কুরবানী সংক্রান্ত কয়েকটি জরুরি মাসআলা - তা আপনার অবশ্যই জানা উচিত



১) একটি গরুতে বা মহিষে সাত নাম এবং ছাগল, ভেড়ায় এক নাম করে দেওয়া যাবে ৷

২) কুরবানীর সাথে আকিকা দেওয়ার ব্যাপারে অনেকেই বৈধ ফতোয়া দিয়েছেন তবে সুন্নাহ হচ্ছে আলাদা দেওয়া। এবং আমাদের সুন্নাহর উপর থাকাই বাইঞ্চনীয়।

৩) যে কুরবানী দিবে তার জন্য জিলমাসের প্রথম তারিখ থেকে কুরবানী করা পর্যন্ত হাতের নোখ ও চুল কাটা থাকে বিরত থাকা সুন্নত ৷

৪) কারও যদি ছোটো বেলায় আকীকা না দেওয়া হয়ে তাহলে সে কুরবানী দেওয়াতে কোনো দোষ নাই৷ বরং সামর্থ্যবান হলে কুরবানী দেওয়া ওয়াজিব ৷

৫) জীবিত ও মৃত সবার পক্ষ থেকে কুরবানী দেওয়া জায়েজ৷ শিশুদের পক্ষ থেকেও কুরবানী দিতে পারবে ৷

৬) কুরবানীর ক্ষেত্রে গরু কমপক্ষে ২ বছর , ছাগল ১ বছর ও ভেড়া ছয় মাসের হতে হবে৷

৭) কোনো অন্ধ, বধির , পঙু এইসব বস্তু দিয়ে কুরবানী চলবে না ৷ সুস্থ ও পরিসুষ্ট প্রাণী আল্লাহর রাস্তায় দিতে হবে ৷

৮) কুরবানী কিনার পর অসুস্থ হয়ে পড়লে বা হারিয়ে গেলে নতুন আরেকটা কিনে কুরবানী দিতে হবে ৷ অবশ্যই সামান্য অসুস্থতা বা নিজ দায়ীত্বে চলাচল করতে পারে এমন অসুখ হইলে কুরবানী চলবে৷ এমন পরিস্থিতির স্বীকার হলে স্থানীয় নির্ভরযোগ্য আলিমকে জিজ্ঞাস করে সিদ্ধান্ত নিন৷

৯) কুরবানী শুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে নিয়ত পরিশুদ্ধ হ‌ওয়া ৷ কুরবানী হবে শুধু আল্লাহর জন্য, মাংস খাওয়া বা লোক লজ্জার ভয়ে কুরবানী দিলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না ৷

১০) কুরবানী কাজে লোক রাখলে তার পারিশ্রমিক নিজের পক্ষ থেকে দিতে হবে৷ কাজের বিনিময় চামড়া দেওয়া বা এটি সস্তা দামে দেওয়া জায়েয হবে না ৷ কারণ এটি গরিবের হক৷ তবে অবশ্যই এই চামড়াটি নিজে ব্যবহারের জন্য কোনো কাজে লাগাতে পারেন বা কউকে হাদিয়াও করতে পারেন। তখন ধনী-গরিব পার্থক্য হবে না। যে কাউকে হাদিয়া করা যাবে। কিন্তু যদি চামড়া বিক্রি করা হয় তাহলে টাকা কেবল গরিব কে দিতে হবে।

১১) মাংস নিজে খাবেন এবং অন্যকে দান করবেন৷ এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো নিয়মনীতি নেই৷ তবে আমাদের উচিত বেশি বেশি দান করা ৷ প্রয়োজন মনে করলে ফ্রিজে জমাও রাখতে পারেন৷

১২) নিজের পশু নিজে জবাই করা উত্তম৷ এখানে হুজুর হওয়া শর্ত নয়৷ তবে যেই জবাই করুক আল্লাহর নাম নিয়ে করতে হবে ৷ ইচ্ছাকৃত আল্লাহর নাম না নিলে প্রাণী হালাল হবে না , তবে ভুলবশত বাদ পড়ে গেলে ভিন্ন কথা।

১৩) আমরা অনেক সময় বলে থাকি যে, অমুকের নামে কুরবানী দিব ৷ যদিও আমাদের অন্তর ঠিক কিন্তু এটি মূলত শিরকি কথা৷ কুরবানী দিতে হবে একমাত্র আল্লাহর নামে ৷ তাই আমরা বলব , "অমুকের পক্ষ থেকে কুরবানী ৷" 

১৪) পশুর চারটি রগ কাটতে হয়৷ কণ্ঠনালী, খাদ্যনালী ও শাহরগ দুটো ৷ এর মধ্যে যেকোনো তিনটি কাটলে পশু বৈধ হয়ে যাবে তবে সবগুলো কাটা উত্তম ৷

১৫) পশু যবাই করার সময় যে রক্ত বের হয় তা নাপাক কিন্তু ভেতরে মাংস বা চামড়ার সাথে যে রক্ত থাকে তা পাক ৷ কেননা এগুলো আবদ্ধ রক্ত ৷ তাই এই রক্ত শরীরে বা কাপড়ে থাকা অবস্থায়‌ও নামাজ পড়া যাবে।৷

১৬) কুরবানীতে সাত নাম দেওয়া শর্ত নয়। এক নাম দিয়েও একটা গরু দিতে পারেন, তবে সর্বোচ্চ সাত নাম কিংবা সাত জন অংশগ্রহণ করতে পারে।

১৭) মুসাফির ও মুকিম সবাই একই গরুতে সাত জন অংশগ্রহণ করতে পারে। তা একই পরিবারের হোক আর ভিন্ন পরিবারের হোক, দুটোই জায়েজ। যারা বলেন যে, মুকিম অবস্থা সাত নাম হবে না কিংবা ভিন্ন পরিবার হইলে হবে না তাদের ফত‌ওয়া অগ্রহণযোগ্য। কেননা মুসলিম শরীফের স্পষ্ট হাদীস রয়েছে,
البقرة عن سبعة

১৮) শরিকানায় কোরবানির গোশত পাল্লা দিয়ে ওজন দিয়ে মাপতে হবে । অনুমান করে বন্টন করলে বৈধ হবে না।

১৯) ঈদের নামাজের আগে পশুর জবাই করলে সেটা কুরবানী বলে গণ্য হবে না। তাকে পুনরায় কোরবানী দিতে হবে।

২০) জিলহজের ১০, ১১, ১২, এই তিনদিনের যেকোনো দিন কুরবানী করা যাবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ