রিভিউ | দি আইশ্যাডো বক্স by সালসাবিলা নকি | The Eyeshadow Box By Salsabila Noki

লেখিকা সালসাবিলা নকি এর সামাজিক রহস্যোপন্যাস ‘ক্যানভাসে আঁকা মৃত্যু’র পর এবার আসছে ফ্যান্টাসি হরর উপন্যাস ‘দি আইশ্যাডো বক্স’

দি আইশ্যাডো বক্স - আইশ্যাডো! মেয়েদের সাজসজ্জার একটি গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী। কিন্তু ‘দি আইশ্যাডো বক্স' ফ্যান্টাসি হরর উপন্যাসে যে আইশ্যাডো বক্সের কথা বলা হয়েছে সেটা মামুলি কোনো আইশ্যাডো বক্স না। এর এক একটা রঙের সাথে মিশে আছে প্রায় পঁয়ষট্টি বৎসর আগে ঘটে যাওয়া কিছু নারকীয় ঘটনা, কিছু মৃত্যু, প্রতারণা আর কিছু মর্মান্তিক আর্তনাদ। উত্তর-পশ্চিম ভারতের কোনো এক রাজ্যের রাজপ্রাসাদের গোপন কুটুরিতে বন্দি করে রাখা বক্সটা বাংলাদেশে কীভাবে আসল? একের পর এক বীভৎস মৃত্যুগুলোর পেছনে কারণ কী? আইশ্যাডো বক্সের সাথে জড়িয়ে থাকা অভিশাপ নাকি কারো চক্রান্ত?যার হাতেই পড়ে তার সাথেই ঘটে যাচ্ছে ভয়ংকর সব ঘটনা। রাত্রি আর ঈশান কি পারবে আইশ্যাডো বক্সটিকে অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে?

রিভিউ | দি আইশ্যাডো বক্স by সালসাবিলা নকি | The Eyeshadow Box By Salsabila Noki
রিভিউ | দি আইশ্যাডো বক্স by সালসাবিলা নকি | The Eyeshadow Box By Salsabila Noki

“ভীষণ কুৎসিত চেহারার একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওদের রুমের সামনে। ঠোঁট কাটা, নেই বললেই চলে, ঠোঁটের স্থানে দু'কান পর্যন্ত লম্বা চেরা দাগ। এর ভেতরে দাঁতের অস্তিত্ব আছে কি না বোঝার উপায় নেই। চোখের মনি দুটো সাদা মার্বেলের মতো। মুখের একপাশে মাছের আঁশের মতো চামড়া, সেটা পচে গিয়ে ঝুলছে৷ যেন এক্ষুণি খসে পড়বে। আর অন্য পাশে বড়ো বড়ো কয়েকটা ফোস্কা। সেখানে সাদা সুতার মতো জীব কিলবিল করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। একটা উৎকট দুর্গন্ধ বের হচ্ছে ওর শরীর থেকে।” 
–সালসাবিলা নকি (দি আইশ্যাডো বক্স) 
  • বইয়ের নাম: দি আইশ্যাডো বক্স
  • লেখক: সালসাবিলা নকি
  • ধরণ: ফ্যান্টাসি হরর উপন্যাস
  • প্রচ্ছদ: মো. সাদিতউজজামান
  • প্রকাশনী: চলন্তিকা প্রকাশনী
  • প্রকাশকাল: বইমেলা ২০২২
  • পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১৭৪ পৃষ্ঠা
  • মুদ্রিত মূল্য: ৩০০ টাকা

কাহিনী সংক্ষেপঃ-

রাত্রি আর হৃদিমা একই মেসে থাকে। রাত্রি স্বভাবে কোমল। তার মিষ্টি ব্যবহারের কারণে মেসের সবাই রাত্রিকে পছন্দ করে। অপরদিকে বড়লোক বাবার মেয়ে হৃদিমা কারও সাথে ভালো ব্যবহার করে না, ভীষণ অহংকারী। মেসের মেয়েদের সাথে কথা কাটাকাটি করেই যেন সে আনন্দ পায়। রাত্রিকে কোন কিছুতে হারাতে পারলে সে মজা পায়। তাই মেসের কেউই হৃদিমার সাথে মিশতে চায় না। একদিন 'সাঁজ' কসমেটিক স্টোরে রাত্রি গিয়ে পছন্দ করে চমৎকার একটি আইশ্যাডো বক্স। আভিজাত্যোর ছোঁয়া লেগে আছে বক্সটার গায়ে। কিন্তু রাত্রির পছন্দ করা আইশ্যাডো বক্সটা জোর করেই কিনে নেয় হৃদিমা। সেই আইশ্যাডো বক্সটা হৃদিমা মেসে নিয়ে আসে। তারপরই মেস এবং তার আশেপাশে ঘটতে থাকে একের পর এক অদ্ভুত ও বিভৎস হত্যাকাণ্ড।  কেন সেই হত্যাকাণ্ডগুলো সংগঠিত হয়েছিল এবং তার সাথে আইশ্যাডো বক্সটারই বা কি সম্পর্ক? সেই রহস্য উদঘাটন করতে চাইলে বইটি পড়তে হবে।

চরিত্র কথনঃ-

ছোটো-বড় অনেক চরিত্র নিয়ে গল্পটি এগিয়ে গিয়েছে। যেমন- রাত্রি, যুবরাজ ঈশান, হৃদিমা, শম্পা, রফিক, ওসি রবিউল, আয়শা, রাজপণ্ডিত, স্বর্ণপ্রভা, মহারাজ রাকেশ প্রতাপ সিং আরো অনেকে।

পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ-

দি আইশ্যাডো বক্স পড়ে চমৎকার আবেশে ঘোরলাগানো সময় কেটেছে। লেখিকা যেভাবে একইসাথে ভারতের ঈশানগড় রাজ্য এবং রাত্রিদের হোস্টেলকে উপস্থাপন করেছেন এবং রূপকথার রাজা-রানির সাথে বর্তমানের চরিত্রের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন সেটা অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য। রাত্রি আর ঈশানের শেষ পরিণতিটা আমার অসম্ভব ভালো লেগেছে। পুরো উপন্যাসটা সাবলীল ও সহজ ভাষায় লিখা। কোথাও কোন মেদবহুল লেখার উপস্থিতি নেই। অর্থাৎ গল্পকে টেনে অযথা লম্বা করা হয়নি। পরিশেষে আইশ্যাডো বক্সের জগতে ঘুরে আসার আহ্বান রইলো।

পছন্দের কিছু লাইনঃ-

১. কিছু মানুষ সব দিক থেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও মনের দিক থেকে অপূর্ণ থাকে। সব সময় ভাবে, এটা নেই, ওটা নেই, আরও প্রয়োজন। 
২. নাম ভাঙিয়ে যে সম্মান পাওয়া যায় তাতে কোন মাহাত্ম্য নেই। সেটা হয় মেকি। উত্তম কাজ ও আচরণের দ্বারা যে সম্মান পাওয়া যায় সেটাই আসল সম্মান। 
৩. আমাদের জীবনে এমন অনেক কিছু ঘটে যা আমরা কখনো চাই না, আবার দেখা যায় আমরা যা চাই তা কখনো ঘটেই না, সম্ভবই হয় না।  তাই আমাদের চাওয়ার মধ্যে একটা সীমারেখা আঁকা থাকা প্রয়োজন।
৪. খুব স্বার্থপর মানুষ আর খুব ভালো মানুষ উভয় প্রকারের মানুষকেই বোকা বানানো সহজ। 

প্রচ্ছদ কথনঃ-

একটি সুন্দর ও অর্থবহ প্রচ্ছদ পাঠককে আকর্ষিত করে বইটি পড়তে। সেই দিক থেকে প্রচ্ছদটি যথাযথ।  বইটির প্রচ্ছদ করেছেন মোঃ সাদিতউজজামান। বইটিতে অবলোকন করলে দেখা যায় একটি রানির মুখের আকৃতি ফুটে উঠেছে। থুতুনি ভেতরের দিকে ঢোকানো। রানির আকৃতির পেছনে একটি আইশ্যাডো বক্সের ভেতরের নানা রঙের বাহার। যা মূলত বইয়ের গল্পের ধরনকে নির্দেশ করেছে বলে আমার বিশ্বাস। কেননা বইয়ে একই সাথে হরর, ফ্যান্টাসি, রোমান্টিক, সাসপেন্স, থ্রিলারের উপস্থিতি আছে।


শিক্ষামূলক বার্তাঃ-

লেখিকা গল্পের মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন মানুষের ভিতরের আলো-আঁধারের দুই স্বত্বাকে। হিংসা-বিদ্বেষ, অহংকার, স্বার্থপরতা, লোভ, মিথ্যে কথা এগুলো মানুষের পক্ষে খারাপ বয়ে আনে। অন্যদিকে ভালো কাজের ফলে মানুষের সঙ্গে মানুষের সৌহার্দপূর্ণ মনোভাব গড়ে উঠে। ভালো কাজ মানুষকে স্বর্গীয় অনুভূতি দেয়। এই বার্তাটাই লেখিকা গল্পচ্ছলে বলে গেছেন।

বানান ও প্রোডাকশনঃ

অতিরিক্ত বানান ভুল বইয়ের মান কমিয়ে দেয় এবং পাঠক সেই বই পড়তে বিরক্তি প্রকাশ করে। এই বইয়ে আমার বানান ভুল তেমন চোখেই পড়েনি! ভীষণ যত্নের সাথে বইটির প্রুফ রিডিং করা হয়েছে বুঝতে পারা যায়। যার জন্য প্রুফ রিডারকে বাহবা দিতেই হয়।

আর বাঁধাই বেশ শক্ত, কাগজের মানও ভালো ছিল এবং মাঝারি আকৃতির বর্ণের কারণে আমি প্রোডাকশন নিয়ে সন্তুষ্ট। নামলিপিও বেশ চমৎকার ছিল।

দি আইশ্যাডো বক্স রিভিউ নাম্বার ০৩

রিভিউটি লিখেছেন Priya Rahman আপু
আজকাল থ্রিলারের পোকা ঢুকেছে মাথায়। তাই একসাথে অনেকগুলো থ্রিলার পড়া হয়েছে গত একসপ্তাহে। সম্প্রতি পড়েছি ফ্যান্টাসি হরর ‘দি আইশ্যাডো বক্স। এখন বলি বইটা পড়ে আমার কেমন লাগল।

প্রচণ্ড ঝড়ের রাতে মেসের করিডোর ধরে প্রাণপণে ছুটছে রাত্রি। তার পেছনে উদ্যত ছুরি হাতে তাড়া করছে হৃদিমা। হৃদিমা কেন রাত্রিকে মারতে চায়? রাত্রি আর হৃদিমা চট্টগ্রামের একটি মেসে থাকে। স্বভাবে রাত্রি যতটা শান্ত ভদ্র আর মিষ্টভাষী হৃদিমা ততটাই বদমেজাজি অহংকারী আর প্রচন্ড আত্মকেন্দ্রিক একটি মেয়ে। এরকম বেশ কিছু ভয়ানক অভিজ্ঞতার সাথে আপনাদের পরিচয় করাবে, বর্তমানের পাঠকপ্রিয় লেখক সালসাবিলা নকি'র লেখা দ্বিতীয় ফ্যান্টাসি হরর উপন্যাস "দি আইশ্যাডো বক্স"। আপাতদৃষ্টিতে দেখলে আইশ্যাডো বক্স বর্তমানে জনপ্রিয় একটি সাজসজ্জার উপকরণ হলেও, এটি যে কারো মৃত্যুর কারণ হতে পারে এবং এর পিছে ভয়ানক সব রহস্য লুকিয়ে থাকতে পারে তা এই উপন্যাসটি পড়লে জানা যায়।

কাহিনী সংক্ষেপেঃ

কাহিনী শুরু হয় ১৩০০০ টাকা মূল্যের একটি আইশ্যাডো বক্স এর মাধ্যমে। অনিন্দ্য সুন্দর এক রানীর মুখোমণ্ডলের মতো দেখতে একটি আইশ্যাডো বক্স যার ভিতরে রয়েছে ১৩ টি চমৎকার রঙের সেডস্। কিন্তু এই আইশ্যাডো বক্সটি সাধারণ কোনো আইশ্যাডো বক্স না। যার কাছে এই বক্সটি থাকবে তার জীবনে ঘটে যাবে প্রলয়কাণ্ড। কাহিনীর এক পর্যায়ে জানা যাবে সুদূর ভারতের ঈশানগড় রাজ্যের এক রানি স্বর্ণপ্রভা দেবীর গা শিউরে ওঠা গল্প। মহারানি তার নিজস্ব কারিগর দিয়ে নিজের মুখের আদলে একটি বাক্স তৈরি করলেন। উদ্দ্যেশ্য ছিল চোখ সজ্জার কাজে ব্যবহার করবেন। কিন্তু এটা চোখের পাতায় লাগালেই রানির রূপে দেখা যেতো ভয়ংকর পরিবর্তন। এর পেছনে রহস্যটা কী? যুগের পর যুগ এই রহস্য কেউ উদঘাটন করতে পারেনি।
 
সেই আইশ্যাডো বক্স বাংলাদেশে কীভাবে এসে পৌছাল? ভারতের সীমানা পেরিয়ে এই আইশ্যাডো বক্স বাংলাদেশের চট্টগ্রাম শহরের হৃদিমার হাতে পৌঁছে যায়। আর তারপর থেকেই চট্টগ্রামের এক মহিলা হোস্টেলে শুরু হয় একের পর এক মৃত্যুর মিছিল। এই আইশ্যাডো বক্সের খোঁজে সেই রাজবংশের উত্তরসূরি ঈশান বাংলাদেশ পা রাখে। ঈশানা আর রাত্রি কি পারবে অভিশপ্ত এই আইশ্যাডো বক্সকে থামাতে? নাকি এই মৃত্যুযজ্ঞ চলতেই থাকবে। কে ছিল ত্রিলোকনাথ? এসব কিছুর সাথে তার সম্পর্ক কী? সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে বইটির শেষে। 

ভালো না লাগার দিকঃ 

ব্যক্তিগতভাবে চমৎকার এই উপন্যাসটির কিছুদিক আমার মনক্ষুণ্ণ করেছে। বিশেষ করে শেষটা। উপন্যাসের শেষে পাঠকদের মনে কিছু প্রশ্ন রয়ে যাবে। শেষ হয়েও যেন হইলো না শেষ এমন। রাত্রি আর ঈশানের সমাপ্তিটা যথাযথ ছিল কিন্তুু অন্যরকম হলেও পারতো। হয়ত সমাপ্তিতে লেখক রহস্যময় রাখতেই এমনটি করেছেন। তবুও পাঠক হিসেবে জানার আকাঙ্খা আমার রয়েই গেছে। 

ভালো লাগার দিকঃ

পুরো উপন্যাসটি এত সহজ আর সাবলিল ভাষায় লিখা হয়েছে, যে কোথাও শব্দের কোনো মেদ খুজে পাইনি। অতিকথন ছিল না, প্রতিটা চরিত্র নিজ নিজ জায়গায় যথাযথ ছিল। বানানরীতি, শব্দচয়ন চমৎকার ছিল আর ছিল কিছু পজিটিভ মেসেজ। এজন্য আমি লেখককে সাধুবাদ জানাই। 

লেখকঃ সালসাবিলা নকি
প্রকাশনীঃ চলন্তিকা
প্রচ্ছদঃ সাদিতউজজামান 
মুদ্রিত মূল্যঃ ৩০০ টাকা

ব্যক্তিগত রেটিংঃ ৯/১০

রিভিউ | দি আইশ্যাডো বক্স pdf download free no available right now because this is a new book by Salsabila Noki book review সালসাবিলা নকি বই pdf 🚫 | The Eyeshadow Box By Salsabila Noki book review on boipaw.com when The Eyeshadow Box By Salsabila Noki pdf download free available in internet then we publish this book on our website as soon as possible.

 দি আইশ্যাডো বক্স অরিজিনাল কপি ক্রয় করুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ