Title | ঠগী |
Author | শ্রীপান্থ |
Publisher | দে’জ পাবলিশিং (ভারত) |
Quality | হার্ডকভার |
ISBN | 9788129516701 |
Edition | 5th Edition, 2016 |
Number of Pages | 152 |
Country | ভারত |
Language | বাংলা |
অনেক রূপকথার গল্প কে সত্যি বলে মনে হয় ! কিন্তু এটি কোন রূপকথার গল্প নয় তবুও সত্য ঘটনা ভাবতেও অবাক লাগছে ! ভারতবর্ষে তখন ইংরেজদের শাসন ! এক হিসাবে দেখা গেল তখন প্রতি বছর ৪০ হাজার মানুষ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেত কিন্তু পরবর্তীতে তাদের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যেত না ! হারিয়ে যেত তারা, কেউ বলতে পারত না তারা কোথায় হারিয়ে গেছে ! "ঠগীরা" এমন ভাবে মানুষদের হত্যা করে তাদের নিশ্চিহ্ন করে দিত, যে কেউ তাদের চিহ্ন খুঁজে পেত না ! হে "ঠগী" এটা কোন সাধারণ নাম নয় ! এটা একটা ধর্ম ! তাদের আছে নিজস্ব ভাষা ! মানুষকে খুন করার অভিনব নিয়ম ! খুন করার পর তার কবরের উপর বসে খাওয়াদাওয়া করা ! সাধারণত ঠগীরা হয়ে থাকে ৩০-৫০ জনের দল! তীর্থযাত্রী / পথিকের বেশে তারা মিশতো অন্য পথিকদের সাথে! তাদেরকে দেখলে কেউ বলবে না এরা হাজার হাজার মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করে! তাদের মুখে খুনের কোনো ভয়-ভীতি দেখা যাবে না !( পরবর্তীতে যখন তাদের ফাঁসি দেয়া হয় তখন তারা পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ার মতো ফাঁসির দড়িতে নিজে থেকে ঝাপিয়ে পড়তো) !তাদের কোনো অনুশোচনা নেই ! তারা মানুষ খুনকে ধর্ম বলে পালন করে! ঠগী শুধু হিন্দু নয় মুসলমানো ! মুসলমান এবং হিন্দু উভয়েই দেবী হচ্ছে "ভবানী" ! তারা সবকিছু ভবানীর ইশারায় করে! ভবানী তাদের পাঠিয়েছেন মানুষ খুনের জন্য ! তারা ধনী-গরীব সবল বৃদ্ধ কোনো কিছুর তোয়াক্কা করে না তারা শুধু ভবানীর ইশারার অপেক্ষায় থাকে !গাছের ডালে বসে কাক ডাকা / শিয়াল রাস্তা পার করা অদ্ভুত কিছু জিনিসকে ওরা ভবানীর ইশারা বলে মানত! প্রতীকের সাথে মিশে তার বন্ধু হয় ! তাদের সাথে গল্পগুজব করবে গান-বাজনা করবে! পথিক মনে করবে সে রাস্তার সঙ্গী পেল এবং তার আর কোন ভয় নে ! হঠাৎ পিছন থেকে কেউ একজন বলে উঠবে "সাহেব খান, তামাক লাও" অসহায় পথিক সে জানবে ও না তাকে খুনের জন্য আদেশ করা হলো ( তাদের ভাষায় সেটাকে ঝিরনিদেয়া বলে) ! হঠাৎ পিছন থেকে একজন রুমাল দিয়ে ফাশ দিয়ে দিবে পথিকের গলায় ! এভাবে মুহূর্তের মধ্যে বড় বড় দলকে ও তারা নিশ্চিহ্ন করে দেয় ! তিনশত বছরে দশ লক্ষেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে ঠগীরা ! অন্যদিকে আঠারো শতকের শুরুতে সদ্য কুড়ি পেরোনো ইংরেজ যুবক কলকাতায় পা রাখেন!, নাম " উইলিয়াম হেনরী স্লিমেন" ! লাইব্রেরীতে বই পড়তে গিয়ে হঠাৎ করে একটি বইয়ে তিনি ঠগীদের সম্পর্কে জানতে পারেন! তিনি উৎসাহিত হয়ে পড়েন ঠগীদের বিষয়ে জানার জন্য ! তার ঠগীদের কে নিয়ে এত বেশি উৎসাহের কারণে তার সঙ্গীরা তাকে মজাকরে "ঠগী স্লিমেন" নামে ডাকে! তিনি সেটা জানতে পেরে চিন্তা করেন যে তাকে দেয়া এ নামের মর্যাদা তিনি রাখবেন ! শুরু করলেন ঠগী দমন করা! *ঠগী স্লিমেন* ভালোবেসে ফেললেন ভারতবর্ষকে, সেখানকার কৃষকদের! কোম্পানি থেকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছিল না ঠগী দমনে! কারণ কোম্পানির ক্ষতি হচ্ছিলনা ঠগী দের জন্য! স্লিমেনর তার পরোয়া না করে নিজে থেকে লেগে পড়লেন! পরবর্তীতে অবশ্য কোম্পানি থেকে তাকে অনুমতি দেওয়া হয়! অনেকেই নিজে থেকে যুক্ত হয়েছিলেন !শুরু হয় পুরোদমে ঠগী দমন এর কার্যক্রম! কাউকে দেয়াহল ফাসি কাউকে যাবত জীবন দন্ড, কেউবা হলেন রাজসাক্ষী! অনেকেই বলেছেন ঠগীদের দমন করার চেয়ে একটা যুদ্ধ জয় করা সহজ কাজ ছিল ! যে ঠগীদের কোন চিহ্ন পাওয়া যেত না তাদের গুষ্টিসুদ্ধ সবার নামের তালিকা করে ফেলেছিলেন! করেছিলেন নিজস্ব ম্যাপ! খুরে তুললেন হাজার হাজার হারিয়ে যাওয়া মানুষের লাশ! শুধু ঠগীরা নয় স্লিমেন আরো নির্মূল করেছেন, ভাগীনে, ধুতুরিয়া, ছেলেধরা, মেকফ্যানসা আরও অনেক গোত্রকে ! ইংরেজরা ভারতবর্ষে ভালো কাজ করে যাওয়ার মধ্যে ঠগী দমন ছিল অন্যতম! বইটি পড়ার পর "ঠগী স্লিমেন" এর প্রতি আলাদা ভালোবাসা জন্মে গিয়েছে! স্লিমেন ঠগীরা যাতে আবার আগের পেশায় ফিরে যেতে না যেতে পারে সেজন্য তাদের শিক্ষা এবং কাজ শেখারও ব্যবস্থা করেছিলেন!
"ঠগীরাকি এখন নেই?
আছে। হয়তো অন্য নামে, অন্য সিস্টেমে। আজও সমাজে গুম হয়, খুন হয়, লুন্ঠণ হয়। আজ থেকে আরো এক শতাব্দী পর যখন নতুন প্রজন্ম আসবে, আর আজকের সমাজের এই কাহিনী যদি লেখা হয়, তাদের কাছেও হয়তো তা রূপকথার গল্পের মত শোনাবে। আজকের সমাজের বর্বরতার কাহিনী পড়ে তাদেরও হয়তো আমাদের মতই গা শিউড়ে উঠবে।"
পুরো বইটি লিখা হয়েছে ঠগীদের জবানবন্দি থেকে, ব্যক্তিগতভাবে ইতিহাসের প্রতি আমার তেমন কোনো আগ্রহ না থাকলেও বইটা আমি অনেক আগ্রহের সাথে পড়েছি! পড়ে শেষ করার পর আজ একদিন হল এখনও অন্য কোনো বই হাতে নেইনি, বইয়ের বিবরণ কিত ঘটনাগুলি মাথায় বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে ! বইটি পড়ে না থাকলে পড়ে নিতে পারেন, গোড রিডার্স এ রিভিউতে একজন লিখেছিলেন "এই বইটা না পড়লে জীবনটা অপূর্ণ থেকে যেতো শিউর।" কথাটা আমার সত্যিই মনে হচ্ছে! এত সুন্দর ভাবে নন ফিকশন বইটি লিখার জন্য "শ্রীপান্থকে" ধন্যবাদ দিতেই হয়!
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....