* বইয়ের নাম: হত্যান্বেষী;
* সংকলক: মনীষ মুখোপাধ্যায় ও তমোঘ্ন নস্কর;
* প্রকাশক: শব্দ প্রকাশন;
* পেপারব্যাক, ২৭১ পৃষ্ঠা (১৪ সেমি X ২১ সেমি), ₹ ৩৩৫/-
পনেরোজন উদীয়মান বা প্রতিষ্ঠিত লেখক যখন 'সিরিয়াল কিলিং' নিয়ে লিখতে বসেন, তখন কী হয়?
উত্তর হিসেবে এই সংকলনের নাম নিতে পারলে খুশি হতাম। কিন্তু উত্তরে একটিই শব্দ উচ্চারণ করতে হচ্ছে— ঘ্যাঁট!
আজ্ঞে হ্যাঁ। এই সময়ের বাংলা স্পেকুলেটিভ ফিকশনে সবচেয়ে জনপ্রিয় দুই সাহিত্যিকের সংকলন হওয়া সত্ত্বেও এই বইয়ে যা আছে, তা পড়ার পর ওই বস্তুটি আস্বাদনের অনুভূতিই হল।
তমোঘ্ন নস্করের একটি সংক্ষিপ্ত মুখবন্ধের পর এতে আছে~
১. মনীষ মুখোপাধ্যায়ের 'সন্ন্যাসিনী হন্তারক': যত্ন নিয়ে লেখা নন-ফিকশন।
২. তমোঘ্ন নস্করের 'লালসা': এও বেশ ভালো নন-ফিকশন, যা লেখকের 'ট্রু ক্রাইম'-এর তুলনায় পরিণত লেখনীর ইঙ্গিত বহন করে।
৩. মোহনা দেবরায়ের 'কুচিলা': একটি সিরিয়াস এবং সুলিখিত গল্পে অলৌকিকত্বের অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে সেটির বারোটা বাজিয়েছেন লেখক।
৪. প্রিয়া চক্রবর্তী'র 'লিভার ফ্রাই': লেখক 'সাইলেন্স অফ দ্য ল্যাম্বস'-এর দ্বারা একটু বেশি মাত্রায় অনুপ্রাণিত হয়েছেন। ভারি দুঃখের বিষয়! তিনি যদি ডি.এস.এম এবং ব্রিডলে-ডাফিনকেও কিছুটা গুরুত্ব দিতেন, তাহলে আমরা একটি বিশ্বাসযোগ্য লেখা পেতে পারতাম।
৫. ঐষিক মজুমদারের 'নিষাদ বৃত্তি': হ্যাঁ, এই গল্পের মাধ্যমে একটি সত্যিকারের মনের অন্ধকার ঘেঁটে তুলে আনা সিরিয়াল কিলারের সন্ধান পেলাম! এই গল্প যেমন সুলিখিত, তেমনই বাস্তবানুগ।
৬. অমৃতা কোনারের 'চক্র ব্যূহ': ইন্টারেস্টিং এবং গোছানো লেখা। এই ধারায় লেখকের নন-ফিকশন চর্চার সুফল দেখা দিয়েছে এই গল্পেও।
৭. পিয়ালী মণ্ডলের 'বীতরাগ': চমৎকার ভাবনা, নিপুণ বুনন, গতিময় লেখনী। 'ড্রেসড টু কিল'-কে মনে করিয়ে দেওয়া এই লেখাটি অত্যন্ত উপভোগ করলাম।
৮. রিয়া মিত্র'র 'হৃদয় হরণ': বইয়ের সবচেয়ে খারাপ লেখার শিরোপা কি এটিরই প্রাপ্য?
৯. কিংশুক শেঠের 'রক্তাক্ত ধারাপাত': না, বোধহয় এটিই সবচেয়ে অবিশ্বাস্য এবং যা-ইচ্ছে-তাই লেখা হিসেবে ওই 'সম্মান' ছিনিয়ে নেবে।
১০. অঙ্কিতা রায়ের 'কানাগলির লাশ': উঁহু, উক্ত 'পুরস্কার'টি সম্ভবত এই গল্পই নিয়ে যাবে।
১১. জয়জিত দে'র 'ক্যামোফ্লাজ': হল না! রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনাপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বিতার পর নিকৃষ্টতম লেখার তকমা ছিনিয়ে নিল এই লেখাটিই। নাকি এই অরেঞ্জ/পার্পল ক্যাপও দ্রুত হাতবদল হবে?
১২. অঙ্কিতা সরকারের 'নিশিগন্ধা': সিরিয়াল কিলিঙের গল্পে অলৌকিকের একেবারে চাষ করে ছাড়া হয়েছে এই গল্পে।
১৩. সাত্যকি বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'প্রস্তরীভূত': আবার! আবার সেই কামানগর্জন— থুড়ি গাঁজাখুরি কনসেপ্ট ঢুকিয়ে একটি রহস্য গল্পের চোদ্দোটা বাজানো। কেন সাত্যকি, কেন?
১৪. প্রিয়া ঘোষের 'স্মারক': এবং আরও একটি বুদ্ধিদীপ্ত, সুলিখিত রহস্য গল্পের অলৌকিক উপাদানের দ্বারা সপিণ্ডীকরণ।
১৫. সায়নী বসু'র 'অধরা আততায়ী': গো-ও-ও-ল! শেষ গল্পই শেষ অবধি সবচেয়ে খারাপ লেখার মুকুট ছিনিয়ে নিল।
আমি সংকলক দু'জনকেই দোষী বলব। তাঁদের যা পড়াশোনা তাতে সিরিয়াল কিলিং বস্তুটি খায় না মাথায় দেয়— তা অন্তত তাঁদের জানা থাকার কথা। তার পরেও তাঁরা এখানে যে-সব জিনিস শামিল করেছেন, তাতে বলতেই হচ্ছে যে তাঁরা এই কাজটিকে মোটেই সিরিয়াসলি নেননি।
আর লেখকেরা আগামী দিনে ওয়েব-সিরিজের বদলে এফ.বি.আই-এর বিহেভিয়রাল অ্যানালিসিস ইউনিটের লেখাপত্রে মনোনিবেশ করলে হয়তো আগামী দিনে আরেকটু বিশ্বাসযোগ্য গল্প তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া যাবে।
অলমিতি।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....