অনলাইনের আদবকেতা লেখক : উমার উসমান | Onliner Adabketa By Omor Usman

  • অনলাইনের আদবকেতা
  • লেখক : উমার উসমান
  • প্রকাশনী : ইলহাম ILHAM
  • বিষয় : আদব, আখলাক
  • পৃষ্ঠা : 88, কভার : হার্ড কভার, সংস্করণ : 1st Published, 2021

সোশ্যাল মিডিয়াকে ঘিরে আমাদের নানান জল্পনা-কল্পনা–সবটার উত্তর মিলবে বইটিতে। পাবেন করণীয়-বর্জনীয় সংক্রান্ত কিছু দিকনির্দেশনা। অনলাইনে আমরা কোন ধরনের আচরণ করি, সেসব আদৌ করা উচিত কি না, যদি উচিত না হয়, তবে কী করা উচিত–সেসবও লেখক খুব সুন্দর করে তুলে ধরেছেন। আপনার মনে যদি কখনো প্রশ্ন জাগে, যখন ইন্টারনেট ছিল না তখন মানুষজন কীভাবে কী করত? তবে আপনার জন্য খোশ খবর। সোশ্যাল মিডিয়া পূর্ব-প্রজন্মের সাথে সোশ্যাল মিডিয়া উত্তর-প্রজন্মের হাবভাব, কথাবার্তা, চালচলনের যে বিস্তর ফারাক আছে–সেটা তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন দারুণ সৌকর্যের সাথে।

অনুবাদকের ভাবনা

ঘটনাটার বয়স বড়জোড় দু'তিন মাস হবে। পরিচিত মহলে একদিন আমার বিরুদ্ধে আচানক একটা অভিযোগ উঠল আমি না কি বনবাসে চলে গেছি। তাদের মতে, আমার ফেসবুক আইডিটি মাসখানেকের জন্য বন্ধ থাকে, নয়তো খোদ আমিই হয়ে যাই রীতিমত লাপাত্তা। একে বনবাস না বলে উপায় আছে! এক বোন তো ভীষণরকম জেরা শুরু করে দিল এই বলে-বনবাসে কী এমন মধু আছে? প্রশ্নটা আমার মনে ধরল। আমি একান্তে বসে খানিকক্ষণ ভাবলাম, সত্যিই তো। কী এমন মহার্ঘ বস্তু আছে অফলাইনে? অবিরাম চিন্তার ঢেউগুলো মাড়িয়েও কারণ বিশেষ কিছু পেলাম না। এবার আমার মনে দ্বিতীয় প্রশ্নটির উদয় হলো-তাহলে আমার হয়েছেটা কী?

মস্তিষ্ক এবার আর আমায় হতাশ করেনি। উত্তরটা হলো-আমি এই বইটা অনুবাদ করছি। অবাক হয়ে লক্ষ করলাম, অবচেতনে বইটার বেশ প্রভাব পড়েছে আমার ওপর। যেখানে ফেসবুক ছাড়া একটা দিনও কল্পনা করা দায়, সেখানে দিনের পর দিন আমি ফেসবুকে নেই! একদিন ইন্টারনেট না থাকলে কেমন ছটফট করতাম-ইশ রে! কী কী যেন মিস করে ফেললাম। অথচ, এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় কী হচ্ছে না হচ্ছে, সেসব নিয়ে আমার কোনো বিকার নেই।

আপনাদের মজার একটা ঘটনা বলি। আমার খুব ঘনিষ্ঠা একজন একবার ঘোষণা দিল, সে আর ফেসবুকে আসবে না। আইডি অফ করে একেবারে গা ঢাকা দেবে। দিন তিনেক বাদে, তার নামের পাশে সবুজ বাতি জ্বলতে দেখে এত হাসি পেয়েছিল আমার। মেসেজে ফোড়নও কেটেছিলাম কিছুদিন।
আচ্ছা, এমনটা কেন হয়? আমরা ইন্টারনেট ছাড়া একটা দিনও কল্পনা করতে পারি না কী কারণে? কিসের নেশায় সকাল থেকে সন্ধ্যা অব্দি সোশ্যাল মিডিয়ায় নিত্য নতুন ইস্যুর পেছনে ছুটি? কেনই-বা একে অপরের নামে বাজে কথা বলি,

অহেতুক ট্যাগ লাগাই, সম্পর্ক নষ্ট করি? স্বল্প সময়ের এই জীবনের প্রায় অর্ধেকটাই নিউজফিড স্ক্রল করে কাটিয়ে দেওয়ার মানেটা কী?

সত্যি বলতে, আমি নিজেও একটা সময় এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে ফিরেছি। আমার হাতে অফুরন্ত সময়, অথচ কোনো বরকত নেই। করার মতো কত কাজ, কত দায়িত্ব, অথচ সময়ে কুলিয়ে উঠতে পারি না। দিনের আধেকটা সোশ্যাল মিডিয়া গিলে নিচ্ছে জানার পরও, এর কবল থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারছিলাম না। মূল বইটা যেদিন হাতে পেলাম, মনে হলো রূপকথার সেই জাদুর চকমকির বাক্সটা পেয়ে গেছি বুঝি !

সোশ্যাল মিডিয়াকে ঘিরে আমাদের নানান জল্পনা-কল্পনা-সবটার উত্তর মিলবে বইটিতে। পাবেন করণীয়-বর্জনীয় সংক্রান্ত কিছু দিকনির্দেশনা। অনলাইনে আমরা কোন ধরনের আচরণ করি, সেসব আদৌ করা উচিত কি না, যদি উচিত না হয়, তবে কী করা উচিত সেসবও লেখক খুব সুন্দর করে তুলে ধরেছেন। আপনার মনে যদি কখনো প্রশ্ন জাগে, যখন ইন্টারনেট ছিল না তখন মানুষজন কিভাবে কী করত? তবে আপনার জন্য খোশ খবর। সোশ্যাল মিডিয়া পূর্ব প্রজন্মের সাথে সোশ্যাল মিডিয়া উত্তর প্রজন্মের হাবভাব, কথাবার্তা, চালচলনের যে বিস্তর ফারাক আছে-সেটা তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন দারুণ সৌকর্যের সাথে।

বইটিতে আপনার জন্য ওত পেতে আছে হরেক রকমের চিন্তার খোরাক। কিছু তিক্ত বাস্তবতা পরিষ্কার হবে স্বচ্ছ কাচের মতো। নিজের ইমান আর আমলে আসবে সমূহ পরিবর্তন-বলেই আমার বিশ্বাস, বিইজনিল্লাহ। আক্ষরিক অনুবাদের চেয়ে ভাবানুবাদেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। ভাষায় সাবলীলতা বজায় রাখতে, পাঠকদের তরফে সহজবোধ্য করতে গিয়ে বেশ কিছু শব্দ ইংরেজিতেই ব্যবহার করতে হয়েছে। কোনরূপ ভুলত্রুটি নজরে আসলে, অবগত করার অনুরোধ।

শেষমেশ, বইয়ের সাথে জুড়ে থাকা প্রতিটি মানুষের পরিশ্রমকে রব্বে কারিম কবুল করুন। উত্তম জাযা দান করে সকলের সাদাকায়ে জারিয়াহ হিসেবে মঞ্জুর করে নিন।

লেখক নিয়ে দুটো কথা

কালাম ইন্সটিটিউট-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ওমর উসমান পেশায় একজন প্রযুক্তি বিশারদ। তিনি একাধারে একজন দক্ষ প্রকল্প পরিচালক এবং প্রশিক্ষকও বটে। শুধু কালাম ইন্সটিটিউট-ই নয়, স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে নানাবিধ ইসলামিক সংগঠনেরও সক্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। বর্তমানে স্থানীয় একটি মসজিদের খতিব হিসেবে কর্মরত৷ এই লেখকের আরো একটি পরিচয় আছে। নেতৃত্ব, সামাজিক গণমাধ্যম এবং জনসম্মুখে বক্তৃতাসহ বিবিধ বিষয়ে দেশজুড়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন।
 শোকরনামা
রসুল সা. বলেছেন,
“যে ব্যক্তি মানুষের কৃতজ্ঞতা আদায় করে না, সে আল্লাহরও কৃতজ্ঞতা আদায় করে না।" (তিরমিজি)
শুরুতেই আমার মা-বাবার শুকরিয়া আদায় করতে চাই। তারা প্রতিনিয়ত যেভাবে আমাকে সাহায্য করেছেন, সেসব বলে শেষ করা যাবে না। আমার মধ্যে আত্মবিশ্বাস জন্মানো এবং সব সময় আমাকে উৎসাহিত করার জন্য আমি আজীবন তাদের কাছে ঋণী থাকব।
এরপর বলতে হয় আমার স্ত্রী ফৌজিয়ার কথা। যিনি শুধু অনুপ্রেরণা দিয়েই থেমে থাকেননি বরং বইটি লেখার জন্য নিয়মিত তাগাদা দিয়ে গেছেন। আমি যাতে পড়াতে পারি, লিখতে পারি সেজন্য কত ছুটিরদিন, কত বিকেল তিনি কুরবান করেছেন তার ইয়ত্তা নেই। আমার চার সন্তানের কথাও বলতে হচ্ছে-আব্দুর রহমান, আয়েশা, হানিয়া এবং মুসা। কেননা, তারা রীতিমত আমাকে হুমকি দিয়েছে বইটিতে তাদের নাম থাকা চাই।

আমার বোন যাইনাহর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কেবল তার সাহায্য ও অনুপ্রেরণার কারণে নয়। বরং আমার লেখাটাকে সম্পাদনা করে আরো সুন্দর, সাবলীল করে তোলার জন্য বেশুমার শুকরিয়া তার প্রাপ্য।

যার সাহায্য না পেলে বইটি হয়তো আলোর মুখ দেখত না, সে আমার বন্ধু শায়েখ আব্দুল নাসির। আমার ওপর ভরসা রেখে একটা সুযোগ করে দেওয়ার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ বন্ধু। তোমার সমর্থন, সহায়তা, উপদেশ সবকিছু আমার কাছে অনেক বেশি মূল্যবান।

আমি ঐ সকল শায়েখের শুকরিয়া আদায় করতে চাই, যারা পুরো সময়টা ধরে আমার পাশে ছিলেন। সর্বপ্রথম শায়েখ নোমান বেগ সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে কিছু বলার জন্য আমাকে একটা সুযোগ দেন। তার ক্রমাগত মন্তব্যের ফল আপনাদের হাতের এই বইটি। পাশাপাশি শায়েখ ইয়াসির বির্যাস, মুফতি হুসাইন কামানি, ইমাম ওমর সুলাইমান, শায়েখ মুহাম্মদ ইলশিনায়ি, শায়েখ মুহাম্মদ হুসাইন, শায়েখ মিকাঈল স্মিথ, মুফতি মুনতাসির জামান, শায়েখ নাভিদ আজিজ, শায়েখ হাসিব নুর, শায়েখ আম্মার আল শুকরি প্রমুখদের নাম বলতে চাই, যাদের সবারই কমবেশি অবদান আছে।

আরেকটা মানুষ এন্তার শুকরিয়া পাওয়ার দাবি রাখে আমার বাল্যবন্ধু শায়েখ সালমান নাসির। সে যে শুধু বইটা দেখে দিয়েছে তা নয়। পুরো সময়টা ধরে আমার বকবকানিও সহ্য করেছে।
বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করে, বইটি লিখতে আমাকে একপ্রকার
বাধ্য করার জন্য, আমার কয়েকজন বন্ধুর বিশেষ অবদান আছে। তারা হলেন,
ইমরান হক, মুহাম্মাদ ফারিস, আদাম তাওফিক, ওয়ালিদ জামিল এবং নওফিল
মোল্লা।

এত চমৎকার একটা কভারের জন্য আমনাহ সুলতানের প্রতি আমি সবিশেষ কৃতজ্ঞ। ওদিকে যাদের নাম বলতে ভুলে গেছি, আপনাদের সবাইকেও জানাই বেশুমার শুকরিয়া।
বইটি লেখাকালীন একটা ব্যাপার আমি বেশ বুঝেছি-অন্যের কুরবানি ছাড়া আপনি কখনোই কিছু করতে পারবেন না। যারা পুরো যাত্রাটায় আমার সাথে ছিলেন, আমি দুআ করি, আল্লাহ যেন আপনাদের ও আপনাদের পরিবারকে দুনিয়া এবং আখিরাতে ভালো রাখেন। এই বই থেকে যা সওয়াব হাসিল হবে, তা যেন আল্লাহ সকলের সাদাকায়ে জারিয়াহ হিসেবে কবুল করে নেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ