অন্য এক রেনেসাঁস : লেখক সুমিতা দাস | Onno Ek Renesas

  • বই : অন্য এক রেনেসাঁস
  • লেখক : সুমিতা দাস
  • দাম : ২০০ রুপি
  • প্রকাশনী : পিপলস বুক সোসাইটি 

বর্তমানে মুসলমানরা বিজ্ঞান নিয়ে নাস্তিকতার যে সুন্দর রুপ ধারণ করে,এটা ইসলামী জ্ঞান বিজ্ঞানের যুগে ছিলো নিম্ন চিন্তার পরিচয়।আল বিরুনী বলেছেন "ওদের মধ্যে যারা কট্টর তারা বিজ্ঞানগুলিকে নাস্তিক্যবাদী বলে চেপে মারতে চায়,তাদের মতো অজ্ঞ লোকেরা যাতে বিজ্ঞানগুলিকে ঘৃণা করে সেজন্য এরা দাবি করে যে বিজ্ঞান মানুষকে ভুল পথে নিয়ে যায়। এতে তাদের অজ্ঞতা ঢাকা দিতে বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীদের সম্পুর্ন ধ্বংসের পথ খুলে দিতে সাহায্য করে।

এই বইটি শুধুমাত্র ভিন্নধর্মীর লেখা ইসলামী জ্ঞান বিজ্ঞানের ইতিহাস নয়।এই বইটি স্বাধীন মত প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম।

বইটি ভারতীয়।বই হাতে নিলেই ভারতীয় একটা ঐতিহ্যের ছাপ পরে।এটা একটা নান্দনিক শিল্প বলা যায়।

বইটির কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যা আপনাকে যুগ ছাড়িয়ে চিন্তক করে দিবে।

১)ইউরোপদের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদঃ সপ্তম শতক থেকে প্রায় এক হাজার বছর ধরে আরবি-ইসলামীয় সভ্যতা জ্ঞানবিজ্ঞানের গ্রীক ধারাকে শুধু ধরেই রাখেনি,তাকে অনেক পুষ্ট করেছে।সেখান থেকে জ্ঞান আহরণ করার নতুন সম্রাট ইউরোপ,ঔপনিবেশিক ইউরোপ চেয়েছিলো সেই সভ্যতাকে ভুলে যেতে,ভুলিয়ে দিতে।সেই ভুলে থাকার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এই বইটি।

২)অতি সংক্্ষেপে ইতিহাসের সময়পঞ্জিঃ বইটির শুরুতেই খুবই সুন্দর সাবলীল ভাবে ইসলামের পুরো ইতিহাসকে এক পাতায় আনা হয়েছে।এই চমৎকার চিন্তাটা পাঠকমাত্রই নতুন রুপ পেয়ে আনন্দিত হবেন।

৩)বিজ্ঞানের সময়পঞ্চিঃইসলামে জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রায়োরিটি সব থেকে বেশি।যদিও বর্তমান সময়ে আমাদের আলেমগনের অবজ্ঞার জন্য ইসলামের জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চা নিম্ন লেভেলে।কিন্তু এই ইতিহাস আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়,পরিচয় করিয়ে দেয় এক কথায়!এক ভাষায়।যা গর্ব করতে বাধ্য করে না,বরং এখনই!এই মুহুর্তে কাজে নামতে বাধ্য করে।(ছবি দৃষ্টব্য)

৪)নান্দনিক ভাবে ম্যাপ প্রদর্শন।

বিদেশী বইগুলোর অন্যতম গুন হলো তারা কোয়ালিটিতে কোনো কম্প্রোমাইজ করে না।বেশ স্মুথ কাগজ ব্যবহার করা হয়েছে প্রতিটি চিত্রে!প্রথমেই চিত্রগুলোর পরিচয় করিয়ে দিয়েছে।

৫)ইসলামের বিস্তারের কারনঃ ইসলাম অতি দ্রুত ছড়িয়ে পরে!কিভাবে?

প্রথমত তাদের মধ্যে আবেগ ও সাম্যধর্মিতার মধ্যে অপ্রতিরোধ্য একটা ব্যাপার ছিলো যে,যারা এর সংস্পর্শে আসে তাদের কল্পনার আগুন জ্বালিয়ে দেয়,ভক্তি আদায় করে নেয়।

দ্বিতীয়ত,যেখান যেখান দিয়ে এই বাহিনী যেত,তার অনেক জায়গার স্থানীয়রা শাসকদের এতোটাই ঘৃণা করেছিলো যে,মুসলমানদেরকে তারা মুক্তিদাতার বিশ্বাস করত।কি দারুন এক ব্র‍্যান্ডিং ছিলো ইসলামের তাই না?

৬)মুক্তমনা চিন্তাঃতবে নাস্তিকতা নয়ঃ মুক্তিচিন্তা মানেই নাস্তিকতা না।আমাদেরকে শুরু থেকেই মাথায় ঢুকানো হয়, চিন্তার লিমিট রাখতে হবে না হলে নাস্তিক হবে।এই বিষয়টা চরম ভুল।তাই তো আরবী ভাষা বিজ্ঞানের মাতৃভাষা হয়েছিলো মুক্তমনা চিন্তার জন্যই।

তারা বিশ্বাস করত জ্ঞান-বিজ্ঞান সংকীর্ণ নয়।সকল ভাষার জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চাই নতুন জ্ঞানের সুচনা দেন।তাই তো তারা বিদেশী সকল জ্ঞানগর্ভ বই অনুবাদ করতেন।

৭)সত্যের প্রতি শ্রদ্ধাঃ বর্তমান সময়ে নাসার প্রকাশিত আলোরণ সৃষ্টিকারী আবিষ্কার দেখে অনেক মুসলিমগন এটাকে ইমান চলে যাওয়ার কারন ভাবছেন।তবে এই বদ্ধ চিন্তা ইসলামী পন্ডিতদের ছিলো না।

তারা বিশ্বাস করত "সত্য,তা যেখান থেকেই আসুক না কেন তাকে স্বীকার করতে ও গ্রহণ করতে লজ্জিত হওয়া উচিৎ নয়।সত্যসন্ধানীর কাছে সত্যের চেয়ে প্রিয় আর কিছু হওয়া উচিৎ নয়"

৮)মহাকাশঃমহাকাশ নিয়ে আরবদের আগ্রহ কম ছিলো না।

মহাকাশ নিয়ে আরবিদের এতো বেশিই আবিষ্কার ছিলো যা লিখে প্রকাশ করা সম্ভব নয়।এই বিষয়ের জন্য হলেও বইটি পড়তে হবে।

ইবনে খালদুনকে নিয়ে যে দারুন কথা বলা হয়েছে তা আমি হাইড রাখব।পাঠক নিজেই পড়ে নিবেন।

এই বইটি প্রতিটি মানুষের পড়া উচিৎ।

প্রতিটি মুসলিমের ঘরে ঘরে এই বই থাকা উচিৎ।

মুসলিমরা কেন বিজ্ঞান চর্চা করবে এটাও বলে গেছেন মুসলিম বিজ্ঞানীগন।

আমরা অনেকে মুসলিম বিজ্ঞানীদের বই পাব,তবে সেসব থেকে এটার একটি পার্থক্য হচ্ছে এই বইতে স্পষ্ট ভাষায় সব তুলে ধরা হয়েছে।যা কিছু অন্ধভক্ত মুসলিম এবং পাশ্চাত্যের বিরুদ্ধে জবাব।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ