প্রথম আলো PDF : সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় | Prothom Alo By Sunil Gangopadhyay

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কালজয়ী টাইম ট্রিলজির প্রথম উপন্যাস "সেই সময়" “প্রথম আলো” ব্যক্তিস্বাধীনতা অর্জনের গল্প বলে, বলে জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার গল্পও। আর সেই গল্পের প্রতীকী চরিত্র হচ্ছে ভরত এবং ভূমিসুতা। ইতিহাসে কালের আবর্তন ঠাঁই পায় বলে এর কাহিনীবিন্যাসের চড়াই উৎরাইও কম নয়। ঔপন্যাসিকও এক্ষেত্রে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের রুচিবোধের এক অনন্য পরিচয় দিয়েছেন!


"সেই সময়" খুব তাড়াহুড়োয় শেষ করেছিলাম, সত্যি বলতে, সেজন্যই ততটা গভীরভাবে হয়ত এটিকে আমি অনুভব করতে পারিনি, যতটা আমি অনুভব করেছি "প্রথম আলো"কে।  
  • উপন্যাসঃ প্রথম আলো (প্রথম খণ্ড) পিডিএফ এবং রিভিউ
  • লেখকঃ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
  • ধরনঃ ঐতিহাসিক-সামাজিক উপন্যাস
  • প্রকাশনীঃ আনন্দ পাবলিশার্স
  • প্রথম প্রকাশঃ ১লা মে, ১৯৯৬
  • মোট পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ৪২৪
 ইতিহাস কি শুধুই খটমটে এক বিষয়ের নাম? নাকি এতে ঠাঁই নেয় কালের বিবর্তনবাদের গল্পও, যেখানে রক্তমাংসের অবয়বের কতশত আনাগোনা! কত যে না জানা, না শোনা অনুভবের পরিচয় পাওয়া যায়, তার পরিচয় শুধুমাত্র টাইম ট্রিলজি পড়লেই বোঝা সম্ভব, যার অন্যতম একটি অংশ এই "প্রথম আলো"। 

শুরুতেই বলেছি, ইতিহাস আপাতদৃষ্টিতে হয়ত খটমটে, কিন্তু সেই খটমটে ঠাসবুনোন কাঠামো প্রাণ ফিরে পায় একটি সুনির্দিষ্ট কাল তথা সময়ে জন্ম নেয়া শত শত রক্তমাংসের অবয়বের চারিত্রিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে! তাদের উপলব্ধি, অনুভূতির একান্ত পরিচয়ও মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় তৎকালীন সময়ের সামাজিক, রাজনৈতিক এমনকি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণের সাথেই। সব মিলেই গঠিত হয় একটি সুনির্দিষ্ট কালের রূপরেখা। "প্রথম আলো"র প্রথম খণ্ডের প্রতিটি চরিত্রও সেভাবে আলো ছড়িয়ে গিয়েছে এই উপন্যাসের প্রতিটি পরতে পরতে, আলো ছড়িয়েছে তৎকালীন ব্রিটিশশাসিত সমাজে অন্যায়, অবহেলা, বঞ্চনা, লাঞ্ছনার বিরুদ্ধে হাজারো বাঙালির রক্ত টগবগ করা প্রতিবাদ, আলো ছড়িয়েছে ধর্মীয় গোঁড়ামোকে একপাশে রেখে সৃষ্টিকর্তার প্রতি শুদ্ধ ও স্বচ্ছ অনুভবেরা! একইসাথে আলো ছড়িয়েছে কারো কারো জীবনে আসা প্রথম শুদ্ধতম ভালোলাগার অনুভূতিও! আর সেসব আলোয় উজ্জ্বল হয়ে মিশে আছেন রবীন্দ্রনাথ, কাদম্বরী দেবী, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ, রামকৃষ্ণের মত বিখ্যাত ঐতিহাসিক চরিত্রের পাশাপাশি ভরত, ভূমিসুতা, শশীভূষণের মত প্রতীকী চরিত্রেরাও। 

ইতিহাসে কালের আবর্তন ঠাঁই পায় বলে এর কাহিনীবিন্যাসের চড়াই উৎরাইও কম নয়। ঔপন্যাসিকও এক্ষেত্রে তার রুচিবোধের এক অনন্য পরিচয় দিয়েছেন! শুরুটা হয়েছিলো ত্রিপুরার তৎকালীন মহারাজ বীরচন্দ্র মাণিক্যের রাজবাড়ি এবং অন্তঃপুরের আখ্যান দিয়ে, আর সেখান থেকে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি, রবীন্দ্রনাথ-কাদম্বরী দেবীর কাব্যচর্চার সাথে তাদের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বুনন, জ্যোতিরিন্দ্রনাথের স্বদেশপ্রেমের নিদর্শন, নারীজাগরণে জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর অসামান্য ভূমিকার পাশাপাশি ধর্মীয় জাগরণের দিক দিয়ে ব্রাহ্ম সমাজ এবং রামকৃষ্ণের প্রতি তার ভক্তদের মোহাচ্ছন্ন ভক্তিশ্রদ্ধার ব্যাপারটিও পাঠকদের নজর কাড়তে বাধ্য। 

“প্রথম আলো” ব্যক্তিস্বাধীনতা অর্জনের গল্প বলে, বলে জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার গল্পও। আর সেই গল্পের প্রতীকী চরিত্র হচ্ছে ভরত এবং ভূমিসুতা। নিকষ অন্ধকারাচ্ছন্ন কন্টকে আবৃত অতীতকে পেছনে ফেলে এসে নতুন করে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জ্বলন্ত প্রতীক ভরত, যে নিজেকে একজন ভাগ্যবিড়ম্বিত অসহায় মানুষ থেকে একজন আত্মস্বাবলম্বী শিক্ষিত যুবায় নিজেকে পরিণত করেছে। আর কালের আবর্তে প্রথম ভাললাগার নাম হয়ে তার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে জড়িয়ে গিয়েছে সহজ সরল অনাথা ভূমিসুতা। তাদের জীবনের এই অধ্যায়টি কি সফলতার আলো দেখেছিলো অবশেষে? 

তবে সবকিছু ছাপিয়ে আমার মন ভিজিয়ে দিয়েছিলো কাদম্বরী দেবীর মৌন আত্মাভিমান। রবীন্দ্রনাথের কাব্যচর্চার জীবনে ভোরের সূর্যকিরণের মত ভর করে আসা কাদম্বরী আবার মিলিয়েও গিয়েছিলেন ভোরের সূর্যকিরণের মতই। ব্যক্তিগত জীবনে মানুষটির অনুভূতি ও উপলব্ধির বোধশক্তি যে কতটা তীব্র ছিলো, তা এই উপন্যাসের বিশেষ কিছু জায়গায় সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান। কিছু মানুষের নীরবতার আলাদাই এক শব্দ ও ভাষা থাকে; কাদম্বরী দেবী তাদেরই দলভুক্ত কেউ একজন। 

প্রথম আলো-তে যেমন ঠাঁই করে নিয়েছে প্রথম ভাললাগার গল্প, ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রথম নবজাগরণের গল্প, কবিগুরুর প্রথম জীবনে কাব্যচর্চার চড়াই উৎরাইয়ের গল্প, ঠিক তেমনই উঠে এসেছে অবহেলা, লাঞ্ছনা গঞ্জনা, শোষণ, বৈষম্যের গল্পও! ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে উপন্যাসটির প্রথম খণ্ড শেষ করার পর মনে হচ্ছিলো, ভালবাসার অপর পিঠে সবসময় শুধু ঘৃণাই নয়, বরং ক্রোধ এবং তাচ্ছিল্যেরও বসবাস! 

সবশেষে এই উপন্যাসের আমার সবচেয়ে প্রিয় উক্তিটি লেখার লোভ সংবরণ করতে পারছিনা--
“অভিমান হল হৃদয়ের অতি গোপন প্রকোষ্ঠের ব্যাপার। যে কেউ সেখানে হাত ছোঁয়াতে পারেনা।” Prothom Alo PDF Book

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ