লাভ ইন হিজাব PDF : শেলিনা জাহরা জান মোহাম্মদ | Love In Hijab PDF : Shelina Zahra Jan Mohammad

  • বই : লাভ ইন হিজাব পিডিএফ
  • লেখক : শেলিনা জাহরা জান মোহাম্মদ
  • প্রকাশনী : নবপ্রকাশ
  • বিষয় : ইসলামী সাহিত্য, ইসলামে নারী
  • অনুবাদ: নাজমুস সাকিব
  • পৃষ্ঠা ২৪০
পাশ্চাত্য সমাজে হৈ চৈ ফেলে দেয়া ইন্টারন্যাশনাল বেস্টসেলার বই লাভ ইন আ হেডস্কার্ফ-এর লেখক শেলিনা জাহরা জান মোহাম্মদ। তিনি নিজেই তাঁর জীবনের সংগ্রাম-মধুর আত্মবয়ান বর্ণনা করেছেন বইয়ের কালো অক্ষরে। পাশ্চাত্যকে তিনি পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন উপমহাদেশীয় মুসলিম সমাজের কালোত্তীর্ণ সংস্কৃতির সঙ্গে।

ঈমানের চেতনায় উদ্দীপ্ত অক্সফোর্ডের মত সেরা বিদ্যাপীঠ থেকে পড়াশোনা করা এক মুসলিম তরুণী নিজের জীবনসঙ্গী খুঁজতে গিয়ে কীভাবে লড়াই করে অধর্ম আর সামাজিক প্রচলনের বিরুদ্ধে তার এক প্রামাণ্য দলিল "লাভ ইন হিজাব।"

ভারতীয় বংশোদ্ভুত এক মুসলিম তরুণী। তার বিয়ে হবে। বিয়ের আগে আর দশজন মুসলিম তরুণীর মতো তার মনেও আচমকা ডানা মেলতে শুরু করে হাজারও স্বপ্ন। স্বপ্ন বুনে নিজের আরাধ্য হবু স্বামীকে নিয়ে- কেমন সে স্বপ্নের পুরুষটি? ছোট একটি ঘর আর এক টুকরো সংসারের স্বপ্ন দেখে মেয়েটি।পাশ্চাত্যের ঝলমলে ইউরোপীয় শহর লন্ডনে বেড়ে ওঠা মেয়েটি সেখানে আবিষ্কার করে আরেক পৃথিবী। নানা জাতি আর বর্ণের মানুষের সংস্পর্শে এসে আত্মপরিচয়ের সংকট তৈরি হয় তার অন্দরমননে। 

ভালোবাসার মানুষ খুঁজতে খুঁজতে শুরু হয় তার মুসলিম আত্মপরিচয় উদ্ধারের এক অব্যক্ত সংগ্রাম। হিজাবের মোলায়েম অন্তরাল থেকে সে সংগ্রাম তাকে তুলে আনে অনন্য উচ্চতায়।পাশ্চাত্য সমাজে হৈ চৈ ফেলে দেয়া ইন্টারন্যাশনাল বেস্টসেলার বই লাভ ইন আ হেডস্কার্ফ-এর লেখক শেলিনা জাহরা জান মোহাম্মদ। তিনি নিজেই তাঁর জীবনের সংগ্রাম-মধুর আত্মবয়ান বর্ণনা করেছেন বইয়ের কালো অক্ষরে। পাশ্চাত্যকে তিনি পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন উপমহাদেশীয় মুসলিম সমাজের কালোত্তীর্ণ সংস্কৃতির সঙ্গে।

আমার অভিধানে ভালোবাসার মানে পার্থিব এক আনন্দ, যা অবাধ্য কিন্তু সুউচ্চ। ভালোবাসা জীবনের সকল কাজের, আমাদের অদ্ভুত ইচ্ছেগুলোর এবং অমীমাংসিত পরিণতিগুলোর প্রেরণা। ভালোবাসা জীবনকে কম্পাসের কাঁটার মতো দিকনির্দেশ করে। হৃদয়কে সুখী করে অথবা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। ভালোবাসা জীবন ও মৃত্যুর মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে। মানুষের দেহ ও প্রাণকে এক সত্ত্বায় বেঁধে রাখে এবং অভিন্ন আলোয় আলোকিত করে। ভালোবাসা মানুষের জীবনের এক পরম আরাধ্যের নাম।

পৃথিবীর সব সভ্যতার কাছে ভালোবাসা উপভোগ্য ও গ্রহণযোগ্য একটি বিষয়। এ নিয়ে কারও দ্বিমত নেই। কিন্তু এ বিষয়ে দ্বিমত আছে যে-কাকে ভালোবাসা হবে বা ভালোবাসার পাত্র কে হবে! যে ভালোবাসতে চায়, কখনো সমাজ ও সভ্যতা তার পথে বাধা সৃষ্টি করে। কীভাবে ভালোবাসা উচিত, তা নিয়ে মতভেদ করে। কিন্তু সবকিছুর পরও ভালোবাসা মহান, স্বমহিমায় ভাস্বর এবং মানুষের মন ও সংস্কৃতির অতলে লুক্কায়িত।

ভালোবাসা সেই অনুভূতি, যা দুঃখ দিয়ে সাজায় আমাদের বইগুলো। যার জন্য প্রাচীনকাল থেকে নানা ভাষায় রচিত হয়েছে অসংখ্য কবিতা। ভালোবাসা সেই স্বর্গীয় সুখ, যা মানুষ নিজের চোখে না দেখে, নিজ হাতে স্পর্শ না করে বিশ্বাস করতে চায় না।

ভালোবাসা এমন বিষয়, যেখানে তুরুপের তাসই একমাত্র বাস্তবতার পথ দেখাতে পারে। যেখানে এসে সব যুক্তি-হিসাব অকেজো হয়ে যায়। ভালোবাসা যেন উপহাস করে সকল বন্ধনের সঙ্গে, মানুষের চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে তাদের সামনে নেচে বেড়ায়, তাদের সঙ্গে মজা করে আর এক অজানা ভালো লাগার কথা জানান দেয়।

আমাদের এই যুগে ভালোবাসা তার প্রকৃত মূল্য হারিয়েছে। রোমান্সের পেছনে ছুটে চলা আর সাময়িক মুগ্ধতা ভালোবাসাকে দুর্বল করে দিয়েছে। আমরা এখন চাই যে ভালোবাসা যেন আমাদের সব সময় মোহবিষ্ট করে রাখে। যখন মস্তিষ্কে এড্রোনালিনের ক্ষরণ কমে যায় এবং ভালোবাসার অনুভূতি স্থির হয়ে আসে, তখন আমরা আশাহত হই। নিজেকে প্রতারণার শিকার ভাবি। ভালোবাসা আমাদের কাছে চাঁদের আলোয় হাঁটা বা মোমের আলোয় একসঙ্গে খাবার গ্রহণ করার মধ্যে সীমাবদ্ধ। প্রকাশ্যে আমরা যখন ভালোবাসার কথা বলি, তখন আমরা আসলে এর মূল্য কমিয়ে ফেলি।

আমার আশা, ভালোবাসা বিরাট ও অনেক বিস্তৃত রূপে ফিরে আসুক। এর প্রভাব আরও সুদূরপ্রসারী হোক। আমরা জানি, ভালোবাসা আমাদেরকে বন্ধু, শুভাকাঙ্ক্ষী ও প্রিয়জনদের সঙ্গে এক বন্ধনে আবদ্ধ করে। এর জন্য দরকার ধৈর্য, নিষ্ঠা ও ত্যাগ স্বীকার। আমার মতো কেউ কেউ হয়তো আরও অনুভব করে যে ভালোবাসা মহান স্রষ্টার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে দেয়, যে মহান স্রষ্টা কোনো স্থান বা কালের মুখাপেক্ষী নন। তিনি আপন মহিমায় বিরাজমান।

মুসলিম সমাজে প্রকাশ্যে ভালোবাসার কথা বলা তেমন কোনো বিষয় নয়। তবে অন্যান্য সমাজের মতো মুসলিম পুরুষ ও নারীরাও জীবনের একটা বিরাট অংশ ব্যয় করেন ভালোবাসার সন্ধানে। তাদের কাছে মনের মতো জীবনসঙ্গী খুঁজে বের করা খুব স্পর্শকাতর একটি বিষয়। এমনকি পরিবারের বাবা-মা, ভাই-বোন, মামা-চাচা, খালা-ফুফু এবং মসজিদের ইমামসহ প্রতিবেশীরা এতে যুক্ত হন।

শুভ্র হিজাবে আবৃত থাকা মুসলিম কনের হৃদয় তখন কাঁপতে থাকে। তার চোখে থাকে ভালোবাসার রঙিন স্বপ্ন। সে ভাবে রূপকথার ঘোড়সওয়ার ও সুন্দর সমাপ্তির কথা। সন্ত্রাস ও ধ্বংসলীলার দোষ সব সময় মুসলমানদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। অথচ পৃথিবীর মানুষ জানে না, তারাও মানুষ। তাদেরও আছে হৃদয় এবং ভালোবাসার শক্তি।

মুসলিম মেয়েদের কাছে বলার মতো অনেক গল্প আছে। সেসবের কিছু বেশ ভয়ংকর। ধর্মের নামে মেয়েরা যে কষ্ট, অবহেলা ও দুর্ব্যবহারের শিকার হয়, সেগুলো সম্পর্কে চুপ থাকা যায় না। বাস্তবে এগুলো সমাজের কিছু প্রথা। এগুলো বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। ধর্মীয় বোন হিসেবে যখন আমি তাদের কথা ভাবি, তখন আমার দুঃখ কয়েক গুণ বেড়ে যায়। অন্যদিকে যখন আমার ধর্মকে এভাবে বিকৃত ও ঘৃণিত হতে দেখি, তখন আমি ব্যথিত হই

আমার গল্পটি অন্যান্য না-বলা গল্পের মতো আড়ালে থেকে যাওয়া গল্প। কারণ প্রচলিত ইসলামি ধ্যান-ধারণার সঙ্গে তা খাপ খায় না। কিন্তু একজন মুসলিম নারীর সম্পর্কে জানার জন্য তা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সবাই জোরপূর্বক বিয়ে বা অপহরণের শিকার হয় না। আমরা তো কালো বোরকার নিচে অনুভূতিহীন কোনো প্রাণী নই। আমার মতো অনেক মুসলিম মেয়েই ইসলামকে ইতিবাচক এবং উন্নতি ও স্বাধীনতার ধর্ম হিসেবে দেখে। আমরা আমাদের জীবনের সর্বস্ব ভালোবাসি। আমার এই কথা সব মুসলিম নারীকে উদ্দেশ করে—আমাদের জীবনে যেন আশা, আনন্দ ও মানবিকতা ফিরে আসে এই কামনায়।

পৃথিবীতে নানা বর্ণের, নানা গড়নের এবং নানা ধরনের মুসলিম নারী আছেন। আমার গল্প শুধু একজন নারীর অভিজ্ঞতা মাত্র। তবে বহু নারীর অনুভূতির প্রতিফলন রয়েছে আমার গল্পে। শুধু নারীই নয়, পুরুষ-নারী নির্বিশেষে সবার আশা-আকাঙ্ক্ষা মিশে আছে এতে। অন্যান্য ধর্ম ও মতের অনুসারীদের অনুভূতির গল্পও একই রকম।

ভালোবাসার মানুষকে খোঁজার যাত্রা একই সঙ্গে অনেক কিছু খুঁজে পাওয়ার যাত্রা। এই যাত্রায় একজন সঙ্গী, বন্ধু ও আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায়। এমন এক ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়ার যাত্রা- যে স্নেহ করে, দেখাশোনা করে এবং এসব কিছু উপভোগ করে। এই যাত্রা জ্ঞান ও জীবনের অর্থ খুঁজে পাওয়ার যাত্রা। নিজের অমরত্বকে খুঁজে পাওয়ার যাত্রা।

ভালোবাসা বস্তুগত সত্ত্বা থেকে আত্মিক সত্ত্বায় বা মানসিক সত্ত্বা থেকে দৈহিক সত্ত্বায় স্থানান্তরিত হতে পারে। ভালোবাসার সন্ধান মানুষের সামনে উন্মোচিত করে দেয় মানবতা ও সহমর্মিতার অর্থ। আমি আমার বইয়ে সে কাহিনিই লিপিবদ্ধ করেছি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ