বিনম্র সালাতের মূলমন্ত্র | লেখক : মুহাম্মাদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ | Binomro Salater Mulmontro

  • বই : বিনম্র সালাতের মূলমন্ত্র
  • লেখক : মুহাম্মাদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ
  • প্রকাশনী : দারুল কারার পাবলিকেশন্স
  • বিষয় : সালাত/নামায
  • অনুবাদক : মোহাম্মাদ আল-আমীন বিন ইউসুফ
  • সম্পাদক : শাইখ আবু আহমাদ সাইফুদ্দিন বেলাল মাদানী, শাইখ আব্দুল হাই বিন আশফাকুর রহমান
  • পৃষ্ঠা : 96, কভার : পেপার ব্যাক
  • লাস্ট আপডেট: ২৯ : ৬ : ২০২২

বিনম্র সালাতের মূলমন্ত্র | লেখক : মুহাম্মাদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ | Binomro Salater Mulmontro

وصحبه ومن إن الحمد لله والصلاة والسلام على سيد الأنبياء والمرسلين وعلى آله يوم الدين تبعهم بإحسان إلى :

প্রশংসা সহকারে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করি সেই মহান আল্লাহ তা'আলার যিনি আমার মতো এক নগণ্য বান্দাকে এ বিনম্র সালাতের মূলমন্ত্র বইটি অনুবাদর করার তাওফীক দান করেছেন। অতঃপর কৃতজ্ঞতা স্বীকার আমার মা-বাবার যাদের মায়াময় সযত্ন প্রতিপালনে আমি দীনের পথে বেড়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি। আরও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করি সেসব উস্তায মহোদয়গণের যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে আমি যৎ‍কিঞ্চিৎ ইসলামের জ্ঞান লাভে সক্ষম হয়েছি। কৃতজ্ঞতা স্বীকার করি মূল লেখক মুহাম্মাদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ ও বিনম্র সালাতের মূলমন্ত্র বইটি অনুবাদে যারা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন তাদের। ১৪৩৪ হিজরী সালের ২৬ রামাযানে বইটির অনুবাদ শেষ হয়। ফালিল্লাহিল হামদ।

মানুষ হিসেবে ভুল-ত্রুটি থাকা অস্বাভাবিক নয়। পাঠকমহলের প্রতি অনুরোধ, কোনো ভুল-ত্রুটি পরিলক্ষিত হলে জানাবেন। পরবর্তী সংস্করণে সংশোধনের উদ্দ্যোগ নেয়া হবে ইনশাআল্লাহ।

আমার পরম শ্রদ্ধেয় মা-বাবা এবং যারা এ বইটি অনুবাদ ও প্রকাশে বিভিন্নভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন আল্লাহ তা'আলা তাদের উত্তম জাযায়ে খায়র দান করুন। আমীন!

বিনীত
আল-আমীন বিন ইউসুফ।

খুশু ও বিনম্রতার ফযীলত

খুশূ', একাগ্রতা ও বিনম্রতা অবলম্বনকারীর ফযীলত বর্ণনা এবং এর পরিত্যাগকারীকে ভীতি প্রদর্শন করে নবী বলেন

خمس صلوات إفترضهن الله تعالى، من أحسن وضوء هن وصلاهن لوقتهن، وأتم ركوعهن وخشوعهن كان له على الله عهد أن يغفر له، ومن لم يفعل، فليس له على الله عهد، إن شاء غفر له وإن شاء عذبه .

“আল্লাহ তা'আলা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করেছেন। যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযূ করে সময়মত সে সালাতগুলো আদায় করবে, আর তাতে পরিপূর্ণরূপে রুকূ' করবে এবং খুশু-খুজু' বজায় রাখবে তার জন্য আল্লাহ তা'আলার পক্ষ হতে প্রতিশ্রুতি রয়েছে যে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন। আর যে ব্যক্তি তা করবে না, তার জন্য আল্লাহর তরফ হতে কোনো ওয়াদা নেই। আল্লাহ চাইলে ক্ষমা করতে পারেন; আবার শাস্তিও দিতে পারেন।”১৮

খুশূ'র ফযীলত বর্ণনা করে রসূল আরো বলেন :

«من توضأ فأحسن الوضوء ثم صلى ركعتين يقبل عليهما بقلبه ووجهه وفي رواية : لا يحدث فيهما نفسه غفر له ما تقدم من ذنبه وفي رواية إلا وجبت له الجنة]

“যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযূ করে মনে-প্রাণে (গভীর মনোযোগ) দু' রাকাত সালাত আদায় করে (অন্য বর্ণনায় আছে : ঐ দু' রাকাত সালাত আদায় করার সময় দুনিয়ার কোনো বিষয়ে চিন্তা করে না, তবে তার পূর্বের যাবতীয় গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। অন্য বর্ণনায় এও আছে যে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।

১৮. আবূ দাউদ হা. ৪২৫, সহীহুল জামে', হা. ৩২৪২ ১৯. বুখারী, বাগহা মুদ্রিত, হা. ১৬৮, নাসায়ী ১/৯৫, সহীহুল জামে' ৬১৬৬

খুশূ’-খুজু বা বিনম্রতার বিধান

খুশূ'র ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারযোগ্য অভিমত হচ্ছে : খুশূ ওয়াজিব। শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়াহ বলেন : আল্লাহ বলেছেন :

واستعينوا بالصبر والصلاة وإنّها لكبيرة إلا على الخاشعين

“তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর, সালাত আদায়ের

কষ্ট অত্যন্ত ভারী কিন্তু আল্লাহ ভীরুদের জন্য তা মোটেই ভারী নয়।' এ আয়াতে সালাতে খুশূ* বজায় রাখে না এমন লোকেদের নিন্দা করা "১৫

হয়েছে।

নিয়ম হচ্ছে, কাউকে তখনই নিন্দা করা হয় যখন সে কোনো ওয়াজিবকে পরিত্যাগ করে অথবা কোনো হারাম কাজ করে বসে। খুশৃ* নষ্টকারীদেরকে যেহেতু তিরস্কার করা হয়েছে সেহেতু প্রমাণিত হয় যে, সালাতে খুশূ' বজায় রাখা ওয়াজিব।

তাছাড়া নিম্নের আয়াতটিও খুশূ ওয়াজিব হওয়া প্রমাণ করে। আয়াতটি হচ্ছে

قد أفلح المؤمنون ، و الذين هم في صلاتهم خيعون ل ت والذين هم عن اللغو معرضون « * والذين هم للركوة فعلون : * والذين هم لفروجهم حفظون ، و إلا على Y أزواجهم أو ما ملكت أيمانهم فإنهم غير ملومين فمن ابتغى وراء ذلك فأوليك هم العدون : والذين لهم لأمنيهم وعهدهم رغون 7 * والذين هم على صلوتهم يحافظون . أوليك هم الورثون ، و الذين يرثون الفردوس « لهم فيها خلدون **

১৫. সূরা বাক্বারাহ ২: ৪৫ আয়াত

“মুমিনরা সফলকাম হয়ে গেছে। যারা নিজেদের নামাযে বিনয় নম্রতা অবলম্বন করে। যারা অসার কথাবার্তা এড়িয়ে চলে। যারা যাকাত দানে সক্রিয়। যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংরক্ষণ করে। নিজেদের স্ত্রী ও মালিকানাভুক্ত দাসী ব্যতীত, কারণ এ ক্ষেত্রে তারা নিন্দা থেকে মুক্ত। এদের অতিরিক্ত যারা কামনা করে তারাই সীমালঙ্ঘনকারী। আর যারা নিজেদের আমানাত ও ওয়াদা পূর্ণ করে। আর যারা নিজেদের নামাযের ব্যাপারে যত্নবান। তারাই হল উত্তরাধিকারী। তারা ফিরদাউসের উত্তরাধিকার লাভ করবে, যাতে তারা চিরস্থায়ী হবে।”

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ সমস্ত গুণাবলীসম্পন্ন লোকেদেরকে যেহেতু জান্নাতুল ফিরদাউসের ওয়ারিশ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন সুতরাং এসব গুণাবলী যাদের মধ্যে থাকবে না তারা জান্নাতুল ফিরদাউসের ওয়ারিশ হতে পারে না। অতএব সালাতে খুশূ ওয়াজিব আর খুশূ হচ্ছে একাগ্রতা, নিষ্ঠতা, বিনয় ও স্থিরতার সম্মিলিত অবস্থা।

সুতরাং যে ব্যক্তি কাকের ঠোকর মারার মতো ঠোকর মারবে সে তার সিজদায় একাগ্র ও বিনয়ী হবে না। অনুরূপভাবে যে রুকূ'তে ভালভাবে মাথা না নামিয়ে ভালভাবে স্থির না হয়ে মাথা উঠাবে, সে স্থির হলো না। আর স্থির হওয়ার অর্থই হলো প্রশান্তি লাভ করা। সুতরাং যে ব্যক্তি শান্তি লাভ করলো না সে স্থির হলো না, আর যে স্থির হলো না সে তার রুকূ'তে এবং সিজদায় একাগ্র ও বিনয়ী হতে পারলো না। যে ব্যক্তি বিনয়ী হলো না বা খুশৃ* বজায় রাখলো না সে গুনাহগার হলো।

এ কথাও সালাতে খুশূ ওয়াজিব হওয়া প্রমাণ করে যে, নবী খুশৃ পরিত্যাগকারীদেরকেও চক্ষু আকাশের দিকে উত্তোলনকারীর মতোই শাস্তির ভয় দেখিয়েছেন। কেননা সে নড়াচড়া করে এবং আকাশের দিকে তাকায় যা একাগ্রতা ও খুশূ অর্জনের বিপরীত আচরণ।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ