেক্ষা করছে তা যেন বাতাসে গন্ধ শুকেই বলে দিতে পারেন তিনি। অনেক কারণে শফিক শাহরিয়ার তাকে পছন্দ করেন না। তাছাড়া, ভস্মে ঘি ঢালার মত শফিক শাহরিয়ারের জীবনটা বিষিয়ে দেওয়ার পিছনেও অবদান আছে তার। এক কথায় বলা যায়, একজন ধুরন্ধর লোক তিনি।
→ প্রকাশক মহিউদ্দিন আহমেদ : সত্তরাের্ধ্ব বৃদ্ধ মানুষ তিনি। নানাবিধ রােগে আক্রান্ত। শফিক শাহরিয়ারের জীবনে এই মানুষটির ভূমিকা অপরিসীম। আজ থেকে প্রায় পঁচিশ বছর আগে যখন তাকে কেউ চিনত না, জানত না, তখন এই মানুষটিই প্রথম তাকে বই প্রকাশের সুযােগ করে দিয়েছিলেন। এখন বয়সের কারণে প্রকাশনার সঙ্গে নিজে সরাসরি যুক্ত না থাকলেও শফিক শাহরিয়ারের সঙ্গে তার সম্পর্কটা রয়েই গেছে। বরং এতবছরে সেই সম্পর্কটা আর লেখক প্রকাশকের সম্পর্ক নেই। সেটি এখন অনেকটাই পিতা-পুত্রের সম্পর্কের মতাে হয়ে গেছে। এজন্য, বিপদে-আপদে সবার আগে এই বৃদ্ধ মানুষটার কাছেই ছুটে যান শফিক শাহরিয়ার।
→ আব্দুল বাতেন : তিনি হলেন চা বাগানের ম্যানেজার। বিশ বছর ধরে এই চা বাগানে কাজ করছেন তিনি। কিন্তু তারপরও তার কথা বলার ধরণ কিংবা ক্রিয়াকলাপ মোটেও সুবিধার মনে হয়নি শফিক শাহরিয়ারের নিকটে। কারণ, এনার আচার-আচরণ অদ্ভুত। কথা বলেন রহস্যময় ভঙ্গিতে। তার সেসব কথা শুনলে দারুণ অস্বস্তি বোধ হয়। সবচেয়ে বিরক্তিকর ব্যাপার হলো, তিনি একবার কথা বলা শুরু করলে আর থামতে চান না।
→ ফ্রেডরিখ রোজারিও : ইনি হলেন চা বাগানে অবস্থিত গির্জার ফাদার। ফাদার ফ্রেডরিখ নামেই সর্বাধিক পরিচিত। বলবান ও দীর্ঘদেহী মানুষ তিনি। তবে চেহারার মধ্যে সৌম্য একটা ভাব আছে। কথা বলেন ধীরে এবং স্পষ্ট উচ্চারণে। তার সাথে কথা বললে মনে হয় দারুণ শিক্ষিত লোক তিনি। নানা বিষয়ে জানাশোনা আছে তার। চিকিৎসাশাস্ত্রেও হাতযশ আছে তার। এজন্য, তার সাথে সময় কাটানোটা উপভোগ্য।
→ এসআই রেজা : তার পুরো নাম রেজাউল হক। অনেকে হক সাহেব বলেও ডাকেন। পেশায় একজন পুলিশ অফিসার। তিনি লেখক শফিক শাহরিয়ারের একজন একনিষ্ঠ পাঠক। লেখকের প্রায় সব বই পড়েছেন তিনি। সবচেয়ে মজার ব্যাপার, তিনি লেখকের কবিতার বড় ভক্ত। কারণ, পুলিশের জীবনে রহস্য, থ্রিলার, মার্ডার, ক্রাইম এগুলো নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। কিন্তু, কবিতা বা গানের মত বিনোদন অনুপস্থিত।
→ অনু : পৃথিবীতে এই একটি মানুষ, এসআই রেজা যার সাথে দমবন্ধ অনুভূতিতে কথা বলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারেন। এই চরিত্রটি উপন্যাসের কোনো গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র নয়। কিংবা কোনো রহস্যের সাথে এই চরিত্রের কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু তবুও এই চরিত্রের উপস্থিতি যেন উপন্যাসটিকে অলংকৃত করেছে।

ফ্ল্যাপে লেখা কথা :
কিছু কৌতূহল উদ্দীপ্ত করা প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হয়েছে এই বইয়ের ফ্ল্যাপে লেখা কথাতে। উপন্যাসটিতে উঠে আসা ঘটনাস্থল, চরিত্র ও রহস্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করার পর ফ্ল্যাপে লেখা এই কথাগুলো পাঠকের কৌতূহলকে আরও উদ্দীপ্ত করতে পারে।
ঢং ঢং ঢং!
দূর পাহাড়ের গির্জা থেকে ঠিক রাত বারোটায় ঘণ্টা বেজে ওঠে। তারপর চলে যায় ইলেকট্রিসিটি!
নির্জন চা বাগানের খাড়া ঢাল ঘেঁষে পুরনো বাংলো।  বিখ্যাত লেখক শফিক শাহরিয়ার সেখানে এসেছেন গুরুত্বপূর্ণ এক উপন্যাস লিখতে। রহস্যোপন্যাস। সেই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্রও একজন লেখক। গল্পে সেই লেখক খুন হয়ে যাবেন। কিন্তু হঠাৎই ভয় করতে লাগল কেন শফিক শাহরিয়ারের?
মাঝরাতে পাহাড়ের ঢাল ঘেঁষে জেগে ওঠা ফিসফিস ছায়ামূর্তিরা কারা?
কেন রাত বাড়তেই ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসে তাঁর?
প্রায় দু শ বছর আগের পুরনো চা বাগান, জনসন টি এস্টেট!
হেনরি জনসনের কবর।
কিন্তু গভীর রাতে সেই কবরে, গোরস্থানে কফিনের ডালা খুলে যায় কেন?
কেন চাঁদের আলোয় গা ঝমঝমে এক উপন্যাস লিখতে গিয়ে আচমকা জমে গেলেন শফিক শাহরিয়ার নিজেই?
চোখের সামনে থেকে কোথায় উধাও হয়ে গেল কফিন কাঁধের ছায়ামূর্তিগুলো?
কেন কোটি কোটি টাকা দরকার লেখকেরও?
আসলেই কি তাঁর সেক্সটেপ আছে সুন্দরী মডেল-অভিনেত্রী তৃণার কাছে?
ব্ল্যাকমেইল করতে চাইছে তাঁর স্ত্রী নাজনীনও?
আর আট বছরের মেয়ে উষা যে অপেক্ষায় থাকে বাবার?
আলফ্রেড হিচকক সিনেমা বানাতে গিয়ে নাকি বাজার থেকে কিনে ফেলতেন তাঁর পছন্দের উপন্যাসের সব কপি? এমনকি লাইফটাইম কপিরাইটসহ?
শফিক শাহরিয়ারের শেষ উপন্যাসের ভাগ্যেও কি তাই ঘটবে? কিন্তু তাঁর উপন্যাসের শেষ অধ্যায়টিই যে নেই! সেখানে আছে শুধু অদ্ভুত রহস্যময় এক চিঠি!
কী হচ্ছে এসব?
রেজা-ই বা কোথায়?
এত কিছু ঘটে যাচ্ছে, অথচ কোথাও নেই এসআই রেজা!
তাহলে কীসের রেজা সিরিজ এই বই?

বইটির মুদ্রণ ও প্রচ্ছদ সম্পর্কিত কিছু কথা :
বইটির মুদ্রণ ও কভার পেজটি খুবই উন্নতমানের এবং ভিতরের পৃষ্ঠাগুলোর মানও বেশ ভালো। বইয়ের প্রচ্ছদের সাথে মিল রেখে ভিতরে দেওয়া হয়েছে কালো রংয়ের ফিতা। প্রচ্ছদে দেখা যাচ্ছে একটি ল্যাম্পশেডে আলো জ্বলছে এবং অপর পাশে পড়ে আছে খাতা-কলম ও একটি চশমা। বইটির নাম ও উপন্যাসের কাহিনির সাথে মিল রেখে এমন প্রচ্ছদ করা হয়েছে এবং প্রচ্ছদটি করেছেন উপন্যাসের লেখক সাদাত হোসাইন নিজেই। এছাড়া, একদম নিচের বাঁদিকে পুলিশের মাথায় ক্যাপ ও বন্দুক সম্বলিত একটি ছোট্ট লোগো ব্যবহার করা হয়েছে এবং লেখা আছে "রেজা সিরিজ"। লোগোটি তৈরি করেছেন শওকত শাওন। অন্যদিকে, কভার পেজের পিছনে করোনা প্রাদুর্ভাব রোধ করার জন্য সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। করোনা থেকে পাঠককে সতর্ক করার এই অভিনব পদ্ধতিটি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে।

শেষ কিছু কথা :
পরিশেষে বলা যায়, লেখক সাদাত হোসাইনের অন্য সব উপন্যাসের তুলনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বাদের একটি রহস্যোপন্যাস এই "শেষ অধ্যায় নেই" বইটি। এই উপন্যাসের একদিকে যেমন উঠে এসেছে পারিবারিক টানাপোড়েন, অন্যদিকে বিবৃত হয়েছে ঘোরতর রহস্যের জাল। সেই রহস্য ভেদ করতে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। সেই সাথে উঠে এসেছে সুশান্ত সিং রাজপুত, সালমান শাহ্ ও আলফ্রেড হিচককের মত পৃথিবী বিখ্যাত সেলিব্রিটিদের কিছু বিস্ময়কর অজানা তথ্য। শুধু তাই নয়, এই উপন্যাসে চা বাগানের প্রাকৃতিক পরিবেশের অসাধারণ বর্ণনা দেওয়া হয়েছে এবং প্রাঞ্জল ভাষায় উপন্যাসের প্রতিটি ঘটনা বিন্যস্ত করায় বুঝতে একটুও সমস্যা হয়নি। তাছাড়া, বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্য রেখে এমনভাবে উপন্যাসটি উপস্থাপন করা হয়েছে যেন, কারো না কারো জীবনের সাথে হয়তোবা মিল পাওয়া যেতে পারে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ