নিন্দুকেরে বাসি আমি সবার চেয়ে ভালো! - Shakil Sultana

বইপাওবাসী, প্রথমেই আপনাদের কাছে আমি ক্ষমা চাইতেছি কারণ ইদানিং বইপাড়ায় রিসেল, সুলভ সংস্করণ, পেইড রিভিউ, কন্টেন্ট ক্রিয়েটর সাথে টাকা পয়সা নিয়ে ঝামেলা দেখে টেখে আমরা অতি বিরক্ত হবার পরেও আমি আরো একটা সেনসিটিভ ইস্যু নিয়ে আজকে এখানে পোস্ট দিতেছি। তাই আগে থেকেই বলতেছি, যারা আর গন্ডগোল দেখতে চান না, তারা এই পোস্ট এড়ায়া যান। কিন্তু যারা পড়বেন, তারা প্লিজ পুরাটা মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।


ইস্যুর মূলে আছে গতকালকে আমার দেয়া রিভিউটা। যারা রিভিউটা দেখেন নাই, তাদের জন্য বলে রাখছি রিভিউটা করা হয়েছিলো সতীর্থ প্রকাশনার বই ‘২.২৫’ নিয়ে। স্বাভাবিকভাবে বইটা আমার যেমন লাগছে, আমি স্ট্রেইটকাট তেমনই বলছি। তবে যারা আমার রিভিউ আগে থেকেই পড়েন তারা খেয়াল করলে দেখবেন, বই ভালো না লাগলেও আমি ফানি টোনে রিভিউটা লেখার চেষ্টা করি যাতে করে সিচ্যুয়েশনটা বেশি সিরিয়াস হয়ে না যায়। অনেক পাঠক-লেখকের ধারণা আমি ফানি টোনে লিখে লেখককে ছোট করার চেষ্টা করি, তাই এ বইয়ের ক্ষেত্রে বই ভালো না লাগলেও আমি সেটা করি নাই। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই বইয়ের লেখক আমার রিভিউ নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখায়া তার টাইমলাইনে একটা ভিডিও পোস্ট করলেন। যখন ইনবক্সে এই ভিডিওর লিংক দিচ্ছিলো অনেকেই, তখন ভিডিও দেখার আগেই আমি ধরে নিলাম ওখানে আমার পিন্ডি চটকানো হইছে, কারণ নিজের লেখার সমালোচনা নিতে পারে এমন লেখক আমি এখন পর্যন্ত পাই নাই। যাই হোক, আমার পাঠকসত্ত্বার পিন্ডি নিয়ে খুব একটা কনসার্ন না আমি। কারণ বই অনেকের ইনকামের জায়গা হলেও, রিভিউ দেয়া বা বই পড়া কোনটাই আমার ইনকামের জায়গা না। সো, চিল। যাই হোক, আমি ভিডিওটা দেখলাম। দেখে মনে হলো, সেটা নিয়ে এখানে কথা উচিৎ। যদিও তিনি এখানে ওনার প্রতিক্রিয়া দেখান নাই, কিন্তু আমি বই রিভিউয়ের পোস্টটা এখানেই করছি।

প্রথমত, উনি শুরুতেই বললেন, ব্যাড রিভিউটা উনি দেখছেন। এখানে একটা কথা বলতে চাই। রিভিউ কখনো ব্যাড বা গুড হয় না। হলে হতে পারে নেগেটিভ বা পজেটিভ। আপনি এক বার বা দুবার নেগেটিভ রিভিউ উচ্চারণ করলেও ব্যাড রিভিউ টার্মটাই বেশি উচ্চারণ করেছেন। অর্থাৎ আপনার ফলোয়ার বলার জন্যই হোক কিংবা আপনার নিজের মন থেকেই হোক, আপনি রিভিউ পড়ার আগেই ধরে নিয়েছেন রিভিউটা ব্যাড। ওপরে বললাম না, ‘নিন্দুকেরে বাসি আমি সবার চেয়ে ভালো’, এই প্রসঙ্গেই বলেছি। আপনি আমাকে একটা জিনিস শিখাইছেন। তা হলো, না পড়েই জাজমেন্ট করে ফেলা। এটা আগে থেকে বুঝতে পারলে আপনার বইটা পড়ে আমার সময় নষ্ট হতো না। পরের বার মাথায় রাখবো এটা। আর আপনি বললেন, এটা ছিলো এ বইয়ের ১ম ব্যাড রিভিউ। একটা ব্যাড রিভিউ আসতেই পারে। এটা কাউন্টেবল না, এটাকে এত গুরুত্ব দেবার কিছু নেই। অথচ এত এত ভালো রিভিউ নিয়ে আপনি কোন ভিডিও করলেন না, স্রেফ একটা ব্যাড রিভিউতেই আপনাকে ভিডিও করে প্রতিক্রিয়া জানাতে হলো। ব্যাপারটা কিন্তু মজার।

দ্বিতীয়ত, আপনি দাবী করলেন, আমি যা লিখি সবই ব্যাড রিভিউ। আপনি যেহেতু এই গ্রুপেই আমার পোস্টটা দেখেছেন, ধরে নিলাম, এই গ্রুপ থেকেই আমার আগের পোস্টগুলো দেখেছেন। আপনি যেহেতু আপনার বই নিয়ে আমার লেখা রিভিউই পড়েন নি (কেন পড়েননি বললাম সেই পয়েন্টে আসছি একটু পরে), তাহলে তো বাকিদের বই নিয়ে আমার লেখা রিভিউগুলো পড়ার প্রশ্নই আসে না। পড়লে দেখতেন, এই পোস্টের ঠিক আগের ২টা রিভিউ পোস্টই পজেটিভ রিভিউ। তার আগেও আমার পজেটিভ রিভিউ আছে।

তৃতীয়ত, আপনি বললেন, একটা বিশেষ প্রকাশনীর বইয়ের নেগেটিভ রিভিউ দিই আমি এবং সেইগুলা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এইটা পড়ে স্রেফ তব্দা খাইয়া ছিলাম। পরে অনেক জোরে হেসে উঠছি। সিরিয়াসলি, আমি বিশেষ কোন একটা প্রকাশনীর বইয়ের রিভিউ দিই? আপনারটাও তো তাহলে সেই বিশেষ প্রকাশনীর, তাই না? মানে ‘সতীর্থ’র বইয়ের রিভিউ, তাই তো? ফান পার্ট ইজ, ‘সতীর্থ’র কোন বইয়ের পজেটিভ বলেন বা নেগেটিভ বলেন, এইটাই আমার দেয়া ফার্স্ট রিভিউ। আর নেগেটিভ রিভিউ যে প্রকাশনীর বইগুলাতে আসছে কি, মজা না? এই পয়েন্টটা টাইন যে টুইস্টের জন্ম দিলেন, সেই টাইম টুইস্ট যদি আপনার বইতে থাকতো, তাও পাঠক বর্তে যাইতো। অথচ আমার দেয়া নেগেটিভ রিভিউ যেগুলো আছে তার মধ্যে "বাতিঘর" "তাম্রলিপি" "সতীর্থ " "নালন্দা" প্রকাশনীর বই আছে। এরমধ্যে নালন্দার আরেকটা বইয়ের পজিটিভ রিভিউও আছে। সো প্রকাশনী ভিত্তিক যে অপবাদ আসলো তা কিভাবে খাটে গ্রুপের পাঠকরাই বিচার করুক। 

চতুর্থত, আপনি বললেন আপনার বইটার রিভিউ দেয়ার ইমিডিয়েট আগেই আমি সালমা সিদ্দিকার বইয়ের রিভিউ দিছি। ইমিডিয়েট শব্দটার কি অর্থ আপনার কাছে আমি জানিনা, তবে আপনার বই রিভিউ পোস্ট আর সালমা সিদ্দিকার ‘ডাইনী’ বইয়ের রিভিউ পোস্ট এর মাঝে আরো ৬ টা স্রেফ রিভিউ পোস্টই আছে আমার। কিন্তু আপনি তা এড়ায়া ইমিডিয়েট আগের পোস্ট বইলা যেই ব্যাপয়ারটা পোট্রে করতে চাইলেন, সেই চেষ্টাটাকে স্মার্টঅ্যাস মুভ (বাংলা বলতে চাইছিলাম, কিন্তু আবার কোনদিক দিয়া কে চাইপা ধরে কে জানে) বলা যাইতো কিন্তু আপনে হোমওয়ার্ক কইরা নামেন নাই, যে কারণে অ্যাস এর আরেকটা যে অর্থ আছে ঐটা হইয়্যা গ্যাছে। যাকগা, এরপর থেকে হোমওয়ার্ক করে নাইমেন।

পঞ্চমত, আপনি বললেন, আপনার কপাল ভালো আপনার বইয়ের একটা ব্যাড রিভিউ পোস্ট হইছে, সালমা আপার তো দুইটা ব্যাড রিভিউ পোস্ট করা হইছে। এই যে, আরো একবার হোম ওয়ার্ক না করার প্রমাণ পাওয়া গেলো। সালমা সিদ্দিকার বই নিয়ে প্রথম রিভিউটা করা হয়েছিলো, হিউমার দিয়ে। অনেক পাঠকের তা ভালো না লাগায়, পরবর্তীতে হিউমার ছাড়া রিভিউ লেখা হয়েছিল, just to show how it looks like without humor. কিন্তু আপনে তো পোস্ট পড়েন নাই, পড়লে তো এই ভুলটা করতেন না, বলতেন না দুইটা রিভিউ। তবে আমি সাজেস্ট করবো, কারো বিরুদ্ধে কোন কিছু পাবলিকলি ক্লেইম করার আগে যা বলছেন সে ব্যাপারে ঘাটাঘাটি করে নেয়া উচিত। 

ষষ্ঠত, আপনি আমাকে বললেন, উইকিপিডিয়া থেকে ফিকশনের সংজ্ঞা জানতে। ওয়েল, ভালো কিন্ত বোকা সাজেশান। কেন বোকা এইটা এক্সপ্লানেশান লাগলে আবার একটা ভিডিও বানায়ে জিজ্ঞেস কইরেন, তখন বলবোনে। যাই হোক, আমি কোথায় দাবি করলাম আপনারটা ফিকশন হয় নাই? আপনার বই অবশ্যই ফিকশন হইছে, কিন্তু লজিকলেস ফিকশন। ফিকশনে বাস্তবে ঘটা কোন ঘটনা থাকতেও পারে, নাও থাকতে পারে। কিন্তু তার মানে এই না যে বাস্তবের কোন লজিকও ঐখানে থাকবো না। বাস্তবের গরু ‘ঘাস’ খাইলে, ফিকশনের গরুও ‘ঘাস’ই খাইবো, মানুষের মত বই লিখবো না? বোঝা গেলো বিষয়টা?

সপ্তমত, সবচেয়ে সিরিয়াস যে বিষয়টা নিয়ে আপনে কথা বলছেন, তা হইলো, কোন এক প্রকাশক নাকি আমাকে দিয়ে ইনটেনশনালি এই রিভিউগুলো করাচ্ছেন, কারণ তার সাথে আপনার মনমালিন্য টাইপ কিছু হইছে, সে আপনার কাছে টাকা ধার চাইছে কিন্তু আপনি তাকে দেননি ব্লা ব্লা ব্লা।
ওয়েল, এইখানে এসে আমি একটু নড়ে চড়ে বসলাম। কারণ আপনি যে ক্লেইমটা করেছেনে এইটা বেশ সিরিয়াস। আবারও বলছি, ক্লেইম করেছেন, কোন ধারণা নয়। ধারণা করলে হয়তো জানতে চাইতাম কিসের বেসিস আপনি ধারণাটা করলেন? কিন্তু যেহেতু ক্লেইমই করেছেন, সেহেতু জিজ্ঞেস করছি, কোন প্রমাণের ভিত্তিতে আপনি এই ক্লেইমটা করলেন? আপনি লিখে এমন কোন কিছু করে ফেলেন নি যে, আপনার বলা কথা শোনা মাত্রই মানুষ বিশ্বাস করে নেবে। আজকে এই পোস্টের মাধ্যমে আমি আপনাকে চ্যালেঞ্জ করলাম, আপনি পারলে আপনার এই বইয়ের ব্যাপারে আমার সাথে কোন প্রকাশক কিংবা অন্য যে কারো সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ দেখান। শুধু এই বই না, আমার রিভিউ করা যে কোন বইয়ের ব্যাপারে এ চ্যালেঞ্জ বলবৎ থাকবে, আপনি স্রেফ প্রমাণ করে দেখান। আমি কথা দিচ্ছি, আপনি প্রমাণ দিতে পারলে, আপনার নেক্সট বইটা আমি নিজের পয়সায় কিনে ফ্রী ফ্রী ৩০০ মানুষকে বিলাবো। আর না পারলে আপনি কি করবেন? না পারলে আপনাকে আমি কিছু করতে বলবো না। কারণ আমি কাউকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে চাই না। সে বোকা লেখক হোক কিংবা সে ঘাস খাক অথবা তার মাথায় আসলেই ব্রেন বলতে কিছু না থাকুক।

৭ মিনিটের একটা ভিডিওতে অনেককিছু বলে হলেও রিভিউতে বলা আমার কোন পয়েন্ট নিয়ে কথা বলা হয় নি, কোন পয়েন্ট খন্ডানো হয়নি। অথচ বলা উচিত ছিল শুধুই রিভিউ নিয়ে, দরকার ছিল যুক্তির মাধ্যমে যুক্তি খন্ডন করার। বাট রিভিউর নেগেটিভ পয়েন্ট খন্ডাতে না পেরে ব্যাক্তি আক্রমণ আর বানোয়াট কতগুলো অভিযোগ করা হল রিভিউটা ডিসমিস করার জন্য। রিভিউ নিয়ে না বলে আপনি অনেক আত্মঅহমিকা টাইপ কথা বলেছেন আপনার ভিডিওতে (আপনার অনেক টাকা, আপনার লেখাকে আর আগে কেউ খারাপ বলেনি ইত্যাদি ইত্যাদি), তবে সেগুলো আমার সাথে পার্সোনালি কোন ক্ল্যাশ রাখে না বলে ওগুলো নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। আমি জাস্ট চাই, আপনি আপনার কথায় স্ট্যান্ড করে, আমি যে প্রকাশকের কথায় আপনার বইয়ের নেগেটিভ রিভিউ দিয়েছি সেটার প্রমাণ দেখান।

আর যদি সেটা না পারেন, তাহলে আপনার ভিডিওতে ঘাস নিয়ে করা প্রশ্নটাই উত্তর হয়ে থাকবে। - Shakil Sultana

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ