- বই : দ্যা রিভার্টসঃ ফিরে আসার গল্প (পিডিএফ ডাউনলোড)
- প্রকাশনী : গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স
- বিষয় : ইসলামি আদর্শ ও মতবাদ
- পৃষ্ঠা : 256, কভার : PDF Download Free Link,
- সংস্করণ : 5th Edition, 2021
- রিভিউঃ ফয়সাল আদিব
"ভগবান রামের জয় হোক"--এই স্লোগান সবার মুখে মুখে।ভারতে তখন ধর্মীয় দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে।উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা এই স্লোগানে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার জন্য মসজিদের চারপাশে ঘিরে ফেলেছে।মসজিদের গম্বুজে উঠে পড়েছে শিবসেনার একদল নওজোয়ান।একটি মাত্র আদেশের অপেক্ষা অতপর ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া হবে এই মসজিদ!
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর।উমা ভারতীর আদেশ পাওয়া মাত্রই যে লোকটা সর্বপ্রথম গম্বুজে সর্বশক্তি দিয়ে আঘাত করতে হাত বাড়িয়েছে তিনি বলবীর সিং; শিবসেনার তৎকালীন প্রধান পৃষ্ঠপোষক।তার একটাই ইচ্ছা যেকরেই হোক বাবরি মসজিদ গুড়িয়ে দিতে হবে।আদেশ পাওয়া মাত্রই শুরু হল ভাঙ্গনের কাজ। মুহূর্তেই ধ্বংসাবশেষে পরিণত হল দীর্ঘ বছরের ঐতিহ্যবাহী প্রবীন এই মসজিদটি।মহান আল্লাহর পরিকল্পনা হয়ত ভিন্ন ছিল বলেই তিঁনি তাঁর ঘরকে এভাবে জালিমদের হাতে ছেড়ে দিয়েছিলেন!
এত বড় কীর্তি শিবসেনারা কিছুতেই নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছিল না।তাই তারা বাবরি মসজিদের দুটো ইট সাথে নিয়ে গেল যাতে লোকদের এসব দেখিয়ে আশ্বস্ত করা যায় যে,তারা সত্যিই এটা করে দেখিয়েছে।ইটগুলো প্রদর্শনীর জন্য শিবসেনার অফিসে রাখা হয়।সবাই "বলবীর সিং" নামে জয়ধ্বনি দিচ্ছিল।কারণ এই লোকটাই সাহস করে প্রথমে গম্বুজে কুঠার চালিয়েছিল বলেই বাকিরা বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার সাহস করেছিল।তাকে সংবর্ধনা দেয়া হল।
কিন্তু বাড়িতে ফেরার পর তার বাবা বেশ রেগে গেলেন ছেলের এমন কুকীর্তির কথা শুনে।তার বাবা তাকে বলল,এখনি এই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যাও।আমার জীবদ্দশায় যেন তোমাকে এই বাড়ির চৌকাঠ পেরুতে না দেখি।যে লোকের প্রশংসায় পুরো ভারতের সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে শাসকবর্গ পর্যন্ত পঞ্চমুখ, নিউজের প্রথম পাতায় পাতায় যার নামে জয়ধ্বনি ছাপানো হচ্ছে সেই তাকেই কিনা তার বাবা ঘর থেকে বের করে দিচ্ছেন?তিনি অনেক বুঝালেন,দেখুন বাবা,আমার লোকেরা কত সুনাম করছে?চারিদিকে আমাকে নিয়ে কত নিউজ হচ্ছে।দিনেদিনে আমি সেলিব্রেটি বনে গেছি।এই কাজ না করলে এটা কখনোই সম্ভব হত না!
বাবা জানালেন,যে মানুষ ভগবানের ঘর ভাঙ্গে তার সাথে আমার একই ছাদের নিচে বসবাস করা সম্ভব নয়।তুমি ঘরে থাক,আমিই ঘর থেকে বেরিয়ে চলে যাচ্ছি।
বলে রাখা ভাল,শিবসেনা প্রধান বলবীর সিংয়ের বাবা ছিলেন ঐ এলাকার একটা প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক।যথেষ্ট শিক্ষিত ও প্রতিভাবান ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি।জানা যায়,তিনি কখনোই মূর্তিপূজা করতেন না,এসবে তার আগ্রহও ছিল না।তিনি কেবল স্রষ্টায় বিশ্বাস করতেন এবং তার সকল প্রয়োজন স্রষ্টার কাছেই নিবেদন করতেন।শিবসেনায় ছেলের যোগদান তার পছন্দনীয় ছিল না।এসব দাঙ্গা হাঙ্গামারও তিনি ঘোর বিরুধী ছিলেন।এজন্য ছেলের এমন কুকীর্তির ঘটনা শুনে তার রাগান্বিত হওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল।
বলবীর সিং তার বাবাকে বললেন,আমিই বেরিয়ে যাচ্ছি ঘর থেকে। আপনার মত একজন "রামবিদ্বেষী" পিতার সাথে আমারও একই ছাদের নিচে বসবাস করা সম্ভব নয়।বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে যিনি দেশজুড়ে তুমুল আলোচনায় সেই শিবসেনার প্রধান বলবীর সিং এখন ঘরবাড়িহীন,ভবঘুরে। মহান আল্লাহর কি অপূর্ব বিচার; কল্পনারও অতীত এক দৃশ্য।
বাবরি মসজিদ ভেঙ্গেই শিবসেনাদের তৃপ্তি মেঠল না।এই কীর্তির অহংকার তাদের আরও বেশি উগ্র করে তুলল।বলবীর সিংয়ের আরেক বন্ধু যোগেন্দ্র--যিনি শিবসেনার হয়ে মসজিদ ভাঙ্গার জন্য গম্বুজে চড়ে বসেছিলেন--শিবসেনার অফিসে থাকা মসজিদের ইট দুটো বাইরে এনে সকলকে আহব্বান করলেন এখানে মুত্র বিসর্জন দিতে।সবাই বেশ হৈহুল্লুর ও তৃপ্তিসহকারে এসে মুত্র বিসর্জন দিল ইটগুলোর ওপর।সবকিছু সহ্যের একটা সীমা থাকে।মহান আল্লাহ তাঁর ঘর ভাঙ্গার সময় হয়ত এজন্য ছাড় দিয়েছিলেন কারণ তখন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ছিল,মুসলিমদের দুর্বলতাও এজন্য দায়ী ছিল।সবচেয়ে বড় কথা লোকেরা অজ্ঞ ছিল,সত্য-মিথ্যা পার্থক্য করার বোধশক্তি তাদের ঐ মুহূর্তে ছিল না। কিন্তু মসজিদের ইট কে এভাবে অপমান মহান আল্লাহ মেনে নিলেন না।কিছুদিন না যেতেই যোগেন্দ্র নামের লোকটি উন্মাদের মত উলঙ্গ হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে লাগল।
জমিদার পুত্র যোগেন্দ্র যার থাকার কথা রাজপ্রাসাদে সে এখন হীতজ্ঞানহীন এক পাগল।একদিন সে নিজের মাকে পর্যন্ত ধর্ষনের চেষ্টা করল।প্রতিবেশীরা দেখতে পেয়ে ছাড়িয়ে নিল।তার বাবা এমন কুলাঙ্গার সন্তানকে গুলি করে মেরে ফেলতে চাইলেন; জমিদারদের ঐতিহ্যবাহী বন্দুক তার ছিল।কিন্তু সবার অনুরোধে তিনি মাথা ঠান্ডা করলেন।সবাই বলল,সে এখন পাগল,তার হীতাহীত জ্ঞান নেই।অতপর ডাক্তার দেখানো হল,কবিরাজ দিয়ে ঝাঁড়ফুক থেকে শুরু করে সকল চেষ্টা ব্যর্থ হল।কেউ কেউ পরামর্শ দিল পাশের মাদ্রাসায় একজন ভাল মাওলানা আসেন,নাম কলিম সিদ্দিকি(হাফিজাহুল্লাহ,তাঁকে বর্তমানে কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছে) ওনাকে দেখানো যেতে পারে।কেউ কেউ বলল,ঐ মসজিদের ইমামের সাথে যোগাযোগ করতে।
যোগেন্দ্রের পিতার নাম রঘুবীর সিং।তিনি ইমামের সাথে যোগাযোগ করে বললেন,আমি ছেলেকে বারবার নিষেধ করেছিলাম যাতে সে এসব কাজকর্মে না জড়ায়।কিন্তু সে এখন আমার বংশের মান-ইজ্জত সব ধুলোয় মিশিয়ে দিচ্ছে।আপনি কোন একটা উপায় বাতলে দিন।
মাওলানা বললেন,আপনার ছেলে ও তার বন্ধুরা মিলে এত জঘন্য একটা কাজ(মসজিদ ভাঙ্গা) করেছে যে,মহান আল্লাহ যদি এর শাস্তি হিসেবে পুরো দুনিয়াটাই ধ্বংস করে দিতেন তবুও আমাদের কিছু করার থাকত না।সে হিসেবে আপনার ছেলের শাস্তি অতি সামান্য ও নগন্য।এর থেকে মুক্তির একটা উপায় হতে পারে,ইসলাম গ্রহন করে নেয়া।সে যদি ইসলাম গ্রহন করে তবে হয়ত তার পাপের প্রায়শ্চিত্ত হবে।কেননা ইসলাম গ্রহনের মাধ্যমে ইসলামপূর্ব সকল গুনাহ--তা যত জঘন্য ও ভয়ানক হোক না কেন--মাফ করে দেয়া হয়।মাওলানা রঘুবীর সাহেবকেও ইসলামের দাওয়াত দিলেন।
রঘুবীর সিং বললেন,যদি সে সত্যি সত্যি সুস্হ হবে এমন আশ্বাস দিতে পারেন তবে আমি যেকোন কিছু করতে রাজি আছি।
মাওলানা উপস্থিত জনতার সবাইকে বললেন,যোগেন্দ্রের জন্য দু'আ করতে।তারা যেন আল্লাহর কাছে যোগেন্দ্রের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে।এর কিছুক্ষণ পর দেখা গেল যোগেন্দ্র একটা পাগড়ি নিয়ে তার লজ্জাস্হান ঢাকার চেষ্টা করছে।এর কয়েকদিন পর যোগেন্দ্র পুরোপুরি সুস্হ হয়ে যায়।সে মাওলানার কাছে এসে বলে,সে ইসলাম গ্রহন করতে আগ্রহী।তার বাবাও ইসলাম গ্রহন করে।অতপর পিতাপুত্র মিলে শপথ নেয়,তারা আবারও বাবরি মসজিদ পুননির্মাণ করবে।
এদিকে এখবর গোটা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে উগ্র হিন্দুত্ববাদী নেতৃবৃন্দরা তাদের হত্যার পরিকল্পনা করে।এই খবর মাওলানার কানে পৌঁছালে তিনি তাদের দূরের এক জায়াগায় ৪০ দিনের জন্য তাবলীগ জামাতে পাঠিয়ে দেন।পরবর্তীতে যোগেন্দ্রর মাও ইসলাম গ্রহন করে।
এদিকে যোগেন্দ্রর বন্ধু শিবসেনা প্রধান বলবীর সিং হয়ে পড়ে বেশ একলা।তখন মুসলিমরা তাকে হত্যার জন্য খুঁজে ফিরছে।এজন্য সে পালিয়ে বাঁচতে চাইছে।১৯৯৩ সালের মার্চ মাস।বলবীর সিং এর পিতা মারা যায়।তাকে এই খবর জানানো হয় ৮ দিন পর।কারণ মৃত্যুর আগে তার পিতা বলে গিয়েছিলেন, ছেলে যেন তার শেষকৃত্যে কিছুতেই অংশগ্রহণ না করে।তিনি নাকি এও বলেছিলেন, ছেলের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে তিনি নাকি পুনর্জন্মে ‘মুসলিম’ হয়েই জন্মগ্রহণ করতে চান।বলবীর সিং তার মায়ের সাথে দেখা করতে যান, তার মা তার পিতার মৃত্যুর জন্য বলবীর কেই দায়ী করতে থাকেন।
এরপর যে মসজিদ ভাঙ্গা ছিল বলবীরের জন্য গর্বের বিষয় সেটাই হয়ে দাঁড়াল তার আফসোস, অনুশোচনার অন্যতম কারণ।সে নিজেকে দোষারোপ করতে লাগল,সেদিন এই কাজে অংশ না নিলে হয়ত আজ তার বাবা মারা যেত না আর তার মাও তার ওপর এতটা অসন্তুষ্ট হত না।
জুন মাসে মুহাম্মদ উমর(আগের নাম যোগেন্দ্র সিং) তাবলীগ থেকে ফিরে আসে এবং তার সমস্ত ঘটনার কথা বলবীর সিংকে খুলে বলে।এঘটনা বলবীর সিংকে আরও ভীত করে তুলে। একসময়কার অহংকারী,সাহসী,ইসলামবিদ্বেষী ব্যক্তির অন্তরেও মহান আল্লাহ ভয় ঢুকিয়ে দিতে পারেন এটাই তার বড় প্রমাণ।বলবীর সিংকে নিয়ে মুহাম্মদ উমর মাওলানার কাছে যায়।মাওলানা তাকে ইসলামের দাওয়াত দেন।তিনি বলেন,যোগেন্দ্রের মত তারও এই পৃথিবীতে শাস্তি নেমে আসতে পারে।আর এখানে না হলেও পরকালে আরও ভয়ঙ্কর শাস্তি তার জন্য অপেক্ষা করছে।তবে সে তওবা করলে অবশ্যই মহান আল্লাহ ক্ষমাশীল।
এরপর বলবীর সিং গভীর ভাবনা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিল সেও ইসলাম গ্রহন করবে।পরবর্তীতে বলবীর সিং এর মা ও স্ত্রী দুজনেই ইসলাম গ্রহন করেন।
Read Before Buy
আত্মার ব্যাধি গীবত : ওবায়দুল ইসলাম সাগর | Attar Badhi Gibot : Obaydul Islam Shagor
সাইরাস বইটি কেন পড়বেন? আহমেদ দীন রুমি বই | Cyrus By Ahmed Din Rumi
More Jay Nokkhotrera : Javed Rasin Book | মরে যায় নক্ষত্রেরা লেখক জাবেদ রাসিন বই রিভিউ
Steal Like an Artist : Austin Kleon - Book Review
[পিডিএফ] টুকুনজিল মুহম্মদ জাফর ইকবাল | Tukunzil PDF Muhammad Zafar Iqbal Books
[পিডিএফ] ঠগী লেখক শ্রীপান্থ | Thogi By Sripanto Books PDF Download Link
আই ফিয়ার আল্লাহ লেখক : আয়মান আশ্রাফ | I Fear Allah By Ayman Ashraf
আই লাভ ইউ বই রিভিউ - লেখক : মুহাম্মাদ আতীক উল্লাহ | I Love You : Mohammad Atiq Ullah Books
অতপর বলবীর সিং ও তার বন্ধু যোগেন্দ্র মিলে শপথ করেন, তারা তাদের বাকি জীবদ্দশায় ১০০ টা মসজিদ সংস্কার করবেন এবং নতুন ১০০ টা মসজিদ নির্মাণ করবেন।বর্তমান পর্যন্ত তাদের সংস্কারকৃত মসজিদের সংখ্যা ৬৭ টি এবং নতুন মসজিদ নির্মাণের সংখ্যা ৩৭ টি।মহান আল্লাহর কি উত্তম পরিকল্পনা।সেদিন বাবরি মসজিদ না ভাঙলে হয়ত মুসলিমরা নিজেদের দায়িত্বে অবহেলার জন্য অনুতপ্ত হত না আর শিবসেনা দুই প্রধান যারা একসময় মসজিদ ভাঙ্গার পণ করেছিল তাদের হাতে সেই ভারতের মাটিতেই সংস্কারকৃত ও নতুন সবমিলিয়ে মোট ১০৪ টা মসজিদ গড়াও সম্ভব হত না।আল্লাহ এভাবেই জালিমদের সুযোগ দেন মূলত তাঁর দ্বীনের ভিত্তিকে আরও সুসংহত করার লক্ষ্যেই; আমরা তাঁর হিকমত বুঝতে না পেরে অল্পতেই হাহুতাশ করে বসি!
এমনই ফিরে আসার সত্য গল্পগুলো জানতে বইটি নিঃসন্দেহে পড়া উচিত।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....