- বই : কোড অব সাকসেস
- লেখক : প্রফেসর এস.এম. আরিফুজ্জামান
- প্রকাশনী : অদম্য প্রকাশ
- বিষয় : আত্ম উন্নয়ন ও মোটিভেশন
- পৃষ্ঠা : 104, কভার : হার্ড কভার
- আইএসবিএন : 9789849615910, ভাষা : বাংলা
"Successful people do what unsuccessful people are not willing to do. Don't wish it were easier; wish you were better"
-Jim Rohn
আমরা সবাই সফল হতে চাই কিন্তু বড় সমস্যা হচ্ছে আমরা বুঝতে পারি না সফলতার সংজ্ঞা কী। একেকজন একেকভাবে সংজ্ঞায়িত করে সফলতাকে। কেউ বলেন সফল হওয়া মানে অনেক টাকাপয়সা থাকা, কেউ মনে করেন সফলতা মানে বড় পদ পাওয়া, কেউ বা মনে করেন গাড়িবাড়ির মালিক হওয়া। এখান থেকে বলা যায় সফলতা মানে হচ্ছে যা চাই তা পাচ্ছি কি না। এখন সমস্যাটা হচ্ছে, আমি যদি সফলতাকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করি, তাহলে আমার এই সফলতা উপভোগের আনন্দ কয়েক দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।
একটু ব্যাখ্যা করে বলি।
ধরা যাক, আমি চাই যে আমার একটা বাড়ি হবে, পেয়েও গেলাম। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে কিছুদিন পর আমার মনে হতে পারে বাড়িটা হয়তো একটু ছোট হয়ে গেল, বাড়িতে আরও কিছু কিছু ফিচার যুক্ত করতে পারলে খুব ভালো হতো। এভাবে আমি আমার সফলতার একটা নতুন সীমানা তৈরি করলাম এবং এই ঘটনা ঘটতেই থাকবে। সুতরাং এভাবে আমরা যদি সফলতাকে ডিফাইন করি তাহলে আমার সফলতার স্থায়িত্ব খুব কম সময়ের জন্য হবে। এটা হওয়ার বড় কারণ আউটপুটের সাথে সফলতাকে সম্পৃক্ত করা। এই সংজ্ঞাটাকে পরিবর্তন করে ইনপুটের সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে। এটা তখনই সম্ভব হবে যখন আমি সফলতাকে বস্তুকেন্দ্রিক না করে ব্যক্তিকেন্দ্রিকে পরিবর্তন করব। আমি বিশ্বাস করি, সফলতা হওয়া উচিত ব্যক্তিকেন্দ্রিক, মানে এটা নির্ভর করবে আমি কী ধরনের মানুষ হতে চাই।
সফলতাকে ইনপুটের সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে সফলতা বস্তুকেন্দ্রিক না ব্যক্তিকেন্দ্রিক
ধরা যাক, আমার স্বপ্ন হচ্ছে আমি মার্কেটিংয়ে বড় একটা কোম্পানিতে চাকরি করতে চাই, তাহলে ব্যাপারটা দাঁড়াবে এ রকম যে আমি যেকোনো একটা বড় কোম্পানি খুঁজে সেখানে চাকরির চেষ্টা করব এবং পেয়েও গেলাম। হতে পারে ওই কোম্পানিতে কাজ শুরু করার পর আমার কাছে মনে হতে থাকল এর থেকে আরও কোনো বড় কোম্পানিতে চেষ্টা করা দরকার, তাহলে আমার মধ্যে কিন্তু সেই সন্তুষ্টিটা থাকবে না। সুতরাং আমি নিজেকে সফল বলতে পারব না।
কিন্তু এই স্বপ্নটাকেই এখন একটু ভিন্নভাবে দেখার চেষ্টা করি। চাকরি পাওয়ার পর এখন আপনি কোন কোম্পানিতে চাকরি করছেন সেটা বিবেচনা না করে কী ধরনের মার্কেটার হতে পারছেন, ঠিকমতো কাজটা করতে পারছেন কি না, তার সাথে সম্পৃক্ত করতেন তাহলে কিন্তু আপনি চাকরি কোথায় করছেন সেটার সাথে সম্পৃক্ত হতো না, এটা সম্পৃক্ত থাকত আপনি কতটা ভালো মার্কেটার হয়ে উঠছেন সেটার ওপর। এখন মজার ব্যাপার হচ্ছে, আপনি যদি এই ভালো মার্কেটার হয়ে উঠছেন কি না, এটার ওপর জোর দেন এবং নেটওয়ার্কিং ভালো হয় তাহলে কিন্তু এমনিতেই আপনি একটা ভালো কোম্পানিতে চাকরি করতেন, যেকোনো কোম্পানি আপনাকে লুফে নিত। তখন সাফল্যটা স্থায়িত্ব পেত। আমার বইটা এই থিমের ওপর ভিত্তি করে লেখা।
সাফল্য অবশ্যই আকর্ষণ করা উচিত, তাড়া করা নয়। ব্যক্তিগত মূল্য হলো চুম্বকের মতো যা আমাদের জীবনে সব ভালো জিনিসকে আকর্ষণ করে। আমরা ব্যক্তি হিসেবে যত উন্নত হব, আমাদের জীবনে যশ, খ্যাতি, টাকাও আসবে তত বেশি। জীবনে বেশি ধনসম্পদ চাইলে বেশি বড় মানুষ হতে হবে। তাই অবশ্যই আমাদের মান বাড়ানোর নিমিত্তে নতুন নতুন উপায়ের জন্য ক্রমাগত অনুসন্ধানে থাকতে হবে। সেটাই হচ্ছে সফলতা- উন্নত মানুষ হওয়া। এই বইটা সফল হওয়ার জন্য লেখা অন্য বইগুলো থেকে এখানেই ব্যতিক্রম। এটা অর্থসম্পদ উপার্জনের জন্য তাড়িত করবে না বরং উন্নত মানুষ হয়ে কীভাবে অর্থ উপার্জন বাড়ানো যায়, সে ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দেবে।
আমার এই বইতে সফল হওয়ার জন্য উন্নত মানুষ হওয়াকে independent বা স্বাধীন ভ্যারিয়েবল হিসেবে ধরেছি আর অর্জনগুলোকে ধরেছি dependent বা নির্ভরশীল হিসেবে। অনেকটা 3 idiots মুভির লিড ক্যারেক্টর আমির খানের মুখ দিয়ে যে হিন্দী ডায়ালগটা দেওয়া হয়েছিল তার মতো যার বাংলা অর্থ, “সাফল্যের পেছনে নয়, দক্ষতার পেছনে ছুটো, সাফল্য এমনিতেই ধরা দেবে।”
কোড অব সাকসেস বইতে আমি সফল হওয়ার জন্য নয়টি ধাপের কথা বলেছি যেগুলো পর্যায়ক্রমে অনুসরণ করতে হবে। একেক চ্যাপ্টারে একেক ধাপ নিয়ে সহজ ভাষায় বর্ণনা করেছি। ধাপগুলো হলো:
১) নিজের জীবনের দায়িত্ব নিন
২) জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজুন
৩) লক্ষ্য অর্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রমের জন্য প্রস্তুত হন
৪) ফোকাস
৫) নিজের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হন
৬) ব্যাপক কর্ম পরিকল্পনা
৭) নেটওয়ার্কিং
৮) এখনই শুরু করুন
৯) কখনোই হাল না ছাড়া
আমি দেশে বিদেশের অনেক বড় বড় মানুষদের জীবনকে পর্যালোচনা করে এই নয়টা ধাপকে নির্বাচন করেছি। প্রত্যেকটা ধাপের ব্যাখ্যা দিয়েছি, এই বড় মানুষদের জীবনের উদাহরণ দিয়ে সহজ করে বুঝানোর চেষ্টা করেছি। বেশকয়েক জায়গাতে আমার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতাটাও নিয়ে এসেছি। যার ফলে পাঠকেরা পড়ে আনন্দের সাথে শিখতে পারবেন। প্রত্যেক ধাপের সাথে অনুশীলনগুলো শেখাটাকে পোক্ত করবে।
এই নয়টা ধাপের যেকোনো একটি ছাড়া সফলতা অসম্ভব। আবার ক্রমটাও ঠিক রাখতে হবে। কেননা পরের কোন ধাপ, তার পূর্বের কোন ধাপের সাথে সংশ্লিষ্ট। যেমন- যার জীবনের উদ্দেশ্য পরিষ্কার, তার জন্য হাল ধরে রাখা তুলনামূলক সহজ।
এই বইটা লেখার ক্ষেত্রে আমি কৃতজ্ঞ আমার প্রাণপ্রিয় স্ত্রী নিবেদিতা ইসলামের কাছে। তাঁর উৎসাহ ছাড়া বইটা লেখা হতোনা। আর নাজিবের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা, ওনার সাপোর্ট আর পিছে না লেগে থাকলে বইটা আলোর মুখ দেখত না।
কে না সফল হতে চায়! তাই কিভাবে সফল হওয়া যায় সে ব্যাপারে তারা চিন্তা ভাবনা করে, সফল মানুষদের জীবনী থেকেও জানার চেষ্টা করে। তবে সফলতম মানুষদের একেকজন একেকভাবে সফল হয়েছেন। প্রত্যেকের কাজ করার ক্ষেত্র, সময়ও আলাদা। এ কারণে আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের জন্য কনফিউজ হয়ে যাওয়াটা খুব স্বাভাবিক যে কিভাবে সফলতা অর্জন করা যায়। আমি নিজে বেশ কিছু বই পড়ার চেষ্টা করেছি। এরকম একটা বই পেয়েছিলাম যেখানে ছিল সফলতার ৭৫টি ধাপ৷ আরেকটাতে পেয়েছিলাম ২৫টা ধাপ। আমার মনে হয়েছিল এইগুলো পড়ে অনুধাবন করতে করতেই তো জীবন শেষ হয়ে যাবে! তখন থেকেই চিন্তা ভাবনা ছিল, স্বপ্ন দেখতাম সফলতা অর্জনের জন্য সহজ ভাষায় কিভাবে একটা বই লেখা যায় যেটা যেকোনো বয়সের, যেকোনো পেশার মানুষের জন্য কার্যকরী হবে। কোড অব সাকসেস সেই স্বপ্নেরই প্রতিফলন।
আশা করি, বইটা পাঠকদের কাজে লাগবে। সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....