মহানবী : মাজিদা রিফা - যে কারণে বইটি অবশ্যই পড়া উচিত! Mohanobi By Majida Rifa

সীরাত একটি রোমাঞ্চকর এডভেঞ্চারের নাম। একটি ভ্রমণকাহিনী। যেখানে হাসির হিল্লোল, নতুন কে জানতে পারার তৃপ্তি, সৃষ্টিকর্তার উপহারের সৌন্দর্য্যের মুগ্ধতা মিলিয়ে, সে এক অমায়িক অনুভূতিপূর্ণ যাত্রা। তেমনি সীরাত যাত্রা একটি অনন্য কল্পনা ভ্রমণ। যেখানে আছে পৃথিবীর বুকে এক নতুন আলোর আগমনের পয়গাম, মরুভূমির ধূলোর জমিনের জাগরণ, আঁধারে নিমজ্জিত মানবসমাজের পতনের বিপরীতে ছুটে চলা, সৎ সাহসের জয়গান, স্বপ্ন ভাঙ্গনের রণডাক, অশ্রুমাখা প্রেমের উপাখ্যান আরো কতশত জাদুময় অনুভবের সমাহার।


মহানবী by মাজিদা রিফা গ্রন্থ পরিচিতি:
  • মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
  • লেখক : মাজিদা রিফা
  • প্রকাশনী : রাহবার
  • বিষয় : সীরাতে রাসূল (সা.), নবীজির সীরাহ বিষয়ক সেরা বইগুলো
  • পরিবেশক : মাকতাবাতুল আযহার
  • পৃষ্ঠা : 480, কভার : হার্ড কভার, 
  • সংস্করণ : 6th Edition, 2022
  • ভাষা : বাংলা
একজন মহামানবকে ঘিরে কতগুলো গ্রন্থ রচিত হয়েছে! তবে, যারা প্রথম বার এই মহামানবের চরিত্রে মুগ্ধ হতে সীরাত হাতে নেন, তাদের নিশ্চয়ই একটি সহজ এবং সাবলীল শব্দচয়নের গ্রন্থ হাতে নেয়া আবশ্যক। প্রথমেই গাম্ভীর্যপূর্ণ বাক্য সমাহারে পূর্ণ সীরাতের কাল্পনিক সমুদ্রে ডুব দেয়া আপাতদৃষ্টিতে সম্ভব হয়ে উঠে না।

এরকম একটি সাবলীল সীরাত হচ্ছে, মহানবী সা:। কাব্যধর্মী উপমা, রূপক এবং শব্দবুননের মাধ্যমে এই সীরাতটি সুসজ্জিত। যে কোনো শ্রেণীর মানুষ এই সীরাতটি হাতে নিয়ে বেশ সাচ্ছন্দ্যে এই ধরণীর মহামানবকে জেনে নেয়ার সূচনা করতে পারবে। যেহেতু সীরাতটি অনেকটা গল্পকথা ধাচের, তাই একঘেয়েমি আসার কোনো সম্ভাবনা থাকে না। 

গ্রন্থটির সংক্ষিপ্ত বিবরণ:
-------------------------
মহানবী সা:। সাধারণ সীরাতের মতোই, প্রথমদিকে এই গ্রন্থে নবীজি সল্লাল্ল-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের পূর্ব সময়কার অবস্থা, বংশ পরিচয়, পিতা আব্দুল্লাহ এবং দাদা আব্দুল মুত্তালিবের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অকল্পনীয় কিছু ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। এবং এরপর উনার সম্পূর্ণ জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা সমূহের উপর আলোকপাত করা হয়েছে।

গ্রন্থটির মাধুর্যপূর্ণ শিরোনাম নিয়ে আলোচনা:
---------------------------------------------
আশ্চর্যজনক বিষয় হলেও, গ্রন্হটির প্রথমে বিশেষ ভাবে কোনো সূচিপত্র নেই। যেটা আমার কাছে খানিকটা বেমানান ঠেকেছে। তবে, প্রতিটি ঘটনার উপলক্ষ্য শুরুতেই একটি করে শিরোনাম রয়েছে। এবং শিরোনাম গুলো খুবই আকর্ষণীয় এবং কাব্যিক ঢঙ সম্পূর্ণ। কিছু শিরোনাম তুলে ধরা যাক,

"জীবন-মৃত্যুর খেলাঘরে"
আব্দুল্লাহ এর বিবাহ পাঠ।

"আমেনার আলোশিশু"
মুহাম্মদ, নবীজি সল্লাল্ল-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের মা আমেনার কোল আলোকিত করে আসা।

"চন্দমানবীর রাজপুষ্প"
রাসুলুল্লাহ সল্লাল্ল-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে আম্মাজান খাদিজা রাদিআল্লাহু আনহার বিবাহ।

"বাধার পাহাড়, স্নেহের ছায়া"
মুশরিকদের কূটনীতি এবং আবু তালিবের রক্ষা কবজ।

গ্রন্থটির কিছু মনোরম শব্দচয়নের কিয়দংশ:
---------------------------------------------
"স্বচ্ছ কাচের মতো আকাশ। বাতাসের শরীরে ভর করে বালু-পাথরের ছোট ছোট বাড়িগুলোর উপর দিয়ে ওড়াউড়ি করছে আয়েশি ধূলিকণা। হলুদাভ রোদে ঝলমল করতে থাকা প্রাচীন শহরটা মানুষের কলকাকলিতে মুখরিত। কিন্তু হঠাৎ করে যেন রোদে আক্রান্ত শহরটা নিঃশব্দ আর্তনাদ শুরু করে।"

"শুষ্ক মক্কায় মায়ের কোলটা ছিলো ঠিক এক টুকরো মেঘের মতো। মায়ের কোমল ছোঁয়া বৃষ্টির মতো পরশ বুলিয়ে দিতো। কিন্তু একদিন সব উলটপালট হয়ে গেল"

"খাদিজা মক্কার চন্দ্রমানবী। আকাশের চাঁদটা যেমন পবিত্র, খাদিজাও তেমন মক্কার অশ্লীলতা থেকে নিজেকে এত পবিত্র রেখেছেন যে, মক্কাবাসি তাঁকে "তাহিরা" (পবিত্র) উপাধি দিয়েছে।"

আমেনার আলোশিশু

নীরবতার কোলে মাথা রেখে এক এক করে ঘুমিয়ে পড়েছে সকল মানুষ। লাগামহীন পাখিগুলোও নীরব-নিস্তব্ধ। শুধু জেগে আছে আরব-প্রকৃতি, সেজে আছে আরব-প্রকৃতি। মাথার উপর ডানা মেলে থাকা আকাশ অদ্ভুত রূপ ধারণ করেছে। আকাশের সাথে চাঁদ মেতে উঠেছে গোপন সংলাপে। শত-সহস্র মাইল দূরের তারাগুলো নিঃসঙ্গতার বিষাদ ভুলে আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে ঝুঁকে পড়েছে পৃথিবীর দিকে। মোহনীয় এক সুখের সুর বাতাসে ভর করে উড়ে বেড়াচ্ছে প্রান্তর থেকে প্রান্তরে। কী যেন একটা ঘটতে যাচ্ছে! কীসের আলামত যেন পৃথিবীর প্রাণে প্রাণে গান গেয়ে যাচ্ছে।

৫৭০ খ্রিস্টাব্দ। রবিউল আউয়াল মাসের আট তারিখ। আরব-আজমের এই উল্লসিত প্রকৃতি আর বর্ণিল আকাশ বিধবা আমেনার ঘরকে কেন্দ্র করে ঘুরপাক খাচ্ছে। আমেনার বিধ্বস্ত বুকের ভেতরেও এক অপার্থিব আনন্দের কলকলধ্বনি সুখের পরশ বুলিয়ে যাচ্ছে।

আমেনার কাছে বসে আছেন ফাতেমা বিনতে আবদুল্লাহ নামের এক রমণী। বিপুল বিস্ময় নিয়ে তিনি দেখেন, আকাশের তারাগুলো শ্রদ্ধায় এমনভাবে আমেনার ঘরের প্রতি ঝুঁকে আছে যে, মনে হচ্ছে, তারাগুলো যেন আকাশ ছেড়ে তার উপর এসে পতিত হবে!

শেষ রাতের দিকে সব রহস্যের জট খুলে গেলো। সুবহে সাদিকের সময় আমেনার কোল আলোকিত করে পৃথিবীতে আগমন করলেন আশ্চর্য সুন্দর এক মানবশিশু—তাঁর কচি মুখখানা চাঁদের চেয়েও উজ্জ্বল, তাঁর ছোট্ট দেহখানা সদ্য ফোটা ফুলের চেয়েও পবিত্র। আমেনার বুক ভরে গেলো অপার্থিব তৃপ্তিতে আর চোখ ভেসে গেলো অজানা এক অলৌকিক আলোয়। সেই আলোয় আলোকিত হয়ে তাঁর চোখের সামনে হঠাৎ ভেসে উঠলো সিরিয়ার রাজমহল!১

প্রকৃতির এমন অপরূপ সাজ দেখে বনু কুরাইযা, বনু নাযীর, ফাদাক ও খায়বারের ইহুদি পণ্ডিতরা বিস্মিত হয়ে বলাবলি করতে লাগলো – 'আজ রাতে আহমাদের নক্ষত্র উদিত হয়ে গেছে! আহমাদ জন্মগ্রহণ করেছেন!' তারা তাওরাত থেকে জানতো, আরবের বুকে জন্ম নেবেন সে মানবসন্তান, যিনি হবেন সকল মানুষের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, সকল নবীর চেয়ে সম্মানিত।২

এক ইহুদি ব্যক্তি শিশু আহমাদের খোঁজে কুরাইশদের এক মজলিসে এসে জানতে চাইলো—‘আজ রাতে কি তোমাদের কারো পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করেছে?' লোকজন উত্তরে বললো—'আমরা এ ব্যাপারে কিছু জানি না!" ইহুদি তখন অনুরোধ করলো খবর নেওয়ার জন্য। সে বললো— আজ রাতে

এই উম্মতের নবীর জন্মগ্রহণ করার কথা। তাঁর দুই কাঁধের মাঝখানে নবুওয়তের সিল মারা থাকবে!' কুরাইশরা এমন আশ্চর্যজনক কথা শুনে বৈঠক ভেঙে দিয়ে ইহুদির কথামতো

খোঁজ নেওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়লো। অবশেষে জানতে পারলো, সুবহে সাদিকের

সময় আবদুল মুত্তালিবের মৃত পুত্র আবদুল্লাহর ঘরে এক পুত্রসন্তান জন্ম নিয়েছে। তারা ইহুদিকে কথাটা জানালে সে বললো—'আমাকে নবজাতকের কাছে নিয়ে চলো!' ইহুদিকে পবিত্র শিশুর কাছে নিয়ে আসা হলে সে দেখলো, ছোট্ট শিশুর দুই কাঁধের মধ্যভাগে সত্যি সত্যি মোহর মারা! সাথে সাথে সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলো। কিছুক্ষণ পর তার জ্ঞান ফিরে এলে সে বললো—'বনী ইসরাঈলের নবুওয়তের পরম্পরা আজ স্থানান্তরিত হলো। হে কুরাইশ, এই ছোট্ট শিশুটিই একদিন তোমাদের উপর এমন বিজয় লাভ করবে, যার সংবাদ পূর্ব থেকে পশ্চিম দিগন্ত পর্যন্ত লোকজন জানবে। ৩

ইহুদির এই ভবিষ্যদ্বাণী তার সাথে থাকা মক্কার লোকজন হয়তো তেমন আমলে নিলো না অথবা তারা আসল ব্যাপার বুঝতেই পারলো না। তাদের মনে দোলা দিচ্ছিলো আনন্দ। কারণ পুত্রশোকে কাতর তাদের সর্দার আবদুল মুত্তালিবের মুখে বহু দিন পর ফুটে উঠেছিলো নির্মল হাসি।

আবদুল মুত্তালিব নাতির জন্মের সুসংবাদ শুনে অতি আনন্দে নাতিকে কোলে নিয়ে প্রথমে কাবায় প্রবেশ করেন। তাঁর কোল আলো করে তুলেছিলেন চাঁদশিশুটি, আবদুল মুত্তালিব কৃতজ্ঞম্বরে আল্লাহকে ডাকেন এবং আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করেন।৪

শুধু আবদুল মুত্তালিবের মনে নয়, পবিত্র শিশুর জন্ম সকল মানুষের মনেই বর্ষাতে লাগলো আনন্দবৃষ্টি। পবিত্র শিশুর এক জালেম চাচার নাম আবু লাহাব। তার সুওয়াইবা নামক দাসী তার কাছে ছুটে গিয়ে বললেন— 'মালিক, আপনার একটি ভাতিজা জন্মগ্রহণ করেছে!'

জালেম আবু লাহাবও এই সংবাদে এত উৎফুল্ল হলো যে, হাত তুলে ইশারা করে সুওয়াইবাকে বললো— 'সুওয়াইবা, তুমি আমাকে মহা আনন্দের একটি সংবাদ শুনিয়েছো। যাও, তোমাকে দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করে দিলাম!' Read More After Buy

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ