বিফোর দ্য কফি গেটস কোল্ড PDF | Before the Coffee Gets Cold

যদি অতীতে ফেরত যাওয়ার সুযোগ আপনি পেতেন, তবে কি যেতেন? এ প্রশ্নটা দিয়ে শুরু হয় জাপানী লেখক তোশিকাযু কাওয়াগুচির ৪টা বড় গল্পের সংকলন ‘বিফোর দ্য কফি গেটস কোল্ড’। এ চারটা গল্পে চরিত্র গুলো এক হলেও একেক গল্পে মূল চরিত্র হিসেবে উঠে আসে একেকজন। সব গল্পগুলোর মঞ্চ হিসেবে দেখা যায় ১৮৭৪ সালে খোলা এক ক্যাফে যার নাম ‘ফানিকুলি ফানিকুলা’। এখানেই মঞ্চায়িত হয় অতীতে যাবার এই নাটকের। বই বা গল্প নিয়ে লেখার আগে ক্যাফে নিয়ে লেখাটা জরুরী মনে হচ্ছে।

Before the Coffee Gets Cold
Novel by Toshikazu Kawaguchi
  • Title বিফোর দ্য কফি গেটস্ কোল্ড
  • Author তোশিকাযু কাওয়াগুচি
  • Publisher আফসার ব্রাদার্স
  • Quality PDF Download
  • ISBN 9879848018859
  • Edition 1st Published, 2021
  • Number of Pages 192
  • Country বাংলাদেশ
  • Language বাংলা

ফানিকুলি ফানিকুলা নামের এই ক্যাফেটি টোকিও শহরের কোন এক বিল্ডিং এর বেইজমেন্টে অবস্থিত। বেইজমেন্টে বলে সবসময়ই একটা আলো আঁধারীর ঘোরলাগা পরিবেশ এ ক্যাফেতে দেখা যায়। খুব সাধারণ দেখতে এ কফি শপে হালের ঝাঁ চকচকে কোন ইন্টেরিয়র নেই। বসার জন্য রয়েছে মখমলে মোড়ানো চেয়ার। আর এই চেয়ারগুলোর মাঝেই একটা বিশেষ চেয়ার যেটায় বসলে অতীতে যাওয়া সম্ভব। এরকম একটা জায়গায় স্বভাবতই বেশ ভীড় হবার কথা। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই ক্যাফেতে ভীড় তেমন থাকে না বললেই চলে। কারণ হচ্ছে, অতীতে যাওয়ার জন্যে বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম আছে যেগুলোর কথা বললেই অনেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। 

নিয়মাবলী হচ্ছে, ঐ নির্দিষ্ট চেয়ারে বসলে আপনাকে এক কাপ বিশেষ কফি দেয়া হবে, যে কফিটাই আপনাকে অতীতে নিয়ে যাবে কিন্তু অতীতে ফিরে আপনি কেবল তার সাথেই দেখা করতে পারবেন যে কখনো না কখনো এই ক্যাফেতে পা রেখেছে, তার সাথে আপনি দেখা করতে পারবেন কিন্তু অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনার কোন পরিবর্তন করতে পারবেন না যেটা আপনার বা তার কিংবা কারোর বর্তমানে কোন প্রভাব ফেলে। এবং মোস্ট ইম্পর্ট্যান্টলি, আপনি ততক্ষণই সময় পরিভ্রমণ করতে পারবেন যতক্ষণ আপনাকে দেয়া বিশেষ কফিটি গরম থাকবে। গরম থাকতে থাকতেই কফি খেয়ে বর্তমানে ফেরত আসতে হবে নতুবা আপনি আটকে যাবেন এমন কোন চক্রে যেখান থেকে আপনি বের হতে পারবেন না কখনো। প্রিয় পাঠক, এই প্যারাটি আপনাকে আরেকবার পড়তে অনুরোধ করছি কারণ ঠিক দুই প্যারা পরে এ নিয়ে আমার কিছু বলার আছে যেটা আপনার ভালো লাগলেও লাগতে পারে।

তো এই অদ্ভূত নিয়ম মেনে অনেক মানুষই অতীতে যেতে পারে না কিংবা যেতে আগ্রহী হয় না। তবে আগ্রহী হয় ফুমিকো, কোহতাকে, হিরাই আর কেই। এই চার নারীর মাঝে কেউ হয়তো প্রিয় মানুষটির সাথে বিচ্ছেদের দিনে ফেরত যেতে চায়। জানে কিছু বদলাবে না, তবুও অতীতে গিয়ে এমন কিছুর আশায় থাকে যেটা হয়তো তাকে হতাশা থেকে উদ্ধার করবে। আবার কেউ চায় সেই দিনটিতে ফিরে যেতে যেদিন তার আইঝেইমারে আক্রান্ত স্বামী তাকে কিছু একটা দিতে চেয়েছিলো। সব সময় এড়িয়ে চলা বোনটির মৃত্যুসংবাদ যেদিন কানে আসে হিরাইয়ের সেদিন সেও চায় অতীতে ফিরে বোনটির সাথে একবার কথা বলতে। যে যে কারণেই সময় পরিভ্রমণ করতে চায় না কেন তাদের সবারই থাকে অন্য সময় থেকে ভালো কিছু পাবার আশা, যা হয়তো তাদেরকে হতাশা থেকে উদ্ধার করবে। যে উদ্দেশ্য নিয়ে তারা সময় পরিভ্রমণ করে তারা কি তা পায়? জানতে হলে বইটি পড়তে হবে আপনাকে।

সময় পরিভ্রমণকে হিসেবের খাতায় লাল কালিতে টুকে নিলে বইটাকে আপনার সাই-ফাই মনে হতে পারে। কিন্তু বইটা পড়লে আপনি বুঝবেন এটা আসলে সাই ফাই নয় মোটেও। নয় কোন ফ্যান্টাসিও। এটাকে মূলত ম্যাজিক রিয়েলিজম জনরায় ফেলা যায়। কারণ এখানে সময় পরিভ্রমণের ব্যাপারটাকে একদমই স্বাভাবিক ভাবে দেখানো হয়েছে। টুলস হিসেবে ব্যবহৃত হয়নি কোন টাইম মেশিন, ব্যবহার হয়েছে একটি বিশেষ চেয়ার, বিশেষ কফির কেটলি আর অদ্ভূত এক কফি। প্রতিটি গল্পে আসলে সময় পরিভ্রমণটা মুখ্য নয়, মুখ্য হচ্ছে মানুষের প্রতি মানুষের টান। যে টানে মানুষ সাহস করে অতীতে গিয়ে এমন কিছু পাবার, করার যেগুলো আসলে তার ভবিষ্যতকে পরিবর্তন না করতে পারলেও সুন্দর করার ক্ষমতা রাখে। তবে বইটি আমাকে সম্পূর্ণ অন্য রকম এক মেটাফোরিক্যাল কাজ হিসেবে ধরা দিয়েছে। হতে পারে এটা পুরোটাই আমার দৃষ্টিভঙ্গি তবুও আমি বইটির এই অ্যাঙ্গেল আবিষ্কার করে যারপরনাই অবাক হয়েছি।

আপনি বইটি পড়ে না থাকলে নিচে ফরম্যাটিং করা প্যারাটা এড়িয়ে যাবেন, আপনার পড়াটা প্রভাবিত হোক তা আমি চাই না।

আমার কাছে মনে হয়েছে ফানিকুলি ফানিকুলা নামের ক্যাফেটি আসলে মানব মন। চমকে গেলেন? এটা বলার পেছনে কারণ হচ্ছে, এই মনের মধ্যে ঢুকেই আমরা চাইলে কল্পনা করে চলে যেতে পারি আমাদের অতীতে। এখানে কফিটি হচ্ছে সে কল্পনা যা আমাদেরকে অতীতে নিয়ে যায়। এই অতীতে আমরা আমাদের করা ভুল গুলোকে (হতে পারে কোন একটা ডিসিশান যেটা না করলে হয়তো বর্তমানটা অন্যরকম হতো) দেখতে পারি, অন্য ভাবে ভাবতে পারি তবে তা পরিবর্তন করতে পারি না। 

ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ আমাদের ভবিষ্যতকে হয়তো বদলাতে পারে না, কিন্তু এই ভাবনাটা কখনো কখনো আমাদের স্বস্তি দেয়। মূলত সেই জিনিসটিই এখানে উঠে এসেছে। এ বইতে একটা মহিলা ক্যারেক্টার আছে, যে হচ্ছে একটা ভূত এবং যার কাজ হচ্ছে সবসময় ঐ বিশেষ চেয়ারে বসে থাকা। আপনি সময় পরিভ্রমণ করলে আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে ঐ মহিলাটির কিছু সময়ের জন্য উঠে যাওয়ার। 

আপনি যদি কোনভাবে ঐ মহিলাকে জোর করে চেয়ার থেকে ওঠাতে চান তাহলে ঐ মহিলা আপনাকে এমন একটা অভিশাপ দেবে যাতে আপনার মনে হবে আপনার ওপর কয়েক মণ ওজন চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারটি হচ্ছে, আপনাকে আপনার মনে ঢুকে অতীতে যেতে হলে সঠিক সময়ের অপেক্ষা করতে হবে। জোর করে যদি কিছু করতে চান তাহলে শুধু আপনার মনের ওপর চাপই ফেলবে, যার পরিণাম ভালো কিছু নয়। মানেন তো এটা, না? আবার কফিশপের নিয়ম অনুসারে সময় পরিভ্রমণ করতে হবে একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য, যা আমাদেরকে বোঝায় একটা লিমিট। অর্থাৎ অতীতের কোন ভুলের ব্যাপারে খুব বেশি ওভার থিংকিং করলে তার ফলাফলও ভালো হয় না।

তো এই ছিলো বইয়ের মেটাফোরিক্যাল ওয়ার্ক (আমার মতে)। এইসব মেটাফোর আর জাপানী কায়দায় মনস্তাত্ত্বিক বর্ণনা সম্বলিত বইটা আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। না পাওয়া হিসেবে স্রেফ একটা জিনিসই মনে হয়েছে, তা হলো ভূত চরিত্রটির সম্পর্কে বেশি কিছু না জানা। মন চাচ্ছিলো এই চরিত্রটি কিভাবে এই পরিণতি পেলো তা জানা।

অ্যাপার্ট ফ্রম অরিজিনাল লেখকের লেখা, একটা ব্যাপার স্বীকার করতেই হবে। সেটা হচ্ছে সালমান হকের অনুবাদ। তার অনুবাদ নিয়ে আশা করি কারো মাঝে কোন কিন্তু নেই তবে এ বইটিতে তিনি বোধহয় নিজের সেরাটা দিয়েছেন। জাপানী বইয়ের বাংলা অনুবাদ ইংরেজি হয়ে তারপর হয়। তবে তা সত্ত্বেও সালমান হকের চমৎকার প্রাঞ্জল অনুবাদে আমি পুরোপুরি মুগ্ধ। শুধু অনুবাদ নয়, এক্সক্লুসিভ এই বইটি অনুবাদ করার সিদ্ধান্তের জন্য, সালমান হক আপনাকে ধন্যবাদ। টেক আ বাউ স্যার।

বিফোর দ্য কফি গেটস কোল্ড রিভিউ পড়ে (বা না পড়ে) যারা বইটি পড়তে আগ্রহী বোধ করছেন, তাদেরকে জানাই, চমৎকার এ বইটি ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে প্রকাশ করেছে আফসার ব্রাদার্স। সুন্দর প্রচ্ছদের ১৯২ পৃষ্ঠার এ বইটির মুদ্রিত মূল্য ৪০০ টাকা। খুব বেশি না, তবে ছাড়ের হিসেব করলে খুব কমও না।

বিফোর দ্য কফি গেটস কোল্ড বইটির রিভিউ যখন লিখতে বসি তখন সাথে ছিলো এক কাপ কফি। I challenged myself to finish the review writing ‘Before the coffee gets cold’. বাট ৩২ দাঁত বিকশিত করে বলছি, I failed :D

ওহ লাস্ট একটা কথা, খেয়াল করে দেখেছেন কফি শপটা কবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো? ১৮৭৪ সালে। এই ১৮৭৪ সালেই প্রকাশ পেয়েছিলো পৃথিবীর প্রথম নিজেকে Psychologist দাবী করা বিখ্যাত মানুষ Wilhelm Maximilian Wundt এর Grundzüge der physiologischen Psychologie (Principles of Physiological Psychology)। মর্ডান সাইকোলজির জনক হিসেবে যে কয়জনের নাম উঠে আসে তার মধ্যে তিনি অন্যতম।
তো কি মনে হয়?

Review Credit : Shahalul Tanzi 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ