ইলুমিনাতি এজেন্ডা : ডিন এবং জিল হ্যান্ডারসন - পাঠ প্রতিক্রিয়া! Iluminati Agenda Boi

  • বইয়ের নাম - ইলুমিনাতি এজেন্ডা 
  • মূল - ডিন এবং জিল হ্যান্ডারসন
  • রূপান্তর - প্লাবন কুমার
  • প্রকাশনায় - প্রজন্ম পাবলিকেশন 
  • বইয়ের ধরণ - নন ফিকশন
  • প্রচ্ছদ - ওয়াহিদ তুষার 
  • প্রকাশকাল - আগস্ট ২০২১
  • প্রচ্ছদ মূল্য - ২৫০৳

কল্পনা করুন তো, একটা রোবট; যার মাথা, হাত, পা, চোখ, কান, নাক, মুখ সবই আছে। তা সত্ত্বেও রোবটটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলতে পারে না। কেননা রোবটটির নিজস্ব কোনো ক্ষমতা নেই একা চলবার। সে তো একটা মেশিন যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজের ইচ্ছায় চলতে পারেনা। তার একজন নিয়ন্ত্রক থাকে, রোবটটি যে তৈরি করেছে শুধু সেই পারে রোবটটিকে চালনা করতে। তাই নয় কি?

ঠিক তেমই রোবটের জায়গায় আমরা যদি নিজেকে এবং আমাদের গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্রকে চিন্তা করি তাহলে বুঝতে পারবো আমরাও ঐ রোবটের মতো একটা মেশিনে বা যন্ত্রে পরিণত হয়ে গেছি। আমাদের চিন্তা শক্তি, সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক, সামাজিক তথা আমাদের গোটা জীবন ব্যবস্থা সবকিছুতেই এখন অন্যরা কর্তৃত্ব স্থাপন করে আছে কিন্তু আমরা তার রেশ মাত্র অনুভব করি না! আমাদের যে সুক্ষ্ম চিন্তা শক্তিকেও কে বা কারা শূন্যে পরিণত করছে আমরা তাও বুঝতে পারিনা!

'ইলুমিনাতি এজেন্ডা' এমন একটি বই যা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় কে বা কারা ভালো ও খারাপের মধ্যে একটা মহাকাব্যিক জটিল দেয়াল তুলে দেয়। সত্য যেখানে একতার বন্ধন ও সম্পূর্ণতার মধ্যে নিহিত, সেখানে আমাদের সমগ্র মানবতাকে বিভাজিত, বাধাগ্রস্ত ও বিভ্রান্ত করে তুলতে কে বা কারা গোপন প্রচেষ্টা চালায়।

লেখক ডিন হ্যান্ডারসন পুরো জীবনে প্রায় পঞ্চাশটি দেশ ঘুরে বেরিয়েছেন। ফলে তিনি লাভ করেছিলেন অগাধ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা। এছাড়াও রাজনীতিতে তার বিশাল দখলদারি থাকার ফলে তিনি বিশ্বের গোপন সংস্থাগুলোর উৎপত্তি, কাজের ধরণ, তারা কি চায়, তাদের লক্ষ্য কি সেসব সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন। আর লেখক জিল হ্যান্ডারসন শিল্পী, হারবাল চিকিৎসক এবং ফিচার কলামিস্ট হওয়াতেও সমাজ এবং বিশ্বের গোপন সংস্থাগুলোর কুটনৈতিক কার্যকলাপগুলো উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তাদের দুজনেরই সমগ্র অভিজ্ঞতার ফলস্বরূপ 'ইলুমিনাতি এজেন্ডা'।

বইটিতে সাবলীলভাবে আলোচনা করা হয়েছে ফ্রিম্যাসন, ইলুমিনাতি, নাইট ট্যাম্পেলারসহ বেশ কয়েকটি গুপ্ত সংগঠনের পরিচয় এ তাদের কার্যাবলি সম্পর্কে। আর বর্তমান সময়ে তাদের করা অপকর্ম, তাদের এজেন্ডা সমূহর বর্তমান এবং ভবিষ্যতের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, কোন কোন প্রতিষ্ঠান তাদের হয়ে কাজ করে এসব কিছুই লিপিবদ্ধ হয়েছে বইটিতে।

এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ের যুদ্ধ-বিগ্রহ, ফ্যাসিবাদ, পুঁজিবাদ, শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যাংক ব্যবস্থার ছদ্মবেশী মুখোশ, ভ্যাকসিন, মুসলিম খেলাফত ধ্বংস, ইন্টারনেট, পর্ণগ্রাফি, গোয়েন্দা নজরদারি, তথ্যসন্ত্রাস, সেকুলারিজম ও নাস্তিকতার আড়ালের সুদূর প্রসারি লক্ষ্য ও গোপন এজেন্ডা সমূহের কর্মকান্ড ও উদ্দেশ্য, ওয়ান ওয়ার্ল্ড অর্ডার, আমাদের কেঁড়ে নেওয়া মানবতা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সময়োপযোগী এবং যুক্তিতর্ক আলোচনা করা হয়েছে বইটিতে।

পাঠকদের সবসময়ই এরকম নন-ফিকশন বই উপহার দেওয়ার জন্য প্রজন্ম পাবলিকেশন প্রশংসার দাবিদার। বইটির বাইন্ডিং পেপারব্যাক হলেও এর প্রচ্ছদটি প্রথমেই একজন পাঠকের নজরে পড়ে। বইটির অনুবাদক প্লাবন কুমার খুব সুন্দর করে বইটি আমাদের কাছে সহজবোধ্য এবং সাবলীল করে পাঠ উপযোগী করেছেন।

বইটির অনুবাদ সুন্দর এবং সাবলীল হলেও শুরুতে আমার কাছে কিছুটা খাপছাড়া এবং জটিল মনে হয়েছে। অনুবাদক চাইলে শুরুতেই মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে ভূমিকা যুক্ত করতে পারতেন। এতে করে পাঠক নতুন বিষয়গুলো সহজেই বুঝতে পারতো। যেমন হঠাৎ করেই লুসিফেরিয়ান, ফ্রিম্যাসন, ইলুমিনাতি, নাইট ট্যাম্পেলার শব্দগুলোর উৎপত্তি এবং সেসব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনার সূচনা শুরুতে কিছু জটিল ঠেকেছে আমার কাছে। 

বইটি প্রচুর তথ্যবহুল এবং সময় তারিখ উল্লেখ করায় একটি বিষয়ের উপর একটি আলোচনা আলাদা আলাদা ভাবে উপস্থাপন করলে (একটি বিষয় আলাদা আলাদা ভাবে উপস্থাপন করার উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় বইয়ের পাতা থেকে যেমন- রথচাইল্ড নিয়ে আলোচনা করতে করতে হঠাৎ করেই ইলুমিনাতি নিয়ে আলোচনার শুরু, আবার বৃটিশ গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে আলোচনা করতে করতে ব্যাংক ব্যবস্থার আলোচনা শুরু, ক্রুসেডার নাইট ট্যাম্পলরা নিয়ে আলোচনা করতে করতে কেনানীয় ব্রাদারহুডের আলোচনা সূচনা। এসব বিষয়ের আলোচনা শেষ করে, অনুবাদক চাইলেই আলাদা আলাদা পাঠে বিভক্ত করে নতুন করে আলোচনা শুরু করতে পারতেন।) মনে হয় আমার মতো নবীন পাঠকদের বুঝতে এবং ভাবতে সুবিধা হতো।

তবে এটি বলে রাখা ভালো, আমি নবীন পাঠক হওয়াতে উক্ত বিষয়গুলো কেবল আমার কাছে জটিল ঠেকেছে। কিন্তু আমার মনে হয়, পাকাপোক্ত পাঠকদের কাছে উক্ত বিষয়গুলো ডালভাত মনে হবে তাতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই

একজন বুদ্ধিমান এবং সচেতন মানুষ হিসেবে আমাদের দায়িত্ব কি কেবল খাওয়া-দাওয়া আর নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করা?
নাকি আমাদের মুসলমান খেলাফতের গোপন শত্রু কে বা কারা তাদের স্বরূপ উন্মোচন করা, তাদের কর্মকান্ড সম্পর্কে জানা এবং তাদের কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো? 

যদি আপনার দায়িত্ব দ্বিতীয়টি হয়ে থাকে, তাহলে বইটি আপনার জন্য। 

একজন মানুষ হিসেবে আপনার যা জানা প্রয়োজন তা বইটিতে লেখক খুব সুন্দর করে উপস্থাপন করেছেন। যা একজন পাঠকে ভাবাবে, কড়া নাড়বে পাঠকের চিন্তার জগতে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ