Title | ছবির দেশে কবিতার দেশে PDF |
Author | সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (নীললোহিত) |
Publisher | আনন্দ পাবলিশার্স (ভারত) |
Quality | পিডিএফ ডাউনলোড |
ISBN | 9788170669692 |
Edition | 12th Printed, 2015 |
Number of Pages | 266 |
File Size | 18 MB |
Last Update | 18 / 7 / 2022 |
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আমার খুব খুব প্রিয় একজন লেখক। বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন লেখকের বই পড়লেও, একমাত্র সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত ধরেই বোধহয় সময়ের সবচেয়ে বেশি পথ হেঁটেছি। লেখক গত দুই শতাব্দীতে পেছনে ফিরিয়ে নিয়ে দীর্ঘ সময় ভ্রমণ করিয়েছেন সেই সময়, প্রথম আলো ও পূর্ব পশ্চিম উপন্যাসের পাতায় পাতায়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় নামের সাথে এই ট্রিলজির নামই সবার প্রথমে উঠে আসে। কিন্তু লেখকের ছবির দেশে কবিতার দেশে বইটি পড়ে মনে হচ্ছে, কেন এই বইটি আরো আগে পড়িনি? এই বইটিও লেখকের এক অনবদ্য সৃষ্টি।
ছবির দেশে কবিতার দেশে বইটি লেখক তার ছবির দেশে কবিতার দেশ ফ্রান্সে পাঁচবার ভ্রমন এবং ফ্রান্স যাওয়ার পথে বা দেশে ফেরার পথে অন্যান্য দেশের খানিকটা অভিজ্ঞতা দিয়ে রচনা করেছেন। কিন্তু এই বইটিকে শুধু ভ্রমণ কাহিনী বলা যায় না। কারণ বইটিতে রয়েছে ফ্রাস শিল্প, সাহিত্য, ঐতিহ্য সম্পর্কে লেখকের অভিজ্ঞতার অফুরন্ত ভান্ডার। এখানে লেখককে পাওয়া যায় একজন ভ্রমন পিপাসু ব্যক্তি হিসেবে, আবার কখনো একজন প্রাবন্ধিক, কখনো ফরাসি কবিতার অনুবাদক, কখনো কখনো পাওয়া যায় খানিকটা প্রেমিক সুনীলকেও। লেখক বইটির প্রতিটি পরিচ্ছেদের শুরুতে একেকজন ফরাসি লেখকের একেকটি কবিতা অনুবাদ দিয়ে শুরু করেছেন।
বইয়ের প্রথমদিকে বেশ খানিকটা জুড়ে রয়েছে লেখকের প্রথমবার আমেরিকা প্রবাস জীবনী। সেখানে লেখকের সাথে সোনালী চুলের ফরাসি মেয়ে মার্গারিটের সাথে পরিচয় বন্ধুত্বের কথা। আমি আসলে মার্গারিটের খোঁজেই ছবির দেশে কবিতার দেশে বইটিতে ভ্রমণে বেরিয়েছিলাম। কারণ আমি তার পূর্বে সুনীলের “সুদূর ঝর্ণার জলে” নামক রোমান্টিক উপন্যাসটি পড়েছিলাম। সে বইয়ের সমাপ্তিতে লেখকের সাথে মার্গারিটের দূরত্ব ছিল ভারতবর্ষ থেকে সুদূর আমেরিকা পর্যন্ত। মার্গারিটকে ছবির দেশে কবিতার দেশে আবার পাবো আশা করেই বইটা হাতে নিয়েছিলাম। সেই মার্গারিটকে পেয়েছিও এই বইয়ের প্রায় অর্ধেকটা জুড়ে। তার হাত ধরেই লেখক গভীরভাবে পরিচিত হয়েছিলেন ফরাসি শিল্প সাহিত্যের সঙ্গে। মার্গারিট মেয়েটি ছিল এক কবিতা পাগলী মেয়ে। সে কথায় কথায় মুখস্থ কবিতা বলত, পর্যালোচনা করত। টাকা-পয়সার প্রতি নির্মোহ মেয়েটি মাসের শেষের দিকে ক্ষুধার্ত পেটে বসেও মজার মজার কবিতা বলে নিজেকে ভুলিয়ে রাখতো। কবিতাই যেন তার সাধনা।
গিয়ম আপেলিনেয়ার নামক একজন কবির একটি কবিতায় শকুন্তলার কথা ছিল। সে এই শকুন্তলার পুরো কাহিনী জানতে চাইতো একজন ভারতীয়র থেকে। সে কবিতাটিই লেখকের মার্গারিটের সাথে যোগসুত্র তৈরি করেছিল। সে ই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল র্যাবো, ভের্লেন, বদলেয়ার, মালার্মে ভালেরি, অ্যাপোলিনিয়ার আর আঁরি মিসোর মতো বিখ্যাত সব ফরাসি কবিদের সাথে এবং তাদের কবিতার সাথে।
লেখকের প্রথম ফ্রান্স ভ্রমনে মার্গারিট সঙ্গি ছিল। সে লেখককে সে দেশের দেগা, মোনে, মানে, রেনোয়া, গগ্যাঁ, মাতিস, রুয়ো কি পিকাসোর প্রমুখ চিত্রশিল্পি এবং তাদের শিল্পকর্মের সাথে গভীরভাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। মার্গারিট লেখককে নিয়ে গেছে ভার্সাই রাজপ্রাসাদে। মার্গারিট লেখকের সাথে ফ্রান্সের ইতিহাস, ঐতিহ্য, মিথ সম্পর্কে গল্প করে লেখককে এসব বিষয়ে তথ্য সমৃদ্ধ করেছিল।
মার্গারিটের সুত্র ধরেই বইটিতে উঠে এসেছে লেখকের বন্ধু আমেরিকান কবি এ্যালেন গিন্সবার্গের কথা। এই নামটি শুনলেই মনে পড়ে একাত্তরের সেই যুবকটির কথা যে মুক্তিযুদ্ধের সময় শরনার্থীদের শিবিরে ঘুরে ঘুরে তাদের কষ্ট দেখে রচনা করেছিল “সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড” গানটি। গানটি গেয়ে গেয়ে সে শরনার্থীদের জন্য সাহায্য প্রার্থনা করেছিল বিশ্ব দরবারে।
লেখক যখন দ্বিতীয়বার ফ্রান্সে বেড়াতে যান তখন তার সাথে তার স্ত্রী স্বাতী ছিল। সেও আরেক ফরাসি সংস্কৃতি পাগলী মেয়ে। সে ফরাসি ভাষা শিখেছিল। ততদিনে মার্গারিট হারিয়ে গিয়েছিল কোন অজানায়। মার্গারিটকে হারিয়েও লেখক বারবার গিয়েছেন ফ্রান্সের ভূমিতে। এদেশ যেন লেখকের দ্বিতীয় জন্মভূমি হয়ে উঠেছিল। তার পরবর্তী চারবার ভ্রমনে লেখকের সঙ্গী হয় ফ্রান্স প্রবাসী বন্ধু অসীম, লন্ডন প্রবাসী বন্ধু ভাস্কর বা কখনো আনন্দ পাবলিশার্সের প্রকাশক বাদল। বইটিতে রয়েছে ভ্রমনে থাকা খাওয়া নিয়ে মজার মজার সব অভিজ্ঞতা। এছাড়াও আছে ফ্রান্সের সমুদ্র দর্শনের বর্ণনা।
ছবির দেশে কবিতার দেশে বইটি পড়ার পূর্বে চিত্রশিল্পের প্রতি তেমন আগ্রহ ছিল না। এই বইটি ফ্রান্সের চিত্রশিল্পের প্রতি যথেষ্ট আগ্রহী করে তুলেছে।
যদি কেউ কখনো ফ্রান্স ভ্রমনে যায় তবে এই বইটি তার গাইডলাইন হিসেবে খুব একটা মন্দ হবে না। এই বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে মার্গারিট রীতিমতো ঈর্ষণীয় চরিত্র। নিজের দেশের সংস্কৃতির প্রতি এতো শ্রদ্ধাশীলতা আর ভালবাসায় বারবার মুগ্ধ হয়েছি। লেখক পরের চারবারের ভ্রমণে বন্ধুদের সামনে মার্গারিট সম্পর্কে কথা বলা থেকে বিরত থাকতে চেয়েছেন। কিন্তু তার মার্গারিটকে খোঁজে পাওয়ার তীব্র আকুতি বারবার লেখায় ফুটে উঠেছে। বইটির প্রতিটি লাইনে যেন আমি মার্গারিট নামক মেয়েটিকে খোঁজতাম। মার্গারিটের স্মৃতি বইটিকে খানিকটা লেখকের আত্মজীবনীর মতোই লাগে। ছবির দেশে কবিতার দেশে বইটির মাধ্যমেই লেখক মার্গারিটকে পাঠকের মনে বাঁচিয়ে রেখেছেন। লেখকের ষাট - সত্তরের দশকের ভ্রমণকাহিনী পড়তে গিয়ে লেখকের নিপুণ উপস্থাপনে বারবারই ফিরে গেছি তার আগের শতাব্দীতে। লেখকের কবিতা অনুবাদ, শিল্প সাহিত্য ঐতিহ্য সম্পর্কে প্রাবন্ধিক বর্ণনা, লেখকের স্মৃতিকথা বইটিকে একাধিক ভাবে ভ্রমণ কাহিনী, প্রবন্ধ, আত্মজীবনী করে তুলেছে। বৈচিত্রপূর্ণ স্বাদ নিতে সুনীলের এই বৈচিত্র্যময় রচনাটি যেকোনো পাঠক বেছে নিতে পারেন।
শেষ করছি শার্ল বোদলেয়ারের একটি সুন্দর কবিতা দিয়ে,
“যে শিশু মানচিত্র ও প্রতিলিপি ভালবাসে
তার কাছে এই বিশ্ব তার ক্ষুধার মতোই প্রকাণ্ড
ওহ, প্রদীপের আলোয় কতই বা বিশাল এই পৃথিবী
স্মৃতির চোখে এই পৃথিবী কতই না ছোট!”
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....