বই : তিতির দ্য চ্যাম্প গার্ল
লেখক : সতীর্থ দে
প্রকাশক : এবারত প্রকাশনী
প্রচ্ছদ : সংহতী সাহা
বইটির মূল্য : ২০০ টাকা
Review Credit 💕 Payel Sahu
মোট তিনটি গল্প রয়েছে এই বইতে
প্রথম গল্প : " তিতির যখন ১৯" :- ৩১ পাতার গল্প
দ্বিতীয় গল্প : " তিতির আর ভাইরাল চক্র" :- ৪২ পাতার গল্প
তৃতীয় গল্প : " ভ্রূণ":- তিনটি গল্পের মধ্যে এই গল্পটি সবচেয়ে বড়ো ,বইয়ের ৮৩ টি পাতা নিয়ে নিয়েছে এই গল্পটি।
এবার বলি,আমরা এখন সকলেই ভীষণ ব্যস্ত ,হাতে সময় খুব কম ,তাই এই বইটা খুলে বসার আগে কিন্তু হাতে একটু time নিয়ে বসবেন। কারণ? কারণ একটাই প্রতিটি গল্প এতটাই টানটান উত্তেজনা পূর্ণ যে আপনি চাইলেও কোনো গল্পের অর্ধেক পড়ে আবার অন্য সময় পড়ার জন্য রাখতে পারবেন না।আর এটা ১০০% সত্যি।
পুরো বইটাই এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলার মতো ,যদিও আমি তিনদিনে তিনটে গল্প পড়েছি ,শুধুমাত্র সময়ের অভাবে।
এবার বলি কেমন গল্প আছে এই বইতে।
এটি একটি থ্রিলার ,আর এমনই থ্রিলার যে প্রতিটি পাতা পড়তে গেলে আপনার গায়ে কাঁটা দেবে ,কখনো আতঙ্ক হবে, আবার গল্পের নায়িকার মেধা এবং বুদ্ধি করে বিপদ থেকে বেরিয়ে আসা টা একটা শান্তি দেবে।
আসলে গল্পগুলি পড়তে পড়তে আপনি চোখের সামনে সমস্ত কিছু যেন স্পষ্ট দেখতে পাবেন ,একাত্ম হয়ে যাবেন বইটিতে।
তিতিরের গল্পগুলি একটা সিরিজ ,একটার সঙ্গে আর একটা connected।
একটি ১৯ বছরের কলেজ পড়ুয়া মেয়ে তিতির সেন যার বাবা মারা গেছেন। জলপাইগুড়ির মেয়ে হলেও সে কলকাতায় আসে পড়তে এবং ঘটনাচক্রে তাকে বেশিরভাগ সময়েই একা থাকতে হয়,মা চলে যান জলপাইগুড়ি ।আর এই একা থাকার সময়েই তিতিরের জীবনে ঘটে যায় রোমহর্ষক সব ঘটনা।
প্রথম গল্প : তিতির তখন ১৯
কলকাতার কলেজে পড়তে এসে প্রেমে পড়ে এমন একটি ছেলের যে একজন প্রভাবশালী কর্পোরেট দুষ্কৃতীর চেলা । বিভিন্ন সময় রাস্তায় এই ছেলেটির দলের কাছে টিজ হওয়ার কারনেই তিতির নিজেই গিয়ে প্রেমের প্রস্তাব দেয় রনি নামের ছেলেটিকে শুধুমাত্র এটা ভেবে যে এবার আর রাস্তা ঘাটে টিজ হতে হবেনা। অবশ্য ছেলেটিকে তার ভালো লাগতো না এমনও নয় কিন্তু ব্যাপার টা যে এতো সহজে থামবে সেটা তিতির ভাবতে পারেনি। দুর্ধর্ষ ফিগারের অধিকারী মেয়েটিকে যে রনি এবং তার দল আর সবশেষে তাদের নেতা এবং ভাইয়ের গ্যাং রেপ করার প্ল্যান ছিলো সেটা সে ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেনি।
এই সময়েই তিতির জানতে পারে এক বছর আগে ওই কলেজের একটি মেয়ের আত্মহত্যার কথা যে কিনা কলেজের ছাদ থেকে পড়ে সুইসাইড করেছিলো। এবং ঐ মেয়েটির সঙ্গেও নাকি তার প্রেমিক রনির সম্পর্ক ছিলো এমনটাও জানতে পারে তার বান্ধবীর কাছে।কিন্তু প্রেম বড়ো বিষম বস্তু, যাকে ভালোবাসা যায় তাকে ছাড়া দুনিয়াকেই খারাপ লাগতে থাকে কিন্তু এই সময়েই আশ্চর্য জনক ভাবে কলেজ ক্যাম্পাসেই তিতিরকে দেখা দিতে থাকে এক বছর আগের মৃত রেশমি নামের মেয়েটি।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রনি এবং তার বন্ধুরা আগ্রাসী হয়ে ওঠে তিতিরের শরীরের জন্য। কিন্তু তাকে রেপ করার বিভিন্ন রকম চেষ্টা কীভাবে তিতির রোধ করে ,কীভাবে ফাইট করে শুধু মাত্র মনের জোরে সেটা একদিক থেকে যেমন শিক্ষণীয় অন্যদিক থেকে না পড়লে বোঝা যাবেনা।
তিতির নাহয় সুপার গার্ল কিন্তু বাস্তবেও তিতিরের ১% যদি কোনো মেয়ে কাজে লাগায় সে হয়তো বিপদ থেকে বেঁচে গেলেও যেতে পারে।
যাই হোক গল্পের শেষে রয়েছে রেশমির মৃত্যু রহস্য উদ্ধার এবং নিজের শারীরিক সম্মানকে সূচের ডগায় রেখে তিতিরের এক বুদ্ধিমত্তার যুদ্ধ।
দ্বিতীয় গল্প : তিতির আর ভাইরাল চক্র
প্রথম গল্পের রেশ এখানে চলতে থাকে। তিতিরের কাছে অপদস্থ হওয়া কর্পোরেট ব্যাক্তি এই অপমানের বদলা নিতে তিতিরের বন্ধুর সাহায্যে তৈরি করে তিতিরের nude porn ভিডিও। আর সেটা ছড়িয়ে দেয় বিশেষ কারো কারো কাছে।
আবার এই nude ভিডিও দেখে porn ফিল্ম maker রা তিতিরকে যেমন ওই কর্পোরেট ব্যক্তির চেলা চামুন্ডার হাতে গ্যাং রেপ হওয়া থেকে বাঁচায় তেমনি তিতিরকে একজন পর্ন স্টার তৈরি করার সমস্ত আয়োজন করে ফেলে। রুদ্ধশ্বাস এই গল্পটি পড়তে পড়তে বহুবার গায়ে কাঁটা দিয়েছে। পর্ন স্টারের ডেরায় গিয়ে কিভাবে নিজের সাহস ,বন্ধু এবং পুলিশের সহায়তায় তিতির বেঁচে ফেরে আর এই পর্ন video বানানোর চক্রকে ভেঙে দেয় সেটা জানতে গেলে পড়তেই হবে বইটি।
তৃতীয় গল্প : ভ্রূণ
তিতির মানেই সবসময় আশ্চর্য ঘটনার সম্মুখীন হওয়া।
ভ্রূণ হত্যায় অভ্যস্ত নামী ডাক্তার ,কলকাতার নকল ওষুধের কারবারী ভয়ংকর লোকজনকে নিয়ে এই গল্প।
কন্যা ভ্রূণ হত্যা কেনো হয় সেটা আমরা সবাই জানি,নিজের বাড়ির সবচেয়ে ভরসার মানুষগুলোই নিয়ে যান নিজের স্ত্রী বা বৌমাকে গর্ভপাত করাতে। আবার কখনো অবিবাহিত মেয়েরাও যায় নিজের কৃতকর্ম লুকিয়ে সন্মান বাঁচাতে ।
এমনই এক ডাক্তার যিনি পুত্র বা কন্যা ভ্রূণ হত্যায় পারদর্শী তিনি আবার তার কাছে abortion করাতে আসা বা অন্যান্য সময়ে বিভিন্ন গাইনি সমস্যার সমাধানের জন্য আসা মহিলাদের ধর্ষণ করেন ওষুধের মাধ্যমে অবশ করে দিয়ে,সেটা এমনই ওষুধ যে মেয়েরা বুঝতে পারবে সব কিন্তু বাঁধা দিতে পারবে না এমনকি ঘটনার পরে রেপ করার কোনো প্রমাণও থাকবে না।
যথারীতি ঘটনাচক্রে তিতির কাজে লেগে পড়ে এই ডাক্তারের মুখোশ ছিঁড়ে ফেলার কাজে।
প্রচুর মারধোর ,মলেস্টেশন এমনকি শেষে নিজে ধর্ষিতা হয়েও পুলিশের হাতে সমস্ত প্রমাণ সহ তুলে দেয় ওই ডাক্তারকে। কিন্তু ওই টুকু একটি ছোটো মেয়ে যার মাত্র ১৯ বছর বয়স সে কি করে পারে এতো কিছু?
লেখককে কুর্ণিশ জানাই তার লেখনীর টানটান বুননের জন্য, শরীরী বিবরণ হোক বা তিতিরের ফাইট করার বিবরণ সবটাই এতো নিখুঁত যে তিতির সেন শুধু গল্পের চরিত্র হয়ে থাকেনা ,প্রাণ পায় রক্ত মাংসের মানবী হিসেবে।
আরো একটি কথা যেটা না বললেই নয়,
কলেজ পড়ুয়া একটি মেয়ের ভাষা ঠিক যেমনটি হওয়া উচিত ,পাড়ার রকবাজ ছেলেদের বা একজন দুষ্কৃতীর ভাষা যেমন হয় ঠিক তেমনই শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে প্রতি লাইনে।
প্রতিটি গল্প অসীম মুগ্ধতা রেখে গেলো। এই বইটি বারবার পড়ার মতো।
ছোটবেলায় আমার জন্মদিন মানেই সকলে গল্পের বই উপহার দিতো,সবাই জানতো গল্পের বইয়ের থেকে প্রিয় উপহার আমার কাছে আর কিছু নেই।
এখন যদিও গল্পের বই উপহার দেওয়ার চল উঠে গেছে।
বইটি পড়তে পড়তে মনে হলো আবার সেসব দিন ফিরে আসতেই পারে। ১৫ থেকে ৭৫ সকলের উপহারযোগ্য এই বই।
লেখককে অনেক অনেক অভিনন্দন, আগামী দিনে এমন আরো লেখা আসুক এই কামনা করি।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....