মেঘ রোদ্দুর বৃষ্টি : লেখক পরিচিতি
মেঘ রোদ্দুর বৃষ্টি মূলত একটি টীমওয়ার্ক। কয়েকজন দ্বীনি বোন মিলে বইটি প্রকাশ করেছেন। প্রকাশক নিজেই বইটি সম্পর্কে এমনটা বলেছেন, "মেঘ রোদ্দুর বৃষ্টি নিছক কোন গল্পগ্রন্থ নয়। রূপকথা কিংবা অবাস্তব কল্পনার মিশেলে তৈরি কোনো উপন্যাসও নয় এটি। এই বইতে থাকা গল্পগুলো উপলব্ধির। সমাজের আনাচে-কানাচে, মানবজীবনের চলতি স্রোতে তৈরি হওয়া ইচ্ছা, আবেগ, পাওয়া-না-পাওয়া, দুঃখ-সুখ আর সুরের সম্মিলিত প্রয়াসের নামই মেঘ রোদ্দুর বৃষ্টি। বইটিতে একঝাঁক রৌদ্রময়ীদের গল্প রয়েছে।"
- বই:- মেঘ রোদ্দুর বৃষ্টি
- লেখক:- রৌদ্রময়ী
- বইয়ের ধরন:- আত্মোপলব্ধি ধর্মী(ইসলামিক)
- প্রকাশনী:- সমকালীন প্রকাশন
- প্রচ্ছদ:- সমকালীন গ্রাফিক্স টীম
- পৃষ্ঠা সংখ্যা:- ২১০ পৃষ্ঠা
- মুদ্রিত মূল্য:- ৩০০/=
মেঘ রোদ্দুর বৃষ্টি : সংক্ষিপ্ত বিবরণ
'মেঘ রোদ্দুর বৃষ্টি' আত্মোপলব্ধিমূলক একটি বই৷ বইটিতে প্রায় ৩৩'টির মতো ছোটো-ছোটো গল্প রয়েছে এবং প্রতিটি গল্পই গ্রাম-শহরের আনাচে-কানাচেতে ঘটে যাওয়া কোনো কাহিনীকে কেন্দ্র করে লেখা। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, প্রথম গল্পটির(আটপৌরে) কথা। 'আটপৌরে' গল্পটিতে দেখানো হয়েছে একজন ইসলামিক নারীর জীবনধারণ কীরকম হওয়া উচিত, কোন কোন কাজগুলো করা তার জন্য ওয়াজিব এবং কোন কাজগুলো তার জন্য হারাম; দ্বীনদার মা-বাবা হিসেবে তাদের সন্তানদের প্রতি কীরকম যত্ন ও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত তার অনন্য উদাহরণ এই গল্পের সুপ্তি ও তার স্বামী সাজিদ। বেয়াড়াপনা, একঘেয়ে জীবন ছেড়ে কীভাবে রবের দেখানো পথ অনুসরণ করে পরকালের জন্য একটু একটু করে প্রস্তুতি নিতে হয় তারই বহিঃপ্রকাশ যেন 'আটপৌরে'!
আরেকটা খুব গুরুত্বপূর্ণ গল্প হচ্ছে 'দাইয়্যুস'। ইসলামিক দৃষ্টিতে দাইয়্যুস বলা হয় সেইসমস্ত ব্যক্তিগণকে যারা স্বীয় স্ত্রী/মেয়ে/স্বামী/যেকোনো সদস্যের কৃত যিনা-ব্যভিচার, অশ্লীলতাচর্চা ও আল্লাহর অবাধ্যতাকে স্বীকৃতি দেয়। আমাদের সমাজে এরকম লোক আছে অগণিত! নিজে বেহায়াপনা, বেলেল্লাপনার সর্বোচ্চ সীমায় তো পৌঁছেছেই সেই সাথে পরিবারের এবং আত্মীয়স্বজনদের কৃতকর্মকেও সমর্থন করতেছে। মর্ডাণীটির নামে স্ত্রী/মেয়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অহরহ ছড়িয়ে দিচ্ছে আবার ক্যাপশনে লিখছে, "আমার হিজাবী মেয়ে/স্ত্রী।" [সুনানুন নাসায়ীতে একটি হাদিসে এমনটা এসেছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-- "তিনজন এমন লোক আছে-- যাদের দিকে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন নজর দেবেন না: এক. যে পিতা মাতার অবাধ্য, দুই. যে নারী বেশভূষায় পুরুষের অনুকরণ করে, তিন. দাইয়্যুস ব্যক্তি।]
একজন ঈমানদার মুসলিম হিসেবে অবশ্যই আমাদের এইধরনের কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। ভাই/বোন আপনি নিজের যে ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড করতেছেন তা দেখতেছে হাজার-হাজার বেগানা নারী/পুরুষ৷ প্রত্যক্ষভাবে যিনা না করেও আপনি যিনা-ব্যভিচারের অংশীদার হয়ে যাচ্ছেন নিজের অসাবধানতার ও অজ্ঞানতার জন্য! এটা সবসময় মনে রাখতে হবে, শয়তান হচ্ছে সবথেকে ধৈর্য্যশীল ব্যক্তি। সে আপনাকে আস্তে আস্তে তার বশে নিয়ে ফেলবে; এমনভাবে কুযুক্তিগুলো প্রদর্শন করবে যে তা আমাদের কাছে নিছক কোনো কাজ মনে হবে। কিন্তু গ্রাজুয়ালি এই কাজটাই আপনাকে পৌঁছে দিবে জাহান্নামের দ্বারপ্রান্তে।
বইটির প্রতিটি গল্পই এরকম ক্ষুদে-বার্তামূলক যেগুলো একজন মুসলিমের অবশ্য জানা উচিত। তো জানতে হলে বইটি না পড়ার কোনো বিকল্প নেই।
মেঘ রোদ্দুর বৃষ্টি : পাঠ প্রতিক্রিয়া
[যেহেতু এটা একটা ইসলামিক বই তাই আমি সেভাবেই উপস্থাপন করছি; অন্য ধর্মাবলম্বীদের হেয় করা বা ওরকম কিছুর কোনো উদ্দেশ্য আমার নেই৷ ভুল-ত্রুটি মার্জনীয়।]
ইসলামিক বইপড়া শুরু করেছিলাম 'প্যারাডক্সিকাল সাজিদ' পড়ার মাধ্যমে। এরপর বেশ কয়েকটা বই পড়েছি। 'মেঘ রোদ্দুর বৃষ্টি' বইটা না পড়লে হয়তো একজন প্রকৃত মুসলিম ব্যক্তির জীবনধারণ সম্পর্কে এর কোনোকিছুই জানা হতো না। বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে একজন সত্যিকারের মুসলিম নারী/পুরুষের লাইফস্টাইল কেমন হওয়া উচিত। আরো বলা হয়েছে, মর্ডাণীটির নামে প্রচলিত গুনাহের সাগরে ঢুব না দিয়ে কীভাবে শেষরাতে তাহাজ্জুদের সলাতে দাঁড়িয়ে রবের উদ্দেশ্যে আকুতিভরা কন্ঠে সেসব থেকে নিজেকে দূরে রাখা যায় সেই প্রচেষ্টার কথা; নামধারী ভণ্ড পীরের দেয়া তাবিজ-কবচের প্রতি ভরসা না করে কেঁদে-কেঁদে রবের সন্তুষ্টি অর্জন করার কথা! নফসের গোলামী না করে নিজের চাহিদার কথা সেই মহান স্রষ্টার কাছে উত্থাপন করার মধ্যেই যে আমাদের কল্যাণ নিহিত এটাও মর্মোপলব্ধি করা যায় বইটি থেকে। সেইসাথে জানতে পারা যায়, বিধর্মী কোনো বন্ধুর জন্মদিনের পার্টির আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে সেসব সো-কলড ম্যানারিজম থেকে নিজেকে দূরে রাখাই একজন প্রকৃত মুসলমানের কাজ। বছরে ২/৩ বার মালয়েশিয়া, নিউইয়র্ক ঘুরে সুখের সন্ধান না পেয়ে শেষমেশ রবের কাছে সমর্পণ করার মধ্যেই যে প্রকৃত সুখ নিহিত তা উপলব্ধি করার বইয়ের নামই হচ্ছে 'মেঘ রোদ্দুর বৃষ্টি'।
মেঘ রোদ্দুর বৃষ্টি : সমাপ্তি
পরিশেষে এইটুকুই বলি, জানার কোনো শেষ নেই। জ্ঞানের সাগর অতি প্রশস্ত। আপনি কতটুকু জানার চেষ্টা করছেন বা উপলব্ধি করতে পেরেছেন এটা আপনার ব্যক্তিগত বিষয় কিন্তু জ্ঞান আহরণের ক্ষেত্রে ধর্মের গণ্ডি নিছক একটা প্রতিবন্ধকতা মাত্র। রিভিউটা পড়ার মাধ্যমে কারো নূন্যতম উপকার হলে সেটাতেই আমার স্বার্থকতা।
অনেক কিছু বলে ফেলেছি। ভুল হলে ক্ষমাপ্রার্থী। সবাই আমার জন্য প্রার্থনা/দোয়া করবেন; ধন্যবাদ।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....