এসো গল্পে গল্পে কুরআন চিনি-২ | তানবীর হাসান বিন আব্দুর রফিক | esho golpe golpe quran chini 2

  • এসো গল্পে গল্পে কুরআন চিনি-২
  • লেখক : তানবীর হাসান বিন আব্দুর রফিক
  • প্রকাশনী : পরিশুদ্ধি প্রকাশন
  • বিষয় : শিশু কিশোরদের বই
  • পৃষ্ঠা : 136, কভার : পেপার ব্যাক
  • ভাষা : বাংলা


সমস্ত গুণগান সেই আল্লাহর তরে যিনি ‘অসীম দয়াবান; যিনি শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন।' সলাত ও সালাম বর্ষিত হোক সেই প্রিয় নবীর ওপর যিনি ঘোষণা করেছেন—“তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে নিজে কুরআন শিক্ষা নেয় এবং অপরকে তা শেখায়।” তাঁর আপনজন ও সহচরগণের ওপরও সলাত ও সালাম, যারা তাঁর বাণী “আমার তরফ হতে পৌঁছিয়ে দাও, যদিও তা একটি আয়াত হয়”-কে শুনে অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন; আল্লাহর আয়াত নিয়ে তারা পৌঁছে গেছেন পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিমে।

পর সমাচার এই যে, গত তিন বছর পূর্বে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন নাযিলের মাস রামাদ্বানে আমার হৃদয় আকাশে হঠাৎ উদয় হলো যে, কুরআন নিয়ে শিশু-কিশোরদের জন্য কিছু করা দরকার। আলী চাচার দুঃখ আমি আমার বাবা-চাচাদের প্রজন্মের মানুষদের দেখেছি

তারা অনেকে কুরআন পড়তে না জানলেও কুরআনের ছোট ছোট কিছু সূরা তাঁদের খুব ভালো মুখস্থ থাকতো। সূরাতুল ফাতিহা তো এমনিতেই সবার মুখস্থ থাকে, পাশাপাশি তারা কিছু না জানলেও অন্তত কুরআনের শেষ দশটি সূরা মুখস্থ জানতেন । 

শুনেছি আমাদের দাদা-দাদীরাই নাকি তাঁদেরকে এভাবে গড়ে তুলেছেন।এ প্রজন্মের মধ্যে যদিও দ্বীনি জ্ঞানার্জনে কিছুটা ভাটার সৃষ্টি হয়েছে, তারপরও বহু দ্বীনি পরিবার আছেন যারা তাদের ছোট ছোট সন্তানদেরকে এই সূরাগুলো শিক্ষা দিয়ে থাকেন, অনেকে তো আরো বেশি শেখান। তবে যারা শিখছে না তাদেরকেও আগ্রহী করে তোলা দরকার, পাশাপাশি যেসব বাচ্চারা শিখছে তারা অনেকেই এই সূরাগুলোর অর্থ ও মর্ম সম্পর্কে অবগত নয়, তাদেরকেও অর্থ ও মর্ম সম্পর্কে অবগত করা দরকার।

আমরা কুরআনের আলিম হতে পারি আর না পারি নিদেনপক্ষে কুরআনের ছাত্র তো সকলেরই হওয়া দরকার । ভাবছিলাম—এই প্রজন্মের বাচ্চাদের জন্য কী করা যায়? আমার কাছে মনে হলো সূরাতুল ফাতিহা ও কুরআনের শেষ দশটি সূরা, মোট এই ১১টি সূরা নিয়ে আল্লাহ চাহেন তো ওদের সঙ্গে কথা বলা যায়। কিন্তু কুরআনের একটা ভারত্ব রয়েছে, কচিমনের শিশুদের কাছে কিভাবে কুরআনকে সহজ করে তোলা যায়, সেটাই ছিল মূল চ্যালেঞ্জ। 

বাচ্চারা যেভাবে কোনো কিছুকে বুঝতে চেষ্টা করে তার নিজস্ব একটি ঢং রয়েছে; তারা সবকিছুকে হেসে-খেলে শিখে নেয়। সহসা একদিন একটা বুদ্ধি খেলে গেলো মাথায়। আর সেটা হলো, কল্পনায় আমি বাচ্চাদের নিয়ে গল্পের দেশে যাবো, সেই কল্পকথার গল্পের ফাঁকে ফাঁকে আমরা এই ১১টি সূরাও শিখে নিবো ইন শা আল্লাহ।

আমরা অনেকেই মনে করি—“বাচ্চাদেরকে আবার কুরআনের অর্থ-মর্ম শেখাবো কী করে? তাদের কি আর বয়স হয়েছে বুঝার!” হ্যাঁ, বাচ্চারা হয়তো কুরআনের সব কিছু বুঝবে না। তবে কিছু তো বুঝবে! আপনার সব কথা তারা বুঝে না। কিন্তু কিছু কথা তো বুঝে, তাই না! তেমনি আমাদের বাচ্চারা এই ছোট্ট বয়সে সব না বুঝলেও আমাদের স্রষ্টার বাণী কিছু কিছু হলেও বুঝবে। 

এই কিছু কিছু বুঝই তাদের আগামী দিনের চলার পাথেয় হবে ইন শা আল্লাহুল আযীয। বাচ্চাদেরকে নিয়ে কোনো বিষয়ে লেখার আগে আমি সর্বাগ্রে ভাবি লেখার বিষয়বস্তু বাচ্চাদের বয়স উপযোগী কিনা? বয়স উপযোগী মনে হলে দ্বিতীয়ত ভাবি, তাদেরকে তাদেরই ভাষায় বিষয়টা কিভাবে বুঝাবো? আর এই ১১টি সূরার মূল বিষয়বস্তু নিয়ে আমি গভীরভাবে ভেবেছি। আমার কাছে মনে হয়েছে এখানে বাচ্চাদের জন্য তেমন দুর্বোধ্য কোনো কিছু নেই। 

এরপর তাদের কিভাবে বুঝাবো ভাবতে গিয়ে গল্পচ্ছলে বুঝানোর চিন্তাটা মাথায় আসে। খুব বেশি জ্ঞান আমার আছে এমনটা আমি মনে করি না, তবে বাচ্চাদেরকে কুরআন চেনানোর এই সাহসটুকু জন্মানোর পিছনে আমার প্রথম বই ‘এসো জান্নাতের গল্প শুনি' এর বিরাট বড় এক ভূমিকা রয়েছে। এ বইটি বেরোনোর আগ পর্যন্ত আমার ভেতরে চাপা একটা ভয় কাজ করছিলো যে, হায়, যাদের জন্য লিখছি, সেই বাচ্চারা আমার কথা বুঝবে তো! সেই ভয় আর থাকেনি। 

আমি যখন এই ভূমিকা লিখছি তখন এই তিন বছরে বইটির প্রায় ১০ হাজার কপি বিক্রি হয়েছে। অসংখ্য বাচ্চাদের প্রশংসা কুড়িয়েছে বইটি। আল্লাহর গুনাহগার বান্দা আমি ভীষণ আনন্দিত হয়েছি। সবই দয়াময়ের দয়া। শুধু ছোটরাই নয়, তরুণ, যুবক, বৃদ্ধ, বণিতা সকলেই বইটি পড়েছে এবং প্রশংসা করেছে, যদিও ছোটদেরকে উদ্দেশ্য করেই লিখেছিলাম। 

এভাবেই সাহস জন্মালো যে, যেহেতু কচিমনে জান্নাতের ভালোবাসা তৈরিতে সহায়ক হতে পেরেছি, ইন শা আল্লাহ কুরআনের ভালোবাসা সৃষ্টিতেও সহায়ক হতে পারবো। এভাবেই ‘এসো জান্নাতের গল্প শুনি' পেরিয়ে ‘এসো গল্পে গল্পে কুরআন १
চিনি'-র সৃষ্টি। চিনি শব্দটি সচেতনভাবেই ব্যবহার করেছি। কেননা শেখানোটা অনেক ভারী একটি কাজ, এটা সবাই পারে না, তবে কানাও কিন্তু রাস্তা চেনাতে পারে। আলহামদুলিল্লাহ, দীর্ঘ দু'ই বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম শেষে আল্লাহর দয়ায় ‘এসো গল্পে গল্পে কুরআন চিনি'-র ১ম খন্ড বেরোয়। এবার বেরোচ্ছে ‘এসো গল্পে গল্পে কুরআন চিনি-২'। একে একে মোট ৪ খণ্ডে পুরো সিরিজটি আলোর মুখ দেখবে ইন শা আল্লাহ।
ছোট্ট জীবনে এ পর্যন্ত যতো লেখালেখি করেছি তার মধ্যে এই লেখায় একটু ব্যতিক্রমধর্মী অনুভূতি হয়েছে। আমার অন্যান্য লেখায় লেখা যখন শেষ হয়ে হয়ে আসে এমন অবস্থা হতো, তখন ক্লান্ত মন নিয়ে ভাবতাম—কখন শেষ হবে লেখা? কখন প্রকাশিত বইয়ের মুখ দেখতে পাবো!? কিন্তু এ বইটির ক্ষেত্রে দেহে অনেক ক্লান্তি ভর করা সত্ত্বেও মনে হচ্ছিলো—লেখা যেন শেষ না হয়, কুরআনের অবগাহনে আরো কিছু সময় ডুবে থাকি, আরো কিছুক্ষণ কুরআন নিয়ে ভাবি। কুরআন নিয়ে যতোই ভাবি ততোই আমার ভালো লাগে! ভেবেছি অনেক, তবে ছোটদের বই হওয়ায় মনের সব ভাবনা কাগজের পাতায় লিপিবদ্ধ করতে পারিনি। 

একটা আশা রয়ে গেলো মনে, আল্লাহ যদি তাওফীক দেন তাহলে ইচ্ছা আছে এ সূরাগুলো নিয়ে আরো বড় পরিসরে লিখবো বড়দের জন্য। আল্লাহর ইচ্ছায় তা প্রকাশিত হলে আজকের ছোটরাও হয়তো বড় হয়ে সেগুলো পড়ার সুযোগ পাবে। মহান আল্লাহ তাওফীক দান করুন।
২য় খন্ড প্রকাশিত হওয়ার পূর্বেই কয়েকজন সম্মানিত মানুষ বইটি পড়ে নানাভাবে পরামর্শ দিয়েছেন/প্রেরণা যুগিয়েছেন;  ৮
তাঁদের সকলের প্রতি আমি শুকরিয়া আদায় করছি। প্রিয় শাইখ সাইফুল্লাহ আল মামুন আল-মাদানী বইটি খুটিয়ে খুটিয়ে পড়ে আমাকে পরামর্শ দিয়েছেন, যা আমার জন্য ছিলো কল্পনাতীত। এছাড়াও প্রিয় শাইখ মুহাম্মাদ নূরুল্লাহ তা'রীফ এবং ভাই রাজীব হাসান সহ অনেকেই উৎসাহ যুগিয়েছেন। বইটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন প্রিয় প্রচ্ছদকার ভাই বায়েজীদ আহমেদ মীকা। মহান আল্লাহ সকলকে কবুল করে নিন!
মানুষের বলা বা লেখায় ভুল হওয়াটা অতি স্বাভাবিক। যদি কোনো ধরনের ভুলত্রুটি আল্লাহর কোনো বান্দার চোখে পড়ে তাহলে তা জানানোর অনুরোধ। আমি তার জন্য অগ্রীম দু'আ করছি—আল্লাহ যেন তাকে কুরআনের হিদায়াত দান করেন, তাকে কুরআনের নূর দান করেন এবং কুরআন নিজে শিক্ষা করে অপরকে শিখিয়ে উত্তম মানুষ হওয়ার তাকে তাওফীক দান করেন।

পরিশেষে আল্লাহর কাছে দু'আ করছি—তিনি যেন এ গ্রন্থের ভুলত্রুটি ক্ষমা করে একে কবুল করে নেন এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ক্ষমা করে দেন। মহান আল্লাহ যেন এর লেখক, লেখকের পিতা-মাতা, লেখকের স্ত্রী-সন্তানাদি, সকল পাঠক এবং বই সংশ্লিষ্ট সকলকে নাজাত দিয়ে দেন। আমীন! সলাত ও সালাম বর্ষিত হোক মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর পরিজন ও সহচরগণের ওপর।

লেখক পরিচিতি

তানবীর হাসান বিন আব্দুর রফীক। দাখিল ও আলিমে আলিয়া মাদ্রাসা হতে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর কওমী মাদ্রাসা হতে কৃতিত্বের সাথে দাওরা (মাস্টার্স) পাশ করেন। একজন তরুণ অনুবাদক হিসেবে একাধিক আরবী গ্রন্থও অনুবাদ করেছেন। পারিবারিক জীবনে তিনি বিবাহিত এবং দু'ই পুত্র সন্তানের জনক। তিনি নিজের ও মুসলিম উম্মাহর সন্তানদের নিয়ে ভাবেন। সেই প্রেরণা থেকে ইতিপূর্বে লিখেছেন ‘এসো জান্নাতের গল্প শুনি'। এ পর্যন্ত তার মোট ৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে। ছোটদের জন্য তার এবারকার প্রয়াস ‘এসো গল্পে গল্পে কুরআন চিনি-২'। মহান আল্লাহ তার এই নেক কাজকে কবুল করে নিন। আমীন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ