ছোটদের আখলাক সিরিজ : শিশু কিশোরদের বই | Chotoder Akhlak Series

ছোটদের আখলাক সিরিজ
লেখক : আবদুল আযিয সাইয়িদ হাশিম, আহমদ মুহাম্মাদ হাসান, ইয়াসির আলী নূর, মুস্তফা আহমাদ আলি, মুহাম্মাদ মাহমুদ কাযি, শাবান মুস্তফা কাযামিল
প্রকাশনী : মাকতাবাতুল ফুরকান
বিষয় : শিশু কিশোরদের বই
অনুবাদক : আদীবা আফরিন
পৃষ্ঠা : 152

ছোটদের আখলাক সিরিজ


ইখলাসের গল্প! হ্যাঁ কিশোর বন্ধুরা! ভাবছ, ইখলাস আবার কী জিনিস? তাই তো? তোমাদের অনেকেই হয়তো বোঝো না ইখলাসের অর্থ কী! কেউ কেউ হয়তো বোঝো! আমি কিন্তু সবাইকেই বলছি। শোনো তাহলে! মন দিয়ে শুনবে, কেমন? নইলে তোমাদের ছোট্ট ভাইবোন—যারা এখনও বই পড়তে শেখেনি, তাদেরকে বুঝিয়ে বলবে কী করে?

ইখলাস অর্থ আন্তরিকতা, সততা। একজন মুসলিমের যেসকল গুণাবলী থাকা আবশ্যক তার মাঝে অন্যতম হলো ইখলাস। বলতে পারো এটিই হচ্ছে প্রধান ও মূল। বান্দা তার ইবাদাতসহ সমস্ত ভালো কাজ একমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভ এবং তাঁকে রাজি খুশির উদ্দেশ্যে করাকে ইখলাস বলে। আল্লাহ তায়ালা তাঁর নবী, রাসূল ও সকল মুমিনদের নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তাদের কথা-কাজ ইখলাসপূর্ণ হয়। তিনি তাঁর রাসূলকে সম্বোধন করে বলেছেন—‘হে নবী! বলুন, আমি আল্লাহর আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে তাঁর ইবাদত করতে আদিষ্ট হয়েছি।' (সূরা যুমার : আয়াত নং-১১)। কুরআনুল কারীমে অন্য জায়গায় আল্লাহ তাআলা বলেন- বলুন, “আমার সালাত, আমার ইবাদাত, আমার জীবন ও মৃত্যু জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ তাআলারই উদ্দেশ্যে।' (সূরা আনআম : আয়াত নং-১৬২)

বন্ধুরা! ভেবে দেখো তো! আমরা যদি সবসময় সকল কাজ ইখলাসের সঙ্গে করি, তবে আল্লাহ আমাদের ওপর কত খুশি হবেন! চল, এখন থেকেই প্রতিজ্ঞা করি! আমাদের কথা, কাজ, ইবাদাত—সবকিছু হবে কেবল আল্লাহ তাআলার জন্য। তাকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে!

এ বইয়ে ইখলাস সম্পর্কিত বেশকিছু গল্প ও ঘটনা আছে। তবে মিথ্যে বানানো গল্প নয়! একেবারে আগাগোড়া সত্য! কুরআন, হাদীস ও ইতিহাস থেকে নেওয়া। এবার তাহলে শুরু করা যাক! শাবান মুস্তফা কাযামিল।

সর্বপ্রথম যারা জাহান্নামে যাবে

তিন শ্রেণির লোক সর্বপ্রথম জাহান্নামে যাবে—ক্বারী, শহীদ ও ধনী। আল্লাহ তাআলা ক্বারীকে জিজ্ঞেস করবেন—আমি আমার রাসূলের নিকট যা প্রেরণ করেছি, তা কি তোমাকে শিখাইনি?

সে বলবে – অবশ্যই, আপনি আমাকে তা শিখিয়েছেন।

তিনি জিজ্ঞেস করবেন—তু করেছ? – তুমি যা শিখেছ, সে অনুযায়ী কোন কোন আমল

সে বলবে—আমি দিন-রাত কুরআন তিলাওয়াত করেছি।

আল্লাহ তাআলা বলবেন— তুমি মিথ্যে বলছ, বরং তুমি কুরআন পাঠ করেছ এই উদ্দেশ্যে যে, তোমাকে বলা হবে বড় ক্বারী, তিলাওয়াতকারী। আর তা তো বলা হয়েছে।

এরপর নিয়ে আসা হবে ধনী ব্যক্তিকে। আল্লাহ যাকে বিভিন্ন ধরনের সম্পদ দান করেছিলেন। তিনি তাকে বলবেন— আমি কি তোমাকে প্রাচুর্য দেইনি, যাতে তুমি অন্যের মুখাপেক্ষী না হও?

সে বলবে—অবশ্যই দিয়েছেন।

তিনি জিজ্ঞেস করবেন— আমার দেওয়া সম্পদ কোন কাজে খরচ করেছ তুমি?

সে জবাব দেবে—দান-সাদাকা করেছি। আত্মীয় স্বজনের খোঁজ-খবর নিয়েছি।

আল্লাহ বলবেন— মিথ্যে বলছ তুমি। বরং তুমি এসব করেছ এ কারণে যে, মানুষ তোমাকে দানবীর বলবে। আর তা তোমাকে বলা হয়েছে।

এরপর হাজির করা হবে এমন ব্যক্তিকে যে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করতে গিয়ে শহীদ হয়েছে। আল্লাহ তাআলা জিজ্ঞেস করবেন— তুমি কীভাবে নিহত হয়েছ?

সে জবাব দেবে—আমি তো আপনার পথে জিহাদ করতে আদিষ্ট ছিলাম। কাজেই আমি জিহাদ করতে করতে শাহাদাত বরণ করেছি।

তিনি বলবেন— তুমি মিথ্যে বলছ। তুমি যুদ্ধ করেছ এই উদ্দেশ্যে যে, তোমাকে বলা হবে অমুক ব্যক্তি বীরযোদ্ধা। লোকেরা তাই বলেছে।

আল্লাহ তাআলার নির্দেশে এদের সবাইকে টেনে হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।

শহীদ ও জান্নাত

আমর ইবনে সাবেত। আবদে আশহাল গোত্রের লোক। তাকে উসাইরাম বলেই ডাকে সবাই। সে ছিল কাফের। তার গোত্রের প্রায় সবাই ইসলাম গ্রহণ করলেও সে তার পূর্বপুরুষদের ধর্মকেই আঁকড়ে ধরে রেখেছিল। কেউ তাকে দ্বীনের দাওয়াত দিলে একবাক্যে প্রত্যাখ্যান করত সে আহ্বান।

বেশ কিছুদিন পর। যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠেছে। উহুদ প্রান্তরে কাফেরদের সঙ্গে মুসলমানদের যুদ্ধ। উসাইরাম তরবারী হাতে রওনা হলো উহুদ অভিমুখে। সেখানে পৌঁছে মুসলমানদের কাতারে মিশে গেল। তাদের হয়ে মুশরিকদের সঙ্গে লড়াই করতে লাগল বীরবিক্রমে। লড়াই করতে করতে তীর-বর্শার আঘাতে মারাত্মক কতগুলো জখম হলো তার শরীরে। এ অবস্থায়ও যুদ্ধ চালিয়ে যেতে লাগল উসাইরাম। একপর্যায়ে দুর্বল হয়ে হয়ে মাটিতে পড়ে গেল সে।

যুদ্ধ শেষ হয়েছে। আবদে আশহাল গোত্রের কয়েকজন দাঁড়িয়ে কথা বলছে। যুদ্ধে আশহাল গোত্রের কজন শহীদ হয়েছে, আহত কজন.. এসবই তাদের আলোচনার বিষয়। হঠাৎ তাদের চোখ গেল উসাইরামের দিকে। মাটিতে পড়ে আছে সে। পুরো শরীর আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত। কয়েক জায়গা হতে প্রবল রক্তক্ষরণও হচ্ছে।

লোকেরা ভীষণ অবাক হলো। একি! যুদ্ধে আসার আগেও না তাকে কাফের দেখে এলাম। যে কিনা আল্লাহ ও তার রাসূলকে অবিশ্বাস করত। তারা তাকে জিজ্ঞেস করল, কেনো এমন করলে তুমি? নিজ গোত্রের ওপর নাকি ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে?

সে বলল—না, বরং ইসলামের প্রতি আকৃষ্টতাই আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে। আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ওপর ঈমান এনে ইসলাম গ্রহণ করেছি। এরপর সকালে বেরিয়ে পড়েছি তরবারি হাতে। আর তারপর কী হলো তা তো দেখতেই পাচ্ছো।

কিছুক্ষণ পরই শাহাদাত বরণ করলেন তিনি। সাহাবায়ে কেরাম নবীজীর কাছে তার কথা বর্ণনা করলে তিনি বললেন, নিশ্চয় সে জান্নাতের অধিবাসী!

কান্নার কারণ

হযরত উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু একদিন মসজিদে নববীতে গিয়ে দেখলেন, নবীজীর কবরের পাশে বসে মুআয ইবনে জাবাল রাযিয়াল্লাহু আনহু কাঁদছেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন—তুমি কাঁদছ কেন?

মুআয রাযিয়াল্লাহু আনহু বললেন— রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছ থেকে শোনা কিছু বিষয় আমাকে কাঁদাচ্ছে। আমি আল্লাহর রাসূলকে বলতে শুনেছি—সামান্যতম রিয়া অর্থাৎ লোক দেখানো মানসিকতাও শিরক। যে ব্যক্তি আল্লাহর কোনো ওলীর (বন্ধু) সাথে শত্রুতা করল, সে যেন আল্লাহ তাআলার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন সৎকর্মশীল, আল্লাহভীরু আত্মগোপনকারী বান্দাদের। যারা দৃষ্টির আড়াল হলে কেউ তাদের খোঁজ... আরো পড়তে অথবা দেখতে অনুগ্রহ করে 'ছোটদের আখলাক সিরিজ' বইটির অরিজিনাল কপি ক্রয় করুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ