ইলম ও আলিমের ফজিলত : মাওলানা সাদেক কাসেমি খায়রাবাদি | Ilm O Alimer Fojilot : Mawlana Sadek Khasemi Khairabadi

  • বই : ইলম ও আলিমের ফজিলত
  • লেখক : মাওলানা সাদেক কাসেমি খায়রাবাদি
  • প্রকাশনী : দারুত তিবইয়ান
  • বিষয় : ইসলামী জ্ঞান চর্চা
  • পৃষ্ঠা : 80, কভার : হার্ড কভার
কভার: ইলম ও আলিমের ফজিলত

ইলমে দ্বীন অর্জন করা সকল মুসলমানের উপর ফরজ

1) عن أنس بن مالك، قال قال رسول الله ـ صلى الله عليه وسلم ـ " طلب العلم فريضة على كل مسلم . (رواه ابن ماجه والبيهقي في شعب الإيمان) অর্থ: আনাস বিন মালিক (রাজি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর

ফরয। [১]

ব্যাখ্যা: উপর্যুক্ত হাদিসে জ্ঞানার্জন ফরজ বলতে সেসকল ঈমানি ও ধর্মীয় আবশ্যকীয় জ্ঞানের কথা বলা হয়েছে, যা অর্জন করা ছাড়া কোন মুসলিমের পক্ষে আপন ঈমান, ধর্ম রক্ষা করা এবং পরকালে সফলকাম হওয়া সম্ভব নয়। উদাহরণস্বরূপ, কোন ব্যক্তি নওমুসলিম হলে তার উপর আবশ্যক হয়ে যায় সর্বপ্রথম তার সৃষ্টিকর্তাকে চেনা। তার প্রকৃত প্রতিপালক এবং সত্যিকার মাবুদকে জানা। তার রবের গুণাবলী কী কী? তাঁর প্রেরিত রাসূল এবং নবি কারা? ইত্যাকার বিষয় সহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক জ্ঞাতব্য বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা; যে জ্ঞান ছাড়া ঈমান পরিশুদ্ধ ও পরিপূর্ণ হয় না এবং হতে পারে না। এজন্য কোন ব্যক্তি যদি এসব বিষয়ে মূর্খ থেকে যায়, যদিও সে নিজেকে মুমিন এবং মুসলমান হিসেবে দাবি করে এবং দুনিয়ার লোকেরাও তাকে ঈমানদার মুসলমান হিসেবে চেনে; তারপরও তাকে প্রকৃত মুমিন এবং মুসলমান বলা যাবে না। কারণ তার তো ঈমান আর ইসলামের প্রাথমিক, মৌলিক এবং বুনিয়াদি জ্ঞানটুকুও নেই। তাই প্রত্যেক মুসলমানের উপর একান্ত ফরয দায়িত্ব হলো, প্রয়োজন পরিমাণ চলনসই

১. সুনানু ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-২২৪, তাখরিজ আলবানি; মিশকাত- ২১৮, তালিকুল রাগিব ১/৫৪, শুয়াবুল ঈমান, হাদিস নং- ১৬৬৪, ইলম ও আলিমের ফজিলত ১৩।

ইসলামি জ্ঞান অবশ্যই অর্জন করার চেষ্টা করা। এটাই হাদিসের মর্ম এবং অন্তর্নিহিত পয়গাম।

তার মানে এই নয় যে, প্রত্যেক মুসলমানকে-ই আলিম বা মাওলানা হয়ে যেতে হবে। বরং, হাদিসের উদ্দেশ্য হল, ইসলাম পালন করার জন্য যে সমস্ত বিধান এবং জরুরি জ্ঞান অর্জন না করলেই নয়- সেসকল জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ।

সংক্ষেপে বললে, যে সমস্ত কাজ মানুষের জন্য ফরজ করা হয়েছে, সে সকল বিষয়ের জ্ঞান অর্জন করা ফরজ। যে সকল আমাল মানুষের জন্য ওয়াজিব করা হয়েছে, সে সকল বিষয়ের জ্ঞান অর্জন করা ওয়াজিব। যে সকল বিষয় সুন্নাত এবং মুস্তাহাব সেগুলোর জ্ঞান অর্জন করা যথাক্রমে সুন্নাত এবং মুস্তাহাব। আর কোরআন ও হাদিসের সকল বিষয়ে পারদর্শিতা অর্জন করা এটা ফরজে কেফায়া; ফরজে আইন নয়।

বর্তমান সময়ে স্কুল-কলেজে যেসব জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা দেয়া হয়, তা অর্জন করা কোনোভাবেই ফরজে আইন নয়। বরং এ সকল জ্ঞান-বিজ্ঞানের কিছু আছে যা ফরজে কেফায়া পর্যায়ে পড়তে পারে। যদি সে জ্ঞানে মানুষের ফায়দা থাকে এবং তা ইসলামি শরিয়তের বিরোধী না হয়ে থাকে। কিন্তু যে সকল জ্ঞান, বিজ্ঞান ইসলামি শরিয়তের সাথে সম্পূর্ণ কিংবা আংশিক সাংঘর্ষিক, সে সকল জ্ঞান অর্জন করা অবৈধ এবং সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এখানে একটি বিষয় জানা থাকা দরকার, কোন কোন কিতাবে এই হাদিসের " pheno 5" শব্দের পর aalo (মুসলিমাহ) একটি শব্দ অতিরিক্ত করা হয়েছে। কিন্তু

নিয়মসিদ্ধ কথা হলো, এ হাদিসে and শব্দের বাড়তি অংশটুকু হাদিসের কোনো নির্রযোগ্য কিতাবে খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে হ্যাঁ, "..." শব্দটি পারিভাষিক অর্থে মুসলমান নর-নারী উভয়কে-ই শামিল করে। তাই শব্দ অতিরিক্ত না করেও অর্থ একই নেওয়াতে কোন অসুবিধা নেই।

ধর্মীয় জ্ঞানার্জনে দূর দারাজ সফরের ফজিলত

٢) عن كثير بن قيس، قال كنت جالسا مع أبي الدرداء في مسجد دمشق فجاءه رجل فقال يا أبا الدرداء إني جئتك من مدينة الرسول صلى الله عليه وسلم لحديث بلغني أنك تحدثه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم ما جئت لحاجة . قال فإني سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول " من سلك طريقا يطلب فيه علما سلك الله به طريقا من طرق الجنّة وإنّ الملائكة لتضع أجنحتها (ইলম ও আলিমের ফজিলত) رضا لطالب العلم وإن العالم ليستغفر له من في السّموات ومن في الأرض والحيتان في جوف الماء وإن فضل العالم على العابد كفضل القمر ليلة البدر على سائر الكواكب وإنّ العلماء ورثة الأنبياء وإن الأنبياء لم يورثوا دينارا ولا درهما ورثوا العلم فمن أخذه أخذ بحظ وافر." (رواه أبو داود والترمذي وابن ماجه)

অর্থ: কাসির ইবনু কায়েস (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি আবু দারদার (রাজি.) সঙ্গে দামেশকের মাসজিদে বসা ছিলাম। তখন তার নিকট এক ব্যক্তি এসে বললো, হে আবু দারদা! আমি একটি হাদিসের জন্য সুদূর মাদীনাতুর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এসেছি। জানতে পেরেছি যে, আপনি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে হাদিস বর্ণনা করেন। এ ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে আমি আসিনি। আবু দারদা (রাজি.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জনের জন্য কোন পথ অবলম্বন করে, আল্লাহ্ তার পরিবর্তে তাকে জান্নাতের পথসমূহের কোন একটি পথে পৌঁছে দেন। ফেরেশতারা (তালিবে ইলম) জ্ঞান অন্বেষণকারীর সন্তুষ্টির জন্য নিজেদের ডানা বিছিয়ে দেন। আলিমের জন্য আসমান ও জমিনের বাসিন্দারা আল্লাহর নিকট ক্ষমা ও দুআ প্রার্থনা করে। এমনকি পানির গভীরে বসবাসকারী মাছও তাদের কল্যাণের দুআ করে। আবেদ ( সাধারণ ইবাদাতগুজার) ব্যক্তির উপর আলিমের ফাজিলত হলো যেমন সমস্ত তারকার উপর পূর্ণিমার চাঁদের শ্রেষ্ঠত্ব। আলিমরা হলেন নবিদের উত্তরসূরি। নবিগণ কোন দিনার বা দিরহাম মিরাসরূপে রেখে যান না; তারা উত্তরাধিকার সূত্রে রেখে যান শুধু ইলম। সুতরাং যে ইলম অর্জন করেছে সে পরিপূর্ণ অংশ গ্রহণ করে নিয়েছে।

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, ইলম অন্বেষণের পথে সব ধরনের কষ্ট-ক্লেশ আর বাধা-বিপত্তি সহ্য করে নেওয়ার মাঝে এক বিশেষ শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। তাই ইলম তলবের পথে আগত সকল কষ্ট-ক্লেশ সানন্দে-স্বাচ্ছন্দে বরণ করে নেওয়া তালেবে ইলমের জন্য একান্ত আবশ্যক। প্রকাশ থাকে যে, ইলম তালাশের পথে যত বেশি কষ্ট স্বীকার করা হবে পূণ্যের তালিকা ততো বৃদ্ধি পাবে এবং আল্লাহ তাআলা জান্নাতের পথ ততো বেশি সুগম করে দিবেন। হাদিসে ইলম অন্বেষণের উদ্দেশ্যে সফরের একটিমাত্র ঘটনা উল্লিখিত হয়েছে। সাহাবা এবং তাবেঈনের এমন ভুরি ভুরি ঘটনা কিতাবের পাতায় পাতায় বিধৃত হয়েছে।

২. সুনানু আবু দাউদ, হাদিস নং-৩৬৪১, তিরমিজি, হাদিস নং- ২৬৮২, ইবনে মাজাহ, হাদিস নং- ২২৩, মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং- ২১৭১৫,ইলম ও আলিমের ফজিলত ১৫।

কতইনা সৌভাগ্যের অধিকারী সে তালেবে ইলম, যে ইলম তালাশের লক্ষ্যে কাছে কিবা দূরের গন্তব্যে সফর করে রাসুলে আরাবি আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই শাশ্বত সুসংবাদের ভাগিদার হয়ে যায়!

যার সম্মান ও বড়ত্বের ফলে নিষ্পাপ সৃষ্টিকূল ফেরেশতারাজি তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে নিজেদের ডানা বিছিয়ে দেয় এবং অদৃশ্য থেকে সবসময় তার সেবা সহযোগিতায় ব্রত থাকে! ইলমে দ্বীন চর্চার বরকতে আল্লাহ তাআলা আসমান-জমিনের সমস্ত মাখলুককে (বিবেকসম্পন্ন-বিবেকহীন) তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা ও দুআয় লিপ্ত করে দেন।

হাদিস শরিফে সমস্ত মাখলুকের ভিতর মাছ অন্তর্ভুক্ত থাকার পরও পৃথকভাবে আবার মাছের কথা আলোচনায় নিয়ে আসার পিছনে এক নিগূঢ় রহস্য অন্তর্নিহিত রয়েছে। সেটা হল- ঐ বিশাল নীলিম আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষিত হওয়া এবং বর্ষণের ফলে জমিনের স্থলভাগে সৃষ্ট সকল উর্বরতা আর সজীবতা কেবলমাত্র উলামায়ে কেরামের বরকতে হয়ে থাকে। এমনকি জলভাগে পানির অতলে বসবাসকারী মৎস্যকূলের জীবনও আলেমে দ্বীনের বদৌলতে আল্লাহ তাআলা জিইয়ে রাখেন। তাইতো মৎস্যকন্যা নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রাখতে তালেবে ইলমের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে।

অনুরূপভাবে হাদিসে আলেমকে সাধারণ ইবাদতগুজার বান্দার উপর প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। কেননা আলিমের ইলমের উপকারিতা সঞ্চরণশীল, প্রতিক্রিয়াশীল ও বিস্তৃতিপূর্ণ। অর্থাৎ ইলম কেবলমাত্র আলেমকে নয়, বরং অন্যদেরও উপকৃত করে থাকে। যেমন আলেমেদ্বীন ওয়াজ-নসিহত, অধ্যয়ন-অধ্যাপনা, রচনা লেখালিখি প্রভৃতি উপায়ে স্বীয় ইলম, লব্ধ জ্ঞান অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দেন। পক্ষান্তরে ইবাদতগুজার বান্দা ইবাদতের ফল কেবল নিজে ভোগ করে থাকেন। অন্যরা সেই ফলাফল থেকে মাহরুম থাকে।

বিষয়টাকে আমাদের সামনে আরো স্পষ্ট করে তোলার জন্য হাদিস শরিফে আলেমেদ্বীন ও সাধারণ ইবাদতকারী ব্যক্তির মাঝে পূর্ণিমার চাঁদ এবং সাধারণ তারকা দিয়ে তুলনা করা হয়েছে। আসমানের চৌদ্দ তারিখের পূর্ণিমার চাঁদ যেমন নিজ আলোকে নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সারা পৃথিবীকে আলোকিত করে তুলে, তদ্রুপ আলেমের ইলমও শুধুমাত্র নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে অজ্ঞ মূর্খ ব্যক্তিদেরও আলোকিত জ্ঞানী করে তুলে। চাঁদের আলোর সম্পূর্ণ বিপরীত হল তারকারাজির রশ্মি। তারকার আলো যেমন শুধু নিজের মধ্যেই সীমিত থেকে অন্যকে আলোকিত করতে পারেনা, তেমনিভাবে ইবাদতকারীর ইবাদতের ফলাফলও তার নিজের মাঝেই আবদ্ধ থেকে যায়; অন্যের নাগাল পর্যন্ত বিস্তরণ হতে পারে না। ১৬) ইলম ও আলিমের ফজিলত।

শরহুস সুন্নাহ গ্রন্থে প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস সুফিয়ান সাওরি (রহমতুল্লাহি আলাইহি) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন: “এখনবধি আমার কাছে ইলমে দ্বীনের চেয়ে অধিক মর্যাদাশীল কোন বিষয় আছে বলে মনে হয় না।” এ কথা শুনে উপস্থিত লোকেরা বলে উঠলো: “হযরত, বর্তমানে খুব বেশি পরিলক্ষিত হয়, শিক্ষার্থীরা ইলমে দ্বীন অন্বেষণে মগ্ন হয় কিন্তু তাদের নিয়তের বিশুদ্ধি, পরিশুদ্ধি এবং একনিষ্ঠতা যে পরিমাণ থাকার দরকার সে পরিমাণ থাকে না” উত্তরে সুফিয়ান সাওরি রহ. বলেছিলেন, “তারা ইলম অন্বেষণে নিমগ্ন হওয়াটাই এক সময় তাদের নিয়ত পরিশুদ্ধির উপলক্ষ হয়ে যাবে।” অর্থাৎ অর্জিত ইলমের বরকতে নিয়ত এর মাঝে শুদ্ধি ও একনিষ্ঠতা চলে আসবে। এ কারণেই কোন কোন বিজ্ঞ আলিমে দ্বীন বলতেন, “প্রথম প্রথম আমরা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ছাড়া বিভিন্ন দুনিয়াবি স্বার্থে ইলম হাসিল করতাম। কিন্তু পরবর্তীতে আমাদের অর্জিত ইলমের বরকতে অন্তর থেকে দুনিয়াবি মাকসাদ চলে গিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেটিই তদস্থলে স্থিত হয়েছে।”

ইমাম শাফেয়ি রহ. বলতেন, “ইলম তালাশে নিমগ্ন হওয়া নফল ইবাদতের চেয়ে শ্রেয়। কারণ, ইলম তালাশ করা হলো ফরজ। হয়তো ফরজে আইন না হয় ফরজে কেফায়া। আর এটাতো স্বীকৃত কথা, ফরজ তা আইন হোক বা কেফায়া হোক সর্বাবস্থায় নফল এর চেয়ে উৎকৃষ্ট।”

إن العلماء ورثة الأنبياء الخ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আলেমদেরকে নবিদের উত্তরসূরী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। আর নবিদের রেখে যাওয়া মিরাস (উত্তরাধিকার) পার্থিব অর্থ-বিত্ত নয় যে, এসব নশ্বর, ক্ষয়িষু ঠুনকো বস্তু অর্জনে নিজের শ্রম-চেষ্টা ব্যয় করবে। বরং নবিদের মিরাস হলো ইলম। যা মানুষের হেদায়েতের উদ্দেশ্যে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে প্রদান করা হয়েছে। এ কারণেই নবির সত্যিকারের ওয়ারিস বা উত্তরাধিকারী তাকেই বলা হবে, যে নবিজির রেখে যাওয়া শিক্ষা-দীক্ষার আলোকে নিজের জীবন সাজাবে এবং পরিপূর্ণরূপে তাঁর শিক্ষা অর্জনে প্রবৃত্ত হবে। যার মাঝে যত বেশি নববি জ্ঞানের সন্নিবেশ ঘটবে, সে ততো বেশি নবির উত্তরাধিকারে সমৃদ্ধ হবে।

ইলম ও দ্বীনী জ্ঞানে পান্ডিত্য সুমহান আল্লাহর বিরাট দান

3) عن معاوية قال قال رسول اللہ ﷺ من يرد الله به خيرا يفقهه في الدين وإنما أنا

قاسم والله يعطي. متفق عليه (ইলম ও আলিমের ফজিলত ১৭)

অর্থ: মুআবিয়াহ্ (রাজি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা যার কল্যাণ চান, তাকে দ্বীনের সঠিক জ্ঞান দান করেন। বস্তুত আমি শুধু বণ্টনকারী। আর আল্লাহ তাআলা দান করেন।

ব্যাখ্যা: ১। ও ael। এর উদ্দেশ্য হল, ধর্মীয় জ্ঞানে এমন পাণ্ডিত্য এবং ব্যুৎপত্তি অর্জন করা, যার মাধ্যমে কিতাব এবং সুন্নাহর সঠিক-বেঠিক, শুদ্ধাশুদ্ধ এবং সার অসার জ্ঞান নির্ণয়ের যোগ্যতা অর্জিত হয় এবং শরয়ি মৌলিক মাসায়েল ও বিধানাবলী সম্পর্কে বৈদগ্ধ্য লাভ হয়। আর এটি শুধুমাত্র যোগ্যতা উপার্জনের মাধ্যমে আসেনা। বরং এ বিষয়ে পারদর্শিতা তারই অর্জিত হয়, যার জন্য আল্লাহ তায়ালা শরয়ি গভীর জ্ঞানের রহস্যময় দ্বার উন্মুক্ত করে দেন। তাই ফিকহী দূরদর্শিতা লাভের জন্য সর্বদা আল্লাহর কাছে দোয়া করা উচিত। এখান থেকে এটাও স্পষ্ট হয়ে গেল, যে ব্যক্তি ধর্মীয় বিষয়ে জ্ঞান রাখে না, ইসলামের মৌলিক এবং শাখাগত বিষয়ে ওয়াকিবহাল নয়, সে প্ৰভূত কল্যাণ থেকে বঞ্চিত।

কোন কোন বর্ণনায় এমনও আছে, যে ব্যক্তি ll & all অর্জন করল না, আল্লাহ

তাআলা তার কোন পরোয়াই করেন না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উক্ত বাণীতে সমস্ত মানুষের উপর ওলামায়ে কেরামের শ্রেষ্ঠত্ব এবং সকল জ্ঞান-বিজ্ঞানের চেয়ে ইলমে ফিকহের পরিপূর্ণ

শ্রেষ্ঠত্ব ফুটে উঠেছে।

إنما أنا قاسم والله يعطي

এর মর্ম হলো, আমার (নবি সা.) কাজ শুধুমাত্র তোমাদের মাঝে দ্বীন এবং শরিয়তের বিধিবিধান ও মাসায়েল উপস্থাপন করে দেওয়া আর সেসকল মাসায়েলের উপর গভীর দৃষ্টি দেওয়া, গবেষণা চালানো এবং সেগুলোর উপর আমল করার পথকে সহজ করে দেওয়ার যোগ্যতা দানের বিষয়টি আল্লাহ তালার অধিকারে ন্যস্ত। তিনি যাকে যতটুকু চান ততটুকুই যোগ্যতা দান করেন। কারণ প্রকৃত দাতা তো তিনিই। তবে দানের ক্ষেত্রে আমাকে শুধুমাত্র মাধ্যম বানিয়েছেন। তাই আমি কেবল তোমাদের মাঝে বন্টন করে দেই।

৩. বুখারি ৭৩১২, মুসলিম ১০৩৭, মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং-২০০) ১৮) ইলম ও আলিমের ফজিলত।

চারিত্রিক গুণে তারাই অগ্রসর, যারা ধর্মীয় জ্ঞানে পরিপুষ্ট

4) عن أبي هريرة قال قال رسول اللہ ﷺ الناس معادن كمعادن الفضة والذهب خيارهم في الجاهلية خيارهم في الإسلام إذا فقهوا. متفق عليه

অর্থ: আবু হুরাইরা (রাজি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সোনা-রূপার খনির ন্যায় মানবজাতিও খনিবিশেষ। যারা জাহিলিয়্যাতের (অন্ধকারের) যুগে উত্তম ছিল, দ্বীনের জ্ঞান লাভ করার কারণে তারা ইসলামের যুগেও উত্তম।

ব্যাখ্যা: মানুষ হলো খনিজ সম্পদের ন্যায়। অর্থাৎ জমিনের তলদেশে লুকায়িত সম্পদ যেমন স্বীয় গুণাগুণ আর কার্যকারিতা বিবেচনায় বিভিন্ন গুণের আধার হয়ে থাকে; কোন খনিজে মণিমুক্তা, মূল্যবান ইয়াকুত থাকে, কোনটিতে স্বর্ণ-রূপা আবার কোনটিতে লোহা, ধাতব পদার্থ মিলে। তদ্রুপ চরিত্র, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, গুণাগুণ ও আচার আচরণে মানুষও খনিজ সম্পদের মত ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।

خيارهم في الجاهلية خيارهم في الإسلام

কথাটির তাৎপর্য হলো, যারা জাহেলি যুগে জ্ঞানে-গুণে, আদব-আখলাকে ও বুদ্ধিমত্তায় এবং নেতৃত্বে, বংশ কৌলিন্যে- উত্তম, মর্যাদাশীলরূপে সমাজে বিবেচিত হতো, (যেমন কেউ কেউ বীরত্ব-সাহসিকতায় অনন্য ছিলেন। কেউ উদারতা দানশীলতায় ছিলেন অতুলনীয়। আবার কেউ সহমর্মিতা, সহযোগিতা আর সহনশীলতায় অগ্রগামী। আবার কেউ সততা, সত্যবাদিতা আর আমানতদারিতায় ছিলেন নজিরবিহীন।) তারা যখন কুফুরির আঁধার ছিঁড়ে ঈমানের আলোর কাফেলায় শামিল হয়েছেন, তখন তারাই ইসলামি সমাজে জ্ঞানে-গুণে, নেতৃত্বে অন্যদের চেয়ে উচ্চ মর্যাদার আসন দখল করে নিয়েছিলেন। তবে শর্ত ছিল,।,15) অর্থাৎ জাহেলি যুগে উত্তম চরিত্রের অধিকারী হয়ে ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার পর শরিয়তের জ্ঞানে পন্ডিত হতে হবে। তবেই তারা ইসলামে উত্তম হবে। যেমনটি ছিলেন হযরত আবু বকর, উমর, ত্বলহা, উসমান রাজি, সহ অসংখ্য সাহাবি। জাহেলিয়্যাতের সময় তারা উত্তম চরিত্রের মডেল ছিলেন। ইসলাম আসার পর দ্বীনি জ্ঞানের গভীরতার ফলে তারাই হয়ে গেলেন ইসলামের শ্রেষ্ঠ মানুষ।

الناس معادن كمعادن الفضة والذهب

এর ব্যাখ্যা: যেমনিভাবে স্বর্ণ-রৌপ্য, মুক্তা-মনিহার, ইয়াকুত পাথরের ন্যায় অমূল্য খনিজ পদার্থ যতদিন মাটির গহ্বরে প্রচ্ছন্ন থাকে, সেখান থেকে আহরণ করে তার

৪. বুখারি- ৩৩৮৩, মুসলিম ২৬৩৮; হাদিসের শব্দ মুসলিমের, মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং- ২০১ ইলম ও আলিমের ফজিলত ১৯।

আরো পড়তে অথবা জানতে অনুগ্রহ করে "ইলম ও আলিমের ফজিলত" অরিজিনাল বইটি সংগ্রহ করুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ