মাছিম্যান : আসিফ মেহদী - কেন পড়বেন? | Machiman : Asif Mehdi Books

  • বইয়ের নাম : মাছিম্যান বুক রিভিউ / বই রিভিউ
  • লেখকের নাম : আসিফ মেহদী
  • প্রকাশন : প্রথমা
  • প্রথম প্রকাশ : অক্টোবর, ২০২১
  • প্রচ্ছদ : মাহবুব রহমান
  • মুদ্রিত মূল্য : ১৮০৳
  • পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৯৬

মাছিম্যান : আসিফ মেহদী


"মাছিম্যান: সামাজিক সমস্যাগুলোর কল্প-বৈজ্ঞানিক উপাখ্যান"

রম্য লেখক, ন্যানো কবি আসিফ মেহদী। তবে আসিফ মেহদী সায়েন্স ফিকশন লেখক হিসেবে পরিচিতিতাই আমার কাছে মুখ্য। বিজ্ঞান নির্ভর আগামীর বিশ্বকে তিনি খুব সুন্দর ও সাবলীলভাবে উপস্থাপন করতে পারেন। বরাবরই লেখকের বিজ্ঞানধর্মী লেখাগুলো আমার বেশি ভালো লাগে। বর্তমানে ঘটছে কিন্তু ভবিষ্যতে ঘটবে বা ঘটতে পারে, এই চিন্তা শুধুমাত্র সায়েন্স ফিকশন লেখাতেই সম্ভব। বিজ্ঞানের ছাত্র আমারও এ সকল চিন্তা করতে বেশ ভালোই লাগে। সেই অর্থে 'মাছিম্যান'-এর গল্পগুলো আমায় নিয়েছে ভবিষ্যতের এক কল্পনার রাজ্যে। ক'দিন ধরে মাথা ভিতরে শুধু এলিয়েনই যেন ঘুরছিলো, নিজের অজান্তে চলে গিয়েছিলাম এলিয়েনদের গ্রহে। লেখকের বাছাকৃত ১৪টি বিজ্ঞানধর্মী কল্প-গল্পের সংকলন এ 'মাছিম্যান'। আপনাদেরকেও ঘুরিয়ে নিয়ে আসি, চলুন…………

পোড়ো কারখানা : পোড়া একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, এক ধ্বংসস্তুপ। এ গার্মেন্টসের মালিক ফেরার। হঠাৎ করে সন্ধান মেলে মালিকে। পুলিশের একটা চৌকস ধরতে আসে তাকে। এসে তারা রীতিমত অবাক। এসব কি? মানুষের পোশাক রেখে এলিয়েনদের পোশাক, তাও কি সম্ভব! চৌকস অফিসারদের পক্ষে এই ফেরারিকে আদৌ ধরাটা সম্ভবপর হয়েছিল কি?

ফিরে এসো মানুষ : ইলেকট্রনিক কোনো ধরনের ডিভাইস ছাড়া একটি দিন কি কল্পনা করা সম্ভব আমাদের পক্ষে? জানি হয়তো সম্ভব না। যদি তেমনটা হতো তবে কেমন হতো?

ইলেকট্রনিক বার্তা : ভিন গ্রহ থেকে একটা মেইল আছে পৃথিবীতে বসে বিজ্ঞান ভাবনায় বুদ হয়ে থাকা ঐ মানুষটির কাছে। পায় নিমন্ত্রণ। ঐ ভিন্ন গ্রহ যাওয়ার আমন্ত্রণ। কিন্তু যাওয়টা হলো কি? হবে কি পৃথিবীর সাথে অন্য গ্রহের মানুষের সাথে প্রথম সাক্ষাৎ?

অপারেশন গামা : মানুষ নামের মনুষ্যত্বহীন প্রাণীদেরকে কি করে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া যায় এ নিয়ে বৈঠকে বসছে ভিন গ্রহের এলিয়েনরা। মিশন শুরু হয় এলিয়েনদের। যার নাম হয় 'অপারেশন গামা'। কি ছিলো শেষ পরিণতি অপারেশন গামা'র?

ধন্যবাদ : পদার্থবিদ্যায় সময় পরিভ্রমণ বলে একটি বিষয়। তবে তা যদি চোখের সামনে ঘটতে থাকে তবে তো পাগল হবার উপক্রম হতেই পারে। যা ঘটছে, ঘটুক সবকিছুর পড়েও কুড়িয়ে পাওয়া ছেলেটি প্রতি অকৃত্রিম মমতা থেকেই তিনি নিজের অজান্তেই বলে উঠলেন "তোকেও ধন্যবাদ বাবা"। 

ভুলোমনা বিজ্ঞানী : বিজ্ঞান চিন্তায় বিভোর হয়ে থাকতে থাকতে সবকিছুই প্রায় ভুলে যান এই ভুলোমনা বিজ্ঞানী। স্ত্রীর আবদার রক্ষা করতে টাইমমেশিনের মাধ্যমে তিনি তাকে পাঠান এখন থেকে ঠিক ১৫ বছর আগের পৃথিবীতে। বরাবরের মত এবারেও কি ভুলে গেলেন এই ভুলোমনা মানুষটি?

টপ সিক্রেট : হয়তো মানুষের মধ্যেই একদিন ছদ্মবেশে বসবাস করবে এলিয়েনরাও। তাদের কাছে রক্ষা করতে হবে গোপনীয়তা। আর নইলে যে রক্ষা নেই আমাদের।

প্যারাডক্স : মানুষের মাথায় এক চলছে এটা ডিসপ্লেতে ধরা পড়ছে, ব্রেন অ্যানালাইজেন। কত চমৎকার! বাস্তবে এ প্রক্রিয়া আছে বা কোনোদিন হবে কি না আমার জানা নেই, তবে হলে দারুণ হবে। জানা যাবে মানুষের মনের আদ্যপান্ত।

নববর্ষ : অত্যাধুনিক এক যুগ আসবে যে যুগে হয়তো কবি, আবৃত্তিকার, শিল্পী কারও কোনো মূল্য থাকবে না। অনটনে দিন কাটবে তাদের।  সবকিছুই যেনো থাকবে রোবটদের দখলে। শিশুরা যে অবুঝ, বোঝেনা এসব। হয়তো ইলিশ মাছ আর পান্তা ভাতের ছবি দিয়েই হবে বর্ষবরণ। 

এলিয়েন কোটা : কোনো এক সময় এলিয়েন আর মানুষে প্রেম হবে হয়তো। প্রবল আবেগ থাকলেও জয় হবে ভালোবাসার নাকি এলিয়েন কোটা?

অন্য আলোয় : কাল পরীক্ষা। আলোর চ্যাপ্টারগুলো পড়তে পড়তে অন্য এক আলোর সন্ধ্যান মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকা ঐ ছাত্রীটি। সন্ধান মেলে প্যারালাল ইউনিভার্সের নাকি আবারআঅন্যকিছু? ক্রমশ অবাক বনে ঢুকে যাচ্ছে ছাত্রীটি। দেখা হয় ভিন গ্রহের এক বন্ধুর সাথে। অচেনা সেই বন্ধুটির কর্মের কারণে কৃতজ্ঞতায় নত হয় সে। তবে তাকে আবারও পাওয়া যাবে কি?

লেটুস মামার নতুন মিশন : ভালোবাসা-শ্রদ্ধা-বিবেক, এগুলোকে একসময় হয়তো রাখা হবে এলিয়েনদের তৈরি জাদুঘরে। মানুষ-এলিয়েন হয়তো তখন বন্ধু হবে, পড়াশোনা করবে একই ক্লাসে। মানুষ আবার এলিয়েনদের সেই জাদুঘর ঘুরতে যাবে। কি সুন্দর! ভবিষ্যৎ ভাবনা। শতাব্দীর পর শতাব্দী, হয়তো এরকম কিছু তৈরি হবে। ভেবে রাখলে ক্ষতি কি?

কিঞ্চিৎ মিথ্যা : যদি এমন হতো গল্পের মতনই আবিস্কার করা যেত 'মিথ্যা নির্ণায়ক যন্ত্র', তবে বোধহয় ভালোই হতো। মানুষ হয়তো তাহলে আর ডুবে থাকতে পারত না এ মিথ্যার পৃথিবীতে। তবে কিঞ্চিৎ মিথ্যাও আবার জীবনে কখনও কখনও সুখকর কিছুও বয়ে নিয়ে আসতে পারে। চলুক তবে কিঞ্চিৎ মিথ্যা বলা, খারাপ কি তাতে?

মাছিম্যান : মাছির সাথে মানুষের সম্পর্ক, সেও কি সম্ভব? হতেই পারে! যদি সে হয় মাছিরূপী ভিন গ্রহের প্রাণী। হয়ে ওঠে উপকারী বন্ধু। কেউ না দেখলেও ভিন গ্রহের এই বন্ধুটিকে সে ঠিকই দেখতে পায়৷ সময় আসে, সে চলে যায় তার গ্রহে। কৃতজ্ঞতা নত হয়ে আসে তার মন। মোক্ষম নামও দেয় একটা - 'মাছিম্যান'।

নামটা শুনলে কেন জানি না, সায়েন্স ফিকশন মুভি 'মাক্ষী'-র কথা মনে পড়ে। দুটিই বিজ্ঞান চিন্তা নির্ভর আর নামে মিল থাকার কারণেই আমার এটা মনে পড়ে। সায়েন্স ফিকশন লেখা পড়ে নতুন নতুন অনেককিছুই জানা ও শেখা যায়। সে দিক 'মাছিম্যান' আমায় একদমই নিরাশ করেনি। জেনেছি নতুন অনেককিছু। যাদের সায়েন্স ফিকশন লেখার ধরণটা ভালোলাগে তাদের কাছে 'মাছিম্যান' নিসন্দেহে একটি সুখপাঠ্য হবে বলে আমি মনে করি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ