লেখকঃ- স্টিফেন কিং
অনুবাদঃ- মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
প্রচ্ছদঃ- ডিলান
জনরাঃ- থ্রিলার
মুল্যঃ- ১৪০টাকা
পৃষ্ঠাঃ- ১২৭
ব্যাক্তিগত মতামত
রিটা হেওয়ার্থ অ্যান্ড শশাঙ্ক রিডেম্পশন বইটি বিখ্যাত লেখক স্টিফেন কিং এর অসাধারণ একটি নভেলা। আমি উনার লেখার সাথে পরিচিত হয়েছি দ্য বডি বইটির মাধ্যমে, যদিও তারপর আর কোন বই পড়া হয়নি এই বিখ্যাত লেখকের। বইটিতে যেমনই জীবনের একটি বন্দী সময়ের বিভীষিকা অসাধারণ লেখনির মাধ্যমে লেখক তুলে এনেছেন ঠিক তেমনই গল্পটি পড়ার সময় নির্দ্বিধায় মনের মধ্যে একটি থ্রিল থ্রিল ব্যাপার কাজ করতে থাকে। একটি গল্প সাধারণ সাবলীল লেখার মাধ্যমে কি দারুণ হতে থাকে সেটি এই বইটি না পড়লে এভাবে অনুভব করতে পারতামনা হয়তো। তবে অনুবাদের ক্ষেত্রে একটু কটমট টাইপ লেগেছে। অনুবাদ আরো একটু ভালো হতে পারতো, যদিও গল্পটি পড়ার সময় খুব বেশি সমস্যা হয়নি। দিন শেষে বেশ চমৎকার একটি বই পড়ে শেষ করেছি।
বিঃদ্রঃ আমি পাঠক হিসেবে এখনো নতুন, খুব বেশি বই পড়তে পারিনা। তাই রিভিউ একেবারে বিস্তারিত দিতে পারিনা। ভুল কিছু দেখলে নিজগুণে ক্ষমা করবেন আর হে, কেউ এমন দারুণ আর কিছু বই পড়ে থাকলে নাম বলবেন প্লিজ। উপক্রিত হবো।
হালের জনপ্রিয়তার শীর্ষ সিনেমা - দ্য শশাঙ্ক রিডেম্পশন।
আইএবিডির রেটিং এর সুবাদে সিনেমাটি প্রায় অনেকের-ই দেখা। তো এই সিনেমার গল্প মূলত রিটা হেওয়ার্থ অ্যান্ড দ্য শশাঙ্ক রিডেম্পশন বই থেকে নেয়া। বইয়ের লেখক স্টিফেন কিং। সেই বই প্রকাশিত হইছে ১৯৮২ সালে। বইটা প্রকাশের দশ বছর আগে জোয়ান বায়েজ নামে এক শিল্পী একটা গান করছে। গানের টাইটেল প্রিজন ট্রিলজি। তিনটি গল্প নিয়ে এই গান। গানের তৃতীয় গল্প এক কারাবন্দী আসামীকে নিয়ে যে লম্বা সময় পর জেল থেকে ছাড়া পায়। বাইরে এসে দেখে পৃথিবী বদলায়ে গেছে। কিছুতেই এই পৃথিবীতে মানায়ে নিতে পারতেছে না কারা মুক্ত ঐ বন্দী। বন্দীর নাম কিলোওয়াট।
তো এই কিলোওয়াট কারাগারের জীবনকে স্বাধীন না ভাবলেও স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নিয়েছিল; নিতে হয়েছিল। বাইরের অস্বাভাবিক জীবনে নিঃসঙ্গ কিলোওয়াট আঁকড়ায়ে ধরে বাঁচার মতো কিছু যখন পেলো না তখন বাঁচবার জন্য আত্মহত্যাকে বেছে নিলো। ঠিক যেভাবে মারা গিয়েছিল ব্রুকস। ব্রুকস আর কিলোওয়াট গল্পের দিক বিবেচনায় মিলে যেতেই পারে। কিন্তু জোয়ান বায়েজ কিলোওয়াটকে নিরপরাধ হিসেবে দেখাইছে। আদালতে প্রমাণিত আসামী অথচ নির্দোষ। বায়েজ এই নির্দোষ কিলোওয়াটের জন্য অনুকম্পার আবেদন রাখে নাই। অন্য যেসব নির্দোষ কিলোওয়াটেরা জেলে আছে তাদের ফিরিয়ে আনতে আহ্বান করেছে।
শ্রোতাদের আবেদন করছে স্বাধীন নির্দোষ বন্দীদের আটকায়ে রাখা কারাগার উঠায়ে নেয়ার ব্যাপারে তার সাথে একাত্ম হতে; নজরুলের মতো। জোয়ান বায়েজ কখনও কাজী নজরুল ইসলাম পড়েছেন কি না জানি না। তবে প্রিজন ট্রিলজির শেষ কয়েকটা লাইনের বাংলা অনুবাদ এমন-
কারার ঐ লৌহ কপাট
ভেঙ্গে ফেল, কররে লোপাট
রক্ত জমাট
শিকল পূজার পাষাণ-বেদী।
নজরুল, জোয়ান বায়েজ কিংবা স্টিফেন কিং সমসাময়িক ছিলেন না। কিন্তু সমমনা ছিলেন নিশ্চয়ই । শিল্পীদের যারা প্রতিদিন একটু একটু করে সমসাময়িক হয়ে ওঠেন তারা সময়কালের ঊর্ধ্বে সাম্যতার প্রশ্নে অভিন্ন। তো নজরুল আগে কবিতা লিখেছেন বলে যেমন দাবি করা যায় না যে নজরুল জোয়ান বায়েজ ও স্টিফেন কিং কে ধারণ করতেন। নজরুল ঠিক নজরুল হিসেবেই নিজেকে গড়ে তোলেছেন যেমনিভাবে বায়েজ ও কিং উভয়ে স্বতন্ত্র ধারায় সফল। শুধু একটি দিক বিবেচনায় নিলে নজরুল বিশেষ হয়ে ওঠেন আমাদের মনে। নজরুলের কবিতায় প্রতিবাদের যে স্ফুরণ সেটি অন্য কোথাও দেখা যায় না।
নজরুলের কলম থেকে ঝরা কালি কবিতা হয়ে যখন মগজে ঢুকে তখন প্রতিটি শিরায় যে প্রতিবাদের স্পন্দন জাগ্রত করে সেজন্যই তিনি বিদ্রোহী কবি হয়ে ওঠেছিলেন। নজরুলের কবিতায় বিদ্রোহের যে আবেদন সেটিই তাকে মনে করিয়ে দিবে প্রতিটি আন্দোলনে, প্রতিটি বিপ্লবে, প্রতিটি হৃদয়ে।
শুভ জন্মদিন কাজী নজরুল ইসলাম
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....