("আলোচিত অভিযোগের কাঙ্ক্ষিত জবাব" বইয়ের উপর জনাব আতাউল করিম মাকসুদ সাহেবের মনগড়া অভিযোগ, অশালীন কথাবার্তা এবং চ্যালেঞ্জের জবাব)
চ্যালেঞ্জের জবাব এক কথা দ্বারাই দিতে চাই, দ্বীন ইসলাম কারো পৈত্রিক সম্পত্তি নয়। তাই কথায় কথায় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার অহমিকা পরিহার করা উচিত। এটা মূর্খতা, একগুঁয়েমি এবং বোকামি ছাড়া কিছু নয়।
আমার বই কে "চটি বই" বলে আক্রমণ করে আতাউল করিম মাকসুদ সাহেব মাওলানা মওদুদী রহঃ এর ওপর অভিযোগ করে বলেন যে, মাওলানা মওদুদী বলেছেন, "নবি হওয়ার আগে হযরত মূসা (আ.) অনেক বড়ো একটা গুনাহ করেছেন।"
নবিদের শানে এমন কথা আর কেউ বলেননি, কেবল মাওলানা মওদুদী বলেছেন। এটাই তার মূল অভিযোগ।
আমি তিনটা পয়েন্টে এর জবাব দিব ইনশাআল্লাহ।
১) মাওলানা মওদুদীর বক্তব্য বিকৃতি এবং খেয়ানতের জবাব।
২) এই ব্যাপারে অন্যান্য ইমামদের মতামত।
৩) হযরত মূসা আ. সম্পর্কে মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানী রহ. এর বক্তব্য
তিনি প্রথমেই সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী রহঃ এর বক্তব্য বিকৃত করে চরম খেয়ানত করেছেন। অবশ্যই এটা তাদের কাছে মামুলি বিষয়। বক্তব্য কাটছাঁট, বিকৃত অর্থ তৈরি এবং মিথ্যা অপবাদ দানে তারা খুবই পারদর্শী।
দেখুন, তিনি অভিযোগ করেছেন, মাওলানা মওদুদী বলেছেন, নবি হওয়ার আগে হযরত মূসা (আ.) অনেক বড়ো একটা গুনাহ করেছেন।" অথচ স্ক্রিনশটে দেখুন মাওলানা মওদুদীর বক্তব্য। তিনি নবুয়ত প্রাপ্তির আগে এবং পরের আলোচনা করতে গিয়ে প্রসঙ্গক্রমে বলেন, "নবি হওয়ার পূর্বে কোনো নবির সে ধরনের নিষ্পাপ জীবন লাভ হয় না, যা নবি হওয়ার পরে হয়ে থাকে। নবি হওয়ার পূর্বে হযরত মূসা আলাইহিস সাল্লাম কর্তৃকও একটা বিরাট গুনাহের কাজ সংঘটিত হয়ে গিয়েছিলো। তিনি একজন লোককে হত্যা করে ফেলেছিলেন"।
#দুইটা বাক্যের ব্যবহারে আকাশ-পাতাল তফাৎ। ভাষার এটুকু পার্থক্য যারা করতে পারে না তারাও মাওলানা মওদুদীর বিরুদ্ধে ফিরিস্তি তৈরি করে। এটা কিয়ামতের একটা আলামত।
মওলানা মওদুদী কখনো বলেননি যে, হযরত মূসা আ. বড়ো গুনাহ করেছেন। তিনি হযরত মূসা আলাইহিস সাল্লাম কর্তৃক ঘটনা কে বড়ো গুনাহের কাজ বলেছেন। আর মানুষ হত্যা করা নিঃসন্দেহে কবিরা গুনাহ। তবে সে আল্লাহর কাছে কবিরা গুনাহগার বলে সাব্যস্ত হবে কিনা তা নির্ভর করবে তার ইচ্ছা ও নিয়তের উপরে। হযরত মূসা আ. এর মনে এই লোকটাকে হত্যার নিয়ত ছিল না, ইচ্ছাও ছিল না। এইজন্য কাজটা কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত হলেও তিনি কবিরা গুনাহ করেননি।
আর এজন্যই মাওলানা মওদুদী এই অপরাধের নিসবত করেছেন কাজের দিকে কিন্তু মাকসুদ সাহেব সরাসরি হযরত মূসা (আ.)-এর দিকে নিসবত করে তাকে পাপী সাব্যস্ত করে সেটা মাওলানা মওদুদীর ঘাড়ে চাপিয়ে দিলেন।
বাহ্, কী চমৎকার!
দ্বিতীয়ত, তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই যে, মাওলানা মওদুদী বলেছেন, মুসা (আ.) নবুওয়তীর পূর্বে একটা বড়ো পাপ করেছেন। তাহলে এই ব্যাপারে কি আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আর কোনো ইমামের মন্তব্য নেই?
আল্লামা আলূসী (রহ.) তাঁর তাফসীর গ্রন্থ রূহুল মা'আনীতে কুরআনের আয়াত وعصى ادم ربه فغوى "আদম নিজ রবের নাফরমানি করল এবং সঠিক পথ থেকে সরে গেল" এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন,
الظاهر الآية يدل على أن ما وقع من الكبائر
"এই আয়াত থেকে স্পষ্ট প্রমাণ বহন করে যে, হযরত আদম আ. থেকে যা সংঘটিত হয়েছিল তা কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত ছিল।"
দেখুন, হযরত মূসা আ. সম্পর্কে মাওলানা মওদুদীর বক্তব্য আর হযরত আদম আ. সম্পর্কে ইমাম আলূসীর বক্তব্যে নূন্যতম কোনো পার্থক্য নেই।
আল্লামা তাফতাজানী বলেন,
أنهم معصومون من الكفر قبل الوحي بعده بالإجماع. وكذا عن تعمد الكبائر عند الجمهور، وأما سهوا فجوزه الأكثرون
"আলিমদের ঐক্যমতে নবুওয়তের পূর্বে হোক বা পরে হোক নবিগণ কুফরী থেকে পবিত্র। অনুরূপ অধিকাংশ আলেমের মতে ইচ্ছাকৃত কবিরা গুনাহ থেকেও পবিত্র। আর ভুলবশত কবির গুনাহ হওয়ার ব্যাপারে অধিকাংশ আলেমের মতে তা সম্ভব।"
(মিরকাতুল মাফাতিহ, ৫/১৭২০)
তাফতাজানীর বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, আহলে সুন্নতের অধিকাংশ আলেমের মতে নবিদের থেকে ভুলবশত কবিরা গুনাহ সংঘটিত হতে পারে। আর হযরত মূসা আঃ কর্তৃক সংঘটিত গুনাহের কাজটাও তাঁর ভুলবশত ছিল।
অধিকাংশ আহলে ইলম যে মত দিয়েছেন, তারা নাকি কোথাও এইরকম মত খুঁজে পায়নি?
তৃতীয়ত, এবার দেখি দেওবন্দী সিলসিলার অন্যতম মুখপাত্র হযরত মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানী রহ. হযরত মূসা আঃ সম্পর্কে কী বলেছেন।
#তিনি নবিদের শানে অনেক আপত্তিকর কথা বলেছেন। নিচের স্ক্রিনশটে দেখুন। তিনি এক জায়গায় বলেন,
معصوموں سے اگرچہ قصدا گناہ نہیں ہو سکتا مگر غلط فہمی سے بسا اوقات ان سے بڑے سے بژ گناہ ہو جا تاھے...
"মাসুমের দ্বারা যদিও ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো পাপ কাজ হতে পারেনি কিন্তু ভুল বুঝাবুঝিতে অনেক সময় তাদের দ্বারা বড়ো বড়ো পাপ কার্য হয়ে গেছে। কিন্তু বাহ্যত সেগুলো পাপকাজ মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে সেগুলো পাপ নয়।"
উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন, "হযরত মূসা আঃ তাঁর ভাই হারুন আ. এর চুল ও দাড়ি ধরেছিলেন। এর দ্বারা একজন নবি এবং তিনি তার বড়ো ভাইও ছিলেন, তাঁকে অপমান করা হয়েছে। এ কাজটি অন্যের দ্বারা সংঘটিত হলে কুফরী বরং মারাত্মক ধরনের কুফরী বলে বিবেচিত হতো।"
(মুকতুবাতে শাইখুল ইসলাম, ১/২৫৯)
চিন্তা করুন, তিনি বাহ্যতঃ নবিদের নিষ্পাপ মানলেও কার্যত কত ভয়ঙ্কর কথা বলেছেন। মূসা আঃ এর কাজকে তিনি কুফরী বলে আখ্যায়িত করেছেন। অথচ উপরে আমরা দেখেছি আলেমদের ঐক্যমতে নবিদের দ্বারা নবুওয়তের পূর্বে হোক কিংবা পরে হোক কোন কুফরী কাজ সংঘটিত হতে পারে না।
তাহলে আহলে সুন্নতের বাহিরে কার মতামত পাওয়া গেল ? মাওলানা মওদূদীর নাকি মাওলানা মাদানীর?
কষ্টের বিষয় হচ্ছে মুসলমানদের এই ক্লান্তিলগ্নে এই বিষয়গুলোও আমাকে তুলে ধরতে হচ্ছে বাধ্য হয়ে।
অতঃপর, মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানী রহ বলেন, "মুসা (আ.) তাওরাত লিখিত পাথরের ফলক ছুড়ে ফেলেছেন।যেমন কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,
وألقى الألواح
"সে আলওয়াহ পাথর ফলক নিক্ষেপ করল।"
আল্লাহর কিতাব কে- তাও আবার সেই কিতাব যা তার উপর নাযিল হয়েছে। অতএব তা ছুড়ে মারা নিঃসন্দেহে বড়ো পাপ কাজ।
(মুকতুবাতে শাইখুল ইসলাম, ১/২৬০)
আরেকটু অগ্রসর হয়ে তিনি বলেন,
اور قبطی کا قتل عصبیت نسلی پر مبنی تہا
"এবং মূসা (আ.) এর হাতে "কিবতী"-এর নিহত হওয়া নছলী আসাবিয়াত তথা বংশীয় পক্ষপাতিত্বের কারণে হয়েছিল।"
নাউযুবিল্লাহ, মাদানী রহ. হযরত মূসা (আ.) কে স্বজনপ্রীতি এবং বংশীয় পক্ষপাতের দোষে অভিযুক্ত করেছেন। একজন সম্মানিত নবির শানে "আসাবিয়াত" শব্দ প্রয়োগ করা নিঃসন্দেহে মারাত্মক অপবাদ, যা অমার্জনীয় অপরাধ। একজন নবি কখনোই স্বজনপ্রীতি করতে পারেন না।
রাসূল সাঃ কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আসবিয়াত কী? তিনি বললেন, অন্যায়ভাবে নিজ সম্প্রদায়কে সাহায্য করা।
(সুনানে আবু দাউদ, ৫১১৯)
তার এইরকম আরো আপত্তিকর বক্তব্য পাওয়া যায়। এতো মারাত্মক কথা বলার পরেও তারা আমাদের আকাবির। আর মাওলানা মওদুদী তাঁর কাজকে শুধু বড়ো গুনাহের অন্তর্ভুক্ত করার কারণে তিনি ইসলাম থেকে খারিজ।
তাদের আকাবিরদের এইরকম ভুলের বিরুদ্ধে দুই লাইন লিখতে কখনো দেখেছেন?
দেখবেন না। কারণ, যারা ভেদে মারেফাত ও আশেক মাশুক নিয়ে লিখতেও ঈমান হারানোর ভয় করে, তাদের হাত দিয়ে দেওবন্দের আকাবিরদের ভুল নিয়ে কলম চালানো দুঃস্বপ্ন মাত্র। বরং ভুলকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে শুদ্ধ বানানোর মালমশলা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে তারা সবসময় বদ্ধপরিকর।
এই হচ্ছে আমাদের দেশের আল্লামাদের ইনসাফ এবং সমালোচনার নীতি। আমার বইয়ের জবাবে একটা বইও লিখা হচ্ছে। প্রায় দুই বছর থেকে শুনে আসছি। কর্ণপাত করিনি। কারণ এই নোংরা ভাষা ও একগুঁয়ে অভিযোগ থেকেই বুঝা যায় তাদের জবাবটা কোন লেভেলের হবে। আর আমার বই প্রকাশ হওয়ার আগেই শাইখ Bashiruz Zaman সাহেবের কাছ থেকে অবগত হয়েছি, বটতলার উপন্যাস রচনা করে হলেও আমার বইয়ের ডিফেন্সে একটা বই বের হবে। এটা তাদের পুরাতন ঐতিহ্য। নতুন কিছু নয়।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....