বই: প্লাটফর্ম
লেখক: মাসুম বিল্লাহ
প্রচ্ছদ : মাসুম বিল্লাহ
প্রকাশনী: পুস্তক প্রকাশনী
প্রথম প্রকাশ: অক্টোবর ২০২০
📝নামকরণ ও প্রচ্ছদঃ
প্রচ্ছদটিতে লক্ষ করা যাচ্ছে একটি প্ল্যাটফর্মের পাশে রেলপথের ধারে চলন্ত ট্রেন চলছে অপর পাশে দুজন যুগলবন্দী ছেলে-মেয়ে হাঁটছে,পিছন থেকে নজরবন্ধী করছে আরেকটি লোক। প্রচ্ছদের নকশা এবং বইটির কাহিনী অনুযায়ী প্ল্যাটফর্ম নামটি সার্থক।
📝পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ
প্ল্যাটফর্ম নামটি শুনলে আমরা কেবল মনে করি রেললাইনের ধারে ট্রেন ঝকঝক ঝকঝক করে ছুটছে যার যার গন্তব্য স্থলে। একটা প্ল্যাটফর্মকে ঘিরে কতো জনমানুষের কোলাহল,কর্মমুখী মানুষের জীবন ব্যবস্থা, কিন্তুু এই প্ল্যাটফর্মকে ঘিরে যে কতো মানুষের পেট চলছে,কিংবা প্ল্যাটফর্মের ধারে বস্তির মানুষের জীবন চলছে, এখানের কেউ কুলি আবার কেউ বা ফেরি- ওয়ালা, কেউ ফকির এই রমক কিছু মানুষের জীবন ব্যাবস্থা নিয়ে এই প্ল্যাটফর্ম বইটির মূল কাহিনী ফুটে উঠেছে।
"প্লাটফর্ম" গল্পের প্রধান চরিত্র সামসু,প্ল্যাটফর্মের পাশের বস্তিতে জন্ম সামসুর।সামসুর বাবা ছিলো বৃদ্ধ জয়নাল। ওর বয়স যখন ৫ কি ৭ তখনই ট্রেনের নিচে চাপা পড়ে মারা যায়। আর মা!বাবা মারা যাওয়ার এক বছর পরে ট্রেনে চড়ে সেও পালিয়ে যায়।এরপর থেকে সে বুড়ো হাবলার কাছেই মানুষ।অনেকে ধারণা করে সামসুর বাবাকে হাবলাই মেরেছে,তাই সামসুকে এত আদরে মানুষ করছে।কিন্তুু এ নিয়ে কথা বলার সাহস কারো নেই, আর সামসুও কখনো জিজ্ঞেস করেনি,কেননা যদি ক্ষেপে গিয়ে তাকে বের করে দেয়। সামসুকে হাবলা কাজ দেয় প্ল্যাটফর্মেই কখনো সে ট্রেনে ট্রেনে টিকেট ফেরী করে, কখনো বা মোবাইলের সামগ্রী বিক্রি করে। সপ্ন দেখে প্ল্যাটফর্মের পাশে তার একটি দোকান হবে।এরপর সে জুলেখাকে বিয়ে করে সুখে সংসার করবে।জুলেখা তার বাবার দোকানে
ভাত তরকারি রান্নার কাজে সহযোগিতা করে।
সামসু ও জুলেখা একজন আরেক জনকে পছন্দ করে যদিও তারা দুজনি জানে তারা একে অপরকে পছন্দ করে কিন্তুু সে কথা কারো বলা হয় না,এই ভাবেই চলছিলো তাদের মিষ্টি প্রেম। সামসু জুলেখাকে নিয়ে সোনালী সপ্ন বুনতে থাকে তাদের ছোট্ট একটি সংসার হবে বস্তির বাহিরে তাদের ছোট্ট একটা ঘর থাকবে,তাদের দুলালী নামের মিষ্টি একটা মেয়ে থাকবে। একদিন সামসু আর জুলেখা ঠিক করলো রিক্সায় করে ঘুরতে বের হবে দুজন ঘুরাঘুরি করলো সারাদিন
হঠাৎ খেয়াল তাদের দিকে কেউ একজন পিছন পিছন নজর রাখছে কিন্তুু সে কে?
প্ল্যাটফর্মে রাজত্ব করে বুড়ো হাবলা।সে কোথায় থেকে এসেছে,আগে কি করতো কেউ বলতে পারে না।হাবলা সবাইকে নিয়ে একটি দল গঠন করে,সেই প্রথম এখানে বস্তির ব্যবস্থা করে,তারপর থেকে শুরু হয় প্ল্যাটফর্ম এবং বস্তির মানুষজন তার নিয়ম মেনে চলা তাকে গুরু মানা। একদিন সামসু হাবলার ঘরের দিকে যাচ্ছিলো তার আর জুলেখার বিয়ের ব্যাপারে যেনো জুলেখার বাবা- মা কে হাবলা রাজি করায়,এমন সময় সে শুনতে পেলো কামরুল আর হাবলা কি নিয়ে যেনো আলোচনা করছে কামরুল হলো হাবলার ডান হাত তার ব্যক্তিগত সকল কাজ কারবার সব কামরুলই করে দেয়।
সামসু হাবলার ঘরের বাহিরে থেকে শুনতে পেলো তাকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তাদের কথা গুলো শুনতে পেয়ে তার পা যেনো মাটির সাথে গেঁথে গেছে,এ সে কি শুনছে? তাকে নিয়ে তারা কি ষড়যন্ত্রের ফাঁদ বানাচ্ছে? নাকি অন্য কিছু? জুলেখার সাথে কি তার সপ্নের সংসার আধো হয়ে উঠবে? নাকি সপ্ন সপ্নই রয়ে যাবে। সম্পূর্ণ কাহিনী জানতে হলে পড়তে হবে উপন্যাসটি।
📝ব্যক্তিগত মতামতঃ
উপন্যাসটি পড়ে খুব সুন্দর ভাবে চোখের সামনে দেখতে পারবে একটি প্ল্যাটফর্ম কে ঘিরে বস্তিতে থাকা মানুষ জনের জীবন চিত্র উপলব্ধি করতে পারবে। এই যে আমাদের সমাজে কিংবা তার আশপাশে ক্ষমতাধর ভালো মানুষের আড়ালে লুকিয়ে থাকা স্বার্থপর হিংস্র মানুষ।তেমনি ভাবে প্ল্যাটফর্ম উপন্যাসে ফুটে উঠেছে এমন কিছু মানুষের চরিত্র। বইটির শেষের কাহিনীর জন্য মোটেও প্রস্তুুত ছিলাম না, পাঠক না পড়লে ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারবে না। লেখকের লেখনশৈলী অসাধারণ আগামী বইয়ের জন্য শুভকামনা রইলো। লেখকের প্রথম বই হিসেবে বইটিতে বেশ কিছু বানানের ও ভুল ত্রুটি রয়েছে।আশা করছি পরবর্তীতে আরো ভালো ভাবে বানানের দিকে নজর দিবেন।
📝বইয়ের প্রিয় উক্তিঃ
◾সব ঘটনা যেমন স্থান পায় না আমাদের মাঝে,তেমনি যেটা স্থান পায় সেটা আবার সবার মাঝে স্থান পায় না।
◾এখানে নীতি বলতে কোনো শব্দ নেই, নীতি কেবল পেটনীতি।
◾মানুষের জীবন আবর্তিত হয় সূর্যকে ঘিরে।সকালে সূর্য উঠলেই আমাদের দিন শুরু হয়।অনেকের আবার শুরু হয় অস্ত যাওয়ার পর।কিন্তু এমন কিছু মানুষ আছে যাদের সাথে সূর্যের উঠা বা ডোবার কোন সম্পর্ক নেই।সূর্য না উঠলেও তাদের কিছু যায় আসে না।
📝ব্যক্তিগত রেটিংঃ
০৮/১০
(বিদ্রুপঃ রিভিউ টি বড় করার জন্য দুঃখীত)
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....