যে জীবন বরকতময় : শায়খ মুহাম্মদ বিন সালিহ আল-মুনাজ্জিদ - সম্পূর্ণ রিভিউ | Je Jibon Borkotmoy

বইয়ের নাম: যে জীবন বরকতময়।
লেখক: শায়খ মুহাম্মদ বিন সালিহ আল-মুনাজ্জিদ।
অনুবাদক : মুফতী রাশেদুল ইসলাম।
প্রকাশন : মাকতাবাতুল ইবরাহীম।
Review Credit 💕 : শেখ ইসরাত


পার্থিব জীবন ক্ষণস্থায়ী। পরকালীন জীবনের তুলনায় এই জীবন বিশাল এক সমুদ্রের একফোঁটা পানির চেয়েও ক্ষুদ্র।
 এই ক্ষুদ্র ক্ষণিকের জীবনকে সফলতার পরশে ঢেলে সাজাতে এবং পরকালীন জীবনেও এ সাফল্যের রেশ ধরে রাখতে মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বরকতের গুরুত্ব অপরিসীম।
আর এই পার্থিব জীবনে বরকত না পেলে, আল্লাহর পথে না চললে পরকাল হবে ভয়ানক।
যেমনটি আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছন:
আর পরকালের আযাব অবশ্যই আরো বড়, যদি তারা জানত।
(সূরা কালাম: ৩৩)

ব্যাক্তিগত জীবন,সাংসারিক জীবন ও কর্ম জীবনের মধ্যে বরকত থাকা জরুরি। বরকত ছাড়া কোনো জীবন সুখের হতে পারে না। বরকতের মধ্যে সুখ শান্তি নিহিত। এই জন্যই প্রত্যেক মুমিন সালাম বিনিময়ের সময় ওয়া বারাকাতুহু বলে বরকত প্রার্থনা  করে। যাতে আমাদের জীবন বরকতয় হয়ে উঠতে পারে। তাই আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বরকতের অনুসন্ধান করা উচিত।
কিভাবে বরকত সন্ধান করবেন? কোন আমল অনুযায়ী বরকতের সন্ধান করবেন তার জন্য ' যে জীবন বরকতময় ' বইটি আপনাকে জানতে সাহায্য করবে কি কি উপায় অবলম্বন করলে আমাদের জীবন বরকতময় হয়ে উঠবে।

বইটি যেভাবে আছে:
★ বরকত- বরকত শব্দের অর্থ : প্রাচুর্য, কল্যাণকর, সমৃদ্ধি, আধিক্য।
বরকত ২ ভাবে হয়ঃ
১) পরিমাণগত দিক থেকে কোনো কিছু বেড়ে যাওয়া :  যেমন অর্থ, টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়ি ইত্যাদি।
২) বস্তুর যে উদ্দেশ্য তা ভালোভাবে পূ্র্ণ হওয়া।

★ব্যাক্তিজীবনে বরকত- এখানে আপনি কিভাবে ব্যাক্তিগত জীবনে বরকত পেতে পারেন তার ব্যাখা ও বিশ্লেষণ আছে।
★ পারিবারিক জীবনে বরকত লাভের উপায়: 
এখানে বিবাহের ব্যাপারে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে
কারণ রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন ' ঐ বিবাহ সবচেয়ে বরকতময় হয় যে বিবাহে ব্যয় বা খরচ কম হয় ' ( বাইহাকি)

★ অর্থনৈতিক জীবনে বরকত লাভের উপায়: এতে আপনি আপনার ব্যবসা-বাণিজ্যে কিভাবে বরকত লাভ করবেন সেই ব্যাপারে বলা হয়েছে।

★সামাজিক জীবনে বরকত লাভের উপায়:
এখানে, উত্তম জীবনসাথী নির্বাচন, প্রতিবেশিনীদের সাথে সুসম্পর্ক, সালামের প্রতি লক্ষ্য,মিথ্যা পরিহার,অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকার তাগিত দেওয়া হয়েছে।

★ ইলম অর্জনে বরকত লাভের উপায়:  এখানে একজন মুমিমের নৈতিক শিক্ষা ও তার জ্ঞান অর্জন এর ব্যাপারে বিস্তারিত বলা হয়েছে। অতিরিক্ত জ্ঞান যেনো মুমিনের অহংকারের কারণ না হয় তার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।

--- সব শেষে একটায় কথা কেউ যদি বরকত উপায়ের পথ খোঁজে সে যেনো এই বইটা পড়ে উপকৃত হয়।
আর যে বরকত খুঁজছে না সে যেনো বইটি পড়ে আর বরকত প্রাপ্তদের অর্ন্তভুক্ত হয়।
  • বইঃ যে জীবন বরকতময়
  • লেখকঃ শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল মুনাজ্জিদ
  • অনুবাদঃ মুফতী রাশেদুল ইসলাম
  • সম্পাদকঃ মুফতী কাজী মঈনুল হক
  • বানান সমন্বয়ঃ আলি আজগর
  • প্রকাশকঃ মুহাম্মদ ইবরাহীম খলীল
  • প্রকাশনাঃ মাকতাবাতু ইবরাহীম
  • প্রকাশকালঃ আগষ্ট ২০২০
  • প্রচ্ছদঃ আশরাফুল ইসলাম
  • নামলিপিঃ তারেক আব্দুল্লাহ
  • মূল্যঃ ১২৮ টাকা 
  • পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৯৪
  • পার্সোনাল রেটিংসঃ ৯/১০ 

ফ্ল্যাপঃ একজন মানুষের জন্য জীবনের প্রতিটি অঙ্গনে বরকত থাকা অতীব জরুরি। বরকতময় জীবন শান্তিময় হয়, সুখ-শান্তিতে ভরপুর থাকে। সে হায়াতে, সম্পদে সময়ে বরকত পায়। কোন কাজ করলে জীবনের সর্বক্ষেত্রে বরকত পাওয়া যাবে, সে পথের দিশা বাতলিয়ে দেওয়া হয়েছে পবিত্র কুরআন ও হাদীসে। ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার প্রতিটি মুহূর্ত যেন বরকতময় হয়, বরকতশূন্য না হয়, মানব জাতিকে সে বিষয়ে তালিম নেওয়া উচিত। মহান আল্লাহ তায়ালা ঘোষনা করেন- (তারা আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করে) যাতে আল্লাহ তাদের উৎকৃষ্টতর কাজের প্রতিদান দেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরও অধিক দেন। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অপরিমিত রুযী দান করেন। (সূরাতুন-নূর : ৩৮)

পক্ষান্তরে বরকতহীন জীবন অশান্তি ও দুঃখে-কষ্টে ভরা থাকে। হায়াতে, সময়ে ও সম্পদে বরকত পায় না। দেখা যায় আল্লাহর দেওয়া হায়াত কখন ফুরিয়ে যায় টেরই পায় না। মাসে লাখ লাখ টাকা উপার্জন করার পরও উপার্জন বরকতহীন থাকে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে, “যারা কাফের, তাদের কর্ম মরুভূমির মরীচিকার মতো, যাকে পিপাসার্ত ব্যক্তি পানি মনে করে। এমনকি সে যখন তার কাছে যায়, তখন কিছুই পায় না এবং পায় সেখানে আল্লাহকে, অতঃপর তার হিসাব চুকিয়ে দেন। আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।' (সূরাতুন-নূর : ৩৯)

প্রিয় পাঠক! যে কাজ করলে বরকতময় জীবনধারণ করা যায় ও জীবনের প্রতিটি অঙ্গনে বরকত পাওয়া যায়। সেই কাজটি গ্রহণ করতে হবে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কিভাবে বরকতময় হয়ে উঠবে সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে বইটিতে। আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে বরকতময় জীবনধারণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

পাঠ্যানুভুতিঃ খুব কম কিছু বইয়ের ক্ষেত্রেই শেষ পর্যন্ত ভালোলাগা বজায় থাকে। এই বইটিও যুক্ত হলো সেই ভালোলাগার লিস্টে। 
এখানে অনেক ভারী কথা কিংবা একেবারে অজানা কিছু নেই। সবই জানা বিষয়। তবে কিছুক্ষেত্রে জানা জিনিসও আবার নতুন করে জানতে হয়। ব্যক্তিজীবন থেকে সামাজজীবন চালনার দিকনির্দেশনা খুব সহজভাবে অল্পকথায় তুলে ধরা হয়েছে মাশাআল্লাহ। 

নেতিবাচক দিকঃ কিছু বইয়ের নেতিবাচক দিক থাকে না।

একজন মানুষের জন্য জীবনের প্রতিটি অঙ্গনে বরকত থাকা অতীব জরুরি। বরকতময় জীবন শান্তিময় হয়, সুখ-শান্তিতে ভরপুর থাকে। সে হায়াতে, সময়ে, সম্পদে বরকত পায়। কোন কাজ করলে জীবনের সর্বক্ষেত্রে বরকত পাওয়া যাবে, সে পথের দিশা বাতলিয়ে দেওয়া হয়েছে কুরআন ও হাদীসে। ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার প্রতিটি মুহূর্ত যেন বরকতময় হয়, বরকতশূন্য না হয়, মানব জাতিকে সে বিষয়ে তালিম নেওয়া উচিত। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কিভাবে বরকতময় হয়ে উঠবে সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে বইটিতে। মহান আল্লাহ তায়ালা ঘোষনা করেন- (তারা আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করে) যাতে আল্লাহ তাদের উৎকৃষ্টতর কাজের প্রতিদান দেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরও অধিক দেন। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অপরিমিত রুযী দান করেন।(সুরাতুন-নূর : ৩৮)

পক্ষান্তরে বরকতহীন জীবন অশান্তি ও দুঃখে-কষ্টে ভরা থাকে। জীবনের কোনো কাজে বরকত পায় না। অর্থাৎ হায়াতে, সময়ে ও সম্পদে বরকত পায় না। দেখা যায় আল্লাহর দেওয়া হায়াত কখন ফুরিয়ে যায় টেরই পায় না। মাসে লাখ লাখ টাকা উপার্জন করার পরও উপার্জন বরকতহীন থাকে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘যারা কাফের, তাদের কর্ম মরুভূমির মরীচিকার মতো, যাকে পিপাসার্ত ব্যক্তি পানি মনে করে। এমনকি সে যখন তার কাছে যায়, তখন কিছুই পায় না এবং পায় সেখানে আল্লাহকে, অতঃপর তার হিসাব চুকিয়ে দেন। আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।’ (সুরাতুন-নূর : ৩৯)প্রিয় পাঠক! যে কাজ সমূহ করলে বরকতময় জীবনধারণ করা যায় ও জীবনের প্রতিটি অঙ্গনে বরকত পাওয়া যায়। সে সকল কাজের বিরবণ নিয়ে সাজানো হয়েছে বইটি।


বরকত

বরকত শব্দের সাথে কমবেশি আমরা সকলেই পরিচিত। মুসলিম সমাজে এই শব্দের ব্যাপক চর্চা হয়ে থাকে। বিশেষত রমজান মাসে বেশি বেশি চর্চা হয়। বলা হয় ‘বরকতময় রমজান'।

‘বরকত' শব্দের অর্থ, প্রাচুর্য, কল্যাণকর, সমৃদ্ধি, আধিক্য। বরকত দুইভাবে হয় ✓ পরিমাণগত দিক থেকে কোনো কিছু বেড়ে যাওয়া।

√ বস্তুর যে উদ্দেশ্য তা ভালোভাবে পূর্ণ হওয়া।

কোন ব্যক্তির অর্থ-কড়ি বৃদ্ধি পেল, যদি তা হালাল পন্থায় হয় তাহলে সেটা বরকত। এটা দৃষ্টিগ্রাহ্য সমৃদ্ধি। দেখা যায়, গণনা করা যায়। অপরজনের অর্থ সংখ্যায় বা পরিমাণে বৃদ্ধি পেল না তবে অর্থের যে উদ্দেশ্য তা পুরা হয়ে গেল। অল্প অর্থে যাবতীয় প্রয়োজন পূরণ হল। বিপদ-আপদের শিকার হল না। বড় বড় চিকিৎসায় অর্থ ব্যয় হল না। মামলা-মুকাদ্দমায় অর্থ খরচ হল না। যতটুকু হালাল উপার্জন তা দিয়েই জীবন সুন্দরভাবে কেটে গেল। এটাও সমৃদ্ধি বা বরকত। তবে তা আগেরটির মতো প্রত্যক্ষ নয়। এটা উপলব্ধির বিষয়। ঈমানদার যখন চিন্তা করেন তখন এ বরকতের উপস্থিতি বুঝতে পারেন।

প্রকাশ্য বরকতের একটি উজ্জল দৃষ্টান্ত আমরা নিম্নোক্ত হাদিসগুলোতে দেখি, বিখ্যাত সাহাবী জাবির ইবনু আবদুল্লাহ রদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলাম, তখন আসরের ওয়াক্ত । অথচ আমাদের সাথে বেঁচে যাওয়া অল্প পানি ছাড়া কিছুই ছিল না। তখন সেটুকু একটি পাত্রে রেখে পাত্রটি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে পেশ করা হল। তিনি পাত্রটির মধ্যে নিজের হাত প্রবেশ করালেন এবং আঙ্গুলগুলো ছড়িয়ে দিলেন। এরপর বললেন

حي على أهل الوضوء البركة من الله

এসো, যাদের অজুর দরকার আছে। বরকত তো আসে আল্লাহর নিকট হতে। জাবির রদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তখন আমি দেখলাম রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আঙ্গুলগুলোর ফাঁকা থেকে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। লোকজন অজু করল এবং পানি পান করল। আমিও আমার পেটে যতটুকু সম্ভব ছিল ততটুকু পান করতে দ্বিধা বোধ করলাম না। কেননা, আমি জানতাম এটি বরকতের পানি। বর্ণনাকারী বলেন, আমি জাবির রদিয়াল্লাহু আনহুকে বললাম, সেদিন আপনারা কতজন ছিলেন? তিনি বললেন, এক হাজার চারশ জন (১

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ রদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন পরিখা খনন করা হচ্ছিল তখন আমি নবী সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভীষণ ক্ষুধার্ত অবস্থায় দেখতে পেলাম। তখন আমি আমার স্ত্রীর কাছে ফিরে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার কাছে কোন কিছু আছে কি? আমি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দারুণ ক্ষুধার্ত দেখেছি। তিনি একটি চামড়ার পাত্র এনে তা থেকে এক সা পরিমাণ যব বের করে দিলেন। আমার বাড়ীতে একটা বকরীর বাচ্চা ছিল। আমি সেটি যবেহ করলাম। আর সে (আমার স্ত্রী) যব পিষে দিল। আমি আমার কাজ শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে সেও তার কাজ শেষ করল এবং গোশত কেটে কেটে ডেকচিতে ভরলাম। এরপর আমি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ফিরে চললাম। তখন সে (স্ত্রী) বলল, আমাকে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদের নিকট লজ্জিত করবেন না।

এরপর আমি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গিয়ে চুপে চুপে বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমরা আমাদের একটি বকরীর বাচ্চা যবেহ করেছি এবং আমাদের ঘরে এক সা যব ছিল। তা আমার স্ত্রী পিষে দিয়েছে। আপনি আরো কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে আসুন। তখন নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উচ্চৈঃস্বরে সবাইকে বললেন

يا أهل الخندق إن جايزا قد صنع شورا

হে পরিখা খননকারীরা! জাবির খানার ব্যবস্থা করেছে। এসো, তোমরা সকলেই চল। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার আসার পূর্বে তোমাদের ডেকচি নামাবে না এবং খামির থেকে রুটিও তৈরি করবে না। আমি
[১] সহিহ বুখারী: ৫৬৩৯

(বাড়ীতে) আসলাম এবং রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামসহ তাশরিফ আনলেন। এরপর আমি আমার স্ত্রীর নিকট আসলে সে বলল, আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুন। আমি বললাম, তুমি যা বলেছ আমি তাই করেছি।

সে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে আটার খামির বের করেদিলে তিনি তাতে মুখের লালা মিশিয়ে দিলেন এবং বরকতের জন্য দুআ করলেন। এরপর তিনি ডেকচির কাছে এগিয়ে গেলেন এবং তাতে মুখের লালা মিশিয়ে এর জন্য বরকতের দুআ করলেন। তারপর বললেন, রুটি প্রস্তুত কারিণীকে ডাক। সে আমার কাছে বসে রুটি প্রস্তুত করুক এবং ডেকচি থেকে পেয়ালা ভরে গোশত বেড়ে দিক। তবে (উনুন হতে) ডেকচি নামাবে না। তাঁরা ছিলেন সংখ্যায় এক হাজার। আমি আল্লাহর কসম করে বলছি,

لقد أكلوا حتى تركوه وانحرفوا ، وإن برمتنا لتغط كما هي، وإن عجيننا ليخبز كما هو.

তাঁরা সকলেই তৃপ্তি সহকারে খেয়ে বাকী খাদ্য রেখে চলে গেলেন। অথচ আমাদের ডেকচি আগের মতই টগবগ করছিল আর আমাদের আটার খামির থেকেও আগের মতই রুটি তৈরি হচ্ছিল।[২]

বরকত একমাত্র মহান আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আসে। বান্দার কর্মের কারণে বরকত আল্লাহ তাআলা দিয়ে থাকেন। উত্তম কর্ম করলে আল্লাহ বান্দার টাকা পয়সা,সম্পদ,রিযিক, ইলম, আমলসহ বিভিন্ন বিষয়ে বরকত দান করেন।

বরকতের মালিক একমাত্র তিনিই। মহা পবিত্র আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে تبارك الذي بيده الملك وهو على كل شيء قدير (1)

“বরকতময় তিনি যার হাতে সর্বময় কর্তৃত্ব। আর তিনি সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান ।”[৩]

বরকত মানব জীবনকে করে আরো সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ। যেকোনো ক্ষেত্রে মানুষ যখনই অভাব অনুভব করে তখনই তার জীবনে নেমে আসে অশান্তির ছায়া। তার জীবন ধীরে ধীরে অবনতিতে যেতে শুরু করে। আর যখন মানুষের এই অভাব দূর করা যাবে তখন মানব জীবনে শান্তি লাভ করা সম্ভব হবে। মানুষ স্বভাবতই অধিক চাহিদা সম্পন্ন। কখনোই তার চাওয়ার শেষ নেই। যখন তার

[২] সহিহ বুখারী : ৪১০২; সহিহ মুসলিম : ২০৩৯ [৩] সূরা মুলক : ০১

চাহিদায় পরিতৃপ্ত হতে পারবে তখন তার জীবনে নেমে আসবে শান্তির ছায়া। শুধুমাত্র বরকতের মাধ্যমেই মানুষের চাহিদার পরিতৃপ্তি মিটতে পারে। বরকত আল্লাহ তাআলার এক অন্যতম নেয়ামত। যদি আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের না দিতেন তাহলে কোনোভাবেই মানুষের জীবনে সমৃদ্ধি ঘটতো না। তিনি নিজের প্রশংসা বর্ণনা পূর্বক এই সংবাদ দিয়েছেন যে, গোটা সৃষ্টি জগতের কর্তৃত্ব তাঁরই করায়ত্তে। তিনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। তাঁর প্রতাপ, প্রজ্ঞা ও ন্যায় পরায়ণতার কারণে তিনি যা করতে চান সেটা প্রতিরোধ এবং তাঁহাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার ক্ষমতা কারো নেই। তিনি সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান। অতএব, আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের নির্দেশিত পন্থা অবলম্বন করে সর্বময় ক্ষমতার উৎস মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীনের কাছেই বেশি বেশি বরকত কামনা করতে হবে। তবেই আমাদের জীবনে বরকত বা সমৃদ্ধি দেখা দেবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ