বই : সিদ্ধান্ত - ফৌজিয়া খান তামান্না - রিভিউ | Shiddhanto - Fowzia Khan Tamanna

  • বই: সিদ্ধান্ত 
  • লেখক: ফৌজিয়া খান তামান্না 
  • জনরা: সমকালীন 
  • প্রচ্ছদ: সোহেল আশরাফ
  • প্রকাশনী: চলন্তিকা
  • প্রথম প্রকাশ: আগস্ট ২০২১
  • পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১৫২
  • মুদ্রিত মূল্য: ৩০০/-
  • Review Credit 💕 Rafia Rahman

           ❝জীবনবোধটাই বেঁচে থাকার মূলমন্ত্র।❞

জীবন বড়ই বিচিত্র। ছুটে চলায় আমাদের প্রবৃত্তি। কিছু পেয়ে গেলে আরও পাওয়ার নেশা জেঁকে ধরে। চাই, চাই করতে করতে ভুলে যাই আসলে কী চাই আমরা...

           𝓜𝓸𝓷𝓮𝔂 𝓬𝓪𝓷'𝓽 𝓫𝓾𝔂 𝓱𝓪𝓹𝓹𝓲𝓷𝓮𝓼𝓼.

পক্ষে বিপক্ষে বিতর্ক তো কম নয়। অর্থ-সম্পদ যদিও সর্বদা সুখ আনতে সক্ষম নয় তবুও অনেক সুখ অধরা রয়ে যায় সচ্ছলতার অভাবে। মনের সুপ্ত বহু শখ-আহ্লাদ মনের গহীনেই হারিয়ে যায়। কিন্তু এই হারিয়ে যাওয়ার কারণ কি সবসময়ই ধনসম্পদ? কখনো কি প্রিয়জনের একটুখানি যত্ন বা ভালোবাসা হতে পারে না?

               ● আখ্যান —

সফল একজন বিজনেসম্যান মোহাম্মদ আবু হানিফা। সম্পদের চাকচিক্য-জৌলুশে বিভোর জীবন। কিন্তু কখনসখন মনে হয় সব থাকার পরও কি আদোও সুখে আছেন? হঠাৎ স্ত্রী জুঁইয়ের স্ট্রোক হলে সংসারের ফাঁকফোকরগুলো চোখে ধরা পড়তে থাকে। না চাইতেই পাওয়ার পরও ছেলেমেয়েদের মধ্যে এক অসুস্থ প্রতিযোগিতা! আপন ভাইবোন তারপরও ছোটখাটো বিষয়ে ঈর্ষা! না, তিনি সারাজীবন অর্থসম্পাদের পিছনেই ছুটে গেছেন ভুলে থেকেছেন পরিবার, আত্মীয়স্বজন, দায়িত্বকে কিন্তু এত সম্পদ তো তিনি গড়েছেন তাদেরই জন্য। 

বড় ছেলে সায়নের এক্সিডেন্টে দিশেহারা হয়ে পড়েন আবু হানিফা। এমন অবস্থায় এগিয়ে আছে সেই পরিবার যার থেকে অবচেতনভাবেই দূরে ছিলেন বহুকাল। যদিও ভুলে যাননি কিন্তু ছিল তো মনের আড়ালেই। তারই দায়িত্বের অবহেলায় আদরের সন্তানগুলো চলে গেছে বিপথে, সম্পর্কের বন্ধন হয়ে গেছে দূর্বল, কত আপনজন হারিয়ে গেছে কালের গহ্বরে। কিন্তু না এইবার আবু হানিফা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, ভুল সংশোধন করতেই হবে। তবে কথায় আছে না, সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়... জানতে পারেন প্রিয় সন্তান-স্ত্রীর অপকর্মের কথা। শাস্তি দিবেন নাকি মাফ করবেন সংশয়ে পড়ে যান। ভেঙে পড়া সংসারের খুঁটি আঁকড়ে ধরতে চান। নিয়ে ফেলেন কঠিন ❝সিদ্ধান্ত❞। কী সেই সিদ্ধান্ত? সিদ্ধান্তের প্রভাবে কি বদলে যাবে সব?

               ● পর্যালোচনা ও প্রতিক্রিয়া —

অতৃপ্ত মনের চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ভুলিয়ে দেয় সবকিছু। কী চাই, কেন চাই- ভুলে শুধু মনে রাখি চাই। এটাই কাহিনীর মূল উপজীব্য। যা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে আবু হানিফা চরিত্রে। স্বপ্ন ছিল কাজ-সফলতা, যার পিছে ছুটতে যেয়ে এতই এগিয়ে গেছেন যে পিছে পড়ে গেছে আপনজনেরা। তারপরই শুরু হয় হানিফার সংগ্রাম, সম্পর্কগুলো জোড়া দেওয়ার সংগ্রাম। 

প্রথম অংশে ব্যক্তি মনস্তাত্ত্বিক, আবু হানিফার পরিবার, ফেলে আসা অতীতের বর্ণনা রয়েছে। সায়নের এক্সিডেন্ট দিয়ে গল্পের শুরু। গ্রামে অতীতস্মৃতি, পরিবার সাথে শহরের জীবনের যে বর্ণনা আছে তা মিলে যাবে অনেকের সাথে। বিশেষ করে যারা জীবিকার অন্বেষনে এসে গ্রামজীবন ভুলে বনে যায় শহুরে বাবু। গ্রামীণ পরিবেশের বর্ণনা যেভাবে করা হয়েছে জাস্ট অদ্ভুত সুন্দর। কোনো তাড়াহুড়ো করা হয়নি আবার খুব একটা স্লোও বলা যায় না। গল্পের ধারা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একই গতিতে চলেছে। শেষটা কিছুটা আগেই অনুমেয়। 

বইয়ের চরিত্রগুলোর বর্ণনা যথেষ্ট বলা যায়। যে চরিত্রগুলো এসেছে কমবেশি সবগুলোরই মনস্তাত্ত্বিক, পারিবারিক আলোচনা করা হয়েছে তবে আবু হানিফার দৃষ্টিকোণ দিয়ে। আসলে পাঠক দেখবেই মূলত হানিফার অনুভবের বিচারে। তবে কিছু জায়গায় খটকা লেগেছে। সায়ন, জায়মা, লিওনের এত সহজে পরিবর্তন! যেন পুরাই ১৮০° কোণে ঘুরে গেছে এত অল্প সময়ে। আরও কিছু সময় নিয়ে হলে ভালো হতো। আর সবার পরিবর্তন একসাথে এটা কেমন জানি! আকাশ আর নিম্মির পরিবারের কাহিনীটা আবছা থেকে গেছে। সন্তান হারিয়েছে যাদের জন্য এত সহজেই কি মাফ করা যায়? কাহিনীর সমাপ্তি গোছানো। 

               ● লেখনশৈলী ও বর্ণনা —

সাবলীল লেখনশৈলী। সাথে চরিত্রানুযায়ী ভাষার প্রয়োগ ছিল প্রশংসনীয়। অতিরঞ্জিত বা অতিরিক্ত আলোচনা নেই, বিষয়টা ভালো লেগেছে। কল্পপটের বর্ণনা যর্থাথই করা হয়েছে। তবে কিছু চরিত্রের ডেভেলপমেন্টের প্রয়োজন ছিল। 
             
               ● চরিত্রায়ন —

বইয়ের চরিত্রগুলোর জন্যই আসলে বই...

মূল চরিত্র আবু হানিফা, দেরি করে হলেও বুঝতে পারেন আপনজনদের প্রয়োজনীয়তা। দায়িত্বে অবহেলার জন্য সাজানো-গোছানো সংসার প্রায় ধ্বংস। কিন্তু শেষ রক্ষা করতে লেগে যান। জুঁই, আবু হানিফার স্ত্রী। বইয়ের সবচেয়ে বিরক্তিকর চরিত্র আমার কাছে। দুই ছেলে সায়ন, লিওন; মেয়ে জায়মা। ভাতিজা সাবিল, আবু হানিফার যৌবনের প্রতিচ্ছবি বলা যায়। আরও অনেক চরিত্র আছে।

               ● প্রোডাকশন —

বইয়ের বাঁধাই ভালো হয়েছে। আরামে পেজ উল্টানো যায়। পেজ ও হার্ডকভারের মানও যথেষ্ট ভালো। সচারাচর বইয়ের জ্যাকেট পাতলা বা মোটামুটি ধাঁচের হয়ে থাকে। তবে বইয়ে মোটা জ্যাকেট দেওয়া। সহজে ভাঁজ পড়ার ভয় নেয় আবার বইয়ের এক্সট্রা প্রোটেকশন হিসেবেও কাজ করে। 

               ● বানান ও সম্পাদনা —

বানান ভুলের পরিমাণ অল্পই। পুরা বইয়ে সম্ভবত দশ/বারটা ভুল থাকতে পারে। ❝ি❞, ❝ো❞- এর ব্যবহারে টুকিটাকি ভুল চোখে পড়েছে। তবে কিছু বাক্যে সম্পাদনার দরকার ছিল। ❝সায়নের দুর্ঘটনা সবাইকে এমন এক ঝটকা এক দিল, যে অনেক কিছু বদলে গেল।❞- এক ঝটকা বা ঝটকা এক দিল হলে ঠিক হতো। ❝দিশাহারা পরিস্থিতিতে আগে আগে পড়েনি।❞- আগে একবার হলেই তো হয়। বিরামচিহ্ন ব্যবহারেও কিছু ত্রুটি আছে।

 
               ● প্রচ্ছদ ও নামলিপি —

বইয়ের সাথে সুন্দর একটা প্রচ্ছদ না হলে যেন পূর্ণতা পায় না। প্রচ্ছদের রং এতটাই গাঢ় হয়ে গেছে যে ঠিকভাবে বুঝায় যায় না কিছু। বিষয়বস্তুর সাথেও তেমন একটা মিল পাইনি। তবে নামলিপিটা সুন্দর। 

গ্রাম-শহরজীবনে যাদের জীবন বন্দী ❝সিদ্ধান্ত❞ তাদের নস্টালজিক করে তুলবে। সহজ-সুন্দর একটা উপন্যাস। সমকালীন উপন্যাস কম পড়া হয় কারণ তেমন ছুঁয়ে যায় না। কিন্তু এইবার বলতেই হচ্ছে কিছু ব্যতিক্রম তো থাকেই।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ