খিলাফত ও রাজতন্ত্র PDF - ইমাম ইবনে তাইমিয়া (আল খিলাফাত ওয়াল মুলক) | Khilafot O Rajtontro

বই : আল খিলাফাত ওয়াল মুলক (খিলাফত ও রাজতন্ত্র)
লেখক : ইমাম ইবনে তাইমিয়া
অনুবাদক : কামরুল হাসান নকীব
প্রচ্ছদ : আবুল ফাতাহ মুন্না
ধরন : ইতিহাস,রাজনীতি (নন-ফিকশন)
প্রকাশনী : গার্ডিয়ান প্রকাশনী
মুল্য : ১৯০ টাকা
প্রকাশকাল : ১৫ ফেব্রুয়ারী,২০২২
পৃষ্ঠা : ১৪৪
রেটিং : কন্টেন্ট ৮.৫/১০,অনুবাদ ৭.৫/১০ ,অন্যান্য ৯.৫/১০

(এই কন্টেন্ট এর জন্য লেখক,প্রকাশক বা অনুবাদক অথবা অন্য কোনো মাধ্যম থেকে কোনো অনুরোধ বা পেমেন্ট করা হয়নি, এটি একান্ত নিজস্ব প্রতিবেদন যা নিবেদন করছি, যা প্রকাশন বা লেখক বা অনুবাদকের নিকট অনুরোধের দৃষ্টিতে বইয়ের সমালোচনা গ্রহন হবে বলে বিশ্বাস করি)

১, খিলাফতঃ মক্কা হচ্ছে তাওহীদের সোর্সল্যান্ড! বহু পয়গম্বরের আদি পুরুষ ইব্রাহীম (আঃ) নিজ পুত্র ইসমাইল (আঃ) এর সহায়তায় যেখানে প্রথম ইবাদতঘর নির্মান করেন। সেখানেই কালেরপরিক্রমায় স্থান করে নেয় শিরক। এই কালো অন্ধকার যুগে আলোর রশ্মি হাতে উদয় হন প্রফেট মোহাম্মদ(সঃ)।বহু শাতিমে রাসুল এক পর্যায়ে নিজেদের জীবন বিলিয়ে দেয় প্রিয় নবীর জীবন রক্ষায়,ইসলামকে পৃথিবীর বুকে দন্ডায়বান করতে,ফলে কোনো ঝড়ই আঘাত হেনে নিবিয়ে দিতে সক্ষম হয় না । তেরো বছর এই পবিত্র ভুমি মক্কায় ইসলামের দাওয়াত দিয়েও অল্প সংখ্যক মুসলিম হয়।আফটার দিস টাইম,প্রিয় নবী ও তার সাথীগন হিজরত করেন ইয়াসরিবে তথা মদিনায়।সম্মানিত হয় এই শহর। 

সাদরে গ্রহণ করেন প্রিয় নবী ও তার সাথিদের। আনসারগন সাহায্যে এগিয়ে আসেন,যার যা আসে তাই নিয়ে সাহায্য করেন। কিন্তু এত সংখ্যক লোক পরিচালনার তো একটি মাধ্যম চাই!
কি সেই মাধ্যম?কি সেই নীতি? হ্যা রাষ্ট্রগঠনে সেই নীতিটা হয়ে যায় খিলাফত নামে।সংবিধান হয়।নতুন এক নীতির প্রবর্তন হয়।যে নীতির শাসনভার বংশের জোড়ে ন্যস্ত না হয়ে,দায়িত্ব হস্তানতর হবে বহুমাত্রিক যোগ্যতায়।খিলাফত হলো সরকারের ইসলামী রুপ, যা মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্ব এবং রাজনৈতিক একতার প্রতিনিধিত্ব করে। মাজিদ খাদ্দুরী বলেন, “The khilafot means temporal leadership based on religion.

আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত,রাসূল (সাঃ) বলেন,
“বনী ইসরাইলে আম্বিয়া কিরাম নেতৃত্ব দিতেন।যখনই কোন নবী ইন্তিকাল করতেন তখনই পরবর্তীতে নবী তার স্থলভিষিক্ত হতেন।কিন্তু আমার পর আর কোন নবী আসবে না।তবে আমার পর খলীফা হবে।” (বুখারী)

২,আচ্ছা সম্মানিত পাঠক, আপনি নিশ্চয়ই উমাইয়া খেলাফত,আব্বাসি খেলাফত এগুলোর নাম শুনেছেন তাই না? এগুলো মূলোট কি?এগুলোই মুলত রাজতন্ত্র! জ্বী হ্যা!যার অন্য নাম রাজতান্ত্রিক খেলাফত।

খেলাফত মুলত আলী রাঃ এর মৃত্যুর পর পুরোদমে ছড়িয়ে যায়।রাজতন্ত্র হল একক শাসকের সার্বভৌমত্বের উপর ভিত্তি করে একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা। রাজতন্ত্র হল এক ধরনের সরকার ব্যবস্থা যেখানে সম্পূর্ণ সার্বভৌমত্ব একজন ব্যক্তির কাছে ন্যস্ত করা হয়, যিনি মৃত্যু বা ত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত এই পদে অধিষ্ঠিত থাকেন। রাজতন্ত্র হল এক ধরনের সরকার যেখানে একটি পরিবার দেশ বা এলাকা শাসন করে।উইকি মতে In that system of governance, a ruler gets the opportunity to rule in a hereditary manner.

৩,খিলাফত ও রাজনতন্ত্রের হুকুমঃ মাওলানা কারী মুহাম্মদ তাইয়েব বলেন, খিলাফত দুই ধরনের হয়।তা হল খিলাফাতুল্লাহ এবং খিলাফাতুল্লাহ আম্বিয়া।খিলাফতের মূল কাজ কি?(এই তথ্যটি বইতে নেই)

১. সার্বভৌমত্বঃ সার্বিকভাবে আল্লাহ পাকের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করা হল ইসলামী খিলাফতের মূলনীতি।কারণ এই পৃথিবীর সকল কিছুর সার্বভৌমত্ব একমাত্র আল্লাহর।তার উপর কোন সার্বভৌমত্ব নেই।এ বিশ্বাস রেখে ইসলামী খিলাফত পরিচালিত হতে হবে।আল্লাহ এ ব্যাপারে কুরআনে বলেন,
আল্লাহ্ ছাড়া কারো নির্দেশ চলে না। [আনআমঃ৫৭]
নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের রাজত্ব তাঁরই। [হাদীদঃ২৫]

২. শুরাভিত্তিক শাসনব্যবস্থাঃ এই ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা একনায়কতন্ত্রী শাসনব্যবস্থাকে প্রশ্রয় দেয় না।তা মানুষের সাথে মানুষের পরস্পর পরামর্শের মাধ্যমে শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করার ব্যাপারে বিশেষভাবে উদ্বুদ্ব করে থাকে।তাই আল্লাহ বলেন,
“কাজে কর্মে তাদের পরামর্শ করুন”। [ইমরানঃ১৫৯]
“পারসপরিক পরামর্শক্রমে কাজ করে”[শুরাঃ৩৮]

মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, “তোমরা কোনকিছু কুরআন-হাদীসে না পেলে পরামর্শ করে মীমাংসা দিবে।”
উমার (রাঃ) পরামর্শের উপর জোড় দিয়ে বলেছেন, “যে রাষ্ট্রে মুসলমানদের পরামর্শ নেই তা খিলাফত নয়।

৩. সুবিচার নিশ্চিত করাঃ ইসলামী রাজনীতির অন্যতম মূল বৈশিষ্ট্য হল সমাজে সুবিচার প্রতিষ্ঠা করা। এ ব্যাপারে কুরআনে এসেছে,
‘হে ঈমানদারগণ! ইনসাফের পতাকাবাহী ও আল্লাহর সাক্ষী হয়ে যাও, তোমাদের ইনসাফ ও সাক্ষ্য তোমাদের নিজেদের ব্যক্তিসত্তার অথবা তোমাদের পিতা-মাতা ও আত্মীয়স্বজনদের বিরুদ্ধে গেলেও’। [নিসাঃ১৩৫]

৪. সমাজে ভাতৃত্ব ও সাম্য প্রতিষ্ঠাঃ ইসলাম একটি রাষ্ট্রে ভিতর কেবল মাত্র শাসক-শাসিত শ্রেণীর দুরুত্ব কমায় না বরং তা লাঘব করে সমাজে ধনী-গরীব,উচু-নীচু,বড়-ছোট,কালো-সাদা সকল ধরনের ভেদাভেদ দূর করে।সমাজে সৃষ্টি করে মানুষের সাথে মানুষের ভাতৃত্ব যার ইঙ্গিত আমরা লক্ষ্য করি যখন সকল মুসলিমগণ জামায়াতের সাথে একত্রে পাঁচ ওয়াক্ত নামায একত্রে আদায় করে তখন তাদের ভিতর থেকে সকল ধরনের ভেদাভেদ দূরীভূত হয়ে যায়।আল্লাহ পাক কুরআনে ইরশাদ করেন,
“মুমিনরা তো পরসপর ভাই-ভাই।” [হুজুরাতঃ১০]

৫. কুরআন-সুন্নাহভিত্তিক শাসনব্যবস্থাঃ এই ইসলামী শাসনব্যবস্থায় কুরআন-হাদীসভিত্তিক শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হয়।এরইর আলোকে
আল্লাহ বলেন,
তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ্ তাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে শাসনকর্তৃত্ব দান করবেন। [নূরঃ৫৫]

৬. নাগরিক অধিকার নিশ্চিতকরণঃ ইসলামী রাষ্ট্রব্যস্থায় সকল নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করা খলীফার জন্য একটি অপরিহার্য দায়িত্ব ও কর্তব্য।খিলাফত ব্যবস্থায় বসবাসরত সকল নাগরিকের ধর্মীয়,রাজনৈতিক,সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অধিকার রক্ষা করা খলীফার জন্য একটি অপরিহার্য দায়িত্ব ও কর্তব্য।যেমন আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, “তোমরা কোন কারণ ছাড়া একে অন্যকে হত্যা কর না।”[বনী-ঈসরাইলঃ৩৫]

৭. যিম্মীদের অধিকার নিশ্চিতকরণঃ ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাসরত অমুসলিম নাগরিকদের যিম্মী বলা হয়। তারা যেহেতু খিলাফত যিযিয়া কর প্রদান করে তাই তারাও ইসলামী রাষ্ট্রের নাগরিক।তাদের উপর সাধ্যাতীত বোঝা চাপানো যাবে না।আইনের চোখে তাদের সমান হিসেবে দেখা,তাদের জীবন,সম্পদ,সম্ভ্রম রক্ষা করা খিলাফত ব্যবস্থায় রক্ষা করা অন্যতম প্রধান দায়িত্ব।তাদের এইখানে চাকুরী করার যোগ্যাতা আছে। তাদেরকে অন্যায়ভাবে নির্যাতন কিংবা হত্যা করার কোন অবকাশ নেই।

রাসুল (সাঃ) বলেন,
“যে ব্যক্তি কোন যিম্মীকে হত্যা করে সে জান্নাতের সুঘ্রাণ পাবে না।”
৮. ঐক্যবদ্ব জাতি ও বিশ্বরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাঃ খিলাফত ব্যবস্থা এই পৃথিবীতে এমনভাবে গড়ে উঠবে যাতে করে পুরো বিশ্ব ধীরে ধীরে খিলাফতের অন্তর্গত হয় এবং তা ইসলামী নীতিমালার ভিত্তিতে পরিচালিত হবে।একজন খলীফার অধীনে সমগ্র বিশ্ব পরিচালিত হবে। উপরের আলোচনায় এই বিষয়টি অনেকের কাছে মনে হচ্ছে একই সময় দুইজন খলীফা হতে পারে না। তা নিতান্ত অন্যায়।এ ব্যাপারে সকল মুসলিম চিন্তাবিদগণ একমত পোষণ করেছেন যে একাধিক খলীফা থাকতে পারে না।খলীফা একজন হবে।তারই অধীনে সমগ্র মুস্লিম জাতির ভিতর এক ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হবে।আল্লাহ বলেন, “আর তোমরা সকলে আল্লাহর রিযীককে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর; পরসপর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।” [ইমরানঃ১০৩]

৯. স্বজনপ্রীতি এবং দুর্নীতীমুক্ত শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাঃ

১০. দ্বীন ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করাঃ দ্বীন ইসলাম যেন রাষ্ট্রে সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় সে জন্য খিলাফতের সদা তৎপর থাকতে হবে।আল্লাহ বলেন,
আপনি একনিষ্ঠভাবে দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করুন।”
ইমাম ইবনে তাইমিয়ার মতে খিলাফত ওয়াজিব তবে বিশেষ অপারগতার মুহুর্তে রাজতন্ত্র বৈধ।

এছাড়া বইটিতে আলোচনা করা হয়েছে শাসকের আনুগত্য,শাসকের কাজ,সাহাবীদের প্রতি সব সময় সদয় থাকা,প্রথম রাষ্ট্র প্রধান কখন থেকে কিভাবে জনগন ও তার মধ্যে ফারাক সৃষ্টি করেন।

খারেজিদের সম্পর্কে আলোচনা
সমালোচনাঃ বইটির নাম রাখা হয়েছে খিলাফত ও রাজতন্ত্র,তবে এতে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা সুক্ষভাবে বিশ্লেষন করা হয়নি।খিলাফতের বৈশিষ্ট্য,রাজতন্ত্র বিষয়ক গভীর জ্ঞানের অনুপস্থিতি পাঠকমাত্রই টের পাবেন। বইয়ে একই কথা একাধিকবার এসেছে,মুল কন্টেন্টের আগে বিভিন্ন কথা বা বার্তাদেওয়াটা সব সময় বিরক্তিকর।অন্যান্য অনেক ইসলামি পাবলিকেশন্স পৃষ্ঠা বাড়ানোর জন্য ভুমিকা,লেখকের কথা,প্রকাশকের কথা,লেখকের দীর্ঘ পরিচয় দিয়ে পৃষ্ঠা বাড়িয়ে দেন। এতে পাঠকের মনোযোগ বিঘ্নিত হয়।এটা পাঠক ভালোভাবে নেয় না।প্রিয় গার্ডিয়ান প্রকাশন আশা করি এই ব্যাপারটা আমলে নিবেন।এগুলো বইয়ের শেষে দিলেই ভালো হয়।

বই খিলাফত ও রাজতন্ত্র সম্পর্কে এই কথাগুলো আমার একান্ত ব্যাক্তিগত মতামত ছাড়া অন্য কিছুই না। আশা করি পাঠক,লেখক,প্রকাশন আমার মতের প্রতি সদয় হবেন। Download 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ