সিরাতে খাতামুল আম্বিয়া সা. : লেখক : মুফতি মুহাম্মাদ শফি রহ. | Seerate Khatamul Ambiya By Mufti Mohammad Shofi


বই : সিরাতে খাতামুল আম্বিয়া সা.
লেখক : মুফতি মুহাম্মাদ শফি রহ.
প্রকাশনী : কালান্তর প্রকাশনী
বিষয় : সীরাতে রাসূল (সা.)
অনুবাদক : ইলিয়াস মশহুদ
কভার : হার্ড কভার
ভাষা : বাংলা

উভয় জাহানের নেতা, সৃষ্টিজগতের অহংকার, দুনিয়া-আখিরাত সৃষ্টির উপলক্ষ্য বিশ্বনবি মুহাম্মাদ -এর জীবনচরিত পড়া ও পড়ানোর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। তাই যখন থেকে মুসলিমসমাজে সাহিত্যরচনা ও গ্রন্থ সংকলনের ধারা শুরু হয়েছে, তখন থেকে আজ পর্যন্ত প্রত্যেক যুগের আলিমরা আপনাপন ভাষায় নিজস্ব ভঙ্গিতে অসংখ্য সিরাতগ্রন্থ রচনা করেছেন এবং ভবিষ্যতে যে আরও কত হাজার গ্রন্থ রচিত হবে, সেটি আল্লাহই ভালো জানেন। কবি বলেন,

যে বাগানে গেয়ে যায় গান হাজারো বুলবুলি সে বাগানে আমিও তাদের সাথে সুর তুলি।

শুধু যে মুসলিম লেখকগণ নবিজির জীবনীগ্রন্থ লিখেছেন তা নয়; বরং হাজার হাজার অমুসলিম লেখকও তাঁকে নিয়ে অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করেছেন। এ ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইতিহাসবিদদের ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ সকল অমুসলিম লেখক কর্তৃক নবিজীবন নিয়ে লেখা ২০-৩০টি গ্রন্থ সম্পর্কে তো আমারই জানা আছে। যদিও তারা বিভিন্ন ঘটনা বর্ণনার ক্ষেত্রে চরম পক্ষপাতিত্বের আশ্রয় নিয়েছেন। এ জন্য তাদের লেখা জীবনীগ্রন্থ পাঠ করা থেকে সাধারণ মুসলিমদের বিরত থাকা উচিত। তবে এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়, পৃথিবীর ইতিহাসে আজ পর্যন্ত নবিজির জীবনী রচনায় যতটুকু গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, অন্য কোনো মানুষের ক্ষেত্রে তার কিয়দংশও হয়নি।

ইউরোপীয় এক সিরাত-লেখক বলেন, 'মুহাম্মাদের জীবনী-লেখকদের ধারা এত ব্যাপক ও বিস্তৃত যে, তা কখনো শেষ হওয়ার মতো নয়। তবে নবিজির জীবনী লেখকদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া এবং এ মহৎ কাজে জড়িত হতে পারা যে কারও জন্য গর্বের বিষয়। ১

উর্দু ভাষায় সিরাত-বিষয়ে নতুন ও পুরাতন অনেক গ্রন্থ রয়েছে, যেগুলো হিন্দুস্থানের আলিমগণ রচনা করে তাঁদের কর্তব্য আদায় করেছেন; কিন্তু এর পরও আমার অনুসন্ধানী দৃষ্টি অনেক দিন ধরে সংক্ষিপ্ত এমন একটি সিরাতগ্রন্থ খুঁজে ফিরছিল, কর্মব্যস্ত নারী-পুরুষ মাত্র দু-তিন বৈঠকে যেটি পড়ে ফেলতে পারবে। এর মাধ্যমে নিজেদের ইমান-আমল সতেজ করতে পারবে এবং নববি আদর্শকে নিজেদের জীবনে প্রতিফলিত করতে পারবে। পাশাপাশি গ্রন্থটি ইসলামি সংগঠন ও মাদরাসাসমূহের প্রাথমিক পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। অর্থাৎ, আমি এমন একটি গ্রন্থ খুঁজে ফিরছিলাম, যাতে সংক্ষেপে অথচ সতর্কতার সঙ্গে নবিজীবনের পূর্ণ চিত্র উপস্থাপন করা হবে; কিন্তু উর্দু ভাষায় এমন কোনো গ্রন্থ আমার নজরে পড়েনি।

ইতিমধ্যে সিমলার আমার কজন বন্ধু তাঁদের ইসলামি সংগঠনের জন্য এমন একটি গ্রন্থের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে আমাকে এ কাজটি করে দিতে অনুরোধ জানান। ফলে মনের আকাঙ্ক্ষা এবং তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিজ জ্ঞানের স্বল্পতা আর দীনি ব্যস্ততা সত্ত্বেও এ আশা নিয়ে কলম ধরেছি যে, আল্লাহর কাছে যখন নবিজির জীবনীকারদের তালিকা তুলে ধরা হবে, তখন সে তালিকায় অধমের নামটিও যুক্ত হবে। কবি বলেন,

বুলবুলি তো শুধু ফুলের ঘ্রাণ নিতেই গান গেয়ে যায়। এ জন্য মহান একটি উদ্দেশ্যে রাসুল-এর জীবনচরিত নিয়ে গ্রন্থটি লেখা শুরু করি। গ্রন্থটি রচনার ক্ষেত্রে উল্লিখিত বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ রেখে সিরাতের বিভিন্ন গ্রন্থের সারসংক্ষেপ যুক্ত করেছি :

১. গ্রন্থটির কলেবর যাতে দীর্ঘ না হয়, সেদিকে বিশেষ লক্ষ রাখা হয়েছে। এ জন্য আরবের ভৌগোলিক বিবরণ, ইসলামপূর্ব আরব-আজমের সার্বিক পরিস্থিতি—যেগুলো নবিজীবনের সঙ্গে সাধারণত উল্লেখ করা হয় এবং তাঁর জীবনালোচনার সঙ্গে এগুলো উপকারীও—সেগুলো আলোচনা না করে রাসুল এ ও তাঁর ব্যক্তিত্বের সঙ্গে যেগুলো সম্পর্কযুক্ত, শুধু সেসব বিষয় ও অবস্থা তুলে ধরাই যথেষ্ট মনে করেছি। ফলে এভাবে সংক্ষেপণ-নীতি অবলম্বনের কারণে এই গ্রন্থের অপর নাম দিয়েছি আওজাজুস সিয়ার লিখাইরিল বাশার বা সর্বশ্রেষ্ঠ মানবের সংক্ষিপ্ত জীবনচরিত।

২. গ্রন্থটি সংক্ষিপ্ত হলেও নবিজীবনের সার্বিক পরিস্থিতি যেন পূর্ণরূপে ফুটে ওঠে, এ জন্য সেদিকে বিশেষ লক্ষ রাখা হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ, প্রয়োজনীয় প্রায় সব বিষয় ও ঘটনা এতে স্থান পেয়েছে।

৩. নবিজীবনের বিভিন্ন যুদ্ধ ও তাঁর বহুবিয়ে সম্পর্কে ইসলামবিরোধীদের বিভ্রান্তিকর যেসব বক্তব্য রয়েছে, সেসব বিষয়ে মোটামুটি হলেও সন্তোষজনক উত্তর দেওয়া হয়েছে।

8. এ ছাড়া গ্রন্থটির মূল উৎস হচ্ছে সিরাতের নির্ভরযোগ্য ও প্রামাণ্য গ্রন্থসমূহ। এগুলোর উদ্ধৃতি যথাস্থানে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন : ১. মিশকাতুল মাসাবিহ, ২. সহিহ বুখারি, ৩. সহিহ মুসলিম, ৪. সুনানুন নাসায়ি, ৫. সুনানু আবি দাউদ, ৬. সুনানুত তিরমিজি, ৭. সুনানু ইবনি মাজাহ এবং সিহাহসিত্তার ব্যাখ্যাগ্রন্থসমূহ, ৮. কানজুল উম্মাল, ৯. খাসায়িসুল কুবরা (আল্লামা সুয়ুতি রাহ.), ১০. আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া, ১১. সিরাতে মুগলতাই, ১২. সিরাতু ইবনি হিশাম, ১৩. কাজি ইয়াজ রাহ.-এর শিফা শরহে খাফফাজিসহ, ১৪, সিরাতে হালাবিয়া, ১৫. জাদুল মাআদ (আল্লামা ইবনুল কাইয়িম রাহ.), ১৬, তারিখু ইবনি আসাকির, ১৭. সুরুরুল মাহজুন (শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলবি রাহ.), ১৮. আওজাজুস সিয়ার (শায়খ আহমাদ ইবনু ফারিস রাহ.), ১৯. নাশরুত তিব (আশরাফ আলি থানবি রাহ.)।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমার ক্ষুদ্র এ প্রয়াস কবুল করেছেন, এ জন্য তাঁর দরবারে অসংখ্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। প্রথমেই আমার শায়খ হাকিমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলি থানবি গ্রন্থটি পছন্দ করে তাঁর খানকায়ে ইমদাদিয়ার পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করেন এবং অন্যদেরও উৎসাহিত করেন। ফলে গ্রন্থটি প্রকাশের মাত্র তিন মাসেই পাঞ্জাব, হিন্দুস্থান ও বাংলার শতাধিক মাদরাসা ও ইসলামি সংগঠন তাদের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করেছে। সমস্ত প্রশংসা কেবল আল্লাহর।

মুহাম্মাদ শফি
২৮ জিলহজ ১৩৪8

নবিজির বংশপরিচিতি, জন্ম ও শৈশব

এক. নবিজির বংশপরিচিতি

নবিজি -এর পবিত্র বংশধারা পৃথিবীর সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত ও মর্যাদাশীল। এটি এমন এক বাস্তব সত্য যে, মক্কার সকল কাফির এমনকি তাঁর চরম শত্রুও তা অস্বীকার করতে পারেনি। আবু সুফিয়ান রা. ইসলামগ্রহণের আগে রোম সম্রাটের সামনে এ সত্য গোপন করতে পারেননি; বরং সত্যটাই স্বীকার করতে হয়েছিল তাঁকে। অথচ তখন তিনি মনে মনে চাচ্ছিলেন, যদি কোনো সুযোগ পাওয়া যায়, তাহলে নবিজির ওপর কোনো না কোনো দোষ চাপাবেন।

দুই. নবিজির বংশধারা

১. পিতার দিক থেকে নবিজির বংশপরিক্রমা

মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল মুত্তালিব ইবনু হাশিম ইবনু আবদি মানাফ ইবনু কুসাই ইবনু কিলাব ইবনু মুররা ইবনু কাআব ইবনু লুওয়াই ইবনু গালিব ইবনু ফিহর ইবনু মালিক ইবনু নাজার ইবনু কিনানা ইবনু খুজায়মা ইবনু মুদরিকা ইবনু ইলয়াস ইবনু নিজার ইবনু মাআদ ইবনু আদনান।

এ পর্যন্ত নবিজির বংশধারা সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত ও প্রমাণিত। এর পর থেকে আদম আ. পর্যন্ত তাঁর বংশধারা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে, তাই সেটুকু আর উল্লেখ করা হলো না।

২. মায়ের দিক থেকে নবিজির বংশপরিক্রমা

মুহাম্মাদ ইবনু আমিনা বিনতু ওয়াহাব ইবনু আবদি মানাফ ইবনু জুহরা ইবনু কিলাব।

* দালায়িলে আবু নায়িমে মারফু সূত্রে বর্ণিত আছে; জিবরিল আ. বলেছেন, 'আমি পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিম

প্রান্ত সফর করেছি; কিন্তু বনু হাশিমের চেয়ে সম্ভ্রান্ত ও মর্যাদাশীল কোনো বংশ দেখিনি। মাওয়াহিব। • ইবনু হিশামের মতে, নাজারের অপর নাম কুরাইশ। তাঁর বংশধররাই ‘কুরাইশি' বলে খ্যাত। তাঁর বংশোদ্ভূত না হলে কাউকে কুরাইশি বলা যায় না। তবে অনেকে বলেন, ফিহর ইবনু মালিকের অপর নাম কুরাইশ। — অনুবাদক।

উপরিউক্ত আলোচনার পর জানা গেল যে, কিলাব ইবনু মুররা পর্যন্ত পিতা-মাতার দিক থেকে বংশপরিক্রমা ভিন্ন হলেও এর পর থেকে একসঙ্গে মিলে গেছে।

তিন. নবিজির জন্মপূর্ব বরকতের সুবাস

প্রভাত হওয়ার আগে সুবহে সাদিকের আলো এবং রক্তিম পুবাকাশ যেমন পৃথিবীকে আলোকোজ্জ্বল সূর্যোদয়ের জানান দেয়, তেমনি নবুওয়াতি সূর্যের উদয়-মুহূর্ত যখন একেবারে নিকটে, তখন পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় এমন সব ঘটনা ঘটতে লাগল, যা নবিজির শুভ জন্মের আগমনী-সংবাদ দিচ্ছিল। মুহাদ্দিস ও ইতিহাসবিদদের পরিভাষায় সেগুলোকে ‘ইরহাসাত' বা অপেক্ষমাণ নিদর্শন বলা হয়।

নবিজি -এর সম্মানিত মা আমিনা থেকে বর্ণিত, নবিজি যখন তাঁর মাতৃগর্ভে, তখন আমিনাকে স্বপ্নে সুসংবাদ দেওয়া হয়—‘তোমার গর্ভে যে শিশু রয়েছে, সে এ উম্মাহর নেতা হবে। শিশুটি যখন ভূমিষ্ঠ হবে, তখন তুমি এ দুআ করবে—“আমি তাঁকে এক আল্লাহর আশ্রয়ে সমর্পণ করছি” এবং তাঁর নাম রাখবে মুহাম্মাদ।

আমিনা আরও বলেন, মুহাম্মাদ যখন আমার গর্ভে আসেন, তখন আমি একবার এমন একটি আলো দেখতে পাই, যে আলোতে শামের বসরা শহরের বড় বড় প্রাসাদ আমার দৃষ্টিগোচর হচ্ছিল!

তিনি আরও বলেন, আমি এমন কোনো মহিলাকে দেখিনি, যারা গর্ভবতী হয়ে আমার মতো এত হালকা ও সহজবোধ করেছেন। কেননা, গর্ভে সন্তান থাকলে মহিলাদের যে বমি বমি ভাব, অসুস্থতা-অলসতা ইত্যাদি বিষয় পরিলক্ষিত হয়, আমার ক্ষেত্রে সে রকম কিছুই হয়নি। এ ছাড়া এমন আরও অসংখ্য ঘটনা নবিজির জন্মের আগে প্রকাশ পেয়েছে, যেগুলো এই ছোট গ্রন্থে উল্লেখের সুযোগ নেই।

চার. নবিজির জন্ম

এ বিষয়ে সবাই একমত যে, নবিজি সে বছরের রবিউল আউয়ালে জন্মান, যে বছর ‘আসহাবে ফিল’ বা আবরাহার হস্তিবাহিনী পবিত্র কাবায় হামলা করতে এসেছিল। তবে আল্লাহ তাআলা কতিপয় ক্ষুদ্র আবাবিলের মাধ্যমে পাথরকণা নিক্ষেপ করে তাদের পরাস্ত করেছিলেন। কুরআনেও এ ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ রয়েছে। মূলত এ

৫ সিরাতু ইবনি হিশাম।

* নবিজির জন্মের সঙ্গে হস্তিবর্ষ বা হাতিবাহিনীর ঘটনা জড়িয়ে রয়েছে। এটা হলো সুরা ফিলে বর্ণিত ইয়ামেনের বাদশাহ আবরাহা কর্তৃক কাবাঘর ধ্বংস করার অভিযানের বছরের কথা। বেশির ভাগ সিরাত-রচয়িতার অভিমত অনুযায়ী, এ ঘটনা নবিজির জন্মের ৫০ অথবা ৫৫ দিন আগে ঘটেছিল। ঘটনা নবিজির জন্মপূর্ব বরকতের সূচনা হিসেবে প্রকাশ পেয়েছিল। নবিজি যে ঘরে জন্মান, পরবর্তী সময়ে সে ঘর হাজ্জাজ ইবনু ইউসুফের ভাই মুহাম্মাদ ইবনু ইউসুফের অধিকারে এসেছিল।

কোনো কোনো ইতিহাসবিদ লিখেছেন, হস্তিবাহিনীর ঘটনা ৫৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২০ এপ্রিল ঘটেছিল। এর মাধ্যমে জানা গেল যে, ইসা আ.-এর জন্মের ৫৭১ বছর পর নবিজির জন্ম হয়।

ইবনু আসাকির’ রাহ. পৃথিবীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস বর্ণনা করতে গিয়ে লেখেন, আদম ও নুহ আ.-এর মধ্যখানে ১ হাজার ২০০ বছরের ব্যবধান ছিল। নুহ আ. ও ইবরাহিম আ.-এর মধ্যখানে ছিল ১ হাজার ১৪২ বছরের ব্যবধান। ইবরাহিম থেকে মুসা আ. পর্যন্ত ৫৬৫ বছরের। মুসা থেকে দাউদ আ. পর্যন্ত ৫৬৯ বছরের। দাউদ থেকে ইসা আ. পর্যন্ত ১ হাজার ৩৫৬ বছর এবং ইসা আ. থেকে শেষ নবি মুহাম্মাদ ইট পর্যন্ত ৬০০ বছরের ব্যবধান ছিল।

এ হিসাবে আদম থেকে আমাদের নবি মুহাম্মাদ * পর্যন্ত ৫ হাজার ৩২ বছরের ব্যবধান ছিল। তা ছাড়া প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী আদম আ.-এর বয়স হয়েছিল ৯৬০ বছর। তাই আদম আ.-এর পৃথিবীতে আগমনের প্রায় ৬ হাজার বছর পর অর্থাৎ, সপ্তম সহস্রাব্দে নবিজির জন্ম হয়। ১০

মোটকথা, আসহাবে ফিল কাবায় আক্রমণের বছরের ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার পৃথিবীর ইতিহাসে অনন্য এক দিন ছিল; যে দিন পৃথিবী সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য, দিন ও রাতের পরিবর্তনের মূল লক্ষ্য, আদম আ. ও তাঁর সন্তানদের গৌরব, নুহ আ.

সিরাতে মুগলতাই ৫

দুরুসুত তারিখিল ইসলামি: ১৪।

এ সম্পর্কে অনেক বর্ণনা রয়েছে, তবে ইবনু আসাকির এ বর্ণনাটি সঠিক বলেছেন।

১০ মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাকের সূত্রে তারিখু ইবনি আসাকির : ১/১৯-২০। (আদম আ. থেকে নবিজি পর্যন্ত সময়ের ব্যবধান-সংক্রান্ত যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, এই বর্ণনার নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র নেই। এ ব্যাপারে

বিস্তারিত জানতে ইমাম ইবনু হাজমের আল-মিলাল ওয়ান নিহাল গ্রন্থ দেখতে পারেন। অনুবাদক।) ১. এ বিষয়ে সবাই একমত যে, নবিজির জন্ম রবিউল আউয়ালের সোমবার দিনে হয়েছিল; কিন্তু কোন তারিখে, সেটা নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে বিস্তর মতপার্থক্য রয়েছে। তবে জন্মতারিখ নিয়ে চারটি প্রসিদ্ধ মত রয়েছে– ২, ৮, ১০ ও ১২ রবিউল আউয়াল। হাফিজ মুগলতাই রাহ. ২ তারিখকে গ্রহণ করে অন্যগুলোকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। তবে প্রসিদ্ধ হচ্ছে ১২ তারিখের বর্ণনা। ইবনু ইসহাকও এ তারিখ গ্রহণ করেছেন। ইবনু হাজার আসকালানি রাহ. ১২ তারিখের বর্ণনার ওপর সবাই একমত বলে দাবি করেছেন। এমনকি আল্লামা ইবনুল আসির তাঁর আল কামিল ফিত তারিখ গ্রন্থে এ তারিখই গ্রহণ করেছেন। গবেষক মাহমুদ পাশা মিসরি জ্যোতির্বিজ্ঞানের আলোকে ৯ তারিখ গ্রহণ করেছেন। এটি সবার মতের বিপরীত এবং সূত্রবিহীন উক্তি। যেহেতু চাঁদ উদয়ের স্থান বিভিন্ন, তাই গণনার ওপর এতটুকু বিশ্বাস ও নির্ভরতা জন্মায় না যে, এর ওপর ভিত্তি করে সবার বিরোধিতা করা যাবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ