রিভিউ | সেকালের ছবিওয়ালা : তারেক আজিজ | Shekaler Sobiwala : Tareq Aziz Books

ছবি এখন মানুষের জীবনে একটি নিত্য প্রয়োজনীয় উপকরণ। স্মার্টফোনের সুবাদে এখন প্রায় প্রতিটি মানুষের প্রতিদিনই ছবি তোলে। এমনকি কোন তথ্য কোথাও পেলে সেটি কাগজে টুকে না রেখে ছবি তুলতে এই প্রজন্ম বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। সেকালের ছবিওয়ালা বইটি হচ্ছে মূলত ভারত বর্ষ এবং বাংলাদেশের ছবির শুরুর দিকের ইতিহাস নিয়ে।

  • বই: সেকালের ছবিওয়ালা
  • লেখক: তারেক আজিজ
  • প্রকাশনা: কবি প্রকাশনী (এপ্রিল ২০২২)
  • পৃষ্ঠা: ১৬৭
  • মান: ৪.০/৫.০
  • ধরন: ঐতিহাসিক
সেকালের ছবিওয়ালা বইটি মূলত কয়েকটি অধ্যায়ে বিভক্ত। কিছু অধ্যায় হচ্ছে বাংলায় ছবির আগমন এবং ছবি তোলার শিল্পের বিবর্তন নিয়ে। আর বাকি অধ্যায়গুলো ভারতবর্ষে ছবির আগমন ও ছবি নিয়ে। এই ‌বইটি মূলত ভালো লাগবে যারা ইতিহাস প্রিয়, বিভিন্ন তথ্য জানতে পছন্দ করেন তাদের। আমি খুব অবাক হয়েছি ছবি তোলার পেশায় নিযুক্ত ব্যক্তিকে একসময় বলা হতো ফটোওয়ালা। ভারতবর্ষে এবং ঢাকায় ক্যামেরা ও ছবি তোলা এই শিল্পের বিকাশের জন্য নবাব আহসানুল্লাহ অনেক বেশি অবদান রেখেছেন। নবাব পরিবার ছবি তুলতে এবং ছবি তোলার সরঞ্জাম ও পদ্ধতিতে অনেক বেশি আগ্রহ প্রকাশ করতেন। তাদের কল্যাণেই ফ্রিৎজে ক্যাপ নামক একজন জার্মান ফটোগ্রাফারের ঢাকায় ফটো স্টুডিও দেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। পরবর্তীতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে ফ্রিৎজেকে ব্রিটিশ সরকার ঢাকা ত্যাগ করতে বাধ্য করে। 

সেকালের ছবিওয়ালা বইতে অনেক সুন্দর এবং মজার ছবি তোলা নিয়ে ইতিহাস পাওয়া যায়। আমি খুব অবাক হয়েছি জেনে বাঙালিরা ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে খুব ভয় পেত; এটা কি এখন চিন্তা করা যায় যেখানে প্রতিদিন মানুষ সামাজিক মাধ্যমে নিজের সেলফিতে ব্যস্ত। রবীন্দ্রনাথের যে ছবিটি দেখে সাধারণত দেখে অভ্যস্ত ওই ছবিটি কখন তোলা হয়েছে তারও ইতিহাসে পাওয়া যায় এই বইটিতে। ছবি বর্ধিতকরণ অথবা অনেকগুলো গ্রুপ ছবি দেখে একজনের মাথা কেটে নিয়ে সেটিকে রিটাচ এবংবড় ও সুন্দর করে প্রতিস্থাপন করার পদ্ধতি গুলো ১৯ শতক থেকে ফটোগ্রাফাররা তাদের স্টুডিওতে ব্যবহার করে আসছে। তার বড় একটা উদাহরণ হচ্ছে জীবনানন্দ দাশের সে বিখ্যাত ছবিটি যা আমরা দেখতে অভ্যস্ত।

এখানে আরো পাওয়া যায় মানুষ শিকারী সেজে শিকারকে পায়ের নিচে রেখে স্টুডিওতে ফিকশন দ্রুত বাসায় লাগানোর জন্য। এমনকি পাটের জীবনকালের পুরো ধারাটি ৬৮টি ছবির মাধ্যমে অ্যালবাম করে রাখা আছে তাও উনিশ শতকের গোড়ার দিকে। এই বইয়ের লেখক এই বইটি লিখতে গিয়ে অনেক রেফারেন্স সংগ্রহ করেছেন এবং এই ধরনের তথ্যবহুল বই আরো বেশি তৈরি হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। আমি লেখককে ধন্যবাদ দিব সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস নিয়ে তথ্য বহুল সেকালের ছবিওয়ালা বইটি পাঠক কে উপহার দেবার জন্য। এই বইয়ের আর একটা অসাধারন দিক ছিল লেখার প্রয়োজন অনুযায়ী ছবির ব্যবহার। তবে ছবির পৃষ্ঠা গুলো আরো ভালো হতে পারতো যদিও এতে বইয়ের দাম বৃদ্ধি পেত।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ