বন্ধন বইটি কেন পড়বেন ? লেখক : নোমান আলী খান । bondhon by noman ali khan

বই : বন্ধন
লেখক : নোমান আলী খান
প্রকাশনী : গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স
বিষয় : পরিবার ও সামাজিক জীবন, ইবাদত, আত্মশুদ্ধি ও অনুপ্রেরণা
শারঈ সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল মাসউদ
পৃষ্ঠা ১৪৪
স্বামী-স্ত্রীর সমস্যা, পিতা- সন্তানের দুরত্ব,পরকিয়া,ঝগড়া-ফাসাদ ইত্যাদি পারিবারিক জীবন সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা এবং তার সমাধান সংক্রান্ত উস্তাদ নোমান আলী খান এর বিভিন্ন আলোচনার সংকলন 'বন্ধন' বইটি।


এ পৃথিবীতে আপনার-আমার আশ্রয়স্থল পরিবারই। তাই পরিবারের সদস্যদের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিন। বাইরের কিছুর জন্য পরিবারকে দূরে ঠেলে না দিয়ে বরং পরিবারকে সন্তুষ্ট রাখতে কী করণীয়, তা নিয়ে ভাবুন। তাহলে আত্মিক প্রশান্তি আপনার সঙ্গী হবে সবসময়।

কেন পড়বেন বইটি 

পৃথিবীর মৌলিক প্রতিষ্ঠান পরিবার।শক্তিশালী ইসলামি সমাজব্যবস্থা মূলত পারিবারিক ভিত্তির উপর দণ্ডায়মান। বর্তমান পশ্চিমা দর্শনের প্রভাবে মুসলিম পারিবারিক জীবনেও বেশ শক্ত আঘাত এসেছে। ক্রুসেডীয় বুদ্ধিজীবীরা ইস্পাত ঢালাই মুসলিম উম্মাহর দূর্গকে টলাতে না পেরে আমাদের বীরপুরুষ তৈরির সুতিকাগার পরিবার গুলোকে অত্যন্ত সুকৌশলে ভেঙ্গে দেয়ার প্রয়াস চালাচ্ছে এবং তাদের সফলতার খবর গুলো যেন ঢাকঢোল পিটিয়ে সংবাদ মাধ্যমগুলোতে প্রতিনিয়ত আমাদের সামনে আসছে।তুষের আগুন থেকে আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ পরিবারগুলোকে বাঁচানোর জন্য বইটি পড়তে হবে।

বইটি কি নিয়ে

স্বামী-স্ত্রীর সমস্যা, পিতা- সন্তানের দুরত্ব,পরকিয়া,ঝগড়া-ফাসাদ ইত্যাদি পারিবারিক জীবন সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা এবং তার সমাধান সংক্রান্ত উস্তাদ নোমান আলী খান এর বিভিন্ন আলোচনার সংকলন 'বন্ধন' বইটি।

বইকথন

১৪৪ পৃষ্ঠার বইটিতে ২৫ টি বৈঠকি গল্পের ছলে নসিহা লেকচার রয়েছে। বই থেকে কিছু কথা আপনাদের সামনে আনতে চাচ্ছি।

★প্রথমেই বাবা ও কাক গল্পে বাবা মায়ের প্রতি সন্তানের দায়িত্ব সম্পর্কে হৃদয়স্পর্শী নসিহা দেয়া হয়েছে।মা-বাবার সাথে আপনাদের কারও আচার-আচরণ খারাপ হওয়ার অর্থ আপনি আসলে এখনো আল্লাহর ভালো বান্দা হতে পারেননি।ভয়ংকর কথা!

★পরকীয়া রোধে এবং সুসম্পর্ক বজায় রাখতে স্ত্রীর ভূমিকাঃবর্তমানে অনেক ক্ষেত্রে স্বামীদেরকে লাইনে রাখতে স্ত্রী চমৎকার ভূমিকা পালন করতে পারেন এবং স্বামীদের কুকর্মে প্ররোচনা দমন করতে পারেন।দেখা যায় স্বামী ঘরে ঢুকলো কিন্তু স্ত্রী তার প্রতি কোন খেয়াল করলো না, স্বামীর জন্য এ যেন ছুরিকাঘাতের মত,এটা স্বামীদেরকে অনেক কষ্ট দেয় এবং সম্পর্কের ক্ষতি করে।কিন্তু একই পরিস্থিতি দরজা খুলে স্ত্রী যদি স্বামীকে শুধু একটু হাসি দিয়ে অভ্যর্থনা জানায় তাতে বাকিসময়ে স্বামী বেচারা খুব ফুরফুরে মেজাজে থাকে।

★স্বামী স্ত্রী অযথা ঝগড়া না করে স্ত্রীকে স্বামীর বশে আনার জন্য প্রথমে স্বামীদের নীরব থাকার কৌশল শিখতে হবে।রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম তার স্ত্রীর সাথে চিৎকার চেঁচামেচি করতে পারতেন,কঠোর কথা বলতে পারতেন কিন্তু তিনি বলেন নি কারণ এই সম্পর্ক গুলো এত নাজুক যে শয়তান এই সম্পর্ক গুলো নষ্ট করে দেওয়ার জন্য প্রত্যেকটি সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করে। মুসলিম সমাজের যত বড় বড় দুঃখজনক ঘটনা ঘটে সেগুলো শুরু হয় স্বামী-স্ত্রীর খেয়াল রাখে না স্ত্রী স্বামীর খেয়াল রাখে না এখান থেকেই।আপনি আপনার স্ত্রীকে বিয়ে করেছেন আপনি তার অভিভাবক হয়ে তাকে তার বাবার কাছ থেকে নিয়ে এসেছেন আপনাকে এখন তার প্রতি সেসব কর্তব্য পালন করতে হবে যা তার প্রতি তার বাবা করে এসেছেন।যারা ভাবেন বউকে নিয়ে ঝিয়ের কাজ করানোর বিষয়গুলো ইসলামের আদেশ, বইটি পরলে তাদের এসব ভ্রান্ত ধারণাকে কিছুটা হলেও কমবে।

★পরিবারের প্রধান,স্বামী বা বাবা হিসেবে আমাদেরকে পরিবারের সদস্যদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। পিতা-মাতা,ছেলে মেয়ে, স্ত্রীর সাথে একটি সত্তিকারের অর্থবহ সম্পর্ক গড়ে তোলতে হবে।
এটাই প্রথম কাজ যদি পরিবারের সাথে আপনার সুস্থ সম্পর্ক না থাকে তাহলে আপনি যা বলবেন সেটি হতে পারে ইসলামের কোন বার্তা তার কোনো ওজন থাকবে না।

★সন্তান প্রতিপালনঃ ছোট বয়সে বাচ্চারা বাবা-মায়ের বিশেষ করে বাবার মনোযোগ পাওয়ার জন্য পাগল থাকে আর যখন ওরা বড় হয় বাবারা ওদের মনোযোগ পাওয়ার জন্য পাগল হন কিন্তু ছোট থাকতে বাবা মা যদি ওদের মনোযোগ না দেন,ব্যস্ততা বিশ্রামের কথা বলে ওদেরকে দূরে তাড়িয়ে দেন, ওরা বড় হতে হতে সম্পর্কটা শিথিল হয়ে যায়। আপনার ঘরে ফিরার পর পরিবারকে সময় দেয়া এটাই আপনার আসল কাজ চাকরিতে যে কাজ করেছেন সেটা শুধু এজন্য যে ঘরের আসল কাজটা ঠিক মত করতে পারেন।

★বাচ্চাদের সামনে মিডিয়া জগতকে উন্মুক্ত করে না দেওয়া। বাচ্চাদেরকে শিক্ষা দিতে হবে নিজেদের মাধ্যম। আপনি আর আপনার স্ত্রী যদি কোরআন নিয়ে কথা বলেন,আখিরাত নিয়ে কথা বলেন, অন্যের জন্য ভালো কিছু করার কথা বলেন,কাউকে সাহায্য করার কথা বলে তাহলে বাচ্চারা আপনার টা দেখে শিখে নেবে এ ব্যাপারে তাদেরকে লেকচার দিতে হবে না।

★অনেক সময়ে সন্তান, ভাইদের মাঝে প্রতিহিংসাপরায়ণ মনোভাব দেখা যায়,এর জন্য মা বাবা বিশেষ করে দায়ী থাকেন। এ বিষয়ে উস্তাদের বিশদ আলোচনা রয়েছে।

★জোর করে বিয়ে, গর্ভপাত,পতন পূর্ব অহংকার,বিধবা-বিবাহঃভুলে যাওয়া সুন্নাহ,পুরুষরা জান্নাতে হুর পাবে নারীরা কি পাবে(অনেক সুন্দর করে বুঝিয়েছেন),বিয়ে আর ডেটিং কি এক,আমার স্ত্রী হিজাব করছে না সন্তানকে কিভাবে ইসলামের শিক্ষা দিবেন, সন্তানহীনতাঃ কি আল্লাহর শাস্তি,অর্ধাঙ্গিনী না কষ্টাঙ্গিনী,ব্যর্থ প্রজন্মের লক্ষণ ইত্যাদি বিভিন্ন টপিকে আলোচনা এগিয়েছে।

বিশেষ বৈশিষ্ট্য জনপ্রিয় মোটিভেশনাল স্পিকার উস্তাদ নোমান আলী খানের আলোচনা প্রাণবন্ত,পাঠক উনার প্রত্যেকটি আলোচনার সাথে নিজের এবং আশেপাশের পরিবেশের সাথে মিল পাবেন,ফলে আলোচনার নসিহাগুলো পাঠক সহজেই গ্রহণ করতে পারবেন।

বইটি কাদের জন্য?
স্পেশালি বাবা বা স্বামী, স্ত্রী,মা,বিবাহ ইচ্ছুক ভাইবোন,সন্তানদের জন্য মোদ্দাকথা বইটি সবার জন্য অনেক অনেক গুরত্বপূর্ণ।
 
লেখক সম্পর্কেঃ ওস্তাদ নোমান আলী খান সম্পর্কে দুটো কথাই বলব,উস্তাদ কুরআন মাজীদের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত অ্যাডিক্টেড যা উনার লেকচার শুনলে অনুধাবন করা যায়,আমার দেখা সেরা মোটিভেশনাল স্পিকার।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ