- বই : সুবোধ
- লেখক : আলী আবদুল্লাহ
- প্রকাশনী : সত্যায়ন প্রকাশন
- বিষয় : ইসলামি আদর্শ ও মতবাদ
- পৃষ্ঠা : 150, কভার : পেপার ব্যাক, সংস্করণ : 1st Published, 2018
- আইএসবিএন : 97898434434128, ভাষা : বাংলা
রাস্তায় রাস্তায় গ্রাফিতিতে যেই সুবোধকে দেখা যায়, তার সাথে এই সুবোধের কোনো সম্পর্ক নেই। সুবোধ অর্থ উত্তম বুদ্ধি বা জ্ঞান। আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে এই সুবোধ আগেও ছিল। এখনো আছে। খুব পরিচিত একজনের সাথে আবার পরিচয় করিয়ে দিতে আমাদের এই সুবোধ এসেছে। আগে হয়তো সুবোধের রূপটা ভিন্ন ছিল, কিন্তু এবার সে এসেছে আব্দুল্লাহ হয়ে।
কারাগার সম্পর্কিত আরো ৬টি বই PDF
আমার নাম সুব্রত রায়হান। আমার এই নাম রেখেছিলেন আমার বাবা৷ এই নামটা অবশ্য আমার কাগজে-কলমের নাম। বাবা আমাকে কখনোই পুরো নাম ধরে ডাকেননি। বাবা ডাকতেন 'সুবোধ' বলে। তিন অক্ষরের সুবোধ। আমাকে নিয়ে বাবার স্বপ্নটা ছিল অন্যরকম। মানুষের বাবারা স্বপ্ন দেখেন তাদের ছেলে ডাক্তার হবে ইঞ্জিনিয়ার হবে, আমার বাবা স্বপ্ন দেখতেন আমাকে মহাপুরুষ বানাবেন।
বাবার ধারণা ছিল ছেলে-মেয়েদেরকে যেভাবে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বানানো যায়, ঠিক সেভাবেই মহাপুরুষ হিসেবেও গড়ে তোলা যায়। আমার শৈশব কেটেছে তাই মহাপুরুষ হওয়ার বিভিন্ন কলাকৌশল আয়ত্ত করার মধ্য দিয়ে। মা মারা যাওয়ায় আমাকে মহাপুরুষ বানানোর জন্যে বাবার এই নানামুখী পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বাধা দেয়ার কেউই ছিল না। বাবা আর আমার সংসারে আমি ছিলাম বাবার আদরের গিনিপিগ।
আমি শৈশব পার করলাম, কিশোর হলাম, তারপর তরুণ থেকে যুবা। বাবা মারা গেলেন। কিন্তু মহাপুরুষ হওয়ার প্রক্রিয়া চলতে থাকলো। গেঁড়ুয়া রঙের পাঞ্জাবি গায়ে জড়িয়ে খালি পায়ে পিচ-ঢালা রাস্তা দিয়ে হাঁটা, জোছনা রাতে হাঁ করে জোছনা গেলা। এগুলো সবই আমার মহাপুরুষ হওয়ার প্রক্রিয়ার অংশ। বাবা তাঁর মৃত্যুর আগে আমার হাতে একটি ডাইরি ধরিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর পড়তে বলেছিলেন। সেটাকে অবশ্য ডাইরি না বলে উপদেশনামা বলা ভালো। জীবনে চলার নানা উপদেশ তিনি আমার জন্যে লিপিবদ্ধ করে গিয়েছেন সেই ডাইরিটিতে। এই উপদেশনামার একটি উপদেশ ছিল এরকম—
“প্রিয় সুবোধ,
তুমি যখন এই উপদেশগুলো পড়িতেছ, তখন আমি আর নাই। যতদিন আমি ছিলাম তোমাকে নিজে থাকিয়া পথ দেখাইয়াছি, কিন্তু এখন আর উহা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই তোমার জন্যে এই উপদেশনামাটি রাখিয়া গেলাম। কখনো যদি কোনো সমস্যা তোমার সামনে আসিয়া পড়ে, তখন এই উপদেশনামাখানি খুলিয়া দেখিবা।
তোমার জন্যে আমার প্রথম উপদেশ এখন আমি বলিব। স্মরণ রাখিও এই জগৎ খুবই ক্ষণস্থায়ী, সুতরাং ইহার মায়ায় কখনোই নিজেকে জড়াইবা না। হাঁসের মতো হইবা, জগতের মায়ায় ডুব দিবা ঠিক, শরীরে মায়া মাখিবা না। আশা করিতেছি এত দিনে তুমি বুঝিয়া গিয়াছ যে, কোনো কিছুই উদ্দেশ্য ছাড়া হয় না। এই পৃথিবীতে তুমি যে আসিয়াছ, ইহারও কোনো একটি বিশেষ উদ্দেশ্য রহিয়াছে। তোমার কাজ হইল সেই উদ্দেশ্যটি খুঁজিয়া বাহির করা। নিজেকে সবসময় প্রশ্ন করিবা, তুমি কে? কোথা হইতে আসিয়াছ? কোথায় যাইবা? এই প্রশ্নগুলির উত্তর খুঁজিয়া বাহির করা এবং তাহার উপর নিজের জীবন পরিচালনা করাই হইবে তোমার লক্ষ্য। আমি তোমাকে তোমার লক্ষ্যে পৌঁছাইতে নানাভাবে সাহায্য করিয়াছি এবং মৃত্যুর পরও এই উপদেশনামা দ্বারা সাহায্য করিব। কিন্তু তোমাকে কোনো পথ বাতলাইয়া দিব না। পথ তোমার নিজেরই খুঁজিয়া লইতে হইবে। মহাপুরুষ হইতে হইলে এইসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজিয়া বাহির করা এবং উহার উপর চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি চাই তুমি যখন এই ধরণি ত্যাগ করিবা তখন তুমি মহাপুরুষ হইয়াই ধরণি ত্যাগ করিবা। সবার সন্তান ডাক্তার হয়, ইঞ্জিনিয়ার হয়, চোর হয়, ডাকাত হয়— তুমি হইবা মহাপুরুষ।”
ইতি
তোমার বাবা।
আমি মহাপুরুষ হতে পেরেছি কিনা জানি না, তবে কুরআন পড়ার পর আব্দুল্লাহ হয়ে গেছি। ‘আব্দুল্লাহ' অর্থ আল্লাহর গোলাম। সুবোধ থেকে আব্দুল্লাহ হওয়ার এই প্রক্রিয়াটি জটিল কোনো প্রক্রিয়া নয়। প্রথম প্রথম আমার পরিবর্তনগুলো আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধবরা একটু অন্য দৃষ্টিতে দেখতো; পরে মানিয়ে নিয়েছে। এখন সবাই আমাকে ‘আব্দুল্লাহ' নামেই ডাকে।
রাত দুটা বাজে। আমার কাছে এটা তেমন কোনো রাত না। বলা যেতে পারে রাতের শুরু। The night has only started. কিন্তু ঢাকা শহরের মানুষগুলো আমার মতো না। রাত দুটা তাদের কাছে অনেক রাত। বেশির ভাগ মানুষই শুয়ে পড়েছে। যাদের সামনে SSC, HSC পরীক্ষা তারা বই সামনে নিয়ে ঝিমুচ্ছে। আর কিছু যুবক-যুবতি কম্পিউটারের দিকে দুচোখ বড় বড় করে তাকিয়ে ফেইসবুকিং করছে।
আমি হাঁটছি। বলা যেতে পারে এক রকম হন হন করেই হাঁটছি। এমনিতে যাদের হাঁটার গতি কিছুটা মন্থর তারাও গভীর রাতে হন হন করেই হাঁটে। পশুদের ব্যাপারটা ভিন্ন। রাতে তারা হাঁটে মন্থর গতিতে। তবে আমার এই হন হন করে হাঁটার পেছনে বিশেষ কারণ আছে। নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাহাজ্জুত নামাযে নাকি এক রাকাতে দাঁড়িয়ে এতো বড় তেলাওয়াত করতেন যে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার করে দিতেন। আজ আমিও তাই চেষ্টা করতে গিয়েছিলাম। বড় সুরাগুলো এখনও ভালো মতো আয়ত্ত করতে পারিনি। আমার মুখস্ত আছে ৯১ নম্বর সুরা থেকে শুরু করে ১১৪ নম্বর সুরা পর্যন্ত। এই সুরাগুলো দিয়েই মাসজিদের বারান্দায় নামায শুরু করে দিলাম। টার্গেট ছিল এতো ধীরে এবং কন্সেনট্রেশন দিয়ে আজকে দুরাকাত তাহাজ্জুদের নামায আদায় করব যাতে মিনিমাম এক ঘণ্টা সময় লেগে যায়।
আমি যখন নামায শুরু করলাম তখন রাত একটা চল্লিশ। বেশ ধীর গতিতে নামায শেষ করে মাসজিদের বারান্দার দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি দুটা বাজে মাত্ৰ৷ এতো ধীরে নামায আদায় করার পরও সময় লাগলো মাত্র বিশ মিনিট। ঠিক তখন বুঝতে পারলাম আমার খিদে পেয়েছে। প্রচণ্ড খিদে। আমি বেরিয়ে পড়লাম। কিছু রেস্তোরাঁ তখনো খোলা। কড়া কড়া ভাত, টক হয়ে যাওয়া বিরিয়ানি হয়তোবা পাওয়া যাবে। তবে খেতে হবে নগদ পয়সায়। নিশিরাতে কাস্টমারদের কোনো হোটেলওয়ালা বিনে পয়সায় খাওয়ায় না। আমার সমস্যাটা হচ্ছে—
আমার গায়ে যে জোব্বাটা আছে তাতে কোনো পকেট নেই৷ পকেটহীন এই জোব্বাটা আইশার বাবা আমায় কিনে দিয়েছেন। বেশ বাহারি জিনিস। গোল গলা, গলার কাছে সূক্ষ্ম সুতোর কাজ। সমস্যা একটাই—– পকেট নেই। ইতঃপূর্বে জোব্বাটার এই ত্রুটির দিকে আইশার বাবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই তিনি বললেন, ‘পকেটের তোমার দরকার কী?'
মুরুব্বিদের প্রায় সব যুক্তিই আমার কাছে খুব কঠিন যুক্তি বলে মনে হয়। কাজেই আমিও বললাম তাই তো, পকেটের আবার দরকার কী! আইশার বাবা তির্যক হেসে বললেন, 'তুমি তো সেই নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং সাহাবিদের প্রাচীন জামানার ইসলাম পালন করতে চাও। তা তাঁরা যে জোব্বা পড়তেন তাতে কি পকেট থাকত?’
আইশার বাবা কথাটা বলেছেন বিদ্রূপের সুরে, কিন্তু ব্যাপারটা সত্যিই আমি জানি না। আসলেই তো? নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং সাহাবিরা যে পোশাক পড়তেন তাতে কি আমাদের মতো এরকম পকেটের ব্যবস্থা ছিলো? আমি মুরুব্বির কথার বিপরীতে কিছু বললাম না। শুধু চোখে এর উত্তর জানিনা এমন ভঙ্গিমা এনে ক্যাবলা মার্কা একটা হাসি দিয়ে বুঝিয়ে দিলাম যে, পকেট না থাকলেও জোব্বাটা আমার বেশ মনে ধরেছে। আমি খুশি খুশি ভাব এনে পকেটহীন জোব্বাটা গায়ে জড়িয়ে নিয়েছি। তারপর মুরুব্বির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বের হয়ে গেছি। আর তারপর থেকেই না খেয়ে আছি। যখন পকেটে টাকা থাকে তখন অনেক বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে দেখা হয়। তারা চা খাওয়াতে চায়, সিঙ্গারা খাওয়াতে চায়। আজ যেহেতু পকেট নেই, কাজেই পরিচিত কারও সাথে দেখাও হয়নি। বুঝতে পেরেছি এ হলো আল্লাহর পরীক্ষা। ধৈর্য ধরতে হবে। কেননা, ধৈর্যশীলদের আল্লাহ পছন্দ করেন।
আমি এখন অবশ্য ছোট ফুপার বাসায় যেতে পারি। রাত সোয়া দুটার দিকে কলিং বেল টিপে তাদের ঘুম ভাঙ্গালে কী নাটক হবে তা আগেভাগে বলা মুশকিল। ছোট ফুপা আগে থেকেই তার বাড়িতে আমার যাওয়া নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন। কাজেই আমাকে দেখে তিনি খুব আনন্দিত হবেন এরকম মনে করার কোনোই কারণ নেই। সম্ভাবনা শতকরা আশি ভাগ যে, তিনি বাড়ির দরজা খুললেও গ্রিল খুলবেন না। গ্রিলের আড়াল থেকে হুংকার দিয়ে বলবেন, গেট আউট। গেট আউট। পাঁচ মিনিটের মধ্যে গেট আউট; না হয় বন্দুক বের করব। বন্দুক বের করা তার কথার কথা না। ঢাকার এডিশনাল আই জি তার বন্ধু মানুষ। তাকে দিয়ে তিনি সাম্প্রতিক বন্দুকের একটা লাইসেন্স করিয়েছেন এবং একটা দোনলা রাইফেল কিনেছেন। সেই রাইফেল তার এখনও ব্যবহার করার সুযোগ হয়নি। হয়তো তিনি বেশ আগ্রহ নিয়েই সুযোগের অপেক্ষায় আছেন।
বাকি থাকে— জাহানারা ফুপু। ‘সূর্যের চেয়ে বালি গরম' এর মতো। ছোট ফুপুর চেয়ে তিনি আরও বেশি গরম। ঢাকার এডিশনাল আইজির সাথে তার বন্ধুত্ব থাকলে তিনি হয়তো একটা মেশিন গানের লাইসেন্স নিয়ে ফেলতেন।
তবে ভরসার কথা— আজ বৃহস্পতিবার। দেওয়ানবাগীর মুরিদ ছোট্ ফুপা প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে আয়োজন করে খানিক জিকির-আজকার করেন। খুব আগ্রহ নিয়ে করেন। কিন্তু ডাক্তারের দেয়া পাওয়ারফুল ঘুমের ওষুধের কারণে প্রায়ই অল্প কিছুক্ষণ পর ঝিমিয়ে পড়েন। বড় বড় নিঃশ্বাস নিতে নিতে তখন বিড়বিড় করে জিকির বাদ দিয়ে হিন্দি কাওয়ালি গানের সুর ধরেন। এত রাতে কলিং বেলের শব্দ শুনলে তারা কেউ দরজা খুলতে আসবে না। আসবে অভি; এবং সে একবার দরজা খুলে আমাকে ঢুকিয়ে ফেললে আর কোনো সমস্যা হবার কথা না।
ছোট ফুপার বাড়ির কাছাকাছি এসে টহল পুলিশের মুখোমুখি হয়ে গেলাম। তারা দলে চারজন। আগে দুজন দুজন করে টহলে বেরুতো। ইদানীং বোধ হয় তারা দুজন করে বের হতে সাহস পাচ্ছে না; চার জন করে বের হচ্ছে। আমাকে দেখেই তারা থমকে দাঁড়ালো এবং এমন ভঙ্গি করলো যেন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় টেররিস্ট পাওয়া গেছে। দলের একজন, বোধ করি সবচেয়ে ভীতুজন—কারণ ভিতুরাই বেশি চেঁচিয়ে কথা বলে—চেঁচিয়ে বলল, কে যায় রে? পরিচয় কী?
আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম এবং অত্যন্ত বিনয়ের ভঙ্গিতে বললাম, আসসালামু আলাইকুম। আমি আব্দুল্লাহ। আপনারা কেমন আছেন? __ বাকি অংশ পড়তে সুবোধ লেখক : আলী আবদুল্লাহ বইটির অরিজিনাল কপি সংগ্রহ করুন।
সুবোধ বই রিভিউ
কিছু বই থাকে যেগুলো উপন্যাস হয়েও প্রকাশ করে মহাকালের পটে ঘটে যাওয়া বহু বাস্তবতা, এ বইটিও তেমন। এটি একটি কাল্পনিক উপন্যাস, কিন্তু এখানে উঠে আসা কল্পনাগুলো প্রতিনিধিত্ব করছে বহু বাস্তব ঘটনাকে। ছবি এঁকেছে এমন বহু সত্যের, যেগুলোকে কেবল বিশ্বাসীরাই অনুভব করতে পারেন।
.
বইটিতে যে বিষয়টি মনে সবচে বেশি দাগ কেটেছে, তা হলো “আল্লাহর উপর আস্থা”। এতে দেখা যায়, বিশ্বাসী বান্দারা কেমন করে আল্লাহর উপর ভরসা রেখে এগিয়ে যান তাঁর পথে। এতে দেখা যাবে, কোনো আশা নেই চারদিকে, বয়সও হয়ে গিয়েছে, ব্যাংকের চাকরীটা ছেড়ে দিলে অন্য কোথাও চাকরী মিলবে এমন আশাও নেই। তবু চাকরী ছেড়ে দেওয়া হলো কেবল ই আল্লাহকে খুশী করবেন বলে। পরবর্তীতে পরীক্ষাও কম দিতে হয় নি, তবু আল্লাহর উপর দেখা যায় অগাধ আস্থা। আসলে বিশ্বাসীরা তো এমনই হন, আল্লাহর দেওয়া রিজিকের বহুবারের ওয়াদাকে শয়তানের একবারের দারিদ্রের ভয় দেখানোর কাছে কিছুতেই ম্লান হতে দেন না।
.
বইটিতে আরও দেখা যাবে অঢেল টাকা-পয়সার মালিক হলেই যে মানুষ সুখী হয়, বাস্তবতা তেমন নয়। আসল সুখ তো পাওয়া যায় আল্লাহর আনুগত্যে! আল্লাহর উপর ভরসা করতে পারার মাঝে যে শান্তি তা কি অন্য কিছুতে পাওয়া সম্ভব?
.
বইটিতে প্রতিভাত হবে, কাউকে মিথ্যা আশা দেওয়ার করুণ পরিণাম। প্রকাশ পাবে ‘না’ বলতে পারার ব্যর্থতা। একইসাথে দেখা যাবে মানুষ কতটা সরলতায় অন্যকে বিশ্বাস করে শেষে কষ্ট পায়।
.
বইটিতে দেখা যাবে আল্লাহর জন্যেই ভালোবাসার স্বরূপ। দেখা যাবে কেমন করে নিজে না খেয়ে অন্য ভাইকে খেতে দেওয়া যায়। দেখা যাবে অন্য ভাইয়ের উপকার করার প্রচেষ্টা!
নবীজী যে বলেই দিয়েছেন- “ইরহামু মান ফিল আরদ্ব, ইয়ারহামুকুম মান ফিসসামায়ি”, অর্থাৎ “জমীনের বাসিন্দাদের প্রতি দয়া করো, তবে আকাশে যিনি আছেন তিনিও তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।”
দেখা যাবে এই পরোপকারিতাই কেমন করে নাড়া দিয়েছিল অবিশ্বাসী মনকে, যদিও আরও অনেক কিছুই ছিলো সেই নাড়া দেওয়ার পেছনে।
.
দেখা যাবে আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়ার পর কেমন করে নিশ্চিত থাকা যায়।
সর্বোপরি বইটিতে দেখা যাবে ‘গুরাবা’-জীবনের স্বরূপ।
—
সত্যি, এক বসাতেই পড়ে ফেলার মতো একটি বই,তবে পড়ে ফেললেই শেষ নয়, বইয়ের শিক্ষাগুলো মনকে ভাবাবে অনেককিছু, বিশ্বাসী মন যা থেকে পেতে পারে বেশকিছু স্বরণিকা।
সুবোধ বই রিভিউ ২
lightspreads – June 2, 2020
- বইঃ সুবোধ
- লেখকঃ আলী আবদুল্লাহ (Ali Abdullah)
- প্রকাশনীঃ সমর্পণ প্রকাশন (Somorpon Prokashon)
কারা পড়বেন বইটি?
———————–
যারা হুমায়ুন আহমেদ এর বই পছন্দ করেন তাদের জন্য পারফেক্ট বই। রস, আনন্দের মাঝে কখন যে অসাধারন সব জিনিস শিখে যাবেন টেরই পাবেন না। যারা ইসলামী বই পড়া শুরু করতে চান তাদের জন্য এই বইটি ভাল।
কেন পড়বেন বইটি?
———————-
মন খারাপ, হাসতে চান? হাতে তুলে নিন সুবোধ বইটি। পাশের মানুষ ভাববে, এ বই পড়ে এত হাসে কেন? তবে হ্যাঁ। হাসির সাথে সাথে নীতি, নৈতিকতা, মূল্যবোধ শিখবেন।
লেখকের কথাঃ
——————-
রাস্তায় যে ছবি আঁকা (গ্রাফিতি) চিত্রে সুবোধ দেখা যায় এই সুবোধ সেই সুবোধ নয়। এই সুবোধ বিশ্বাসী, হয়তো চেনা কেউ কিন্তু অন্যরকম।
সারমর্মঃ
————
মূলত হিমু নামে হুমায়ুন আহমেদের চরিত্রকে একটু ঢেলে সাজানো হয়েছে এই বইতে। হিমু সেই রহস্যময় চালচলন, একটু কৌতুকপূর্ন কথা, ভবঘুরে টাইপের জীবন যাপন সবই খুঁজে পাবেন এই বইতে। তবে এই সুবোধ বিশ্বাসী। ধর্মে বিশ্বাসী। সে শুধু এক আল্লাহতে বিশ্বাসী তাই নয় বরং অন্যকেও দাওয়াত দেয়। ধর্মে বিশ্বাসী হতে উৎসাহ দেয়।
সুবোধের বড় ভক্ত তাঁর ছোট ফুফাতো ভাই। ছোট ফুফিও তাকে স্নেহ করে কিন্তু ফুফা একদমই পছন্দ করেন না।
সুবোধের বাবা চেয়েছিলেন সুবোধ মহামানব হবে। কিন্তু সুবোধ সন্ধান পায় সু বোধের, বিশ্বাসের। এই বিশ্বাস সে ছড়াতে থাকে তার আশেপাশের মানুষদের মাঝে, পরিবেশে। গল্প এভাবেই এগিয়ে যায়। আনন্দ, হাসি, যুক্তি, শিক্ষার মাধ্যমে। গল্পের কাহিনী বলে দিলে মজা পাওয়া যায় না তাই লেখা হলো না। :)
মন্তব্যঃ
এক বসাতেই পড়ে ফেলা যায় এমন বই। আমি একটানা পড়ে শেষ করেছি। ওঠা যায় না বই রেখে; এমন আকর্ষন। আলাভোলা, জীবন সম্পর্কে উদাসীন এমন তরুন, যুবকদের পড়তে দিতে পারেন বইটি। কিছুটা হাসুক এরপর জীবনের মানে খুঁজে পাক। খারাপ কি?
রেটিং ৯/১০ PDF Download Shubodh
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....