#কয়ল:
#ইসরাত_জাহান_দ্যুতি
নামকরণ প্রসঙ্গে :গল্পটা যখন ফেসবুকে আপু দিয়েছিল তখন নাম দেখেই একটা টান অনুভব করেছিলাম। ঐ টান থেকেই গল্পটা পড়া শুরু করা। পরবর্তীতে যত পর্ব গিয়েছে ততই বুঝতে পেরেছি যে কেন এই গল্পের নাম কয়লা।গল্পের নাম কয়লা শুধু গল্পের মূল চরিত্রগুলোকে পুড়িয়েই শেষ হয় নি সাথে সাথে সেই সময়টাতে পাঠকদেরকেও পুড়িয়েছে স্বার্থকভাবে। তাই গল্পের নাম কয়লা না হয়ে অন্য কিছু হলে আমার মতে একদমই মানাতো না।
কাহিনী সংক্ষেপ :
একজন কালো বর্ণের মায়াবতীকে ঘিরে এই গল্পের শুরু।সেই মায়াবতীর নাম কান্তা।কান্তার বাহ্যিক সৌন্দর্যের জন্য সে তার মা-বাবা সহ বেশ কিছু মানুষের কাছে অবহেলার পাত্র হলেও একজনের কাছে শুধুই ছিল তার প্রাণভ্রমরা।তাই তো সেই একজন তাকে ভালবেসে ডাকতো ভ্রমর বলে।সেই কেউ একজনটা ছিল সমুদ্র। সমুদ্র কান্তার জীবনের সবচেয়ে ভরসার জায়গা, আদর্শের জায়গা।সমুদ্র গাছের ছায়ার মতোই কান্তাকে সব সময় সকল অত্যাচার,অবহেলা,অনুগ্রহ,অপমান থেকে রক্ষা করে গেছে ছোটবেলা থেকেই।সমুদ্রের মনে তার ভ্রমরের জন্য রয়েছে অসীম ভালবাসা যে ভালবাসা দিয়ে সমুদ্র ছোট একটা নীড় তৈরি করতে চায় তার ভ্রমরকে নিয়ে।আর কান্তা সমুদ্রের এই অসীম ভালবাসার খোঁজ পেতে পেতেই হঠাৎ করেই তার সেই আদর্শের চোখে সবচেয়ে ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয়।এই ঘৃণার জন্য কান্তা নিজেই কি দায়ি? নাকি সমুদ্রের প্রতি তার ভালবাসার অবমূল্যায়ন, তার কালো হওয়া এর জন্য দায়ি?সমুদ্রও কি তার ভ্রমরকে ঘৃণাই করে যাবে নাকি এই ঘৃণাই হচ্ছে সমুদ্র-কান্তার নতুনভাবে পথচলার শক্তি?
পাঠ প্রতিক্রিয়া :
আমার মতে কিছু ভাললাগা আছে যে ভাললাগার বর্ণনা খুব সহজেই করা যায় আর কিছু ভালোলাগা আছে যা প্রকাশ করার জন্য কোন শব্দ খুঁজে পাওয়া যায় না কারণ ভাললাগার মাত্রা থাকে অনেক বেশি।কয়লা আমার কাছে সেইরকমই একটা গল্প।কয়লার প্রতি ভালবাসা কতটা চরম তা যেদিন বই আসতে দেরি হচ্ছিল সেই দিন তা উপলব্ধি করতে পেরেছি আমি। গল্পটাতে কান্তার জীবন থেকে এতোটুকু মনে গেঁধে গেছে যে জীবনটা শুণ্য থেকেও শুরু করা যায়।জীবন মানেই তো আর হেরে যাওয়া নয় বা নিজেকে শেষ করে ফেলার মধ্যেও কোন বিশেষ কিছু লুকানো থাকে না।আর সমুদ্র এই মানুষটা কতটা সুন্দর করে বুঝিয়ে দিল আমাকে যে ভালবাসলে কাউকে নিজের মনের গভীর থেকে ভালবাস।সেই ভালবাসার শুদ্ধতা বজায় রাখা তোমার নিজের দায়িত্ব। এই দায়িত্বের নড়চড় হলেই জীবন মৃত্যু সমতুল্য। তখন তুমি মানুষ হিসেবে নিজেকে তো ভালবাসতে পারবেই না বরং নিজের প্রাণভ্রমরাকেও নিজের কাছে রাখার কোন ইচ্ছা জাগ্রত হবে না।হয়ত এইটার জন্যই সমুদ্র-কান্তার জীবন কয়লার দহন থেকে কম না। বইটা পড়ার পরেও এর রেশ আমার মধ্যে বিদ্যমান এখনও সময়টা এর মধ্যে সপ্তাহে রূপ নিয়েছে যদিও।কিন্তু কয়লার রেশ আমার মধ্যে থেকে বিন্দুমাত্র কমেনি।সব কিছু আমার সামনেই ঘটলো মনে হলো। বইটির প্রত্যেকটি পর্ব ভাললাগার ছিল।বইটি আমাকে যেমন তীব্রভাবে পুড়িয়েছে তেমনিভাবে আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে আবার আমাকে আনন্দের সন্ধানও দিয়েছে।মানে এক কথায় মিশ্র এক অনুভূতি সৃষ্টিতে এই বই স্বার্থক।
ভাললাগার লাইন সম্পর্কে :
ভাল লাগার লাইন সম্পর্কে যদি বলতে হয় অনেক অনেক উক্তি আছে এই বইটিতে যা আমাকে বইটিকে ভালবাসতে বাধ্য করেছে। সব দিতে গেলে অনেক বড় হয়ে যাবে আমার লিখাটা। কান্তাকে বুঝানোর জন্য সমুদ্রের বলা কথা গুলো ছিল আমার কাছে অসম্ভব ভালোলাগার কথা।সেই কথাগুলো শুধু কান্তাকে না যে কারোও জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষ চরিত্র সম্পর্কে :
সমুদ্র-কান্তা কে ঘিরে এই গল্প হলেও এই মানুষ দুটোর জীবনে সৌমি,ভূমি,সাগর অনেক অনেক প্রভাব ফেলেছে। তাই সমুদ্র-কান্তার সাথে সাথে এই তিনজন মানুষ আমার মনে জায়গা করে নিয়েছে কোন পারমিশন ছাড়াই। যারা গল্পটা পড়বে তারা ঠিকই বুঝবে যে কেন তারা আমার কাছে এতটা বিশেষ।
লেখিকার লেখার সার্থকতা সম্পর্কে :
বইটা পড়ার সাথে সাথে আমি নিজের একান্ত কিছু অনুভূতি ব্যক্ত করে পোস্ট করেছিলাম। সেখানে বলেছিলাম যে সমুদ্রের ভালবাসার গভীরতা, তার কষ্টের গভীরতা বুঝাতে লেখিকা আপু সার্থক কিন্তু লেখিকা কান্তার ত্যাগ,তার লড়াই করা,তার জীবনের তিক্ততাপূ্র্ণ অভিজ্ঞতার ব্যাপারটা পাঠককে বুঝাতেও অনেক বেশি সার্থক। তাদের জীবনের কয়লার দহন দেখাতে গিয়ে পাঠকমহলকে সেই দহনে পোড়াতেও লেখিকা স্বার্থক। তাই শুধু ধন্যবাদ দিব না বলব ভালবাসা নিও এতো সুন্দর একটা উপন্যাস আমাদেরকে দাওয়ার জন্য ❤️
বিঃদ্র: ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন আর সুন্দরভাবে ভুল ধরিয়ে দিবেন
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....