লেখকঃ ব্রায়ান ট্রেসি
অনুবাদঃ রিফাহ জাহরা
বইটা পড়া শেষ বেশ কিছুদিন আগেই। তাই আজ বইটা নিয়ে লিখে ফেললাম। যদিও এরই মধ্যে এই বইটা নিয়ে একটা ঘটনা ঘটে গেছে। আগে তাহলে ঘটনাটা বলি।
গতকাল আমার এক ভাগ্নী আসে বাসায় বেড়াতে। আমার টেবিলের উপর বইটা দেখে সে বেশ আগ্রহ নিয়েই বইটা হাতে নেয়। অনেকগুলো পাতা উলটে পালটে দেখে। তার ভ্রু কুচকানো দেখে বুঝলাম সে বুঝতে পারছে না বইটা কি নিয়ে। মিনিট পাঁচেক বই ঘাটাঘাটি করে এরপর আমাকে প্রশ্ন করে বসে এই বই আমি কেন পড়লাম। তার ধারণা অনুযায়ী এই বইয়ে ব্যাঙ খাওয়া শেখাচ্ছে। ব্যাঙ খেয়ে লাভ কি!
ওর এই প্রশ্ন শুনেই ভাবলাম, নাহ! পড়া যেহেতু শেষ, লিখেই ফেলি এবার।
ইট দ্যাট ফ্রগ বইটা মূলত প্রোক্রাস্টিনেশন বা কাজের গড়িমসি ভাব নিয়েই। রুপক অর্থে বিষয়টি ব্যাঙ খাওয়া দিয়ে বোঝানো হয়েছে। বিষয়টা অনেকাংশে আলসেমির মতোই। কাজ করবো করবো ভাব। প্রোক্রাস্টিনেশন এর ফলে প্রোডাক্টিভিটিতে ইফেক্ট পড়ে সবচেয়ে বেশি। কারন আপনি যত বেশি অবহেলা করবেন আপনার কাজটা করার সময় ততোই কমে যাবে। কিছু মানুষ আছে যারা ডেডলাইন পার হওয়ার সময়টাতেই কাজ করে। যার ফলে তার কাজে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিংবা ঐ সময় হাতে অন্য ইম্পর্ট্যান্ট কাজ চলে আসতে পারে। আবার অনেক ক্ষেত্রে এক সাথে অনেক কাজ জমে যাওয়ার ফলে কাজের প্রতি বিরক্তি আসতে পারে কিংবা অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ মিস হয়ে যেতে পারে।
এই বইয়ে লেখক ২১টি পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়েছেন যার মাধ্যমে আপনি দ্রুত এবং সহজেই প্রোক্রাস্টিনেশন কাটিয়ে উঠতে পারেন। এর মধ্যে আমার পছন্দের কয়েকটি পদ্ধতি নিয়েই এই লেখাটা।
☑️ নিজের চিন্তাগুলোকে লেখায় পরিণত করুন। প্রথমে ভাবুন আপনার গোল কি। এরপর তা লিখে ফেলুন। তবে শুধু গোল লিখলে হবে না। আপনার গোল কি, কতদিনে তা এচিভ করবেন, কি কি স্টেপ পার করবেন লিখবেন। অর্থাৎ গোল অর্জনের সম্পূর্ণ প্রসেসকে লিখিত রুপ দিতে হবে। এতে ভুলে যাওয়ার ও সুযোগ নেই আর গোল সবসময় চোখের সামনে থাকবে।
☑️ পরের দিনের সব কাজের প্ল্যানিং আগের রাতেই করে রাখুন। প্রায়োরিটি অনুযায়ী কাজ করার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে আগের রাতের পুরো দিনের কাজের লিস্ট করে রাখা। এতে করে দিনের কাজ দিনে শেষ হবে এবং কোনো কাজ বাদ পড়বে না।
☑️ সবচেয়ে বড় এবং কঠিন কাজটি আগে করবেন। অনেক সময় দেখা যায় আমরা কাজটি অনেক কঠিন ভেবে সেটা পরের জন্য রেখে দেই। কিন্ত ওই কাজের টেনশন মাথায় থেকে যায়। আপনি যদি সাহস করে কাজটি আগে শুরু করেন তাহলে দুটো সুবিধা পাবেন। প্রথমত কাজ কঠিন ভেবে যে ভয় পেলে না কেটে যাবে। দ্বিতীয়ত বড় কাজটি শেষ হওয়ার ফলে এর টেনশন ও চলে যাবে এবং আপনি অন্য কাজে মনোযোগ দিতে পারবেন।
☑️ ৮০/২০ রুল এপ্লাই করুন। দৈনিক সব কাজ গুলো হতে একই পরিমান বেনেফিট পাওয়া যায় না। তাই প্রথমে ঐ ২০% কাজ গুলো শেষ করুন যা থেকে ৮০% বেনেফিট পাবেন।
☑️ ABCDE টেকনিক এপ্লাই করতে পারেন। এই টেকনিক অনুযায়ী কাজ ভাগ করলে আপনার কাজের প্রেশার অনেকটাই কমে যাবে। এই টেকনিক অনুযায়ী প্রতিটি অক্ষর একটি নির্দিষ্ট কাজের ধরন কে ইন্ডিকেট করে।
A- সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ যা আপনাকেই করতে হবে। এগুলোর ফলাফল খুবই সিরিয়াস হয়।
B- এই কাজ গুলো একটু কম গুরুত্বপূর্ণ তবে আপনাকেই করতে হবে। এগুলো না করলে কেউ একটু নারাজ বা অসুবিধাতে পড়তে পারে।
C- এই কাজ গুলো আপনি করলে ভালো দেখায় তবে এর কোনো পরিণাম নেই।
D- এই কাজ গুলো আপনি অন্য কাউকে হ্যান্ডওভার করতে পারেন।
E- এই কাজ গুলো আপনি চাইলে বাদ দিতে পারেন।
☑️ কাজ শুরুর পূর্বে প্রিপারেশন নিন। কিরকম? খেতে বসবেন? আগে খাওয়ার টেবিলটা গুছিয়েন নিন। ঘুমাবেন? আগে বিছানাটা পরিষ্কার করে নিন। অর্থাৎ যে কাজটি করবেন তা করার পূর্বে কাজের জায়গাটি রেডি করে নিন। এতে কাজে সুবিধা পাবেন এবং মনোযোগ থাকবে।
☑️ ব্যর্থতার পেছনের কারণ বের করুন। আপনি কোনো কাজে বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন। কাজ বাদ না দিয়ে কেন ব্যর্থতার কারন বের করুন। কাজ শুরুর পূর্বে কাজটির বাধাগুলো বের করে নিতে পারেন। তাতে করে ব্যাকআপ রেডি করতে পারবেন।
☑️ বড় কোনো কাজ করতে অসুবিধা হলে তাকে ছোট ছোট পিস করে নিন। কোনো কাজ একবারে করতে পারা অনেক সময়ই অসম্ভব হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে যখন আপনি কাজটিকে ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করে তারপর করার চেষ্টা করবেন তাতে দ্রুত কাজে সফলতা পাবেন।
লেখক এই বইটি তাদের উৎসর্গ করেছেন যারা নিজের জীবনকে সম্পূর্নরুপে বদলে দিতে চান। এই বইয়ের প্রতিটি পদ্ধতি যদি আপনি নিজের মধ্যে ধারণ করে নিতে পারেন তবে অবশ্যই আপনি নিজের জীবন বদলে দিতে পারবেন। জীবনকে সফলতার দিকে নিতে পারবেন।
Success depends on 3 D's_
1. Decision 2. Discipline 3. Determination
প্রথমে সিদ্ধান্ত নিন নিজেকে বদলে দেয়ার। এরপর বদলে দেয়ার প্রসেসটিকে রপ্ত করুন। সর্বশেষ দৃঢ়ভাবে লেগে থাকুন যতক্ষণ নআ পর্যন্ত প্রসেসটি আপনার অভ্যাসে পরিণত হয়।
"Success comes to those who have an entire mountain of gold that they continually mine, not those who find one nugget and try to live on it for fifty years"__ John C. Maxwell
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....