- বই : জীবন পথে সফল হতে
- লেখক : শাইখ আব্দুল করীম বাক্কার
- প্রকাশনী : সমকালীন প্রকাশন
- বিষয় : আত্মশুদ্ধি ও অনুপ্রেরণা
- অনুবাদ : আব্দুল্লাহ মজুমদার
- পৃষ্ঠা : ১৬০
Last Update: 29 - 6 - 2022
যোগ্যতার ষোলকলা
কেউ কেউ প্রশ্ন করে আমাদের প্রত্যেকের পক্ষেই কি একই সাথে যোগ্যতা আর সফলতা অর্জন করা সম্ভব, সব কাজে এগিয়ে থাকা সম্ভব? নাকি তা শুধু যারা বুদ্ধিমান বা ভালো ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়েছে, কিংবা যাদের অর্থ-কড়ি আছে, কেবল তাদের দ্বারাই সম্ভব?
এর জবাবে বলতে হয়, আমরা সবাই-ই আল্লাহর বান্দা। আমাদের সব দায়িত্ব তাঁরই হাতে ন্যস্ত। আমাদের প্রতিটি কাজ পরিচালিত হয় তাঁর ইচ্ছায়। অবশ্য এসব কাজে আমাদেরকে বিভিন্ন মাধ্যম গ্রহণ করতে হয়। এ দুনিয়া মাধ্যম গ্রহণ ও ফলাফল লাভের জায়গা। চারপাশে সফল ও ব্যর্থদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করলে তাদের সফলতা বা ব্যর্থতার কারণ বোঝা সম্ভব। আল্লাহ তাআলা কর্মঠদের কাজ ও ধৈর্যশীলদের প্রচেষ্টাকে বিফলে যেতে দেন না। আমাদেরকে এ মূলনীতির ওপর ভিত্তি করেই জীবনে অগ্রসর হতে হবে।
ধরা যাক, আমরা প্রত্যেকেই সাদা রঙের বিশাল একটি বোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। নানা রঙের কৌটো দিয়ে আমাদেরকে নিজের মনমতো একটি ছবি আঁকতে বলা হয়েছে। এ রঙগুলোর কোনোটা আমাদের চিন্তা, পছন্দ অথবা জ্ঞানের প্রতিফলন। কোনোটা আবার চরিত্র, দক্ষতা, লক্ষ্য কিংবা স্বপ্নের প্রতিফলন। এ রঙগুলোর সমন্বয়ে যে ছবিটি আঁকা হবে, তা যেন চোখ জুড়ানো হয়, হৃদয়কাড়া হয়। কারণ, এ ছবিটিই আমাদের জীবনের প্রতিচ্ছবি, জীবনের অর্জন।
এজন্য ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে আমাদেরকে কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। প্রথমেই আমাদেরকে নিজস্ব যোগ্যতার অর্থ অনুধাবন করতে হবে। আমরা মনে করি, যে কারণে অন্যের ওপর প্রাধান্য পাচ্ছি, সেটিই বোধহয় আমাদের যোগ্যতা। অথচ যোগ্যতা হলো, আপন সত্তাকে যথাযথভাবে গড়ে তোলার ফলাফল। অর্থাৎ যোগ্যতার কারণে আমরা নিজের ওপর বিজয়ী হই, এটি অন্যের ওপর জয়লাভের হাতিয়ার নয়।
অনেক বেশি উপার্জন কিংবা সুউচ্চ মর্যাদার দ্বারা যেন আমরা সফলতাকে সংজ্ঞায়িত না করি; বরং আমরা যেন অন্তরের গহীন থেকে অনুভব করতে পারি যে, আমরা একটি মহান কাজে হাত দিয়েছি। আর তা করতে গিয়ে আমাদের ভেতর যেন ক্রমশ সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার অনুভূতি কাজ করে।
আমরা জীবনে যে লক্ষ্যে পৌঁছতে চাই, তা আমাদের মনের ভেতর জ্বলজ্বল করে। এ কারণে-ই দৃঢ়তা আর সৌভাগ্যের আশা নিয়ে আমরা এগিয়ে চলতে পারি। জীবনের লক্ষ্য জানার পর সে লক্ষ্যে পৌঁছার সবচেয়ে সহজ, দ্রুত ও সর্বোত্তম পথটি খুঁজে বের করা জরুরী। এজন্য নিজের চিন্তা-ভাবনাকে গুছিয়ে নেওয়া প্রয়োজন, মৌলিক বিষয়ে নিজের মনোযোগ আবদ্ধ করা প্রয়োজন। পকেটে সবসময় একটি নোটবুক রাখলে এ কাজটি সহজ হয়ে যায়। এর ফলে, যখনই আমরা ভালো কিছু জানতে পারব, নিজেদের মাঝে মহান কোনো চিন্তার উদ্রেক হবে, তখনই তা নোটবুকে টুকে রাখতে পারব।
শুধু তাই নয়, আত্ম-অনুধাবনের জন্য ছয়টি ক-বাচক শব্দের সাথে নিজেকে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। সেগুলো হলো—কী, কেন, কখন, কীভাবে, কে, আর কোথায়। এ শব্দগুলোর মাধ্যমে নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে, নিজেকেই এর যথাযথ উত্তর বের করতে হবে। এছাড়াও যে কোনো কাজে আমাদেরকে বিজ্ঞ ও দক্ষ লোকদের পরামর্শ নিতে হবে। বিজ্ঞজনের এমন অনেক পরামর্শ আছে, যা কোনো কোনো যুবকের কয়েক বছরের অযথা শ্রম ও কষ্টকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।
জীবনের চলতি পথে আমাদের মাঝে যেন স্থবিরতা চলে না আসে। এজন্য আমাদেরকে নতুন নতুন দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এ সময়টা উপভোগ করতে আমরা নিজেরাই নিজেদের উৎসাহ দিতে পারি, নিজেদেরকে পুরস্কৃত করতে পারি। তবে অবশ্যই তা বৈধ সীমারেখার ভেতরে হতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, যোগ্যতা আর কৃতিত্ব অর্জনের এ চেষ্টায় সবসময় মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা দরকার, ভারসাম্য রক্ষা করে চলা উচিত। আর এ দুটোই সফল জীবনের মূলভিত্তি। এছাড়াও প্রত্যেক হকদারকে তার হক বুঝিয়ে দেওয়া উচিত।
সফল হওয়ার জন্য কাজের প্রতি গুরুত্ব প্রদান, ধৈর্যধারণ, অধ্যবসায়কে নিজের মাঝে ধারণ করার কোনো বিকল্প নেই। তাই সুখ-দুঃখে এগুলোকে নিজের পাথেয় বানিয়ে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, আল্লাহর তাওফিক ও সাহায্যই সফলতার চাবিকাঠি। আর একনিষ্ঠ না হলে, সৎপথে অবিচল না থাকলে, তা কখনোই লাভ করা সম্ভব নয়। Jibon Pothe Shofol Hote Original Copy Collect Link
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....