- Title : জামিলা
- Author : চিঙ্গিস আইৎমাতভ্
- Country : Bangladesh
- Language : Bangla
- Number of Pages : 72
- ISBN : 9789848882771
আমার তুলির প্রতিটি আঁচড়ে প্রতিধ্বনিত হোক জামিলার হৃদয়ের স্পন্দন!
কির্গিজ কথাসাহিত্যিক চিঙ্গিজ আইৎমাতভ্ (১২.১২.১৯২৮—১০.০৬-২০১৮) এর লেখা জামিলা গল্পটি মূলত একটি প্রেমের উপাখ্যান। কথকের কৈশোরের প্রথম প্রেম। প্রেমের দর্পনে দেখা নিজের প্রেমিকার প্রেমে পড়ার গল্প এবং পৃথিবীর সমস্ত নিয়ম ভেঙে দিয়ে সেই প্রেমিকের হাত ধরে প্রেমিকার কাজাখ স্তেপ পার হয়ে যাওয়ার গল্পের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই অসাধারণ উপাখ্যানটি।
গল্পের শুরু মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন তৃতীয় বছরে।
গল্পের কথক পনেরো বছর বয়সী সেইত্। যে বাড়ির একমাত্র ছেলে যুদ্ধে যায়নি। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা, ছোট মা, এক ছোটবোন ও সৎ ভাইয়ের স্ত্রী জামিলাকে নিয়ে দুই বাড়ির দেখাশোনা করতে হয়েছে। বাড়ির একমাত্র পুরুষ হওয়ায় তাকে সব বিষয়ে নাক গলাতে হয়েছে। পরবর্তী জীবনে সে চারুকলা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়েছিলেন।
গল্পের নায়িকা জামিলা হচ্ছে কথকের সৎ ভাই সাদিকের স্ত্রী। বিয়ের চার মাস পর যুদ্ধ শুরু হওয়ায় সাদিক রণাঙ্গনে যুদ্ধ করতে গিয়ে আহত অবস্থায় সারাতভের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। জামিলা অনান্য সোভিয়েত নারীদের মতো নয়। সে ছিলো ওস্তাদ ঘোড়সওয়ার, স্পষ্টভাষী, তেজী, ছিলো তীক্ষ্ণতা ও রূঢ়তাও, অকারণে উচ্চস্বরে হাসতো এবং গান গাইতে ভালোবাসতো। কথক জামিলার প্রতি এক প্রগাঢ় টান অনুভব করতো।
জামিলা সেইত্কে ডাকতো 'কিচিনে বালা' অর্থাৎ ছোট ছেলে আর সেইত্ জামিলাকে ডাকতো 'দজেনে' বলে। গল্প এগোতে থাকে।
শস্যের প্রতিটি দানা রণাঙ্গনের জন্য— এই বাক্যটির মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিশালতা এবং সামগ্রিকতা। যুদ্ধের ময়দানে খাদ্য সরবরাহের জন্য সরকারের কাছে খাদ্য জমা দিতে তাদের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে, স্তেপের উপর দিয়ে পনের মাইল, তারপর গিরিখাতের ভেতর দিয়ে স্টেশনে পৌঁছাতে হতো। এই কাজের ভার পড়ে সেইত্ আর জামিলার উপর। সঙ্গী হিসেবে তারা দানিয়ার নামের এক যুদ্ধ ফেরত আহত সৈনিককে পায়।
দানিয়ার এই গল্পের মূল নায়ক। সে দেখতে নিরীহ, শান্ত এবং গম্ভীর একই সাথে চুপচাপ এবং স্বল্পভাষী একজন মানুষ। দানিয়ারের গানের গলা চমৎকার। কথক দানিয়ারের গানে খুঁজে পায় পৃথিবীর সৌন্দর্য। গ্রামের অন্য সবার মতোই কথক আর জামিলাও তাকে উপহাস করতে দ্বিধাবোধ করতো না যদিওবা দানিয়ার এই নিয়ে কখনো মনোকষ্ট পেয়েছে কিনা তা জানা যায়নি। দানিয়ার যেন অনুভূতি শূন্য এক মানুষ।
একদিন কথক আর জামিলা দানিয়ারের সাথে এক মারাত্মক রকমের তামাশা করে বসে। যার পরিণাম হয়েছিলো খুবই দুঃখজনক। সেই থেকে জামিলার মনে দানিয়ারের জন্য জন্ম নেয় সহমর্মিতা আর সে-ই সহমর্মিতা কখন যে ভালোবাসায় রূপ নেয় তা জামিলা নিজেও হয়তো জানে না।
ভালোবাসার সংজ্ঞা কি? আর এই ভালোবাসার পরিণতিই বা কি? কথক কিভাবে মেনে নিবে তার সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনা এবং কিভাবে মেনে নিবে নিজের প্রেম বিসর্জন? জামিলার স্বামী সাদিক শরৎকালে ফিরে কীভাবে মেনে নিয়েছিলো নিজের ভাগ্য এবং সমাজ কী আদৌ মেনে নিয়েছিলো জামিলার এই প্রেম?
টুকে রাখা কিছু লাইন:
*সন্তানের মা হওয়া আর স্বচ্ছল পরিবারে বাস করার মধ্যেই মেয়ে মানুষের সুখ।
*সুখ তাদেরই কপালে ঘটে যারা নিজেদের মর্যাদা আর বিবেক নির্মল রাখে।
*নাগালের বাইরে মাংস থাকলে বিড়াল তা সবসময়ই অবজ্ঞা করে।
*পালের মধ্যে সব ভেড়ার বাচ্চাকেই এক রকম দেখায়।
*তুলপার (কিংবদন্তীয় ঘোড়াবিশেষ) নিজের দলে ফিরে আসবেই—যদি সেটা দুনিয়ার অপর প্রান্তে হয়, তবুও।
*'না, যুদ্ধ সম্পর্কে কোন কিছু না জানা-ই তোমাদের পক্ষে সবচাইতে ভাল!
(যুদ্ধ এমন বিষয় নয় যা সম্পর্কে লঘুভাবে কথা বলা যায়—যুদ্ধ বিছানায় শুয়ে শোনার মত গল্প নয়)
*'শস্যের প্রতিটি দানা রণাঙ্গনের জন্য'।
*নিজের প্রিয়জন অন্যের প্রতি মনোযোগী হলে শিশুরা সর্বদাই অপছন্দ করে।
*কথা কি মানুষের সব অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে...
*যে পথ দিয়ে ছেলেরা যুদ্ধে গেছে, সেই পথ তিক্ত হয়ে আছে...
*প্রেম কি মানুষের মধ্যে এমন কোন প্রেরণার ভাব সৃষ্টি করে, যেমন হয় শিল্পী অথবা কবিদের মধ্যে?
* আমি ওকে চাই না, অনেক দেরিতে আসা ওর প্রেমও চাই না;
*যেতে যদি চাস, যা... অভীষ্ট স্থানে গিয়ে হয়তো তোর মত পাল্টাবে।
ফ্রান্সের লেখক লুইস এরাগনের মতে 'জামিলা' পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ প্রেমের উপাখ্যান। সংহতি প্রকাশনের খালেদ চৌধুরীর করা
অনুবাদ বেশ সাবলীল ও সুপাঠ্য।
প্রকাশন: রাদুগা (বাংলায় সংস্করণ: সংহতি)
মুদ্রণ: ফেব্রুয়ারি ২০১৬
মুদ্রিত মূল্য: ১৩০৳
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৭২
প্রকৃতি: প্রেমকাহিনী।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....