Review - ব্যাংকব্যবস্থা ও টাকার গোপন রহস্য | Bankbebostha O Takar Gopon Rohossho

আপনি হয়তো থ্রিলার পড়তে পছন্দ করেন; আর বাস্তবমুখী থ্রিলার? 'ব্যাংকব্যবস্থা ও টাকার গোপন রহস্য' বাস্তব দুনিয়ার লুকায়িত সত্যকে উন্মোচনকারী অবিশ্বাস্য এক থ্রিলার। এর শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত ভ্রমণ ব্যতিত আপনার চোখ ও শরীর বিশ্রাম নিতে নারাজ। মুহুর্মুহু উত্তেজনাপূর্ণ যাত্রায় ঘোরা হয়ে যাবে অর্থনীতির অচেনা অলি-গলি। গল্পে গল্পেই ভেদ হবে মায়াবী জালের রহস্যগুলো। উন্মোচিত হবে ব্যাংকব্যবস্থা ও টাকার জন্ম রহস্য, যৌবন কাহিনী এবং যুগের সাথে তাল মিলিয়ে তার আধুনিক হয়ে উঠার গল্প।
অর্থনীতি জাতীয় বিষয়াদির জটিলতা প্রশ্নাতীত। তদুপরি, এক মলাটেই মূল্যস্ফীতি, ভার্চুয়াল কারেন্সি, দেউলিয়াত্ব, অর্থনৈতিক মন্দা, বেইল আউট, জম্বি কোম্পানি, তারল্য সংকট প্রভৃতি যুক্ত হলে, পুরো বিষয়টাই জগাখিচুড়ি পাকিয়ে মাথার উপর দিয়ে চলে যাওয়ার কথা। কিন্তু, এখানেই লেখক মোহাইমিন পাটোয়ারীর কারিশমা। মৌলিক পরিভাষাগুলোকে তিনি অত্যন্ত সাবলীল উপস্থাপনায়, গল্পের ছলে সহজপাচ্য করে তুলে ধরেছেন।

অর্থনীতির অ আ ক খ ধারণা ব্যতীতই, ব্যাংকব্যবস্থা ও টাকার গোপন রহস্য বইটি আপনার অন্তরের গহীনে তার বার্তাগুলো নিয়ে পৌছে যাবে, নিরন্তর কড়া নাড়তে থাকবে। আপনি ঝাঁপ দিবেন চমকপ্রদ একটা এ্যাডভেঞ্চারে, যার সাথে সিন্দাবাদের ভ্রমণ কিংবা আ্যালান কোয়াটারমেইনের গুপ্তধনের খোঁজে যাওয়ারই তুলনা চলে। সময়, সুযোগ ও সাহসের অভাবে যেই যাত্রাটা আপনি কখনোই শুরু করেননি, “দি লর্ড অফ দা রিংস” এর 'গ্যানডাল্ফ' হয়ে মোহাইমিন পাটোয়ারী আপনাকে ছোঁ করে তুলে নিয়ে সেই সফরেই বেরিয়ে পড়বেন। আর “হবিট”-দের মতো আপনি ছুটে চলবেন 'মিডল আর্থে'; ব্যাংকব্যবস্থা ও টাকার গোপন রহস্য উদ্ধারে। ভ্রমণের প্রয়োজনীয় সব উপকরণ সময়মতো ধেঁয়ে আসবে আপনার হাতের নাগালেই! অর্থনীতি বিষয়ে নিতান্ত অজ্ঞ হলেও যাত্রার অনিঃশেষ রস, সুবাস যেন ফুরোবার নয়।

আরেকটি আলোচ্য দিক হলো, "ব্যাংক ব্যবস্থা ও টাকার গোপন রহস্য" কোনো ধর্মীয় বই না। এর লেখক মোহাইমিন পাটোয়ারীও কোনো ধর্মীয় বক্তা নন। এই উজ্জীবিত তরুণ অর্থনীতি বিশ্লেষক, অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ থেকেই সব আলোচনা করেছেন এবং আলোচনার পরতে পরতে তিনি পশ্চিমা দার্শনিক, অর্থনীতিবিদ ও নীতি-নির্ধারকদের এমন কিছু উক্তি সংগ্রহ করেছেন যা পাঠকদের বিস্মিত করতে বাধ্য। যেমন আড়াইশ বছর আগের তৃতীয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসনের উক্তিটি,
“আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে বিদেশী সেনাবাহিনীর থেকেও বেশি বিপদজনক হচ্ছে ব্যাংক ব্যবস্থা।”
অথবা ইংরেজ-জার্মান ব্যাংকার ও ফাইন্যান্সিয়ার নাথান মেয়ার রথসচাইল্ডের এই উক্তিটি,
“যেই সুবিশাল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সুর্য অস্ত যায় না, তার সিংহাসনে কে বসল আমার তাতে কিছু যায় আসে না। কারণ যে ব্রিটেনের মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে সেই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মূল ক্ষমতার মালিক, আর ব্রিটেনের মুদ্রা ব্যবস্থা আমারই নিয়ন্ত্রণে।”

সবশেষে, এই রোমাঞ্চকর যাত্রার অন্তে আছে রুপকথার গল্পের মতই গুপ্তধন। আর তা হচ্ছে আপনার বহুদিনের সঞ্চিত সব প্রশ্নের উত্তর! টাকা আর ব্যাংকের মাঝে এত মধুর রসায়নটা কী? ধেই ধেই করে উন্নয়নে এগিয়ে যাওয়া বিশ্বে, হু হু করে সবাই দেউলিয়া হচ্ছে কেন? উন্নয়নের স্বপ্ন দেখিয়ে আপনার আমার সকল সম্পদ কীভাবে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে! ইত্যাদি। আর হ্যাঁ, গল্প গুলোর ফাঁকে ফাঁকে রাখা যুতসই সব চার্ট এবং রেফারেন্সগুলো আপনাকে গায়ে কাঁটা দেওয়া বাস্তবতার দিকে ঠেলে দিবে।

ব্যবসা, চাকরি, কিংবা কৃষি, যে যেভাবেই উপার্জন করি না কেন, আমরা সবাই আয় -উপার্জনের চিন্তায় বিভোর, এই ব্যাপারে আমরা যার পর নাই সচেতন। অপরদিকে, 'অর্থনীতি' হলো অবহেলার অন্যতম ক্ষেত্র, যেখানে আমরা কোন আগ্রহই খুঁজে পাই না! অথচ, আপনি চাল কিনেন কিংবা চিনি, এর পিছনে আছে অর্থনীতি; যক্ষের ধনের মত টাকা সঞ্চয় করে রাখেন কিংবা ব্যয় করে ফেলেন, এর পিছনেও আছে অর্থনীতি; সোনা-রূপায় লেনদেন করেন কিংবা কাগজ-কার্ডে, এর পিছনেও রয়েছে অর্থনীতি। তারপরেও এই বিষয়ে অজ্ঞতা কাটানোর ন্যূনতম প্রচেষ্টাও চোখে পড়ে না। সেই অজানা জগতের বাস্তবিকতাগুলোই গল্পের মণিমুক্তায় ভরিয়ে অপরূপ করে তুলেছে 'ব্যাংকব্যবস্থা ও টাকার গোপন রহস্য' বইটি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বইটি পাঠকদের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে।

আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ মিনহাজ রেজা
উদ্যোক্তা, অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ