গুনাহ মাফের উপায় PDF : শাহাদাৎ হুসাইন খান ফয়সাল বই পিডিএফ

বই: " গুনাহ মাফের উপায় " পিডিএফ ডাউনলোড করুন
লেখক: শাহাদাৎ হুসাইন খান ফয়সাল রাহিমাহুল্লাহ।
ইয়াকিন পাবলিকেশন
পরিবেশক: সমকালীন প্রকাশন
মুদ্রিত মূল্য :৩২২ টাকা
Review Credit 💕 Nadira Nasrin

গুনাহ মাফের উপায়

রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘুরে বেড়ানো ইবলিসের খপ্পর থেকে সম্পূর্ণভাবে বেঁচে থাকার সুযোগ আমাদের নেই। সে তার বাহারি ফাঁদ পেতে সর্বদা আমাদের গন্তব্য থেকে বিচ্যুত করতে মরিয়া।ইবলিসের ফাঁদে পড়ে আমরা বিভ্রান্ত হই।

আমাদের আকীদা বা বিশ্বাস অনুযায়ী পৃথিবীর মানুষের মধ্যে নবী-রাসূলগণ ছাড়া কেউ-ই নিষ্পাপ নয়।তাই সবারই কম-বেশি গুনাহ হওয়াটা স্বাভাবিক।প্রবৃত্তির অনুসরণ,শয়তানের কুমন্ত্রণা ইত্যাদি কারণে মানুষ গুনাহে লিপ্ত হয়।গুনাহে লিপ্ত হওয়াটা স্বাভাবিক ও মানবীয়; কিন্তু গুনাহের ওপরে অটল থাকাটা শয়তানীয় ও অস্বাভাবিক।

একদিকে শয়তান যেমন গুনাহের দিকে ডাকে,অপর দিকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা ক্ষমার দিকে ডাকেন।শুধু ডাকেন-ই না উপরন্তু তিনি গুনাহ গারদের জন্য এমন কিছু অফারের ব্যবস্থা করে রেখেছেন যেন সহজেই মানুষ তার কৃত গুনাহ থেকে মুক্তি পেতে পারে।আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'লা বলেছেন-

"... তারা ব্যতীত, যারা অনুশোচনা করে,বিশ্বাস করে এবং ভালোকাজ করে।আল্লাহ তাদের পাপসমূহ ভালো কাজ দিয়ে বদলে দেবেন।আল্লাহ পুনঃপুনঃ ক্ষমাশীল,পরম দয়ালু।(কুরআন-২৫:৭০)


অনুশোচনার ফলে আল্লাহ আমাদের পাপ সমূহ ক্ষমা করে দিবেন- এতেই শেষ নয়, বরং আমাদের পাপসমূহ ভালো কাজ দিয়ে বদলে দেবেন। 'আল্লাহু আকবার' কত মহান আমার রব!

আবার কুরআন ও হাদিসের আলোকে এমন কিছু আমল রয়েছে যা করলে অনেক গুনাহ সহজে ও স্বাভাবিকভাবে মাফ হয়ে যায়।অথচ আমরা সেগুলো জানি না।তাই অধিকাংশ সময় গুনাহ করতে করতে আমাদের অন্তর কালো হয়ে যায়।ফলে তাওবা ইস্তিগফারের প্রতি মন টানে না।


যারা মনে করেন, পাপ করতে করতে আমরা অন্ধকার অতল গহ্বরে এতটাই তলিয়ে গেছি যে,সেখান থেকে ফিরে আসার কোনো সুযোগ নেই, তাদের জন্য বইটি অন্ধকারে একফালি আলোর মতো হবে ইন শা আল্লাহ।

গুনাহ কাকে বলে,গুনাহের প্রকারভেদ,
আমাদের জীবনে গুনাহের কুপ্রভাব পাশাপাশি গুনাহ করে ফেলার পর কীভাবে সেগুলো থেকে বের হয়ে আসতে হবে,গুনাহ মাফের আমল,কীভাবে আল্লাহর

কাছে ক্ষমা চেয়ে তাঁর নৈকট্য লাভ করা যাবে সে বিষয়ে কুরআন- হাদিস থেকে বিস্তারিত দলিলাদি নিয়ে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা করা হয়েছে বইটিতে।

আশাকরি বইটি গুনাহের ভারে নিমজ্জিত মুসলিম জাতির উদ্ধার-পথের পাথেয় হবে, ইনশা আল্লাহ।

গুনাহ মাফের আমলসমূহ

যে আমলগুলো পূর্বের পাপরাশি মাফ করে দেয়

ইসলামে এমন কিছু আমল রয়েছে যেগুলোর কোনো একটি যিনি করবেন তার পূর্বেকার সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। নিম্নে সে-সব আমলগুলো সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো :

১. অজু করা

কেউ যদি রাসূলুল্লাহ -এর দেখানো পদ্ধতিতে অজু করে তার পূর্বের সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। একদিন তৃতীয় খলীফা উসমান অজু করার পর বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ উ-কে এভাবেই অজু করতে দেখেছি। অতঃপর বললেন—

من توضأ هكذا غفر له ما تقدم من ذنبه وكانت صلاته ومشيه إلى المسجد نافلة

যে-ব্যক্তি এরূপ অজু করবে, তার পূর্বের পাপরাশি মাফ করে দেওয়া হবে এবং তার সালাত ও মসজিদের দিকে চলার সাওয়াব অতিরিক্ত হিসেবে গণ্য হবে। ১)

২. সুন্দরভাবে অজু করে দুই রাকআত সালাত আদায় করা

উত্তমরূপে অজু করলে যেমন গুনাহ মাফ হয় তদ্রূপ কেউ যদি পূর্ণ মনোযোগ সহকারে দুই রাকআত সালাত আদায় করে তাহলেও তার বিগত জীবনের সকল

[1] সহীহ মুসলিম: ৫৬৬

পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। যায়দ ইবনু খালিদ আল-জুহানী বলেন, নবীজি বলেছেন

من توضأ فأحسن وضوءه ثم صلى ركعتين لا يسهو فيهما غفر له ما تقدم من ذنبه

যে-ব্যক্তি সুন্দরভাবে অজু করে, অতঃপর একাগ্রচিত্তে নির্ভুলভাবে দুই রাকআত সালাত আদায় করে, তার পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয় [১]

অপর হাদীসে এসেছে

من توضأ كما أمر وصلى كما أمر غفر له ما قدم من عمل

যে-ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশনা মোতাবেক অজু করবে এবং সালাত আদায় করবে তার পূর্বেকার গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।

উসমান -এর সূত্রে বর্ণিত একটি হাদীসে নবীজি বলেন— من توضأ نحو وضوبي هذا، ثم صلى ركعتين لا يحدث فيهما نفسه غفر له ما تقدم من ذنبه

যে-ব্যক্তি আমার মতো এ রকম অজু করবে, অতঃপর দু'রাকআত সালাত আদায় করবে, যাতে নিজের সাথে কোনোরূপ বাক্যালাপ করবে না, তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।[3]

ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহ বলেন—

‘উপর্যুক্ত হাদীসে রাসূলুল্লাহ -এর বাণী ‘যাতে নিজের সাথে কোনোরূপ বাক্যালাপ করবে না’-এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো—সে দুনিয়ার সাথে সম্পৃক্ত এবং সালাতের সাথে সম্পৃক্ত নয় এমন কোনো বিষয় নিয়ে ভাববে না বা কল্পনা করবে না। যদি তার মনে এমন কিছু চলে আসে, তাহলে আসামাত্রই তা এড়িয়ে যাবে। এতে তাকে মাফ করে দেওয়া হবে এবং হাদীসে বর্ণিত ফজিলত সে পেয়ে যাবে, ইন শা আল্লাহ। কারণ, এইটুকু কাজ তার ইচ্ছাকৃত কর্মের অন্তর্ভুক্ত নয়। অনিচ্ছাকৃতভাবে মনে যে-সকল

[১] সুনানু আবি দাউদ: ৯০৫; সহীহুত তারগীব ২২১ হাদীসটি সহীহ

[২] সুনানুন নাসায়ী : ১৪৪; সুনানু ইবনি মাজাহ: ১৩৯৬, হাদীসটির সহীহ

[৩] সহীহ বুখারী: ১৫৯

ভাবনার উদয় হয় কিন্তু স্থায়িত্ব পায় না, এই উম্মতের জন্য সে-সব ক্ষমাযোগ্য। [১] ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহ আরও বলেন—

‘ওপরের হাদীসে গুনাহ মাফ দ্বারা সগীরা গুনাহ মাফের কথা উদ্দেশ্য করা হয়েছে; কবীরা গুনাহ নয়। অধিকন্তু প্রত্যেকবার অজুর পর দুই বা ততধিক রাকআত সালাত আদায় করাও মুস্তাহাব প্রমাণিত হলো। আর এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত।’[২]

৩. সালাতের সময় হলে উত্তমরূপে অজু করে সালাত আদায় করা

খলীফা উসমান – হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ বলেন—

ما من امرئ مسلم تحضره صلاة مكتوبة فيحسن وضوءها وخشوعها وركوعها إلا كانت كفارة لما قبلها من الذنوب ما لم يؤت كبيرة وذلك الدهر كله

কোনো মুসলিম ব্যক্তির যখন কোনো ফরজ সালাতের ওয়াক্ত হয় আর সে সালাতের জন্য উত্তমরূপে অজু করে, সালাতে বিনয় ও রুকূ উত্তমরূপে আদায় করে, তাহলে যতক্ষণ না সে কোনো কবীরা গুনাহে লিপ্ত হবে, তার এই সালাত তার পূর্ববর্তী যাবতীয় গুনাহের জন্য কাফফারা হয়ে যাবে। আর এ অবস্থা সর্বযুগেই বিদ্যমান (৩)

অপর এক বর্ণনায় আছে নবীজি বলেছেন—

لا يتوضأ رجل مسلم فيحسن الوضوء فيصلي صلاة إلا غفر الله له ما بينه وبين الصلاة

التي تليها

যেই মুসলিম ব্যক্তি অজু করবে এবং অজুকে সুন্দরভাবে আদায় করবে, অতঃপর সালাত আদায় করবে সেই ব্যক্তির এই সালাত ও তার পূর্ববর্তী সালাতের মধ্যবর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে

[১] শারহু সহীহ মুসলিম, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা: ১০৮

[২] শারহু সহীহ মুসলিম, খণ্ড : ৩, পৃষ্ঠা: ১০৮

[৩] সহীহ মুসলিম: ৫৬৫

[৪] সহীহ মুসলিম: ৫৬২

৪. ইমামের পেছনে সূরা ফাতিহা শেষে ‘আমীন' বলা

জামাআতে সালাত আদায়কালে ইমাম সাহেব যখন ‘গাইরিল মাগদূবি আলাইহিম ওয়ালাদ্ধ দ্বো-ল্লীন' বলবেন, তখন ‘আমীন' বলা সুন্নাত।

যে-ব্যক্তি তখন ‘আমীন' বলবে আর তার ‘আমীন' বলার সাথে ফেরেশতাগণের ‘আমীন' বলা যুক্ত হবে (কেননা, তখন ফেরেশতারাও আমীন বলে থাকে) তার

পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। রাসূলুল্লাহ বলেন—

إذا قال الإمام غير المغضوب عليهم ولا الضالين فقولوا آمين فإنه من وافق قوله قول الملايكة غفر له ما تقدم من ذنبه

ইমাম যখন ‘গাইরিল মাগদূবি আলাইহিম ওয়ালাদ্ধ দ্বো-ল্লীন' বলে তখন তোমরা ‘আমীন' বলো। কারণ, যার 'আমীন' বলা ফেরেশতাদের ‘আমীন বলার সাথে যুক্ত হয়, তার পূর্বেকার সকল পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (১)

অন্য বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ বলেন—

إذا أمن الإمام فأمنوا فإنه من وافق تأمينه تأمين الملايكة غفر له ما تقدم من ذنبه

ইমাম যখন ‘আমীন' বলবে, তখন তোমরাও ‘আমীন' বলো। কারণ, যার ‘আমীন' বলা ফেরেশতাদের ‘আমীন' বলার সাথে সাথে হয়, তার পূর্বেকার গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয় (য

আরেক বর্ণনায় বলেন—

إذا قال أحدكم أمين وقالت الملايكة في السماء أمين فوافقت إحداهما الأخرى غير له ما تقدم من ذنبه

তোমাদের কেউ যখন সালাতে ‘আমীন' বলে এবং ফেরেশতারাও আকাশে ‘আমীন' বলেন, আর পরস্পরে ‘আমীন' বলা সমস্বরে হয়, তখন তার পূর্বের পাপরাশি মাফ করে দেওয়া হয় (৩)

[১] সহীহ বুখারী : ৭৮২; সহীহ মুসলিম: ৯৪৭

[২] সহীহ বুখারী : ৭৮০; সহীহ মুসলিম: ৯৪২

[৩] সহীহ বুখারী : ৭৮০-৭৮২, ৪৪৭৫, ৬৪০২; সহীহ মুসলিম: ৯৪২, ৯৪৪-৯৪৫

উল্লিখিত হাদীসগুলো দ্বারা জানা গেল যে, জামাআতে সালাত আদায়ের সময় ইমাম সাহেবের সূরা ফাতিহা শেষে মুক্তাদী যখন পূর্ণ মনোযোগ, ভীতি ও একনিষ্ঠতা সহকারে আমীন বলে এবং একই সময়ে ফেরেশতারাও তার সাথে আমীন বলে তখন তার পূর্বের সকল সগীরা গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। আর যদি তার আমলনামায় সগীরা গুনাহ না থাকে তাহলে তার কবীরা গুনাহ (যদি থাকে) হালকা করে দেওয়া হবে, ইন শা আল্লাহ |[১]

৫. রুকু থেকে উঠে নির্দিষ্ট দুআ পাঠ করা

জামাআতের সাথে সালাত আদায়কালে ইমাম যখন রুকু থেকে ওঠার সময় ‘সামিআল্লা-হু লিমান হামিদাহ' বলে, তখন মুক্তাদী ‘আল্লা-হুম্মা রববানা লাকাল হাম্দ' বললে তার বিগত জীবনের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে নবীজি বলেছেন—

إذا قال الإمام سمع الله لمن حمده فقولوا اللهم ربنا لك الحمد فإنه من وافق قوله قول الملايكة غفر له ما تقدم من ذنبه

যখন ইমাম ‘সামিআল্লা-হু লিমান হামিদাহ' বলে, তখন তোমরা আল্লা-হুম্মা রববানা লাকাল হাম্দ বলো। কেননা, (তখন ফেরেশতারাও এই দুআ পাঠ করে থাকে।) যার কথা ফেরেশতাদের কথার সাথে মিলে যায়, তার বিগত জীবনের সকল পাপ মাফ করে দেওয়া হয় (২)

৬. রামাদানের সিয়াম পালন করা

ঈমানসহ সাওয়াবের আশায় কেউ যদি রামাদান মাসের ফরজ সিয়াম পালন করে তাহলে তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। আবু হুরায়রা হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ বলেছেন—

من صام رمضان إيمانا واحتسابا غفر له ما تقدم من ذنبه

[১] মিন মুকাফফিরাতিয় যুনূব, পৃষ্ঠা: ২৩

[২] সহীহ বুখারী : ৭৯৬; সহীহ মুসলিম: ৯৪০

গুনাহ মাফের উপায় PDF Download করুন সম্পূর্ণ ফ্রিতে 💕

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ